২৬. গুরুরূপে নারায়ণের জীবহৃদয়ে অধিষ্ঠান

গুরুরূপে নারায়ণের জীবহৃদয়ে অধিষ্ঠান

“ব্রাহ্মণ কহিলেন, ‘ভগবান নারায়ণ সতত জীবের হৃদয়মধ্যে বাস করেন। তিনিই সকলের শাসনকৰ্ত্তা। তিনি আমাকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছেন, আমি তদনুরূপ কাৰ্য্যেই প্রবৃত্ত হইয়াছি। ঐ মহাত্মাই অদ্বিতীয় গুরু, উনিই অদ্বিতীয় শিষ্য এবং উনিই সকলের দ্বেষ্টা। উহার প্রভাবেই দানবগণ দম্ভযুক্ত হইয়াছে, উহার প্রভাবেই সপ্তর্ষিমণ্ডল দমগুণসম্পন্ন হইয়া অতি উৎকৃষ্ট শোভা ধারণ করিয়াছেন। দেবরাজ উঁহাকেই গুরু বোধ করিয়া উঁহার নিকট অবস্থানপূর্ব্বক অমরত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন এবং সর্পগণ উঁহার প্রভাবে সকল লোকের প্রতি দ্বেষভাবাপন্ন হইয়াছে।

‘এক্ষণে আমি এই উপলক্ষে সর্প, দেবতা, ঋষি ও অসুরগণের যেরূপে দ্বেষভাবাদি লাভ হইয়াছিল, তাহা কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর।

‘পূৰ্ব্বকালে দেবতা, ঋষি, সর্প ও অসুরগণ প্রজাপতি ব্রহ্মার নিকট গমনপূর্ব্বক বিনীতভাবে তাঁহাকে কহিয়াছিলেন, “ভগবন্! যাহাতে আমাদের শ্রেয়েলাভ হয়, আপনি আমাদিগকে এরূপ উপদেশ প্রদান করুন। তাহারা এইরূপ অনুরোধ করিলে প্রজাপতি তাঁহাদের সমক্ষে ‘ওঁ’ এই একাক্ষর শব্দ উচ্চারণ করিলেন। তখন দেবতা, ঋষি, সর্প ও অসুরগণ সকলেই ঐ একাক্ষর শব্দের অর্থ পর্য্যালোচনা করিতে লাগিলেন। ঐ শব্দের অর্থ পর্য্যালোচনা করিতে করিতে সর্পদিগের মনে দংশন প্রবৃত্তি, অসুরদিগের মনে দম্ভভাব, দেবতাদিগের চিত্তে দানপ্রবৃত্তি ও মহর্ষিদিগের অন্তঃকরণে দমগুণের সঞ্চার হইল।

‘এইরূপে পূৰ্ব্বকালে একমাত্র উপদেষ্টার মুখে একমাত্র একাক্ষরশব্দ শ্রবণ করিয়া সর্প, দেবতা, ঋষি ও দানবগণের চিত্তে পৃথক পৃথক ভাবের সঞ্চার হইয়াছিল। সেই সর্ব্বান্তর্য্যামী সৰ্ব্বময় নারায়ণ সর্ব্বত্র বিরাজিত রহিয়াছেন। তিনি আপনিই আপনার গুরু। তিনি শিষ্যরূপে প্রশ্ন করিয়া গুরুরূপে উহা শ্রবণ ও অবধারণপূৰ্ব্বক উহার উত্তর প্রদান করেন। তাঁহারই অভিলাষানুসারে সমুদয় কৰ্ম্ম সম্পাদিত হইয়া থাকে। তিনি একাকী গুরু, বোদ্ধা, শ্রোতা ও দ্বেষ্টা। তিনি সকল লোকের হৃদয়ে অবস্থান করিতেছেন। তিনিই পাপকার্য্যে নিরত হইয়া পাপাচারী, পুণ্যকর্ম্মে নিরত হইয়া পুণ্যচারী, ইন্দ্রিয় সুখে নিরত হইয়া কামাচারী এবং ইন্দ্রিয় পরাজয় ও ব্ৰতাদিকৰ্ম্ম পরিত্যাগপূর্ব্বক ব্রহ্মে অবস্থিত ও ব্রহ্মভূত হইয়া ব্রহ্মচারী নামে অভিভূত হইয়া থাকেন। তিনিই ব্রহ্মরূপ ঋত্বিকের সাহায্যে ব্রহ্মরূপ অগ্নিতে ব্রহ্মরূপ সমিধ প্রদান ও ব্রহ্মরূপ জল প্রোক্ষণ করেন। পণ্ডিতগণ তাঁহারই উপদেশানুসারে সূক্ষ্ম ব্রহ্মচর্য্য অবগত হইয়া থাকেন।’