1 of 3

002.124

যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না।

And (remember) when the Lord of Ibrâhim (Abraham) [i.e., Allâh] tried him with (certain) Commands, which he fulfilled. He (Allâh) said (to him), ”Verily, I am going to make you a leader (Prophet) of mankind.” [Ibrâhim (Abraham)] said, ”And of my offspring (to make leaders).” (Allâh) said, ”My Covenant (Prophethood, etc.) includes not Zâlimûn (polytheists and wrong-doers).”

وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي قَالَ لاَ يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ

Wa-ithi ibtala ibraheema rabbuhu bikalimatin faatammahunna qala innee jaAAiluka lilnnasi imaman qala wamin thurriyyatee qala la yanalu AAahdee alththalimeena

YUSUFALI: And remember that Abraham was tried by his Lord with certain commands, which he fulfilled: He said: “I will make thee an Imam to the Nations.” He pleaded: “And also (Imams) from my offspring!” He answered: “But My Promise is not within the reach of evil-doers.”

PICKTHAL: And (remember) when his Lord tried Abraham with (His) commands, and he fulfilled them, He said: Lo! I have appointed thee a leader for mankind. (Abraham) said: And of my offspring (will there be leaders)? He said: My covenant includeth not wrong-doers.

SHAKIR: And when his Lord tried Ibrahim with certain words, he fulfilled them. He said: Surely I will make you an Imam of men. Ibrahim said: And of my offspring? My covenant does not include the unjust, said He.

KHALIFA: Recall that Abraham was put to the test by his Lord, through certain commands, and he fulfilled them. (God) said, “I am appointing you an imam for the people.” He said, “And also my descendants?” He said, “My covenant does not include the transgressors.”

১২৪। এবং স্মরণ কর ইব্রাহীমকে তাঁর প্রভু কয়েকটি হুকুম দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন ১২৩ যা সে প্রতিপালন করেছিলো। আল্লাহ্‌ বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে সকল জাতির নেতা করবো ১২৪।’ সে আবেদন করেছিলো, ‘এবং আমার বংশধরগণের মধ্য থেকেও [ইমাম হবে]’। আল্লাহ্‌ বলেছিলেন, ‘কিন্তু আমার প্রতিশ্রুতি পাপীদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।’

১২৩+১২৪। এই আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন যে, তিনি হযরত ইব্রাহীমের পরীক্ষা নিয়েছিলেন এবং হযরত ইব্রাহীম তাঁর ইচ্ছাকে স্রষ্টার ইচ্ছার কাছে বিলীনকরে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ্‌র ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন। আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ। হযরত ইব্রাহীমের পরীক্ষা কোন অজ্ঞতা যাচাই এর জন্য ছিল না বরং এর উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁকে আধ্যাত্মিক জগতে পূর্ণতার স্তরে পৌঁছে দেওয়া। আল্লাহ্‌র কাছে শিক্ষা বিষয়ক জ্ঞানের চাইতে চারিত্রিক দৃঢ়তার মূল্য বেশি। এতে বোঝা যায় আল্লাহ্‌র দরবারে যে বিষয়ের মূল্য বেশি তা শিক্ষা বিষয়ক জ্ঞান নয়, বরং কার্যগত ও চরিত্রগত শ্রেষ্ঠত্ব। এ ধরনের পরীক্ষার বিষয়-বস্তুর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল-

আল্লাহ্‌ তায়ালার ইচ্ছা ছিল হযরত ইব্রাহীমকে স্বীয় বন্ধুত্বের বিশেষ মূল্যবোন পোশাক উপহার দেওয়া। তাই তাঁকে বিভিন্ন রকম কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। সমগ্র জাতি এমন কি তাঁর আপন পরিবারের সবাই মূর্তি পূজায় লিপ্ত ছিল। সবার বিশ্বাস ও রীতিনীতির বিপরীত একটি সনাতন ধর্ম তাকে দেওয়া হয়। জাতিকে এ ধর্মের দিকে আহবান জানানোর গুরু দায়িত্ব তাঁর কাঁধে অর্পন করা হয়। তিনি পয়গম্বর সুলভ দৃঢ়তা ও সাহসিকতার মাধ্যমে নির্ভয়ে জাতিকে এক আল্লাহ্‌র দিকে আহবান জানান। বিভিন্ন পন্থায় তিনি মূর্তিপূঁজার নিন্দা ও কুৎসা প্রচার করেন। প্রকৃত পক্ষে কার্যক্ষেত্রে তিনি মূর্তিসমূহের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। ফলে সমগ্র জাতি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উদ্যত হয়। বাদশাহ নমরুদ ও তার পরিবারবর্গ তাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহ্‌র খলীল (বন্ধু) প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য এসব বিপদ-আপদ সত্ত্বেও হাসিমুখে নিজেকে অগ্নিতে নিক্ষেপের জন্য পেশ করেন।

এ পরীক্ষা সমাপ্ত হলে জন্মভূমি ত্যাগ করে সিরিয়ায় হিজরতের পর দ্বিতীয় পরীক্ষা নেওয়া হয়। ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের আশায় স্বগোত্র ও মাতৃভূমিকেও হাসিমুখে ত্যাগ করে পরিবার পরিজনসহ হিজরত করলেন।

মাতৃভূমি ও স্বজাতি ত্যাগ করে সিরিয়ায় অবস্থান করতেই নির্দেশ এরো বিবি হাজেরাকে দুগ্ধপোশ্য শিশু হযরত ইসমাঈলসহ নির্বাসনের। আল্লাহ্‌র ইচ্ছা মক্কা নগরীর সৃষ্টি ও হযরত ইসমাঈলের বংশে আরবে শেষ নবী প্রেরণ করা। তাই এই পুরো ঘটনার অবতারণা। এখানে অনুধাবনযোগ্য যে, শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী স্বীয় বংশে পাওয়ার সম্মান ও গৌরব আল্লাহ্‌ হযরত ইব্রাহীমকে দিবেন। কিন্তু আল্লাহ্‌ দান বহু সাধনার দ্বারা ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হয়। তাই তো আমরা দেখি সৎ ও ঈমানদার ব্যক্তি দুঃখ কষ্টের মধ্যে বেশি নিপতিত হয়। কারণ দুঃখ কষ্টের আগুনে পুড়ে তাদের আত্মা নিখাদ হয়, খাঁটি সোনায় রূপান্তরিত হয়, ফলে আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য সেই হৃদয়ে অনুভব করার ক্ষমতা জন্মে। হযরত ইব্রাহীমের চরিত্রের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে, আল্লাহ্‌র ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনই হচ্ছে ইসলাম। দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা এরই মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ এবং সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের যোগ্যতা অর্জন করে।

অতঃপর হযরত হাজেরা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে জন-মানবহীন প্রান্তরে কালাতিপাত করতে থাকেন। এক সময়ে দারুণ পিপাসা তাঁকে পানির খোঁজে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করলো। তিনি শিশুকে উন্মুক্ত প্রান্তরে রেখে পানির খোঁজে ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড়ে বারবার দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলেন। কিন্তু কোথাও পানির চিহ্নমাত্র দেখলেন না এবং এমন কোনও মানুষ দৃষ্টিগোচর হল না, যার কাছে কিছু সাহায্য পেতে পারেন। সাতবার ছুটাছুটি করে পানির কোনও হদিস করতে না পেরে বিবি হাজেরা শিশু ইসমাঈলের কাছে ফিরে এলেন। কিন্তু তিনি আল্লাহ্‌র রহমতের উপরে অটল বিশ্বাসে, আল্লাহ্‌র কাছেই পানির জন্য প্রার্থনা জানালেন। এবারে আল্লাহ্‌র রহমত নাজিল হল। জিবরাঈল এলেন এবং শুষ্ক মরুভূমিতে পানির একটি ঝর্ণা ধারা বইয়ে দিলেন-যা যমযম কূপ নামে খ্যাত। এখানে বিবি হাজেরার চরিত্র থেকে আল্লাহ্‌ আমাদের শিক্ষনীয় করেছেন যে বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করতে এবং আল্লাহ্‌র রহমত থেকে কখনও নিরাশ না হতে। বিবি হাজেরার সাফা ও মারওয়া দৌড়ানোর ঘটনা হচ্ছে বিপদে ধৈর্য্য ধারণের প্রতীক। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড় দুটির মাঝখানে সাতবার দৌড়ানো কিয়ামত পর্যন্ত ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য হজ্জ্বের বিধিবিধানে অত্যাবশকীয় করা হয়েছে। ধৈর্য্য ও আল্লাহ্‌র রহমতের প্রত্যাশাকে প্রতীকের সাহায্যে হজ্জ্বের ময়দানে আমরা এভাবেই উপস্থাপন করি। যমযম কূপের সৃষ্টির পর তার চারিপাশে আস্তে আস্তে জনবসতি গড়ে উঠে এবং মক্কা নগরীর সূত্রপাত হয় এবং শিশু ইসমাঈল ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন।

এরপর আল্লাহ্‌র হুকুম হয় হযরত ইসমাঈলকে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য কোরবানী দিতে। এর পরবর্তী ঘটনা সবারই জানা। এটা ছিল পুত্রবৎসল পিতার চরম আত্মোৎসর্গের পরীক্ষা। এগুলো ছিল শক্ত ও বড় কঠিন পরীক্ষা যার সম্মুখীন হযরত খলীলুল্লাহকে করা হল।

এই আয়াতটিকে [২:১২৪] পরবর্তী আয়াতসমূহের সারাংশ হিসেবে ধরা হয়। ‘কালিমাত’ এ শব্দটির দ্বারা রহস্যময় ইচ্ছা বা পরীক্ষাসমূহকে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষাতেই হযরত ইব্রাহীম আল্লাহ্‌র ইচ্ছা পূরণ করেন। এছাড়াও তিনি আল্লাহ্‌র ঘরকে পুনঃনির্মাণ করেন। একে পুতঃ পবিত্র করেন। যে কেউ আল্লাহ্‌র ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন করে সেই মুসলিম। হযরত ইব্রাহীম ছিলেন খাঁটি মুসলিম। আমাদের যে বিশ্বাস আমরা জন্মসূত্রে মুসলিম-সুতরাং আমরা আল্লাহ্‌র কাছে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এ বিশ্বাস ঠিক নয়। মুসলমানের একমাত্র মানদন্ড হচ্ছে আল্লাহ্‌র ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পন, তা কি আজকে বিশ্ব মুসলিম সমাজ পালন করে? আমরা নামেই বা জন্মসূত্রে মুসলিম-কিন্তু প্রতিনিয়ত আমরা আল্লাহ্‌র ইচ্ছার আইন অমান্য করি-অর্থাৎ আমরা সত্যবাদী হব, সৎ পথে চলবো, মানুষকে ঠকাবো না, ন্যায় ও সত্যের জন্য জেহাদ ঘোষণা করবো ইত্যাদিই হচ্ছে আল্লাহ্‌র ইচ্ছা বা আইন যা আমরা অমান্য করি। ভেবে দেখতে হবে আমরা ব্যক্তিগত জীবনে ও জাতীয় জীবনে আল্লাহ্‌র এই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছি কিনা। যদি না পেরে থাকি তবে অবশ্যই আল্লাহ্‌র রোষানলে আমরা পতিত হবে। এই-ই আল্লাহ্‌র বিধান।

হযরত ইব্রাহীমের এই চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্য আল্লাহ্‌ তাকে পৃথিবীর আধ্যাত্মিক জগতের নেতৃত্ব দান করেন। হযরত ইব্রাহীম তাঁর বংশধরদের জন্যও এই অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। আল্লাহ্‌ তাঁর প্রার্থনা কবুল করেন-কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে। নৈতিক ও কার্যগত গুণে গুণান্বিত হওয়া হচ্ছে নেতৃত্বের প্রধান শর্ত। পাপাচারী ও জালিমকে নেতৃত্ব লাভের সম্মান দেওয়া হবে না-হোক না কেন সে হযরত ইব্রাহীমের বংশধর। এর ব্যাখ্যা এই যে নেতৃত্ব একদিক দিয়ে আল্লাহ্‌র খেলাফত বা প্রতিনিধি। আল্লাহ্‌র অবাধ্য বা বিদ্রোহী, যারা উপরিউক্ত নৈতিক ও কর্মগতগুণে গুণান্বিত হয় না, তাদেরকে এ পদ দেয়া যায় না। এ কারণেই যারা নৈতিক চরিত্র ও কর্মগুণে গুণান্বিত নয়, তাদের স্বেচ্ছায় বা ভোট দানের মাধ্যমে নেতা নিযুক্ত না করা মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।