1 of 3

002.143

এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। আপনি যে কেবলার উপর ছিলেন, তাকে আমি এজন্যই কেবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। নিশ্চিতই এটা কঠোরতর বিষয়, কিন্তু তাদের জন্যে নয়, যাদেরকে আল্লাহ পথপ্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুনাময়।
Thus We have made you [true Muslims – real believers of Islâmic Monotheism, true followers of Prophet Muhammad SAW and his Sunnah (legal ways)], a Wasat (just) (and the best) nation, that you be witnesses over mankind and the Messenger (Muhammad SAW) be a witness over you. And We made the Qiblah (prayer direction towards Jerusalem) which you used to face, only to test those who followed the Messenger (Muhammad SAW) from those who would turn on their heels (i.e. disobey the Messenger). Indeed it was great (heavy) except for those whom Allâh guided. And Allâh would never make your faith (prayers) to be lost (i.e. your prayers offered towards Jerusalem). Truly, Allâh is full of kindness, the Most Merciful towards mankind.

وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُواْ شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا إِلاَّ لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَى عَقِبَيْهِ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلاَّ عَلَى الَّذِينَ هَدَى اللّهُ وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ إِنَّ اللّهَ بِالنَّاسِ لَرَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
Wakathalika jaAAalnakum ommatan wasatan litakoonoo shuhadaa AAala alnnasi wayakoona alrrasoolu AAalaykum shaheedan wama jaAAalna alqiblata allatee kunta AAalayha illa linaAAlama man yattabiAAu alrrasoola mimman yanqalibu AAala AAaqibayhi wa-in kanat lakabeeratan illa AAala allatheena hada Allahu wama kana Allahu liyudeeAAa eemanakum inna Allaha bialnnasi laraoofun raheemun

YUSUFALI: Thus, have We made of you an Ummat justly balanced, that ye might be witnesses over the nations, and the Messenger a witness over yourselves; and We appointed the Qibla to which thou wast used, only to test those who followed the Messenger from those who would turn on their heels (From the Faith). Indeed it was (A change) momentous, except to those guided by Allah. And never would Allah Make your faith of no effect. For Allah is to all people Most surely full of kindness, Most Merciful.
PICKTHAL: Thus We have appointed you a middle nation, that ye may be witnesses against mankind, and that the messenger may be a witness against you. And We appointed the qiblah which ye formerly observed only that We might know him who followeth the messenger, from him who turneth on his heels. In truth it was a hard (test) save for those whom Allah guided. But it was not Allah’s purpose that your faith should be in vain, for Allah is Full of Pity, Merciful toward mankind.
SHAKIR: And thus We have made you a medium (just) nation that you may be the bearers of witness to the people and (that) the Messenger may be a bearer of witness to you; and We did not make that which you would have to be the qiblah but that We might distinguish him who follows the Messenger from him who turns back upon his heels, and this was surely hard except for those whom Allah has guided aright; and Allah was not going to make your faith to be fruitless; most surely Allah is Affectionate, Merciful to the people.
KHALIFA: We thus made you an impartial community, that you may serve as witnesses among the people, and the messenger serves as a witness among you. We changed the direction of your original Qiblah only to distinguish those among you who readily follow the messenger from those who would turn back on their heels. It was a difficult test, but not for those who are guided by GOD. GOD never puts your worship to waste. GOD is Compassionate towards the people, Most Merciful.

১৪৩। এভাবেই ১৪২ আমি তোমাদের এক মধ্যপন্থী ও ভারসাম্যপূর্ণ জাতিরূপে ১৪৩ প্রতিষ্ঠিত করেছি; যেনো তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী স্বরূপ ১৪৪ এবং রাসূল তোমাদের উপর সাক্ষী স্বরূপ হবে। তুমি এতদিন যে কিব্‌লাতে অভ্যস্ত ছিলে আমি তা মনোনীত করেছিলাম, পরীক্ষা করার জন্য কে রাসূলকে অনুসরণ করে আর কে [বিশ্বাস থেকে] ফিরে যায় ১৪৫। আল্লাহ্‌ যাদের পরিচালিত করেন তারা ব্যতীত [অন্যদের জন্য] এটা অবশ্যই কঠিন [কাজ]। আল্লাহ্‌ এরূপ নন যে তোমাদের ঈমানকে ব্যর্থ করবেন ১৪৬। অবশ্যই আল্লাহ্‌ সকল মানুষের জন্য দয়ায় পরিপূর্ণ এবং অতীব অনুগ্রহশীল।

১৪২। মানবমণ্ডলীর ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু সমগ্র বিশ্বের কেবলার মুখ করার দিক কোনটি হবে এর মীমাংসা মানুষের হাতে ছেড়ে দিলে তা বিরাট মতানৈক্য ও কলহের কারণ হয়ে যাবে। সুতরাং এর মীমাংসা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকেই হওয়া উচিত। হযরত আদম (আঃ) এর পৃথিবীতে অবতরণের পূর্বেই ফেরেশ্‌তাদের দ্বারা কাবা গৃহের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল। আদম ও আদম সন্তানদের জন্য সর্বপ্রথম কেবলারূপে কাবা গৃহকেই সাব্যস্ত করা হয়। আল্লাহ্‌ সেই ঐতিহ্যবাহী স্থানকে মুসলমানদের জন্য কিবলার জন্য নির্দিষ্ট করে মুসলমানদের ইহুদী ও খৃষ্টানদের থেকে আলাদা উম্মত হিসেবে চিহ্নিত করে সম্মানিত করেছেন। কাবা শরীফ হচ্ছে তারই প্রতীক।

১৪৩। ‘মধ্যপথ অবলম্বী’ এই হচ্ছে ইসলামের মূল চেতনা। যেকোন কাজে বা ধর্মের ব্যাপারে ইসলাম বাড়াবাড়ি পছন্দ করে না। যারা ধর্মের ব্যাপারে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, ধর্মের খুঁটি-নাটি, নিয়ম-নীতি ইত্যাদি নিয়ে মাতামাতি করে, ফলে তারা ধর্মের যে মূল চেতনা বা ভিত্তি তা থেকে দূরে সরে যায়। মানুষের কল্যাণের দিকটি তাদের ভিতর থেকে অন্তর্হিত হয়ে যায়। আবার যারা ধর্মকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে শুধু পৃথিবীর সুখ, শান্তি, অর্থ, ক্ষমতা ইত্যাদির পিছনে ধাওয়া করে তারাও এক ধরণের মৌলবাদী (থেমে থাকা মানুষ)। এই দুই শ্রেণীর মধ্যে পার্থক্য খুব কম। কারণ এই দুইশ্রেণীই মানুষের কল্যাণের প্রকৃত দিকটি সম্বন্ধে অন্ধ; এবং আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্য সম্পর্কে বৈরী। এটা এক ধরণের স্বার্থপরতা ও স্বেচ্ছাচারিতা। কারণ নিজস্ব মনগড়া মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা মানব কল্যাণের দিকটি পরিত্যাগ করে, ফলে তারা আল্লাহ্‌র আইন লঙ্ঘন করে, যা ইসলামের মূলকথা তাকেই অস্বীকার করে। কিন্তু ইসলাম এই দুই চরম পন্থীতের পরিত্যাগ করতে বলে।
‘মধ্যপন্থী ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্প্রদায়’ এই কথাটির মধ্যে ইসলাম ধর্মের সারমর্ম ও সৌন্দর্য নিহিত। এই ভারসাম্যপূর্ণ সম্প্রদায়ের মানদণ্ড কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা আল-ইমরানে [৩:১০] বলা হয়েছে, তোমরাই সে শ্রেষ্ঠ উম্মত মানবজাতির কল্যাণের জন্য যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। (১) তোমরা ভাল কাজে আদেশ করবে; (২) মন্দ কাজে নিষেধ করবে এবং (৩) আল্লাহ্‌র উপর ঈমান আনবে।’ সূরা আরাফের শেষভাগে এই সম্প্রদায় সম্বন্ধে বলা হয়েছে ‘আমি যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় রয়েছে যারা সৎ পথ প্রদর্শন করে এবং তদানুযায়ী ন্যায় বিচার করে।’ অর্থাৎ এ সম্প্রদায়টি অন্যের হিতাকাঙ্ক্ষা ও উপকারের নিমিত্তে সৃষ্টি। তাদের অভীষ্ট কর্তব্য ও জাতীয় পরিচয় এই যে, তারা মানুষকে সৎ কাজের দিকে পথ দেখাবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। এবং এই হচ্ছে মধ্যপথ। ধর্ম সম্বন্ধে উন্মাদনা ইসলাম অনুমোদন করে না। মধ্যপন্থী হচ্ছে তারাই যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষী এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে জেহাদে তারা হচ্ছে নিঃস্বার্থ। তারা কোনও বিশেষ দেশ ও ভৌগলিক সীমার বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে না। তাদের কর্মক্ষেত্র হবে সমগ্র বিশ্ব এবং জীবনের সকল শাখায় পরিব্যপ্ত। এরাই প্রকৃত মুসলমান।

১৪৪। যখন দু’পক্ষ আত্ম কলহে মগ্ন হয়, তখন তাদের মধ্যে সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হয়। এসময়ে একজন নিরপেক্ষ ও ন্যায়বান ব্যক্তি সাক্ষী হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এখানে বলা হয়েছে ইহুদী জাতির কথা। যারা মুসার ধর্মের আচরণবিধি কঠোরভাবে অনুশীলন করতো ফলে ধর্ম রূপান্তরিত হয়ে গেলো ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে। ধর্মের যে প্রাণ তা গেলো হারিয়ে। আবার খৃষ্টানেরা বলে ধর্মের নামে পৃথিবীর সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করতে। তাদের কাছে পরকালের জন্য পৃথিবীর সমস্ত ক্রিয়া-কর্ম পরিতাজ্য। তাহলে তো সভ্যতা থমকে যাবে। মানব সভ্যতার যে অগ্রগতি তা হবে ব্যাহত। কিন্তু কর্মহীন দ্বীন আল্লাহ্‌র কাছে মনোনীত নয়। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে বলা হয়েছে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়েরই প্রয়োজন পরকালের মুক্তির জন্য। মুসলমান চলমান পৃথিবীর সমস্ত ক্রিয়াকর্মে অংশ গ্রহণ করবে। আমরা এর প্রকৃত উদাহরণ দেখি ৭ম ও ৮ম শতাব্দীতে মুসলিম সভ্যতার আমলে। তারা হয়েছেন বৈজ্ঞানিক, ডাক্তার, শিল্পী, সাহিত্যিক। পৃথিবীর সভ্যতাকে তারা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু একই সাথের তাদের সমস্ত ক্রিয়াকর্ম ছিল আল্লাহ্‌র কাছে নিবেদিত। আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্যের সাথে সাথেই ছিল তাদের দুনিয়া। দ্বীন ও দুনিয়া এই দুয়ে মিলেই ইসলাম। দুনিয়ার প্রলোভন দুনিয়াতে থেকেই আল্লাহ্‌র প্রতি ভালবাসায় আল্লাহ্‌র জন্য ত্যাগ করাই হচ্ছে ইসলামের মূল কথা। সুতরাং ইসলামে ঈমানদারগণকে এই মধ্যপন্থী ন্যায়বান সাক্ষী হিসেবে বলা হচ্ছে।

১৪৫। জেরুজালেমের বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে কিব্‌লা পরিবর্তন করে কাবাকে কিব্‌লা নির্দেশ করার পর ইহুদী ও আরবের মুশরিক ও মুনাফিকরা প্রশ্ন তুলতে থাকে যে এ ধর্মের কোনও স্থিতিশীলতা নাই। রোজ কিব্‌লা পরিবর্তন করে। কিন্তু আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সর্বত্রই। কিব্‌লার কোনও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নাই।
আল্লাহ্‌ মনোনীত করেছেন এটাই এ স্থানের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ। কোনটা কিব্‌লা হলো সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো কে আল্লাহ্‌র হুকুম বিশ্বাস ও আনুগত্যের সাথে পালন করলো। আল্লাহ্‌ কিব্‌লা পরিবর্তনের ঘটনাকে অনুসারী মুসলমানদের জন্য একটি পরীক্ষা সাব্যস্ত করেছিলেন যাতে প্রকাশ্যভাবে জানা যায় যে কে রাসূলের খাঁটি অনুসারী এবং কে নিজ মতের অনুসারী।

১৪৬। কিব্‌লা পরিবর্তনের পূর্বে যারা ইন্তেকাল করেছিলেন তারা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত কায়েম করেছিলেন। তাদের ঈমান ও সালাত কবুল হয়েছে কিনা এ নিয়ে কারও কারও মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এই আয়াতটি-তখন ইরশাদ হয়। আল্লাহ্‌র কাছে বিশ্বাসের গভীরতা ও আন্তরিকতাই আসল কাম্য। এক স্রষ্টায় বিশ্বাস, তাঁর প্রতি আনুগত্য এবং অকৃত্রিম ভালবাসা-এটাই আল্লাহ্‌ আমাদের কাছে চান। আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দার কাছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা হাদীস ফেকার চুলচেরা বিশ্লেষণের পাণ্ডিত্য চান না। বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠান, ধর্মের চুলচেরা বিশ্লেষণ, ধর্মের পাণ্ডিত্যে বাইরের পৃথিবীকে চমকিত করতে পারে, সাধারণ মানুষ মুগ্ধ হয়ে তার অনুসারী হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ্‌র কাছে এসব আনুষ্ঠানিকতার কোনও মূল্য নাই। আল্লাহ্‌ আমাদের পরিশুদ্ধ আত্মা চান। যে আত্মা থাকবে শুধু আল্লাহ্‌র প্রতি ভালবাসা, আনুগত্য ও বিশ্বাসে ভরপুর। এখানে আনুষ্ঠানিকতা বা তার ত্রুটিতে কিছুই যাবে বা আসবে না। সুতরাং যারা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে কিব্‌লা করে নামায পড়ে গত হয়েছেন তাদের নামাজ যদি আন্তরিক ও আল্লাহ্‌র প্রতি ভালবাসাতে ভরপুর হয় তবে অবশ্যই তা আল্লাহ্‌র কাছে গৃহীত। ইসলাম বাহুল্য আনুষ্ঠানিকতাকে সবসময়ে পরিত্যাগ করতে বলেছে।