অতঃপর তারা বলল, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের ভ্রমণের পরিসর বাড়িয়ে দাও। তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল। ফলে আমি তাদেরকে উপাখ্যানে পরিণত করলাম এবং সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিলাম। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
But they said: ”Our Lord! Make the stages between our journey longer,” and they wronged themselves, so We made them as tales (in the land), and We dispersed them all, totally. Verily, in this are indeed signs for every steadfast grateful (person).
فَقَالُوا رَبَّنَا بَاعِدْ بَيْنَ أَسْفَارِنَا وَظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ فَجَعَلْنَاهُمْ أَحَادِيثَ وَمَزَّقْنَاهُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
Faqaloo rabbana baAAid bayna asfarina wathalamoo anfusahum fajaAAalnahum ahadeetha wamazzaqnahum kulla mumazzaqin inna fee thalika laayatin likulli sabbarin shakoorin
YUSUFALI: But they said: “Our Lord! Place longer distances between our journey-stages”: but they wronged themselves (therein). At length We made them as a tale (that is told), and We dispersed them all in scattered fragments. Verily in this are Signs for every (soul that is) patiently constant and grateful.
PICKTHAL: But they said: Our Lord! Make the stage between our journeys longer. And they wronged themselves, therefore We made them bywords (in the land) and scattered them abroad, a total scattering. Lo! herein verily are portents for each steadfast, grateful (heart).
SHAKIR: And they said: O our Lord! make spaces to be longer between our journeys; and they were unjust to themselves so We made them stories and scattered them with an utter scattering; most surely there are signs in this for every patient, grateful one
KHALIFA: But they (turned unappreciative and) challenged: “Our Lord, we do not care if You increase the distance of our journeys (without any stations).” They thus wronged their own souls. Consequently, we made them history, and scattered them into small communities throughout the land. This should provide lessons for those who are steadfast, appreciative.
১৯। কিন্তু তারা বলেছিলো ৩৮১৭ , ” হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভ্রমণের বিশ্রাম স্থান দূরে দূরে স্থাপন কর ৩৮১৮।” কিন্তু [ এর দ্বারা ] তারা নিজেদেরই ক্ষতি করলো। অবশেষে আমি তাদের প্রবাদ কাহিনীতে পরিণত করলাম ৩৮১৯। এবং তাদের আমি ছিন্ন ভিন্ন করে দিলাম। নিশ্চয়ই এর মাঝে নিদর্শন রয়েছে প্রতিটি [আত্মার জন্য] যারা ধৈর্য্যশীল, দৃঢ় ও কৃতজ্ঞ।
৩৮১৭। ‘তারা বলেছিলো ‘ কোরাণের ভাষায় এখানে ” বলেছিলো” অর্থাৎ কার্যে পরিণত করার জন্য চিন্তা করলো। তফসীরকারগণ এই শব্দটিকে বলেন, “Language of actual facts” [Zaban hal] যার বিপরীত আছে “Language of words” [Zaban qal] ।
৩৮১৮। সাবা নগরীর অধিবাসীরা সম্পদ ভোগ করতে করতে আল্লাহ্র হুকুমকে ভুলে যায়। তারা ভুলে যায় আল্লাহ্র নেয়ামতকে একা ভোগ করা যায় না। সবার সাথে অংশদারিত্বে ভোগ করলে আল্লাহ্র নেয়ামতের বরকত বৃদ্ধি পায়। সাবা নগরীর অধিবাসীরা ন্যায় -অন্যায় পার্থক্য ভুলে স্বার্থপর ও লোভী হয়ে ওঠে। বণিকদের নিকট থেকে বিভিন্ন নগরী যে আয় করতো , সে আয় তারা একাই ভোগ করতে চায়। এ জন্য তারা বণিকদের থামার বহুস্থানকে নির্দ্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে কেন্দ্রীভূত করে যেনো শুধু তাদের অধিকার একচেটিয়া হয়। এর জন্য তারা বড় বড় শহর বন্ধ করে দেয় ও বাণিজ্য পথে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। স্বার্থপরতা ও লোভ মানুষের জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে ধবংস করে দেয়। এটা আল্লাহ্র নৈতিক আইন। লোভী ও স্বার্থপর ব্যক্তি চক্ষু থাকতেও অন্ধ হয়, ফলে তারা লোভের ও স্বার্থপরতার বশবর্তী হয়ে নিজ স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। সাবা বাসীদের বেলাতেও এই সত্য প্রযোজ্য ছিলো। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, ইয়েমেনের পতনের সাথে সাথে আরবের প্রধান বাণিজ্য পথ ইয়েমেন – সিরিয়ার বাণিজ্য পথ ধীরে ধীরে প্রত্যাখাত হয় এবং মহাকালের গর্ভে একদিন তা হারিয়ে যায়। মহাকালের যাত্রা পথে জাতির উত্থান পতনকে আমরা খুব স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করি। এ কথা সত্য যে বাহ্যিক ভাবে বিভিন্ন জাতির পতনের বিভিন্ন কারণ থাকে, কিন্তু সব চেয়ে বড় কারণ যেটা সকল জাতির জন্য প্রযোজ্য তা হচ্ছে জাতির নৈতিক অধঃপতন। যখনই কোনও জাতি আল্লাহ্ প্রদত্ত নৈতিক নীতিমালা থেকে বিচ্যুত হয়ে ন্যায় -অন্যায়ের পার্থক্য ভুলে যায় তখনই সে জাতির পতন অবশ্যাম্ভবী হয়ে দাঁড়ায়।
৩৮১৯। আল্লাহ্ সাবা নগরীর অধিবাসীদের সকল রকম সুযোগ-সুবিধা দান করেছিলেন। তাদের যেমন ছিলো সম্পদ ,তেমনি ছিলো দক্ষতা ও ব্যবসা বাণিজ্য , সর্বপরি তাদের ছিলো সমৃদ্ধশালী ও সুন্দর একটি দেশ। জাতি হিসেবে তারা ছিলো অত্যন্ত গুণবান। যতদিন তারা তাদের এই গুণাবলী চরিত্রের মাঝে ধারণ করে রাখতে সক্ষম হয়েছিলো তারা ছিলো একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি। নৈতিক গুণাবলী হচ্ছে আল্লাহ্র আইন মানার প্রবণতা। যেমন : সততা , ন্যায়পরায়নতা, সত্যপরায়ণতা ইত্যাদি হচ্ছে আল্লাহ্র হুকুম বা নৈতিক আইন। যারা বা যে জাতি এই হুকুম মেনে চলে তাদের সুখ সমৃদ্ধি ও শান্তি অনিবার্য। আর যারা তার বিরোধিতা করে অর্থাৎ যে জাতি মিথ্যার দোষে নিমগ্ন। অন্যায় দুর্নীতিপরায়ণতা যাদের নৈতিক চরিত্র ,তাদের ধবংস অনিবার্য, এই হচ্ছে আল্লাহ্র আইন। সাবাবাসীরা যখন অন্যায় লোভে স্বার্থপর হয়ে ওঠে এবং অন্যের সমৃদ্ধিতে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে একাই সব ভোগ করতে চায়, তখনই তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ বঞ্চিত হয়ে পড়ে। সম্ভবতঃ তাদের পতনের কারণ সমূহের মধ্যে প্রথমত : ছিলো প্রাকৃতিক। হয়তো বা আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দেশটিতে বৃষ্টিপাত কমে যায় ; যার কারণ হয়তো বা অধিক বৃক্ষকর্তনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া। মানুষই প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করার মূল কারণ। উপরন্তু বাণিজ্য রাস্তার পরিবর্তন ঘটার জন্য তাদের আয় কমে যায়। বানিজ্য সড়কের পরিবর্তনের কারণঃ পূর্বে এই সড়কের দুপার্শ্বে অজস্র জনপদ ছিলো, এবং এ সব জনপদে নিরাপত্তার অভাব ছিলো না। ফলে বণিকেরা তাদের বাণিজ্য সম্ভার নিয়ে নির্ভয়ে এই রাস্তায় চলাচল করতো। এবং রাত্রিতে এ সব জনপদে আশ্রয় গ্রহণ করতো। কিন্তু সাবা বাসীরা লোভের বশবর্তী হয়ে অন্য সকলকে উচ্ছেদ করে বণিকদের থামার জন্য নির্দ্দিষ্ট কয়েকটি স্থানকে কেন্দ্রীভূত করে। ফলে সমগ্র বাণিজ্য পথের নিরাপত্তা রহিত হয়ে যায় কারণ ডাকাতির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। পূর্বের জনবসতিগুলি এমন সুষম ও সমান দূরতে গড়ে উঠেছিলো যে বণিকেরা নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এক জনবসতি থেকে অন্য জনবসতিতে পৌঁছে যেতো – যেখানে তাদের জন্য ছিলো নিরাপত্তা, আশ্রয়, ও আহার, তারা দিন রাত্রি সর্বক্ষণ নিশ্চিন্তে সফর করতো। এখন জনবসতিগুলি বহুদূরে অবস্থানের ফলে বণিকদের পথিমধ্যে রাত্রি নেমে আসতো , এবং নির্জন সড়কে প্রায়ই তারা ডাকাতির সম্মুখীন হতো। এ সব কারণে প্রধান বাণিজ্য সড়কটি আস্তে আস্তে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সুতারাং সাবাবাসীরা যখন চরিত্রের নৈতিক গুণাবলী হারিয়ে ফেলে তখনই তাদের বিপর্যয় শুরু হয়। চরিত্রের নৈতিক গুণাবলীই মানুষকে জনপ্রিয় করে তোলে। জাতির পতনের জন্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অন্য যে কোনও কারণকেই দায়ী করা হোক না কেন এর মূল কারণ একটাই আর তা হচ্ছে আল্লাহ্র হুকুমকে অমান্য করে মানুষ যখন শুধুমাত্র নিজ স্বার্থ, লোভ, অর্থ -সম্পদ এককথায় জাগতিক বিষয় বস্তুর আরাধনা করে তখনই বিভিন্ন বিপর্যয় বিপদের আকারে নেমে আসে। সুক্ষভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় এসব বিপর্যয় অপ্রতিরোধ্য নয়। কিন্তু মানুষের লোভ ও স্বার্থপরতা যেখানে বড় হয়ে দেখা যায় , সেখানে এসব বিপর্যয় মোকাবিলার মত ক্ষমতা থাকে না। কারণ তাদের মাঝে প্রকৃত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুপস্থিত থাকে ফলে তারা শয়তানের ফাঁদে আটকে যায়। এ ভাবেই সাবাবাসীরা ধীরে ধীরে মহাকালের অতলগর্ভে হারিয়ে যায় এবং কাহিনীতে পরিণত হয়।
উপদেশ : মানুষের লোভ ও স্বার্থপরতা কখনও প্রকৃত সুখের সন্ধান দিতে পারে না। আল্লাহ্র করুণা ও অনুগ্রহ-ই হচ্ছে প্রকৃত সুখ ও সমৃদ্ধির ঠিকানা। আল্লাহ্র অনুগ্রহ সকলের সাথে অংশীদারিত্বে বৃদ্ধি পায়; সম্পদে , প্রাচুর্যে উপচে পড়ে। কিন্তু স্বার্থপরতা ও লোভ যদি প্রকট আকার ধারণ করে এবং একাই সব ভোগ করতে চায়, তবে সে শয়তানের ফাঁদে আটকে পড়ে। চরিত্রের নৈতিক গুণাবলীই ব্যক্তি বা জাতিকে আল্লাহ্র অনুগ্রহের যোগ্য করে তোলে।
অনুবাদকের মন্তব্য : এ সব কারণেই খৃষ্টান হওয়া সত্বেও পাশ্চাত্যে সমাজ আজ উন্নতির শিখরে।