অতঃপর তারা অবাধ্যতা করল ফলে আমি তাদের উপর প্রেরণ করলাম প্রবল বন্যা! আর তাদের উদ্যানদ্বয়কে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দুই উদ্যানে, যাতে উদগত হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং সামান্য কুলবৃক্ষ।
But they turned away (from the obedience of Allâh), so We sent against them Sail Al’Arim (flood released from the dam), and We converted their two gardens into gardens producing bitter bad fruit, and tamarisks, and some few lotetrees.
فَأَعْرَضُوا فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ سَيْلَ الْعَرِمِ وَبَدَّلْنَاهُم بِجَنَّتَيْهِمْ جَنَّتَيْنِ ذَوَاتَى أُكُلٍ خَمْطٍ وَأَثْلٍ وَشَيْءٍ مِّن سِدْرٍ قَلِيلٍ
FaaAAradoo faarsalna AAalayhim sayla alAAarimi wabaddalnahum bijannatayhim jannatayni thawatay okulin khamtin waathlin washay-in min sidrin qaleelin
YUSUFALI: But they turned away (from Allah), and We sent against them the Flood (released) from the dams, and We converted their two garden (rows) into “gardens” producing bitter fruit, and tamarisks, and some few (stunted) Lote-trees.
PICKTHAL: But they were froward, so We sent on them the flood of ‘Iram, and in exchange for their two gardens gave them two gardens bearing bitter fruit, the tamarisk and here and there a lote-tree.
SHAKIR: But they turned aside, so We sent upon them a torrent of which the rush could not be withstood, and in place of their two gardens We gave to them two gardens yielding bitter fruit and (growing) tamarisk and a few lote-trees.
KHALIFA: They turned away and, consequently, we poured upon them a disastrous flood, and we substituted their two gardens into two gardens of badtasting fruits, thorny plants, and a skimpy harvest.
১৬। কিন্তু তারা [আল্লাহ্র দিক থেকে ] মুখ ফিরিয়ে নিল, ফলে আমি তাদের বিরুদ্ধে বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা প্রেরণ করলাম ; ৩৮১২, ৩৮১৩। এবং আমি তাদের দুই সারি বাগানকে পরিবর্তন করে দিলাম এমন বাগানে যা উৎপন্ন করে তিক্ত ফল এবং ঝাউগাছ ও [ক্ষুদ্রকায় ] কিছু কূল গাছ ৩৮১৪।
৩৮১২। সাবাবাসীদের সুখ ও সমৃদ্ধির বাগানে অবিশ্বাস ও পাপের কীট প্রবেশ করে তা ধবংস করে দেয়। যুগে যুগে পৃথিবীতে সভ্যতার পতন ঘটেছে তাদের পাপের দুরুণ। এই পাপ বিভিন্ন মূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। সম্ভবতঃ সাবার লোকেরা তাদের সুখ ও সম্পদের গর্বে গর্বিত হয়ে উদ্ধত ও অহংকারী হয়ে ওঠে। বাঁধ তৈরীতে তারা যে জ্ঞান ও দক্ষতা প্রকাশ করেছে; উন্নত সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা যে সম্পদশালী দেশ গড়তে সক্ষম হয়েছে এ জন্য তারা আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পরিবর্তে উদ্ধত অহংকারী হয়ে ওঠে। হয়তো তারা সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছিলো ; ধনী ও গরীবের প্রভেদ ছিলো আকাশচুম্বী। হয়তো সমাজে এক শ্রেণী সুবিধা ভোগ করতো অন্য শ্রেণী থাকতো বঞ্চিত ; উচ্চবর্ণ , নিম্ন বর্ণের ভেদাভেদ মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়নে বাঁধা দান করতো ইত্যাদি। আজ এত সময়ের ব্যবধানে তাদের সঠিক পাপটির কথা আমাদের জানা নাই , তবে এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ বলেছেন যে, তারা আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করেছিলো। অর্থাৎ যে সম্পদ প্রাচুর্য আল্লাহ্ তাদের দান করেছিলেন , তারা ভুলে গিয়েছিলো , যে সম্পদ ও প্রাচুর্য কোন বিশেষ জনগোষ্ঠির জন্য নয়। আল্লাহ্র নেয়ামত সকলকেই সমভাবে ভোগ করতে হয়। তবেই সেই নেয়ামতের বরকত বা প্রাচুর্য বৃদ্ধি পায়। এই হচ্ছে পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাকৃতিক আইনের মত, নৈতিক আইন। যে আইন আল্লাহ্ সৃষ্টি করে দিয়েছেন যা অলঙ্ঘনীয়। সম্ভবতঃ তারা এই নৈতিক আইন ভঙ্গ করেছিলো। সুতারাং তাদের পাপ কাজের প্রতিক্রিয়া ঘটতে বাধ্য; প্রকৃতির প্রতিশোধ অবশ্যাম্ভবী। ইয়েমেনের পূর্ব প্রান্ত উচ্চ ভূমিতে বৃষ্টিপাতের ফলে বৃষ্টির পানি ভূমির ঢাল বেয়ে নিম্ন প্রান্তে চলে এসে তা জনজীবন বিপর্যস্ত করতো। এই পানিকে মাআরিব নামক স্থানে বাঁধের সাহায্যে প্রাকৃতিক হ্রদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় এবং খাল কেটে এই পানি সেচের ব্যবস্থা করা হয়। যখন তাঁদের অবাধ্যতা ও পাপের পাত্র পূর্ণ হয়, তখন আল্লাহ্র শাস্তি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে নেমে আসে। প্রচন্ড বন্যা তাদের বাঁধকে ভেঙ্গে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং তা আর পুণঃনির্মাণ সম্ভব হয় নাই। তবে যে বাঁধ তাদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দের উপায় ছিলো , আল্লাহ্ তাকেই তাদের বিপদ ও মুসিবতের কারণ করে দিলেন। কারণ বাঁধ না থাকাতে তাদের সেচ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং ফলে তাদের সম্পূর্ণ বাগানও শুকিয়ে যায়।
৩৮১৩। “Arim” অর্থাৎ বাঁধ অথবা মাটি দ্বারা তৈরী ও পাথর দ্বারা আচ্ছাদিত বিশাল মাআরিব বাঁধের নামও হতে পারে। এই বাঁধের সামান্য অস্তিত্ব এখনও বিদ্যমান আছে। ১৮৪৩ খৃষ্টাব্দে ফরাসী পর্যটক T.J Arnand পুরাতন ভগ্ন মাআরিব বাঁধ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। তিনি এর বিশালত্ব ও শিলালিপি সম্বন্ধে বর্ণনা করেন Journal Asiatique for January 1874। সম্পূর্ণ বিবরণ ফরাসী ভাষাতে লেখা। দ্বিতীয় বিবরণের জন্য দেখুন H.B. Harris , Journey Through Yemen, Edinburgh 1893, ফরাসী পর্যটক ‘Arnand’ বাঁধটির বর্ণনাতে উল্লেখ করেন যে, তা দুই মাইল লম্বা এবং ১২০ ফুট উচ্চ। বাঁধটি সম্ভবতঃ ১২০ খৃষ্টাব্দে ধ্বংস হয়ে যায় – যদিও অনেকে মনে করেন আরও পরে তা ধ্বংস হয়ে যায়।
৩৮১৪। সমৃদ্ধিশালী বাগান অরণ্যে পরিণত হয়। রসালো ফল গাছের স্থানে তিক্ত স্বাদ যুক্ত ফল গাছ জন্মে । ঝাউগাছ অর্থাৎ এগুলি এমন গাছ যাতে ফুল বা ফল কিছুই জন্মে না। যেখানে ফুলের ঘ্রাণে বাতাস আমোদিত হতো, রসালো ফলভারে বৃক্ষ অবনত থাকতো সেখানে তিক্ত স্বাদ যুক্ত ফলের গাছ , ঝাউ গাছ যাতে ফল বা ফুল কিছু জন্মে না , এবং আগাছাতে ভর্তি হয়ে যায়। আরবী লোটগাছকে বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে কূল গাছ, লোট গাছ এমন এক ধরণের গাছ যার ফল সুস্বাদু নয় বা তার ছায়াও কার্যকরী নয়। আঙ্গুর ও দাড়িম্ব ফলের স্থানে এসব বৃক্ষ জন্মে। অর্থাৎ এ এমন এক চিত্র যার সাহায্যে বোঝানো হয়েছে সুসজ্জিত ফল ও ফুলের বাগানের পরিবর্তে আগাছার অরণ্য।