002.062

নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।
Verily! Those who believe and those who are Jews and Christians, and Sabians, whoever believes in Allâh and the Last Day and do righteous good deeds shall have their reward with their Lord, on them shall be no fear, nor shall they grieve .

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ وَالنَّصَارَى وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحاً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
Inna allatheena amanoo waallatheena hadoo waalnnasara waalssabi-eena man amana biAllahi waalyawmi al-akhiri waAAamila salihan falahum ajruhum AAinda rabbihim wala khawfun AAalayhim wala hum yahzanoona

YUSUFALI: Those who believe (in the Qur’an), and those who follow the Jewish (scriptures), and the Christians and the Sabians,- any who believe in Allah and the Last Day, and work righteousness, shall have their reward with their Lord; on them shall be no fear, nor shall they grieve.
PICKTHAL: Lo! Those who believe (in that which is revealed unto thee, Muhammad), and those who are Jews, and Christians, and Sabaeans – whoever believeth in Allah and the Last Day and doeth right – surely their reward is with their Lord, and there shall no fear come upon them neither shall they grieve.
SHAKIR: Surely those who believe, and those who are Jews, and the f Christians, and the Sabians, whoever believes in Allah and the Last day and does good, they shall have their reward from their Lord, and there is no fear for them, nor shall they grieve.
KHALIFA: Surely, those who believe, those who are Jewish, the Christians, and the converts; anyone who (1) believes in GOD, and (2) believes in the Last Day, and (3) leads a righteous life, will receive their recompense from their Lord. They have nothing to fear, nor will they grieve.

রুকু – ৮

৬২। যারা ঈমান আনে [এই কুর-আনে], এবং যারা ইহুদীদের [ধর্মগ্রন্থ] অনুসরণ করে, এবং খৃশ্চিয়ান, এবং সাবীয়ান ৭৬, যারাই ঈমান আনে আল্লাহ্‌র [একত্বে] শেষ [বিচার] দিবসে এবং সৎ কাজ করে, তাদের জন্য পুরষ্কার আছে তাদের প্রভুর নিকট। তাদের কোন ভয় নাই তারা দুঃখিতও হবে না ৭৭।

৭৬। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ইরাকের নিম্নাংশ বসরার সন্নিকটে খুব ছোট এক সম্প্রদায় বাস করে। এদের জনসংখ্যা ২০০০ এর বেশী হবে না। আরবীতে তাদের বলা হয় সুবী (বহুবচনে সুবা)। তাদেরকে বলা হয় সার্বিয়ান এবং নাসোরিয়ান, অথবা সেন্ট জনসের ক্রিশ্চিয়ান। এরা নিজেদের আধ্যাত্মিক রহস্যবাদী খৃষ্টানরূপে বা জীবনের মূল রহস্যভেদী রূপে দাবী করে। তারা সাদা কাপড় পরে এবং ঘন ঘন পানিতে ডুব দিয়ে গোসল করে। তাদের ধর্মপুস্তকের নাম গিন্‌জা, যা সিরীয় ভাষায় লেখা। তারা অগ্নি উপাসক বা জরাথুষ্ট্র। তারা যে কোন নদীকে ইয়ারডান (জর্দান) নামে অভিহিত করে। তারা তাদের মুসলমান প্রতিবেশীদের সাথে সুখ-শান্তিতে বসবাস করে। এদের সাথেই কুরআন শরীফ বর্ণিত সার্বিয়ানদের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায; কিন্তু আবার কুরআন বর্ণিত সম্প্রদায়ের সাথে সম্পূর্ণ একও নয়।

আর একটি সম্প্রদায় যাদেরকে বলা হতো হারানের নকল সার্বিয়ান। এই সম্প্রদায় তাদের লম্বা চুল ও অদ্ভূত পোষাকের জন্য ৮৩০ খৃষ্টাদে খলিফা হারুন-অর-রশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সম্ভতঃ তারা কুরআনের বর্ণিত সার্বিয়ান নাম গ্রহণ করে কারণ তাহলে তারা কিতাব প্রাপ্ত জাতিসমূহের অন্তর্গত হতে পারবে। এরা সিরিয়াবাসী এবং তারার পূজক (star worshipper) এবং এদের আচার আচরণ সমসাময়িক গ্রীক ভাষাভাষি ইহুদীদের মত। এরা যদিও নিজদের কিতাবপ্রাপ্ত জাতিসমূহের অন্তর্গত বলে দাবী করে তবে তা যৌক্তিক কিনা তা বিবেচ্য। এ ব্যাপারে মাওলানা ইউসুফ আলীর মতামত হচ্ছে (যদিও অনেক লেখক ভিন্নমত পোষণ করেন) সার্বিয়ান কথাটির সঙ্কীর্ণার্থে ব্যবহার না করে ব্যাপক ও সার্বজনীন অর্থে ব্যবহার করা যায়। এদের মধ্যে যুগে যুগে অন্যান্য মহান শিক্ষক যারা পৃথিবীকে নৈতিক শিক্ষা দানে ধন্য করেছেন তাঁদের সবাইকে অন্তুর্ভুক্ত করা যায়। এখানেও ইসলামের মাহাত্ম্য ও সার্বজনীনতা বিদ্যমান।

আর একটি শ্রেণী আছে যাদের সার্বিয়ান নামে অভিহিত করা হয়। এরা প্রাচীন আরবের ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। যার সাথে ফিনিশিয়া দেশীয় এবং বেবীলন দেশীয়দের সম্যক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ৮০০-৭০০ খৃঃ পূর্বে আরবের দক্ষিণে ইয়েমেনের কাছে এদের এক সমৃদ্ধশালী রাজ্যের বিস্তার লাভ করে, যদিও এদের সাম্রাজ্যের সূত্রপাত হয় আরবের উত্তরাংশে।এরা তারার পূজক ছিল (সূর্য, চন্দ্র, ভেনাস)। সম্ভবতঃ শেবার রাণী এদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরা ৩৫০ খৃষ্টাব্দে আসোরিয়ানদের কাছে পরাভূত হয়। এদের রাজধানী ছিল সানার নিকটে। এরা পাথরের তৈরি প্রাসাদ তৈরি করেছিল যার বৈশিষ্ট্য ছিল সুদৃশ্য তোরণ।

৭৭। এই কথা বলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম ধর্ম কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের একচেটিয়া অন্তর্ভূক্ত নয়। যেমন-ইহুদীরা নিজেদের স্বতন্ত্র মনে করে, খৃষ্টানেরা নিজেদের মনে করে ইহুদীদের থেকে উদ্ভূদ। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র প্রদত্ত ধর্ম ইহুদীদের মধ্যে ব্যতীত আর কারও কাছে নাজেল হওয়া সম্ভব নয়। কারন তারা বিশ্বাস করে তারা আল্লাহ্‌র মনোনীত। এমনকি আধুনিক খৃষ্টান সম্প্রদায় সচেতনভাবে যা অযৌক্তিক ভাবে আল্লাহ্‌র প্রতিনিধিমূলক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করে যে পাদ্রী বা পুরোহিতের সাহায্য পাপস্খালনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তারা বিশ্বাস করে যে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে আল্লাহ্‌র মনোনীত পাদ্রী বা পুরোহিতের প্রয়োজন। এর অর্থ দাঁড়ায় যে খৃষ্টান বা ইহুদী ব্যতীত আর কেহই আল্লাহ্‌র সন্নিকটে পৌঁছানোর যোগ্য নয়। কিন্তু উপরের আয়াত থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। হযরত মুহম্মদ (দঃ) এর পূর্বে পৃথিবীতে ইসলাম ছিল। কুরআন শরীফের [৩ : ৬৭] এ পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম ছিলেন একজন প্রকৃত মুসলমান। কারণ তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে আল্লাহ্‌র ইচ্ছার কাছে সমর্পন করেছিলেন। ইসলামের শিক্ষার মূল নির্যাস হচ্ছে আল্লাহ্‌র কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পন। আর আল্লাহ্‌র ইচ্ছা হচ্ছে (১) বিশ্বাস করা স্রষ্টা এক এবং অদ্বিতীয়, পরকালে তার কাছেই ইহকালের হিসাব দিতে হবে এবং (২) তাঁরই সন্তুষ্টি বিধানের জন্য সৎ কাজ করতে হবে। এই দুই ধর্ম যে পালন করে, সে-ই প্রকৃত মুসলমান। তাদের কোনও ভয় নাই। ইসলামের এই শিক্ষা সর্বকালের, সর্বযুগের এবং সর্ব মানুষের জন্য।