৪৭. সপ্তদশদিবসীয় যুদ্ধব্যূহব্যবস্থা

৪৭তম অধ্যায়

সপ্তদশদিবসীয় যুদ্ধব্যূহব্যবস্থা

সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! অনন্তর সমরনিপুণ শত্ৰুসূদন মহাতেজাঃ কর্ণ পাণ্ডবগণের ধৃষ্টদ্যুম্নাভিরক্ষিত অরাতিপরাক্রম সহনক্ষম অপ্রতিম ব্যূহ নিরীক্ষণপূর্ব্বক ক্রোধকম্পিতকলেবরে আপনার সৈন্যগণকে যথাবিধি ব্যহিত করিয়া রথনির্ঘোষ, সিংহনাদ ও বাদিত্রের নিঃস্বনে মেদিনী কম্পিত করিয়া অরাতিগণের অভিমুখে ধাবমান হইলেন এবং ইন্দ্র যেমন অসুরগণকে বিনাশ করিয়াছিলেন, তদ্রূপ পাণ্ডবসৈন্যগণকে সংহারপূর্ব্বক যুধিষ্ঠিরকে নিপীড়িত করিয়া তাঁহার বামভাগে গমন করিলেন।”

ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে সঞ্জয়! মহাবীর সূতপুত্র কিরূপে সেই ভীমসেনসংরক্ষিত, দেবগণেরও অপরাজেয়, ধৃষ্টদ্যুম্নপ্রমুখ পাণ্ডবপক্ষীয় মহাধনুর্দ্ধরগণের বিপক্ষে ব্যূহ নিৰ্মাণ করিল? কোন্ কোন্ ব্যক্তি আমাদিগের ব্যূহের পক্ষ ও কোন্ কোন্ ব্যক্তিই বা প্রপক্ষ [বামপার্শ্ববর্তী] হইয়াছিল? বীরগণ কিরূপে ন্যায়ানুগত বিভাগ করিয়া অবস্থান করিতে লাগিল? পাণ্ডুপুত্রগণ কিরূপ ব্যূহ রচনা করিয়াছিল? আর কিরূপে সেই সুদারুণ সংগ্রাম সমুপস্থিত হইল? যখন কর্ণ যুধিষ্ঠিরকে আক্রমণ করে, তকালে ধনঞ্জয় কোথায় ছিল? মহাবীর অর্জ্জুনের সমক্ষে যুধিষ্ঠিরকে আক্রমণ করা কাহার সাধ্য? পূর্ব্বে যে অর্জ্জুন খাণ্ডবে একাকী সকল প্রাণীকে পরাজিত করিয়াছিল, কর্ণ ভিন্ন কোন্ ব্যক্তি জীবিতাশা পরিত্যাগ না করিয়া তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী হইতে পারে?”

সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! যেরূপে ব্যূহ রচনা হইল, মহাবীর অর্জ্জুন তৎকালে যেস্থানে গমন করিয়াছিলেন এবং যে যে বীর স্ব স্ব পক্ষীয় ভূপতিকে পরিবেষ্টন করিয়া যেরূপে যুদ্ধ করিলেন, তৎসমুদয় শ্রবণ করুন। মহাবীর কৃপাচার্য্য, কৃতবর্ম্মা ও বলবান্ মাগধগণ দক্ষিণ পক্ষ আশ্রয় করিলেন। মহারথ শকুনি ও উল্ক বিমলপাশধারী সাদিগণ শলভসমূহের ন্যায় ও বিকটাকার পিশাচগণের ন্যায় – অসম্ভ্রান্ত গান্ধারসৈন্যগণ ও দুর্জয় পাৰ্বতীয়দিগের সহিত সমবেত হইয়া সেই বীরগণের প্রপক্ষে অবস্থানপূর্ব্বক কৌরবসৈন্য রক্ষা করিতে লাগিলেন। সমরমদমত্ত সংশপ্তকগণও চতুর্বিংশতি সহস্র রথসমভিব্যাহারে কৃষ্ণ ও অর্জ্জুনের বিনাশসাধনার্থ ধার্ত্তরাষ্ট্রগণের সহিত সমবেত হইয়া ঐ ব্যূহের বামপার্শ্ব রক্ষা করিতে লাগিল। শক, কাম্বোজ ও যবনগণ অসংখ্য রথ, অশ্ব ও পদাতিদিগের সহিত সূতপুত্রের আদেশানুসারে ধনঞ্জয় ও মহাবল বাসুদেবকে যুদ্ধার্থ আহ্বান করিয়া উহাদিগের পক্ষে অবস্থান করিল। বিচিত্র বর্ম্মধারী, অঙ্গদভূষিত, মহাবীর কর্ণ ক্রোধাবিষ্ট স্বীয় পুত্রগণকর্ত্তৃক সুরক্ষিত হইয়া সেনামুখের মধ্যভাগে অবস্থান করিতে লাগিলেন। সূৰ্য্যহুতাশনসঙ্কাশ, পিঙ্গললোচন, প্রিয়দর্শন দুঃশাসন মাতঙ্গে আরোহণপূর্ব্বক সৈন্যগণে পরিবৃত হইয়া ব্যূহের পৃষ্ঠভাগ রক্ষা করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। মহারাজ দুৰ্য্যোধন দেবগণপরিরক্ষিত দেবরাজের ন্যায় বিচিত্র কবচধারী সহােদর এবং মহাবীৰ্য্য মদ্রক, কেকয় ও দ্রোণপুত্ৰপ্রমুখ কৌরবপক্ষীয় বীরগণকর্ত্তৃক সুরক্ষিত হইয়া দুঃশাসনের অনুগমন করিলেন। মহাবলপরাক্রান্ত ম্লেচ্ছগণসমারূঢ় মত্তমাতঙ্গসকল জলবর্ষী জলধরের ন্যায় অনবরত জলধারা বর্ষণপূর্ব্বক রথীদিগের অনুগমন করিতে লাগিল। উহারা ধ্বজ, পতাকা ও আয়ুধধারী মহামাত্রগণকর্ত্তৃক অধিরূঢ় হইয়া মহীরুহপরিশোভিত মহীধরের ন্যায় শোভা ধারণ করিল। পট্টিশ ও অসিধারী, সমরে অপরাজুখ, অসংখ্য বীরগণ ঐ সমস্ত মাতঙ্গের পাদরক্ষক হইল। এইরূপে সেই কর্ণের প্রযত্নে মহাব্যূহ অশ্বারোহী ও রথীসমূহে পরিপূর্ণ হইয়া সুরাসুরব্যূহের ন্যায় শোভা ধারণপূর্ব্বক অরাতিগণের ভয়সঞ্চার করিয়াই যেন নৃত্য করিতে লাগিল। হস্তী, অশ্ব ও রথসমুদয় বর্ষাকালীন জলদজালের ন্যায় উহার পক্ষ ও প্রপক্ষ হইতে যুদ্ধার্থ নির্গত হইতে লাগিল।

যুধিষ্ঠিরের স্বপক্ষীয়গণকে সমরোপদেশ

“তখন রাজা যুধিষ্ঠির সেনাভিমুখে কর্ণকে অবলোকন করিয়া অমিত্রঘ্ন ধনঞ্জয়কে কহিলেন, ‘হে অর্জ্জুন! ঐ দেখ, মহাবীর কর্ণ সংগ্রামার্থ পক্ষপ্রপক্ষযুক্ত মহাব্যূহ নিৰ্মাণ করিয়াছে। অতএব এক্ষণে শত্রুগণ যাহাতে আমাদিগকে পরাভূত করিতে না পারে, তুমি এইরূপ উপায় স্থির কর।’ মহাবীর অর্জ্জুন যুধিষ্ঠিরকর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া কৃতাঞ্জলিপুটে কহিলেন, ‘হে মহারাজ! আপনি যাহা আজ্ঞা করিলেন, আমি তাহাই করিব সন্দেহ নাই। যাহাতে শত্রুপক্ষের বিনাশ হয়, আমি তাহাই করিতেছি। উহাদের মধ্যে যাহারা প্রধান, তাঁহাদিগকে সংহার করিলেই সকলের বিনাশ সাধন হইবে।’ তখন যুধিষ্ঠির কহিলেন, ‘হে অর্জ্জুন! তুমি কর্ণের সহিত যুদ্ধ কর; আমি কৃপের সহিত সমরে প্রবৃত্ত হইতেছি; আর।ভীমসেন দুর্য্যোধনের, নকুল বৃষসেনের, সহদেব শকুনির, শতানীক দুঃশাসনের, সাত্যকি কৃতবর্ম্মার, পাণ্ড্য অশ্বত্থামার ও দ্রৌপদীতনয়গণ শিখণ্ডীসমভিব্যাহারে অন্যান্য ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের সহিত যুদ্ধ করুন।

অর্জ্জুনের যুদ্ধযাত্রা-শল্যের কর্ণসতর্কতা

“হে মহারাজ! মহাবীর ধনঞ্জয় ধর্ম্মরাজের বাক্যশ্রবণে ‘যে আজ্ঞা মহাশয়’ বলিয়া স্বীয় সৈন্যগণকে সমরে প্রবৃত্ত হইতে আদেশ করিয়া স্বয়ং চমূমুখে অবস্থান করিয়া অরাতির অভিমুখে ধাবমান হইলেন। হে মহারাজ! পূর্ব্বে ব্রহ্মার মুখসম্ভূত বিশ্বনরের নেতা অগ্নি যে রথের অশ্ব হইয়াছিলেন, প্রথমে অনল হইতে যাহার উৎপত্তি হইয়াছিল, দেবগণ যাহা ব্রহ্মাকে প্রদান করেন এবং পূর্ব্বে যাহা ব্রহ্মা, ঈশান, ইন্দ্র ও বরুণকে যথাক্রমে বহন করিয়াছিল, এক্ষণে বাসুদেব ও অর্জ্জুন সেই আদ্যরথে আরোহণ করিয়া গমন করিতে লাগিলেন।

“মদ্ররাজ শল্য সেই অদ্ভুতদর্শন রথ অবলোকন করিয়া সমরদুর্ম্মদ কর্ণকে পুনর্ব্বার কহিলেন, ‘হে কর্ণ! তুমি যাহাকে অন্বেষণ করিতেছিলে, ঐ সেই মহাবীর ধনঞ্জয় শ্বেতাশ্বসম্পন্ন, বাসুদেবপরিচালিত, কর্ম্মবিপাকের ন্যায় নিতান্ত দুর্নিবাৰ্য্য মহারথে আরোহণপূর্ব্বক শত্রুসৈন্য নিপীড়িত করিয়া আগমন করিতেছেন। হে কর্ণ! যখন মেঘনিঃস্বনের ন্যায় ভীষণ তুমুল শব্দ শ্রবণগোচর হইতেছে, তখন বাসুদেব ও ধনঞ্জয় আগমন করিয়াছেন, সন্দেহ নাই। ঐ দেখ, পার্থিব ধূলিপটল সমুত্থিত হইয়া আকাশমার্গ সমাচ্ছন্ন করিয়াছে। মেদিনীমণ্ডল চক্রনেমিদ্বারা আহত হইয়াই যেন কম্পিত হইতেছে। তোমার সৈন্যের দুইদিকে প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহিত হইতেছে। ক্ৰব্যাদগণ ঘোরতর চীৎকার ও কুরঙ্গগণ ভীষণ রবে ক্রন্দন করিতেছে। ঐ দেখ, মেঘাকার ঘোরদর্শন কেতুগ্রহ সূৰ্য্যকে সমাচ্ছন্ন করিয়াছে। চতুর্দ্দিকে বিবিধ মৃগযুথ ও বলবান শার্দূলগণ দিবাকরকে নিরীক্ষণ করিতেছে। সহস্র সহস্র ভয়ঙ্কর কঙ্ক ও গৃধ্রুপক্ষীসকল একত্র সমবেত ও পরস্পর সম্মুখীন হইয়া সম্ভাষণ করিতেছে। তোমার মহারথের রঞ্জিত চামরসকল প্রজ্বলিত এবং ধ্বজ ও গগনস্থ গরুড়ের ন্যায় বেগবান্ মহাকায় তুরঙ্গমগণ কম্পিত হইতেছে। হে রাধেয়! যখন এই সমস্ত দুর্নিমিত্ত উপস্থিত হইয়াছে, তখন নিশ্চয়ই সহস্র সহস্র ভূপাল নিহত হইয়া সমরশয্যায় শয়ন করিবেন। ঐ চতুর্দ্দিকে অসংখ্য শঙ্খ, আনক ও মৃদঙ্গের লোমহর্ষণ তুমুল শব্দ; মনুষ্য, অশ্ব ও গজসমুদয়ের ঘোরতর নিনাদ এবং মহাত্মা অর্জ্জুনের বাণশব্দ, জ্যানিঃস্বন ও তলত্রধ্বনি শ্রবণগোচর হইতেছে। মহাবীর ধনঞ্জয়ের রথে সুবর্ণময় চন্দ্র, সূৰ্য্য ও তারকগণে সুশোভিত স্বর্ণরজতখচিত, শিল্পীনিৰ্মিত, কিঙ্কিণীমুখরিত নানাবর্ণের পতাকাসকল বায়ুবিকম্পিত হইয়া মেঘমালা-বিন্যস্ত সৌদামিনীর ন্যায় শোভা পাইতেছে; মহাত্মা পাঞ্চালগণের পতাকাশালী রথসমুদয়ের ধ্বজসকল বায়ুবেগে কণ কণ ধ্বনি করিয়া বিমানস্থ দেবতাগণের ন্যায় শোভা ধারণ করিতেছে। ঐ দেখ, অপরাজিত কুন্তীপুত্র অর্জ্জুন বিপক্ষবিনাশের নিমিত্ত আগমন করিতেছেন। তাঁহার ধ্বজাগ্রে অরাতিভীষণ ভীমদর্শন বানর লক্ষিত হইতেছে। মহাবলপরাক্রান্ত বাসুদেব অর্জ্জুনের পবনতুল্য বেগবান্ পাণ্ডুর অশ্বগণকে পরিচালিত করিতেছেন। তাঁহার শঙ্খ, চক্র, গদা, শার্ঙ্গ ও কৌস্তুভমণি যারপরনাই শোভা পাইতেছে। ধনঞ্জয়ের শরাসনশ্রেষ্ঠ গাণ্ডীব আকৃষ্ট হইয়া, ঘোরতর নিঃস্বন ও নিশিতশরনিকর নিক্ষিপ্ত হইয়া অরাতিগণের প্রাণসংহার করিতেছে। এই বিশাল সমরভূমি অপলায়িত ভূপালগণের তাম্ৰাক্ষসম্পন্ন মস্তকদ্বারা সমাকীর্ণ হইতেছে। বীরগণের পবিত্র গন্ধানুলিপ্ত উদ্যতায়ুধ পরিঘাকার ভুজসমুদয় অনবরত নিপাতিত হইতেছে। অশ্বগণ আরোহীদিগের সহিত নিপতিত হইয়া নিস্পন্দনয়নে ধরাশয্যায় শয়ন করিতেছে। পর্ব্বতশৃঙ্গসদৃশ মাতঙ্গগণ অর্জ্জুনের শরে ছিন্নভিন্ন হইয়া পর্ব্বতের ন্যায় বিচরণ করিতেছে। সমরনিহত নৃপগণের গন্ধৰ্ব্বনগরাকার রথসমুদয় ক্ষীণপুণ্য স্বর্গবাসীদিগের বিমানের ন্যায় সমরাঙ্গনে নিপতিত হইতেছে। মহাবীর ধনঞ্জয় কৌরবসেনাগণকে সিংহনিপীড়িত মৃগযূথের ন্যায় ব্যাকুলিত করিয়াছেন। ঐ দেখ, মহাবলপরাক্রান্ত পাণ্ডবগণ সমরাঙ্গনে ধাবমান হইয়া কৌরবপক্ষীয় হস্তী, অশ্ব, রথী ও পদাতিদিগকে নিপীড়িত ও ভূপতিদিগকে নিহত করিতেছেন। হে কর্ণ! তুমি যাঁহাকে অন্বেষণ করিতেছ, সেই শত্ৰুসূদন শ্বেতাশ্ব কৃষ্ণসারথি ধনঞ্জয় মেঘাচ্ছন্ন দিবাকরের ন্যায় অদৃশ্য হইয়াছেন। এক্ষণে কেবল তাঁহার ধ্বজাগ্র লক্ষিত ও জ্যাশব্দ শ্রুতিগোচর হইতেছে। তুমি অচিরাৎ কৃষ্ণের সহিত একরথে সমাসীন সেই অরাতিনিপাতন মহাবীরকে অবলোকন করিবে। হে সূতপুত্র! বাসুদেব যাঁহার সারথি এবং গাণ্ডীব যাঁহার শরাসন, তুমি যদি সেই অর্জ্জুনকে নিপাতিত করিতে সমর্থ হও, তাহা হইলে তুমিই আমাদিগের রাজা হইবে। মহাবল ধনঞ্জয় সংশপ্তকগণকর্ত্তৃক আহূত হইয়া তাহাদের অভিমুখে গমনপূর্ব্বক তাহাদিগকে নিপীড়িত করিতেছেন।

“হে মহারাজ! মহাবীর কর্ণ মদ্ররাজের এই বাক্য শ্রবণ করিয়া সরোষনয়নে কহিলেন, ‘হে শল্য! ঐ দেখ, সংশপ্তকগণ ক্রুদ্ধ হইয়া ধনঞ্জয়ের প্রতি ধাবমান হওয়াতে অর্জ্জুন মেঘাচ্ছন্ন দিবাকরের ন্যায় আর লক্ষিত হইতেছে না। অতঃপর তাহাকে ঐ যোধসাগরে নিমগ্ন হইয়া নিহত হইতে হইবে।’ শল্য কহিলেন, ‘হে কর্ণ! বায়ু অবরোধ, সমুদ্রপান, জলদ্বারা বরুণকে বিনাশ ও ইন্ধনদ্বারা অগ্নি প্রশমন করা যেরূপ অসাধ্য, মহাবীর ধনঞ্জয়কে সমরে নিপীড়িত করাও তদ্রূপ, সন্দেহ নাই। ইন্দ্রাদি দেব ও অসুরগণও ঐ মহাবীরকে সংগ্রামে জয় করিতে পারেন না। যাহা হউক, তুমি ‘অর্জ্জুনকে পরাজয় করিব’ মুখে এই কথা বলিয়া পরিতুষ্ট ও সুমনা হও; কিন্তু বস্তুতঃ কখনই তাহাকে জয় করিতে পারিবে না। অতএব অর্জ্জুন-পরাজয় ব্যতীত অন্য কোন মনোরথ করাই তোমার কর্ত্তব্য। যিনি বাহুদ্বারা পৃথিবীমণ্ডল উদ্ধৃত, ক্রুদ্ধ হইয়া এই সমস্ত প্রজাগণকে দগ্ধ ও দেবগণকে স্বর্গ হইতে পাতিত করিতে পারেন, তিনিই অর্জ্জুনকে সমরে পরাজয় করিতে সমর্থ, সন্দেহ নাই।

‘হে কর্ণ! ঐ দেখ, অক্লিষ্টকর্ম্মা ক্রোধপরায়ণ মহাবাহু ভীমসেন চিরবৈর স্মরণপূর্ব্বক বিজয়লাভবাসনায় সমরাঙ্গনে অপর সুমেরুর ন্যায় অবস্থান করিতেছেন। অরাতিকুলঘাতন ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির, পুরুষব্যাঘ্র দুর্জয় নকুল ও সহদেব সংগ্রামার্থ প্রস্তুত রহিয়াছেন। অর্জ্জুনতুল্য সংগ্ৰামনিপুণ দ্রৌপদীতনয়গণ যুদ্ধাভিলাষী হইয়া পাঁচ পর্ব্বতের ন্যায় অবস্থান করিতেছে. মহাবলপরাক্রান্ত ধৃষ্টদ্যুম্নপ্রমুখ দ্রুপদতনয়গণ সংগ্রামে অভিমুখীন হইয়াছে এবং ইন্দ্রতুল্য অসহ্যপরাক্রমশালী সাত্বতশ্রেষ্ঠ সাত্যকি সংগ্রামার্থী হইয়া ক্রুদ্ধ কালান্তক যমের ন্যায় কৌরবসেনার প্রতি গমন করিতেছে। হে মহারাজ! সেই বীরদ্বয়ের এইরূপ কথোপকথন হইতেছে, এমন সময় উভয়পক্ষীয় সেনাগণ গঙ্গা ও যমুনার ন্যায় পরস্পর মিলিত হইল।”