030.023

তাঁর আরও নিদর্শনঃ রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয় এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
And among His Signs is the sleep that you take by night and by day, and your seeking of His Bounty. Verily, in that are indeed signs for a people who listen.

وَمِنْ آيَاتِهِ مَنَامُكُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَابْتِغَاؤُكُم مِّن فَضْلِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
Wamin ayatihi manamukum biallayli waalnnahari waibtighaokum min fadlihi inna fee thalika laayatin liqawmin yasmaAAoona

YUSUFALI: And among His Signs is the sleep that ye take by night and by day, and the quest that ye (make for livelihood) out of His Bounty: verily in that are signs for those who hearken.
PICKTHAL: And of His signs is your slumber by night and by day, and your seeking of His bounty. Lo! herein indeed are portents for folk who heed.
SHAKIR: And one of His signs is your sleeping and your seeking of His grace by night and (by) day; most surely there are signs in this for a people who would hear.
KHALIFA: Among His proofs is your sleeping during the night or the day, and your working in pursuit of His provisions. In this, there are sufficient proofs for people who can hear.

২৩। তাঁর নিদশর্নসমূহের মাঝে আর একটি এই যে, রাত্রিতে তোমাদের নিদ্রা এবং দিনে তাঁর অনুগ্রহ থেকে তোমাদের [ জীবিকার ] অন্বেষণ ৩৫২৮। নিশ্চয়ই এতে [ উপদেশ ] শ্রবণকারীদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে ৩৫২৯।

৩৫২৮। আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব আত্মার মাঝে অনুভব করার জন্য, আল্লাহ্‌র নিদর্শনকে উপলব্ধির জন্য আরও কয়েকটি উদাহরণের উল্লেখ করা হয়েছে এই আয়াতে। যদি আমরা গভীর ঘুমের ব্যাপারটি গভীরভাবে চিন্তা করি , তবে দেখবো ক্লান্তির পরে ঘুম ক্লান্তি দূর করে এবং দেহ ও মনে সতেজতা আনায়ন করে। ঘুমের ফলে আমাদের চিন্তার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়, আমাদের অনুভূতি তীক্ষ্ণ হয়। ঘুমের অনুভূতি এবং ঘুমের পরবর্তী দেহ ও মনের সজীবতা সত্যিই অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ও রহস্যজনক। সাধারণতঃ আমরা রাতে ঘুমাই এবং দিনে আমরা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বা জীবিকার অন্বেষণ করি।

বিভিন্ন উপায়ে আমরা জীবিকার অন্বেষণ করে থাকি। কিন্তু এই উপায়াদির অন্বেষণের চেষ্টায় প্রকৃত সত্যকে যেনো কেউ বিস্মৃত না হয়। বুদ্ধিমানের কাজ হবে এ কথা বিস্মৃত না হওয়া যে, ইহকাল শুধুমাত্র পরলোকের “শিক্ষানবীশকাল ” মাত্র।

আমাদের শারীরিক ও আত্মিক বিকাশের সাথে দিনের আলো ও রাত্রির অন্ধকারকে সমন্বিত করে দেয়া হয়েছে কর্ম ও বিশ্রামের জন্য। দিনে আমাদের কর্মক্ষমতা বিকশিত হয়, রাতে সুপ্তির কোলে আমাদের সকল ক্লান্তি দূরীভূত করার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে। এও কি স্রষ্টার এক অপূর্ব নিদর্শন নয় কি ? আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যারা উপদেশ শ্রবণ করে তাদের জন্য অনেক নিদর্শন আছে। এতে শ্রবণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছে এই কারণে যে দিনের জীবিকার অন্বেষণের চিন্তা যেনো মনোযোগকে শুধুমাত্র পার্থিব বস্তুতে সম্পৃক্ত করে না রাখে। প্রকৃত সত্যকে অনুধাবনের জন্য আল্লাহ্‌র নিদর্শনের প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

৩৫২৯। ২০ থেকে ২৫ আয়াত পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে আল্লাহ্‌র অত্যাচার্য নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে – যার সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করলে,অনুধাবনের চেষ্টা করলে আত্মার মাঝে আধ্যাত্মিক জাগরণ ঘটে।

১) মানুষের উৎপত্তি ও শেষ পরিণতি সম্বন্ধে বলা হয়েছে ; অবশ্য তাই-ই প্রারম্ভিক হওয়া উচিত [ ৩০ : ২০ ]।

২) ধারাবাহিকতায় তারপরে এসেছে মানুষের সামাজিক জীবনের কথা। সামাজিক জীবনের সুত্রপাত ঘটে যৌন-জীবনের মাধ্যমে, নারী পুরুষের ভালোবাসার মাধ্যমে। দেখুন [ ৪ : ১ ] আয়াত ও টিকা ৫০৬।

৩) পরবর্তী আলোচ্য বিষয়বস্তু হচ্ছে মানুষকে উপলব্ধি করতে বলা হয়েছে মানব সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বৈচিত্র। ভৌগলিক পার্থক্যের কারণে মানুষের বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি, পার্থক্য ঘটে, কিন্তু এ সব পার্থক্য সত্বেও সকল মানবের অন্তর্নিহিত ভাবধারা এক সূতোতে গাঁথা। হাসি -কান্না, আবেগ-অনুভূতি, দুঃখ-ব্যথা,সব কিছুর অনুভূতি পৃথিবীর সকল মানুষের মাঝে একই ভাবে বিরাজ করে যা মানুষ গভীরভাবে চিন্তা করলেই উপলব্ধি করতে পারবে [ ৩০ : ২২ ]।

৪) পরর্বতীতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে মানুষের মনঃস্তাত্বিক অবস্থার প্রতি যথাঃ ঘুম, বিশ্রাম, অন্তরের উপলব্ধি ইত্যাদির প্রতি ; যারা মনোযোগ সহকারে পথের নিদর্শন উপলব্ধি করতে চায় এবং উপদেশ শ্রবণ করে তাদের জন্যই এগুলি আল্লাহ্‌র নিদর্শন স্বরূপ [ ৩০ : ২৩ ]।

৫) পরর্বতী আয়াতে , উচ্চতর আধ্যাত্মিক আশা আকাঙ্খার এবং ভয়ের প্রতি আমাদের আহ্বান করা হয়েছে। এগুলি প্রকাশের জন্য সুক্ষভাবে প্রতীক হিসেবে বজ্র ও বিদ্যুতকে ব্যবহার করা হয়েছে। বজ্র ও বিদ্যুতের পতিত হওয়ার ফলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এবং এর পশ্চাতে বৃষ্টির আশাবাদও সঞ্চার হয়। তিনি এই বৃষ্টি দ্বারা শুষ্ক ও মৃত মৃত্তিকাকে জীবিত ও সতেজ করে তাকে ফুল, ফল, ও ফসলে ভরিয়ে দেন। আধ্যাত্মিক জগতের পরিপূর্ণতা লাভের আশা আকাঙ্খা এবং না পাওয়ার ভয়কে এভাবে বজ্র -বিদ্যুত এবং বৃষ্টির প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে – এ কথা বুদ্ধি, ও প্রজ্ঞা দ্বারাই বোঝা যেতে পারে [ ৩০ : ২৪ ]।

৬) যষ্ঠ নিদর্শন এই যে, আকাশ ও পৃথিবী আল্লাহ্‌র-ই আদেশে স্থায়ী হয়ে আছে। কোটি কোটি বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও এগুলোর কোথাও কোনও ত্রুটি দেখা যায় না। আল্লাহ্‌ যখন এই ব্যবস্থাপনাকে ভেঙ্গে দেয়ার আদেশ দেবেন, তখন এই অটুট ব্যবস্থাপনা নিমেষের মধ্যে ভেঙ্গে চুরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। অতঃপর তাঁর আদেশে সব মৃত পুণরুজ্জীবিত হয়ে হাশরের মাঠে সমবেত হবে [ ৩০: ২৫-২৭ ]। এই ষষ্ঠ নিদর্শনটি প্রকৃতপক্ষে পূর্বোক্ত পাঁচটি নিদর্শনের পরিসমাপ্তি। মানুষের উৎপত্তি থেকে শুরু করে তার বিভিন্ন বিকাশের মাধ্যম ও পরিসমাপ্তি গুলিকে বিভিন্ন প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।