নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা’ আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে।
Verily! In the creation of the heavens and the earth, and in the alternation of night and day, and the ships which sail through the sea with that which is of use to mankind, and the water (rain) which Allâh sends down from the sky and makes the earth alive therewith after its death, and the moving (living) creatures of all kinds that He has scattered therein, and in the veering of winds and clouds which are held between the sky and the earth, are indeed Ayât (proofs, evidences, signs, etc.) for people of understanding.
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ السَّمَاء مِن مَّاء فَأَحْيَا بِهِ الأرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخِّرِ بَيْنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
Inna fee khalqi alssamawati waal-ardi waikhtilafi allayli waalnnahari waalfulki allatee tajree fee albahri bima yanfaAAu alnnasa wama anzala Allahu mina alssama-i min ma-in faahya bihi al-arda baAAda mawtiha wabaththa feeha min kulli dabbatin watasreefi alrriyahi waalssahabi almusakhkhari bayna alssama-i waal-ardi laayatin liqawmin yaAAqiloona
YUSUFALI: Behold! in the creation of the heavens and the earth; in the alternation of the night and the day; in the sailing of the ships through the ocean for the profit of mankind; in the rain which Allah Sends down from the skies, and the life which He gives therewith to an earth that is dead; in the beasts of all kinds that He scatters through the earth; in the change of the winds, and the clouds which they Trail like their slaves between the sky and the earth;- (Here) indeed are Signs for a people that are wise.
PICKTHAL: Lo! In the creation of the heavens and the earth, and the difference of night and day, and the ships which run upon the sea with that which is of use to men, and the water which Allah sendeth down from the sky, thereby reviving the earth after its death, and dispersing all kinds of beasts therein, and (in) the ordinance of the winds, and the clouds obedient between heaven and earth: are signs (of Allah’s Sovereignty) for people who have sense.
SHAKIR: Most surely in the creation of the heavens and the earth and the alternation of the night and the day, and the ships that run in the sea with that which profits men, and the water that Allah sends down from the cloud, then gives life with it to the earth after its death and spreads in it all (kinds of) animals, and the changing of the winds and the clouds made subservient between the heaven and the earth, there are signs for a people who understand.
KHALIFA: In the creation of the heavens and the earth, the alternation of night and day, the ships that roam the ocean for the benefit of the people, the water that GOD sends down from the sky to revive dead land and to spread in it all kinds of creatures, the manipulation of the winds, and the clouds that are placed between the sky and the earth, there are sufficient proofs for people who understand.
রুকু – ২০
১৬৪। দেখো! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে, সমুদ্রে বিচরণশীল জাহাজ যা মানুষের জন্য মুনাফা বয়ে আনে, আকাশ থেকে আল্লাহ্ যে বৃষ্টি প্রেরণ করেন এবং তার সাহায্যে তিনি যে মৃত ধরিত্রীকে পুনর্জীবিত করেন তাতে; পৃথিবীতে সকল প্রকার জীবজন্তুর বিস্তারণে; বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনে এবং সে মেঘমালা যাকে আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে অনুগত করে রাখা হয়েছে; [এসবের মাঝে] অবশ্যই জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে ১৬৬।
১৬৬। এই সুন্দর আয়াতটি হিমালয় পর্বতের মত। সৌন্দর্যমন্ডিত কিন্তু সুউচ্চ ও দৃপ্ত। আয়াতটির বর্ণনা শুধু সৌন্দর্য্যমন্ডিতই নয়, আয়াতটি আমাদের পরিচালিত করে বৃহত্তর, সুন্দরতম জীবনের প্রতি। আয়াতটির উপমাগুলি অনুধাবনযোগ্য এবং সাহিত্য রসে সমৃদ্ধ। এই আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ্ এক এবং অদ্বিতীয়। প্রকৃতির বিভিন্নতার মধ্যে তার নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। তার নির্দশন ছড়িয়ে আছে সর্বত্র-সৌন্দর্য্য, শক্তিতে এবং মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিষে। এই সব নির্দশন দ্বারা আল্লাহ্ মানুষের বুদ্ধি এবং জ্ঞানকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন। প্রথমে আয়াতটি আরম্ভ হয়েছে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির মাহাত্ম্য দিয়ে। বিশাল আকাশ ও নভোমন্ডল মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে কিন্তু মানুষের চিন্তায় কল্পনায় সে অত্যন্ত কাছে। সৌন্দর্য্যমন্ডিত তারায় খচিত, চন্দ্রালোক শোভিত, প্রদীপ্ত সূর্যালোকিত মেঘে ঢাকা নীলাম্বর, আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঋতুতে পৃথিবীর রং রূপের পরিবর্তন, সবই মানুষের চিন্তার দিগন্ত কল্পনার সীমানাকে ছাড়িয়ে যায়। আকাশ ও পৃথিবীর কি নিগূঢ় সম্পর্ক। কতদূরে সূর্যের অবস্থান তবুও পৃথিবীর দিনরাত্রির পরিবর্তনের সাথে তার কতই না নিবিড় সম্পর্ক। সৃষ্টির কি অপার রহস্য-দিন রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধির সাথে সাথে পৃথিবীতে ঋতুর পরিবর্তন হয়। এক এক ঋতুতে প্রকৃতি এক এক সাজে সেজে ওঠে। আবার এই পরিবর্তনের ধারা সমগ্র পৃথিবীব্যাপী এক নয়। দ্রাঘিমাংশ পরিবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান বিভিন্ন আবহাওয়া ধারণ করে। ফলে সে দেশের প্রকৃতিও বিভিন্ন হয়। স্রষ্টার সুনিপুণ কৌশলের জন্যই একই পৃথিবীতে আমরা হাজারো বৈচিত্র্যের সন্ধান পাই। ‘দিন ও রাত্রির পরিবর্তন, যা মানুষের হিত সাধন করে’-আল্লাহ্ দিনকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের রুজী রোজগারের জন্য আর রাতকে সৃষ্টি করেছেন বিশ্রামের জন্য। এই আয়াতে কাজ এবং রুজী রোজগারের বর্ণনার মধ্যে একটি সুন্দর উপমার সাহায্য নেওয়া হয়েছে। যেমন অসীম সমুদ্রে হেলে দুলে চলেছে নৌযান সম্পূর্ণ এক দেশ থেকে আর এক দেশে। বাণিজ্য জাহাজ দেশে দেশে, মানুষে-মানুষে বন্ধনের প্রতীক, যোগাযোগের মাধ্যম। এভাবে চিন্তা করলে পৃথিবীর সমুদ্র বা জলভাগ, স্থলভাগ থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আবার এই আয়াতে আল্লাহ্ বৃষ্টিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন দেয়া-নেয়ার সম্পর্কের সাথে। আকাশ সমুদ্রের পানিকে গ্রহণ করে মেঘরূপে, আবার পৃথিবী সেই পানি গ্রহণ করে বৃষ্টিরূপে আবার সেই বৃষ্টির পানি পৃথিবী সমুদ্রকে ফিরিয়ে দেয় নদীর মাধ্যমে। এটাকে বিজ্ঞানীরা ‘পানি চক্র’ নামে অভিহিত করে। তবে এটা কি স্রষ্টার সৃষ্টির এক অপূর্ব কৌশল নয়? একই পানি চক্রাকারে প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু পরিণতিতে পৃথিবী ফুলে, ফলে ফসলে সমৃদ্ধ হচ্ছে-নদী সকল নাব্যতা রক্ষা করছে। শীতের শুষ্কতায় বৃক্ষ তরুলতা মৃত প্রায় হয়ে গেলে বৃষ্টির পানিতে মৃত প্রায় পৃথিবী আবার সজীব হয়ে উঠে। নদী সকল ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। আল্লাহ্ পৃথিবীব্যাপী ছড়ানো তার নির্দশন সমূহের প্রতি ইঙ্গিত করতে যেয়ে বলেছেন, ‘আল্লাহ্ পৃথিবীব্যাপী বহুধরণের জীব জন্তু সৃষ্টি করেছেন। বিশাল ডাইনোসর থেকে অনুজীব এবং ভাইরাস যা অনুবীক্ষণ যন্ত্রেও দেখা সম্ভব নয়। সবই আল্লাহ্র সৃষ্টি। এর প্রতিটিতেই স্রষ্টার সৃষ্টি কৌশল বিদ্যমান। আল্লাহ্ মানুষকে চিন্তা করতে বলেছেন তাকে অনুধাবন করতে বলেছেন তার সৃষ্টির রহস্য কৌশলের মধ্য দিয়ে। তিনি যে কত বড় কর্মকার, কত বড় শিল্পী, কত বড় বিজ্ঞানী তার অনুধাবন করতে হলে অবশ্যই প্রত্যেককে বিজ্ঞান জানতে হবে। জ্ঞানী হতে হবে। আল্লাহ্ বলেছেন তাকিয়ে দেখ-কিভাবে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বাতাসের গতিবেগের পরিবর্তন হয়। কখনও বাতাস উত্তর দিক থেকে কখনও দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এর ফলে সমুদ্রের জলরাশি মেঘ হয়ে ভেসে ভেসে কোনও দেশে শীতে কোনও দেশে গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাত ঘটায়। পৃথিবীকে সজীব রাখার আল্লাহ্র এ এক অপূর্ব কৌশল। প্রাচীনকালে যখন কলের জাহাজ আবিষ্কার হয় নাই, নাবিকেরা এই বাতাসের উপর নির্ভর করে সমুদ্র যাত্রা করতো, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতো, এক দেশের সভ্যতা অন্য দেশে প্রসার লাভ করতো। এখানে আল্লাহ্ বলেছেন মেঘ যেনো আকাশ, পৃথিবী ও বাতাসের দাস হিসেবে কাজ করে। শুধু তাই-ই নয় মেঘকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র বৃষ্টির জন্য নয়। প্রচণ্ড দাব-দাহে মেঘ আমাদের ছায়া দান করে, সূর্যাস্তের সময়ে পশ্চিম আকাশে মেঘের রংয়ের খেলা কাকে না মুগ্ধ করে? আল্লাহ্ বলেছেন তাঁকে অনুধাবন করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকে জানতে হবে। তবেই তার অপার জ্ঞানের, করুণার নিদর্শনের একটু মাত্র কণা আমরা অনুধাবন করতে পারবো। ফলে আমাদের হৃদয়ে তাঁর করুণার জন্য ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জন্মাবে। শুধুমাত্র মৌখিকভাবে তাঁকে স্মরণ করে তাকে ভালবাসা যায় না, তার যোগ্য সম্মান জানানো যায় না। নিরাকার আল্লাহ্কে হৃদয়ে অনুভব করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকে অনুধাবনের মাধ্যমেই তা করা সম্ভব।