১৯৩. দ্রোণের প্রতি পাণ্ডবগণের সঙ্কুল আক্রমণ

১৯৩তম অধ্যায়

দ্রোণের প্রতি পাণ্ডবগণের সঙ্কুল আক্রমণ

সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! তখন দুৰ্য্যোধনপ্রমুখ বীরগণ সাত্যকির তাদৃশ কর্ম্ম দর্শনে সাতিশয় রোষাবিষ্ট হইয়া সম্পূর্ণরূপ যত্ন ও পরাক্রমসহকারে তাঁহাকে নিবারণ করিতে লাগিলেন। অনন্তর কৃপ, কর্ণ ও আপনার পুত্রগণ সমরে সমাগত হইয়া যুযুধানকে নিশিতশরনিকরে নিপীড়িত করিতে আরম্ভ করিলেন। রাজা যুধিষ্ঠির, মহাবল ভীমসেন এবং মাদ্রীপুত্ৰ নকুল ও সহদেব—ইঁহারা সাত্যকির সাহায্যার্থ তাঁহাকে পরিবেষ্টন করিলেন। মহারথ কর্ণ, কৃপ ও দুর্য্যোধনপ্রমুখ বীরগণ চতুর্দ্দিক হইতে আক্রমণ করিয়া তাঁহার উপর অসংখ্য শরবর্ষণ করিতে লাগিলেন। তখন মহাবীর সাত্যকি সেই মহারথগণের সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়া তাহাদের ঘোররূপিণী শরবৃষ্টি নিবারণপূর্ব্বক দিব্যাস্ত্রদ্বারা তাঁহাদিগের দিব্যাস্ত্রসকল নিবারণ করিলেন। ঐ সময় পশুনিধন সমুদ্যত পশুপতির ন্যায় কোপাবিষ্ট শত্ৰুসুদন সাত্যকি সমরে প্রবৃত্ত হইলে রণভূমি অতি দারুণ হইয়া উঠিল। সমরাঙ্গনে রাশি রাশি হস্ত, মস্তক, কাক, ছত্র ও চামর ইতস্ততঃ দৃষ্ট হইতে লাগিল। ভগ্নচক্র রথ, নিপতিত ভুজদণ্ড, নিহত অশ্বারোহী ও বীরগণদ্বারা ধরাতল পরিব্যাপ্ত হইল। দেবাসুরযুদ্ধসদৃশ ঘোর সংগ্রামে যোধগণ শরনিকরে ক্ষতবিক্ষতাঙ্গ হইয়া ধরাতলে বিচেষ্টমান হইতে লাগিলেন।

“তখন ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির স্বপক্ষীয় ক্ষত্রিয়গণকে কহিলেন, ‘হে বীরগণ! তোমরা পরমযত্নসহকারে দ্রোণাভিমুখে ধাবমান হও। মহাবীর ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণাচার্য্যের বিনাশের নিমিত্ত যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছেন, অদ্য সমরক্ষেত্রে দ্রুপদনন্দনের কাৰ্য্য সন্দর্শনে স্পষ্টই বোধ হইতেছে যে, উনি ক্রুদ্ধ হইয়া দ্রোণকে নিপাতিত করিবেন। অতএব তোমরা মিলিত হইয়া দ্রোণের সহিত যুদ্ধারম্ভ কর।’

দ্রোণের দুর্নিমিত্ত দর্শন—প্রাণত্যাগ ইচ্ছা

“হে কুরুরাজ। যুধিষ্ঠির এইরূপ আজ্ঞা করিলে মহারথ সৃঞ্জয়গণ যুদ্ধবেশ ধারণপূর্ব্বক দ্ৰোণজিঘাংসায় ধাবমান হইলেন; মহারথ দ্রোণও মরণে কৃতনিশ্চয় হইয়া সমাগত বীরগণের প্রতি মহাবেগে গমন করিতে লাগিলেন। সত্যসন্ধ মহাবীর দ্রোণাচাৰ্য্য মহারথগণের প্রতি ধাবমান হইলে মেদিনীমণ্ডল কম্পিত ও প্রচণ্ড বায়ু সেনাগণকে ভীত করিয়া প্রবলবেগে প্রবাহিত হইতে লাগিল। মহতী উল্কা সুৰ্য্য হইতে নিঃসৃত হইয়া আলোকপ্রকাশপূর্ব্বক সকলকে শঙ্কিত করিল। দ্রোণাচার্য্যের অস্ত্রসকল প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। রথের ভীষণ নিঃস্বন ও অশ্বগণের অশ্রুপাত হইতে লাগিল। তৎকালে মহারথ দ্রোণ নিতান্ত নিস্তেজ হইলেন। তাঁহার বামনয়ন ও বামবাহু স্পন্দিত হইতে লাগিল। তিনি সম্মুখে ধৃষ্টদ্যুম্নকে অবলোকন করিয়া নিতান্ত উন্মনা হইলেন এবং ব্ৰহ্মবাদী ঋষিগণের বাক্য স্মরণ করিয়া ধৰ্মযুদ্ধ অবলম্বনপূর্ব্বক প্রাণত্যাগ করিতে ইচ্ছা করিলেন। তখন তিনি দ্রুপদসৈন্যগণের সহিত মিলিত হইয়া ক্ষত্রিয়গণকে শরানলে দগ্ধ করিয়া সংগ্রামে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। অনন্তর সেই ধনুরাগ্রগণ্য মহাবীর নিশিতশরনিকর নিক্ষেপপূর্ব্বক প্রথমতঃ বিংশতিসহস্র ও তৎপরে দশ-অযুত ক্ষত্রিয়ের প্রাণ সংহারপূর্ব্বক ক্ষত্রিয়গণকে নিঃশেষিত করিবার মানসে ব্রাহ্ম-অস্ত্র সমুদ্যত করিয়া সংগ্রামস্থলে প্রজ্বলিত পাবকের ন্যায় দেদীপ্যমান হইলেন। তখন মহাবীর ভীমসেন মহাত্মা ধৃষ্টদ্যুম্নকে রথহীন ও আয়ুধবিহীন অবলোকনপূর্ব্বক দ্রুপদতনয়ের সাহায্যার্থ তাঁহার সম্মুখে গমন করিলেন এবং সত্বর তাঁহাকে আপনার রথে সংস্থাপনপূর্ব্বক দ্রোণাচার্য্যের সমীপে শরবর্ষণ করিতে দেখিয়া কহিলেন, ‘হে পাঞ্চালনন্দন। তুমি ভিন্ন আর কেহই ইহার সহিত যুদ্ধ করিতে পারিবে না। তোমার উপরেই আচার্য্যের নিধনভার সমর্পিত হইয়াছে। অতএব তুমি ইহার বধার্থ সত্বর হও।’ মহাবাহু ধৃষ্টদ্যুম্ন ভীমের বাক্য শ্রবণানন্তর তাঁহার নিকট হইতে সর্ব্বভারসহ প্রধান শরাসন গ্রহণপূর্ব্বক সমরদুর্নিবার দ্রোণাচাৰ্য্যকে নিবারণ করিবার নিমিত্ত তাঁহাকে শরজালে সমাচ্ছন্ন করিতে লাগিলেন। তখন সেই সমরবিশারদ বীরদ্বয় পরস্পরকে নিবারণপূর্ব্বক দিব্যব্রাহ্ম-অস্ত্রসমূহ মন্ত্রপূত করিলেন। তখন মহাবীর দ্রুপদনন্দন মহাদ্বারা দ্রোণের শরজাল নিরাকৃত ও তাঁহাকে শরনিকরে সমাচ্ছন্ন করিয়া তাহার রক্ষক বসাতি, শিবি, বাহ্লীক ও কৌরবগণকে নিপাতিত করিতে লাগিলেন। দিনকর কিরণজাল বিস্তারপূর্ব্বক যেরূপ শোভা ধারণ করেন, মহাবীর ধৃষ্টদ্যুম্ন শরজালে দিত্মণ্ডল সমাচ্ছন্ন করিয়া তদ্রূপ সুশোভিত হইলেন। অনন্তর মহাধনুর্দ্ধর দ্রোণাচাৰ্য্য শরনিকরে দ্রুপদতনয়ের শরাসন ছেদনপূর্ব্বক তাহার মর্ম্মস্থল ভেদ করিলেন। দ্রুপদনন্দন আচাৰ্য্যশরে গাঢ়াবদ্ধ হইয়া নিতান্ত ব্যথিত হইলেন।

দ্রোণপুত্ৰনাশের প্রকৃষ্ট প্রমাণপ্রদর্শন

“তখন ক্রোধপরায়ণ ভীমসেন ভারদ্বাজের রথ ধারণপুর্ব্বক তাঁহাকে কহিলেন, ‘হে ব্ৰহ্মন্! যদি স্বকার্য্যে অসন্তুষ্ট শিক্ষিতাস্ত্র অধম ব্রাহ্মণগণ সমরে প্রবৃত্ত না হয়েন, তাহা হইলে ক্ষত্রিয়গণের কখনই ক্ষয় হয় না। পণ্ডিতেরা প্রাণীগণের হিংসা না করাই প্রধান ধর্ম্ম বলিয়া নির্দেশ করেন। সেই ধর্ম্ম প্রতিপালন করা ব্রাহ্মণের অবশ্য কর্ত্তব্য, আপনি ব্রাহ্মশ্রেষ্ঠ; কিন্তু চণ্ডালের ন্যায় অনাবদ্ধ হইয়া পুত্র ও কলত্রের উপকারার্থ অর্থলালসানিবন্ধন বিবিধ ম্লেচ্ছজাতি ও অন্যান্য প্রাণীগণের প্রাণ বিনাশ করিতেছেন। আপনি এক পুত্রের উপকারার্থ স্বধর্ম্ম পরিত্যাগপূর্ব্বক স্বকাৰ্য্যসাধনে প্রবৃত্ত অসংখ্য জীবের জীবননাশ করিয়া কি নিমিত্ত লজ্জিত হইতেছেন না? যাহা হউক, এক্ষণে আপনি যাঁহার নিমিত্ত শস্ত্রগ্রহণপূর্ব্বক সংগ্রাম করিতেছেন এবং যাঁহার অপেক্ষায় জীবিত রহিয়াছেন, অদ্য তিনি আপনার অজ্ঞাতসারে পশ্চাদ্ভাগে সমরশয্যায় শয়ন করিয়াছেন। হে ব্ৰহ্মন্‌! যাঁহার বাক্যে আপনার কিছুমাত্র সন্দেহ হয় না, সেই ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির আপনাকে ইতিপূর্ব্বে এই বৃত্তান্ত জ্ঞাত করিয়াছেন।’

দ্রোণাচার্য্যের অস্ত্রবর্জ্জন—যোগে তনুত্যাগ

“হে মহারাজ। মহাবীর ভীমসেন এইরূপ কহিলে পর দ্রোণাচাৰ্য্য শরাসনপরিত্যাগপুর্ব্বক সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র পরিত্যাগ করিবার অভিলাষে কহিলেন, ‘হে মহাধনুর্দ্ধর কর্ণ! হে কৃপাচার্য্য। হে দুৰ্য্যোধন! আমি বারংবার বলিতেছি, তোমরা সমরে যত্নবান হও, তোমাদিগের মঙ্গললাভ হউক; আমি অস্ত্রশস্ত্র পরিত্যাগ করিলাম। মহাত্মা দ্রোণ এই বলিয়া অশ্বত্থামার নামোচ্চারণপূর্ব্বক চীৎকার করিতে লাগিলেন এবং তৎপরে রথোপরি সমুদয় অস্ত্রশস্ত্র সন্নিবেশিত করিয়া যোগ অবলম্বনপূর্ব্বক সকল জীবকে অভয় প্রদান করিলেন। ঐ সময়ে মহাবীর ধৃষ্টদ্যুম্ন রন্ধ্র প্রাপ্ত হইয়া স্বীয় রথে ভীষণ সমরে শরাসন অবস্থানপূর্ব্বক করবারি ধারণ করিয়া দ্রোণাভিমুখে ধাবমান হইলেন। এইরূপে মহাবীর দ্রোণাচাৰ্য্য ধৃষ্টদ্যুম্নের বশীভূত হইলে সমরাঙ্গনে মহা হাহাকার শব্দ সমুচ্ছিত হইল। এদিকে জ্যোতির্ম্ময় মহাতপাঃ দ্রোণাচাৰ্য্য অস্ত্রশস্ত্র পরিত্যাগপূর্ব্বক শমভাব অবলম্বন করিয়া যোগসহকারে অনাদিপুরুষ বিষ্ণুর ধ্যান করিতে লাগিলেন এবং মুখ ঈষৎ উন্নমিত, বক্ষঃস্থল বিষ্টম্ভিত ও নেত্রদ্বয় নিমীলিত করিয়া বিষয়াদি বাঞ্ছা পরিত্যাগ ও সাত্ত্বিকভাব অবলম্বনপূর্ব্বক একাক্ষর বেদমন্ত্র ওঁকার ও পরাৎপর দেবদেবেশ বাসুদেবকে স্মরণ করিয়া সাধুজনেরও দুর্লভ স্বর্গলোকে গমন করিলেন। তৎকালে বোধ হইল যেন জগতে দুই দিবাকর বিদ্যমান আছেন। ঐ সময় আকাশমণ্ডল তেজোরাশিতে পরিপূরিত হইলে বোধ হইতে লাগিল যেন, নভোমণ্ডল মার্ত্তণ্ডময় হইয়াছে। তৎকালে নিমেষমধ্যেই সেই জ্যোতিঃ তিরোহিত হইয়া গেল। এইরূপে দ্রোণাচার্য্য ব্রহ্মলোকে গমন করিলে দেবগণ হৃষ্টচিত্তে মহান, কিলকিলা ধ্বনি করিতে লাগিলেন।

“হে মহারাজ। তৎকালে মানবযোনির মধ্যে কেবল আমি, ধনঞ্জয়, অশ্বত্থামা, বাসুদেব, ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির—এই পাঁচজনই সেই অস্ত্রত্যাগী যোগারূঢ় মহাত্মা দ্রোণাচাৰ্য্যকে শরবিদ্ধ ও রুধিরাক্তকলেবরে ঋষিগণের সহিত স্বর্গলোকে গমন করিতে অবলোকন করিলাম। আর কেহই তাঁহার মহিমা সন্দর্শন করিতে সমর্থ হইলেন না। ঐ সময়ে পাঞ্চালতনয় ধৃষ্টদ্যুম্ন মোহবশতঃ সেই মৌনাবলম্বী গতাসু দ্রোণাচাৰ্য্যকে জীবিত জ্ঞান করিয়া অসিদণ্ডদ্বারা মস্তক ছেদন করিয়া ফেলিলেন এবং মহা আহ্লাদে তরবারি বিঘূর্ণিত করিয়া সিংহনাদ পরিত্যাগ করিতে লাগিলেন। তখন সকলেই দ্রুপদতনয়কে ধিক্কার প্রদান করিলেন। হে মহারাজ! কেবল আপনার নিমিত্তই সেই আকর্ণপলিত শ্যামাঙ্গ পঞ্চাশীতিবর্ষবয়স্ক আচাৰ্য্য সোড়শবর্ষীয় যুবার ন্যায় রণস্থলে বিচরণ করিতেন।

ধৃষ্টদ্যুম্নকর্ত্তৃক গতাসু দ্রোণের শিরচ্ছেদ

“হে কুরুরাজ। যে সময় ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণের বধার্থ ধাবমান হয়েন, তৎকালে মহাবাহু ধনঞ্জয় তাঁহাকে বলিয়াছিলেন, হে দ্রুপদত্মজ! আচাৰ্য্যকে বিনাশ না করিয়া জীবিতাবস্থায় এখানে আনয়ন কর। তৎপরে দ্রুপদতনয় দ্রোণসংহারে প্রবৃত্ত হইলে মহাবীর অর্জ্জুন, অন্যান্য সেনাপতি ও সমস্ত ভূপালগণ ‘আচাৰ্য্যকে বিনাশ করিও না’ বলিয়া বারংবার চীৎকার করিতে লাগিলেন। অর্জ্জুন নিতান্ত অনুকম্পাপরতন্ত্র হইয়া ধৃষ্টদ্যুম্নকে নিবারণ করিবার নিমিত্ত তাঁহার প্রতি ধাবমান হইলেন কিন্তু ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁহাদের বাক্যে কর্ণপাত না করিয়া রথোপরি ভারদ্বাজকে সংহারপূর্ব্বক ভূতলে নিপাতিত করিলেন। তৎকালে তাঁহার কলেবর দ্রোণের শোণিত লিপ্ত হওয়াতে মার্কণ্ডের ন্যায় লোহিত ও দুর্দ্ধর্ষ হইয়া উঠিল। হে মহারাজ! সৈনিকপুরুষেরা এইরূপে দ্রোণাচাৰ্য্যকে নিহত হইতে দেখিলেন। অনন্তর মহাধনুর্দ্ধর দ্রুপদপুত্র ভারদ্বাজের সেই প্রকাণ্ড মস্তক লইয়া কৌরবগণের সমক্ষে নিক্ষেপ করিলেন। কৌরবগণ দ্রোণাচার্য্যের সেই ছিন্নমস্তক দর্শনে পলায়নে কৃতনিশ্চয় হইয়া চারিদিকে ধাবমান হইল। হে রাজন! আমি সত্যবতীতনয় মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়নের অনুগ্রহে দ্রোণাচাৰ্য্যকে বিধূম প্রজ্বলিত উল্কার ন্যায় স্বর্গপথে নক্ষত্রলোকে প্রবেশ করিতে দেখিলাম।

“এইরূপে দ্রোণাচাৰ্য্য নিহত হইলে কৌরব, পাণ্ডব ও সৃঞ্জয়গণ নিরুৎসাহ হইয়া মহাবেগে ধাবমান হইলেন। সৈন্যসকল ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িল। অনেকে শাণিতশরনিকরে হত ও অনেকে নিহতপ্রায় হইল। অনন্তর কৌরবগণ তাৎকালিক পরাজয় ও ভাবী ভয়ের সম্ভাবনাবশতঃ আপনাদিগকে নিকৃষ্ট জ্ঞান করিয়া অধৈৰ্য্য হইলেন। নরপতিগণ সেই অসংখ্য কবন্ধসমাকীর্ণ সমরাঙ্গনে আচার্য্যের দেহ বারংবার অন্বেষণ করিলেন; কিন্তু কোন প্রকারেই উহা প্রাপ্ত হইলেন না। এদিকে পাণ্ডবগণ জয়লাভ ও ভাবী কীৰ্ত্তিলাভসম্ভাবনায় নিতান্ত আহ্লাদিত হইয়া বাণশব্দ, শঙ্খধ্বনি ও সিংহনাদ পরিত্যাগ করিতে লাগিলেন। ঐ সময়ে ভীমপরাক্রম ভীমসেন সৈন্যমধ্যে ধৃষ্টদ্যুম্নকে আলিঙ্গন করিয়া কহিলেন, ‘হে দ্রুপদত্মজ! দুরাত্মা সূতপুত্র কর্ণ ও ধৃতরাষ্ট্রতনয় দুর্য্যোধন নিহত হইলে আমি পুনরায় তোমাকে সমররিজয়ী বলিয়া আলিঙ্গন করিব।’ মহাবীর ভীমসেন এই বলিয়া মহাদে বাস্ফোটনদ্বারা ধরাতল কম্পিত করিতে লাগিলেন। কৌরবসৈন্যগণ সেই শব্দে ভীত হইয়া ক্ষাত্রধর্ম্ম পরিত্যাগপূর্ব্বক সমরে পরাঙ্মুখ হইয়া পলায়ন করিতে লাগিল, পাণ্ডুতনয়েরাও জয়লাভ করিয়া হৃষ্টচিত্তে শক্রক্ষয়জনিত সুখানুভব করিতে লাগিলেন।”

দ্রোণবধপর্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত