হে মুসলমানগণ, তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত; অতঃপর বুঝে-শুনে তা পরিবর্তন করে দিত এবং তারা তা অবগত ছিল।
Do you (faithful believers) covet that they will believe in your religion inspite of the fact that a party of them (Jewish rabbis) used to hear the Word of Allâh [the Taurât (Torah)], then they used to change it knowingly after they understood it?
أَفَتَطْمَعُونَ أَن يُؤْمِنُواْ لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلاَمَ اللّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِن بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
AfatatmaAAoona an yu/minoo lakum waqad kana fareequn minhum yasmaAAoona kalama Allahi thumma yuharrifoonahu min baAAdi ma AAaqaloohu wahum yaAAlamoona
YUSUFALI: Can ye (o ye men of Faith) entertain the hope that they will believe in you?- Seeing that a party of them heard the Word of Allah, and perverted it knowingly after they understood it.
PICKTHAL: Have ye any hope that they will be true to you when a party of them used to listen to the word of Allah, then used to change it, after they had understood it, knowingly?
SHAKIR: Do you then hope that they would believe in you, and a party from among them indeed used to hear the Word of Allah, then altered it after they had understood it, and they know (this).
KHALIFA: Do you expect them to believe as you do, when some of them used to hear the word of GOD, then distort it, with full understanding thereof, and deliberately?
৭৫। [হে বিশ্বাসী সম্প্রদায়] তোমরা কি এই আশা পোষণ কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? – যখন তাদের একদল আল্লাহ্র বাণী শোনে এবং তা হৃদয়ঙ্গম করার পরে; জেনে-বুঝে বিকৃত করে থাকে।
৭৬। দেখো! যখন তারা মুমিনদের সংস্পর্শে আসে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ ৮৩, কিন্তু যখন তারা একান্তে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়, তখন তারা বলে, ‘আল্লাহ্ তোমাদের যে প্রত্যাদেশ দিয়েছেন তোমরা কি তাদের তা বলে দেবে; যেনো ইহার দ্বারা তোমাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র সামনে যুক্তি পেশ করতে পারে?’ তোমরা কি [তাদের উদ্দেশ্য] বুঝতে পার না ?
৮৩। তাৎক্ষণিকভাবে এই আয়াতে মদিনার সমসাময়িক ইহুদী সম্প্রদায়ের সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিন্তু এর আবেদন সার্বজনীন-সর্বকালের, সর্ব সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য-
মদিনার মুসলিমদের ধারণা ছিল ইহুদীরা হযরত মুহম্মদ-কে (সাঃ) নবী হিসেবে সাদরে গ্রহণ করবে। কারণ তাদের ধর্মগ্রন্থে মুহম্মদ (দঃ) সম্বন্ধে বলা আছে। কিন্তু মুসলমানদের এ ধারণা ছিল ভুল। তাদের ধর্মগ্রন্থে [Deut xviii-১৮] এ বর্ণিত আছে যে, ‘I will raise them up a prophet from among their brethen, like unto thee’ অর্থাৎ হযরত মুসার মত।
এই লাইনটি ইহুদীদের মধ্যে কিছু গুণী এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) হচ্ছেন আল্লাহ্র অঙ্গীকার করা সেই নবী। ফলে অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। আরবেরা সেমেটিকদের স্বগোত্রভূক্ত। ইহুদীরা সেমোটিক গোত্রভূক্ত। সুতরাং ইহুদী ধর্মগ্রন্থে সঠিকভাবেই বর্ণিত হয়েছে যে, ‘তোমাদের ভ্রাতৃদের মধ্যে থেকেই হযরত মুসার মত নবী প্রেরণ করা হবে’। আর এ কথাও ঠিক যে হযরত মুহম্মদ (দঃ) ব্যতীত আর কোনও নবীই হযরত মুসার মত ছিলেন না। ওল্ড টেস্টামেন্টের পঞ্চম গ্রন্থ ‘Deuteronomy’ যা হযরত মুসার বহু পরে লেখা হয়েছিলো, তাতে বলা হয়েছে, ‘There arose not a prophet since in Israel like unto Moses, whom the lord knew face to face.’
তাই হযরত মুহম্মদের (দঃ) আগমনে ইহুদীরা অত্যন্ত হিংসা অনুভব করতে থাকলো। কারণ হযরত মুহম্মদকে (দঃ) হযরত মুসার প্রতিদ্বন্দী ভাবতে শুরু করলো। মুসলমানদের সাথে তারা দ্বৈত ভূমিকা পালন করতে থাকলো। মদিনায় যখন ধীরে ধীরে মুসলিম কমিউনিটি বড় হতে থাকলো এবং শক্তি সংগ্রহ করতে থাকলো, তখন ইহুদীরা এমন ভান করতে থাকলো যে তারা মুসলিমদের উন্নতিতে খুশী এবং তারা তাদেরই একজন। কিন্তু সত্যিকারভাবে তাদের মনোভাব ছিল অন্য। তারা সযত্নে তাদের ধর্মগ্রন্থ বর্ণিত হযরত মুহম্মদের (দঃ) আগমন বার্তা গোপন রাখে যেনো তারা এ ব্যাপারে কখনও প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়।
ইহুদীদের এই দ্বৈত ভূমিকা সমন্বিত এই আয়াতটির সার্বজনীন ব্যাখ্যা হচ্ছে সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বসাধারণের জন্য। আল্লাহ্তে বিশ্বাস হচ্ছে এক ধরণের নৈতিক মূল্যবোধ, এক ধরনের নীতিজ্ঞান, এক ধরণের আদর্শ। যুগে-যুগে, কালে-কালে, বিশ্বাস বা আদর্শকে টিকে থাকার জন্য জিহাদ করা হয়েছে, ক্ষমতা, শক্তি, সামাজিক মর্যাদা, প্রতিষ্ঠা, সংঘটিত সংঘ ও প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ সুযোগ সুবিধার বিরুদ্ধে। এই জিহাদে বিশ্বাস বা সদ্যনীতি বা আদর্শ যখন জয়লাভ করে তখন দেখা যায় যে, সব প্রতিকূল শক্তি বা অবিশ্বাসীরা যারা এতদিন বাধা দান করেছে তারা বন্ধুর ছদ্মবেশে, মিত্রের ছদ্মবেশে তাদের দিকে সখ্যতার হাত বাড়ায়। কিন্তু অবিশ্বাসীরা কোনও নীতিতেই বিশ্বাসী নয়, তারা সব সময়েই বিশ্বাসীদের অর্থাৎ নীতিজ্ঞান সম্পন্নদের কাফেলার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত। বন্ধুত্ব তাদের একটি ভান মাত্র।
বিশ্বাসীরা তাদের জ্ঞান ও মেধাকে আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করে ফলে আল্লাহ্ তাদের জ্ঞান ও মেধাকে [এই জ্ঞান শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান বা ধর্মের ইত্যাদির] আরও বিকশিত করেন। তাদের এই সাফল্য অবিশ্বাসীদের আরও হিংসার কারণ হয়। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, তিনি সবই জানেন। বিশ্বাসীদের সত্যিকারভাবে জ্ঞানার্জন করতে বলা হচ্ছে এবং এর জন্য সর্বপ্রকার দুঃখ কষ্ট স্বীকার করতেও দ্বিধাবোধ না করে, এমনকি প্রয়োজনে বিদ্যা অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যেতেও তাদের অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। এরপর আল্লাহ্র হুকুম হচ্ছে বিশ্বাসীদের এই জ্ঞানকে যদি জনহিতকর কার্যে নিয়োজিত করা হয় তবে অবশ্য ছদ্মবেশধারী অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হবে। অবিশ্বাসীরা হয় নীতিজ্ঞান শূন্য, কপট ও ভণ্ড। তারা সু-সময়েই বন্ধুর ছদ্মবেশে বিশ্বাসীদের আস্থাভাজন হয়ে তাদের বিপথে চালিত করতে চায়।