০৪৫. অধ্যায় উভয় পক্ষের মিলিত যুদ্ধ

৪৫তম অধ্যায়

অধ্যায় উভয় পক্ষের মিলিত যুদ্ধ

সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! ঐদিন পূর্ব্বাহ্ণে ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। উহাতে বহুসংখ্যক ভূপতিদেহ ক্ষতবিক্ষত হয়। কৌরব ও সৃঞ্জয়গণ পরস্পর জিগীষাপরবশ হইয়া সিংহের ন্যায় ভীষণধ্বনি করিয়া সমুদয় পৃথী ও আকাশমণ্ডল প্ৰতিধ্বনিত করিতে লাগিলেন। সৈন্যগণের কিলকিলা শব্দ, তল ও শঙ্খের গভীর নিস্বন, পরস্পর স্পৰ্দ্ধশালী বীরগণের সিংহনাদ, তলত্রাভিহাত[দস্তানায় আবৃত হস্তদ্বারা আকৰ্ষিত] শরাসন-জ্যার ভীষণ ধ্বনি, পদাতিগণের ধ্বনি, আয়ুধসমূদয়ের নিম্বন, পরস্পর ধাবমান গজসমুদয়ের ঘণ্টানিনাদ এবং পর্জ্জন্যধ্বনিসদৃশ রথনির্ঘোষে এক অদ্ভূত তুমুল লোমহর্ষণ শব্দ সমুথিত হইল।

“তখন কৌরবগণ নিষ্ঠুরচিত্ত হইয়া জীবিতাশা পরিত্যাগপূর্ব্বক পাণ্ডবগণের প্রতি ধাবমান হইলেন। শান্তনুতনয় ভীষ্ম স্বয়ং কালদণ্ডসদৃশ ঘোরদর্শন শরাসন ধারণপূর্ব্বক অৰ্জ্জুনের অভিমুখীন হইলে অর্জ্জুনও লোকবিশ্রুত গান্তীবগ্রহণ করিয়া ভীষ্মের সহিত সংগ্রাম করিতে ধাবমান হইলেন। পরস্পর বিধাভিলাষী ঐ দুই কুরুবীরের মধ্যে কেহই কাহাকে শরপ্রহারদ্বারা বিকম্পিত করিতে সমর্থ হইলেন না। এদিকে মহাধনুৰ্দ্ধর সাত্যকি কৃতবর্ম্মার প্রতি ধাবমান হইলেন, তাহাদের উভয়ের তুমুল সংগ্রাম আরম্ভ হইল। সাত্যকি কৃতবর্ম্মার প্রতি ও কৃতবর্ম্মা সাত্যকির প্রতি স্পর্দ্ধা করিযা পরস্পর আক্রমণ করিতে লাগিলেন। ঐ দুই পুরুষের কলেবর শরনিকরে সমাচিত[দস্তানায় আবৃত হস্তদ্বারা আকৰ্ষিত] হওয়াতে উহারা বসন্তকালীন কুসুমিত কিংশুকবৃক্ষদ্বয়ের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিলেন।

মহাবীর অভিমন্য বৃহদ্বলের সহিত সংগ্ৰাম করিতে লাগিলেন। মহাবল বৃহদ্বল অভিমনুর ধ্বজ ছিন্ন ও সারথিকে নিহত করিলেন। ধ্বজ ও সারথি বিনষ্ট হওয়াতে মহাবীর সুভদ্রাতনয় ক্রোধান্বিতচিত্তে নয়বাণদ্বারা বৃহদ্বলের গাত্র বিদ্ধ করিয়া দুই নিশিত ভল্ল নিক্ষেপপূর্ব্বক একটি দ্বারা ধ্বজ ও অপরটি দ্বারা তাহার পৃষ্ঠা-সারথিকে[পার্শ্বরক্ষক] নিপাতিত করিলেন; সেই বীরপুরুষদ্বয় তীক্ষ্ন শরনিকরদ্বারা পরস্পরকে ক্ষতবিক্ষত করিতে লাগিলেন।

“মহাবীর ভীমসেন, মহামানী সমরবিশারদ জাতবৈরাট[শক্ৰতাপন্ন] মহারাথ দুৰ্য্যোধনসহ তুমুল সংগ্রাম আরম্ভ করিলেন। ঐ মহাবলপরাক্রান্ত কুরুবংশীয় বীরপুরুষদ্বয় পরস্পরের প্রতি অনবরত শরবর্ষণ করিতে লাগিলেন। সেই দুই মহাত্মার বিচিত্ৰ সংগ্রামসন্দর্শনে সকল লোকের মনে বিস্ময় ভাবের আবির্ভাব হইল।

“মহাবীর দুঃশাসন মহারথী নকুলের সম্মুখীন হইয়া নিশিতসায়কসমুদয়দ্বারা তাঁহার কলেরব বিদ্ধ করিতে লাগিলেন তখন মহাবীর মাদ্রীনন্দন হাস্য করিতে করিতে নিশিতবাণদ্বারা দুঃশাসনের ধ্বজ ও সশর শরাসন ছেদন করিলেন। তদর্শনে আপনার পুত্র ক্রুদ্ধ হইয়া নকুলের প্রতি পঞ্চবিংশতি ক্ষুদ্রক [বাণ] নিক্ষেপ এবং তাঁহার তুরঙ্গসমুদয় ও ধ্বজ ছেদন করিলেন।

“মহাবীর দুর্ম্মুখ মহাবলপরাক্রান্ত সমরে যত্নশীল সহদেবের সমীপবর্ত্তী হইয়া শরনিকরদ্বারা তাঁহাকে বিদ্ধ করিতে লাগিলেন। তখন প্রভূত বলবীর্য্যশালী সহদেব এক তীক্ষ্নশর নিক্ষেপ করিয়া দুর্ম্মুখের সারথিকে নিপাতিত করিলেন। ঐ রণদুর্ম্মদ বীরপুরুষদ্বয় প্রহার ও প্রতিপ্রহারমানসে সায়কসমুদয় নিক্ষেপ করিয়া পরস্পর বিত্ৰাসিত করিতে লাগিলেন।

“মহারাজ যুধিষ্ঠির স্বয়ং মদ্ররাজের সহিত সংগ্রাম করিতে লাগিলেন। মদ্রপতি শরদ্বারা যুধিষ্ঠিরের শরাসন দ্বিখণ্ড করিয়া ফেলিলেন। তখন কুন্তীনন্দন যুধিষ্ঠির সেই ছিন্ন শরাসন পরিত্যাগপূর্ব্বক অন্য এক সুদৃঢ় কোদণ্ড গ্রহণ করিলেন এবং সন্নতপর্ব্বশরসমুদ্বয়দ্বারা আচ্ছাদনপূর্ব্বক ‘থাক্ থক্’ বলিয়া তর্জ্জন করিতে লাগিলেন।

“দ্রুপদতনয় ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণাচাৰ্য্যের প্রতি ধাবমান হইলেন। বীরবরাগ্রগণ্য দ্রোণ ক্রোধাপরবশ হইয়া মহাত্মা দ্রুপদপুত্রের বিপুল শরাসন ছেদন করিলেন এবং মহাঘোর কালনদের ন্যায় এক শর তাঁহার শরীরে বিদ্ধ করিলেন। তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন অন্য ধনু ও চতুৰ্দশ বাণ গ্রহণপূর্ব্বক দ্রোণের প্রতি শরাঘাত করিতে লাগিলেন। এইরূপে সেই বীরপুরুষদ্বয় ক্রোধান্বিত হইয়া পরস্পর তুমুল সংগ্রাম আরম্ভ করিলেন।

“মহাবীর শঙ্খ সৌমদত্তির সহিত সংগ্ৰাম করিতে ধাবমান হইয়া ‘থাক্ থাক্’ বলিয়া তাঁহার প্রতি তর্জ্জন করিতে লাগিলেন।

মহাবীর সৌমদত্তি বাণদ্বারা শঙ্খের দক্ষিণভুজ বিদ্ধ করিয়া তাহার জক্ৰদেশে বাণাঘাত করিতে লাগিলেন। দেব ও দানবের ন্যায় সেই বীরপুরুষদ্বয়ের সংগ্রাম অতি ভয়ানক হইয়া উঠিল। মহারথ ধৃষ্টকেতু ক্ৰোধনস্বভাব বাহ্লীকের সহিত সংগ্রাম করিতে ধাবমান হইলেন। মহাবল বাহ্লীক অমর্ষপরায়ণ খৃষ্টকেতুর প্রতি বাণবৃষ্টি করিয়া সিংহনাদ করিতে লাগিলেন। তখন চেন্দিরাজ ধৃষ্টকেতু ক্রোধান্বিত হইয়া মাত্তমাতঙ্গতুল্য পরাক্রমশালী বাহ্লীকের প্রতি নয়বাণ পরিত্যাগ করিলেন। মঙ্গল[মঙ্গলগ্ৰহ জ্যোতিষশাস্ত্ৰমতে বুধগ্রহের শত্রু] ও বুধের তুল্য সেই বীরদ্বয় সংগ্রামস্থলে মুহুর্ম্মুহুঃ বীরনাদ করিয়া পরস্পরকে আক্রমণ করিতে লাগিলেন।

“ভীমনন্দন ক্রুরকর্ম্ম ঘটোৎকচ অলক্ষ্মষ রাক্ষসের সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়া নবতি[নব্বই]” বাণ নিক্ষেপপূর্ব্বক তাহার কলেবর ক্ষতবিক্ষত করিল; মহাবল অলম্বুষও বারংবার শরনিক্ষেপপূর্ব্বক ভীমতনয়ের শরীর বিদীর্ণ করিতে লাগিল। বৃত্র ও বাসবতুল্য পরাক্রমশালী সেই বীরপুরুষদ্বয় শরবিদ্ধকলেবর হইয়া সংগ্রামস্থলে অধিকতর শোভা পাইতে লাগিল। বলবান্ শিখণ্ডী অশ্বথামার সহিত সংগ্রাম করিতে ধাবমান হইলেন। মহাবীর অশ্বথামা সুতীক্ষ নারাচপ্রহারদ্বারা ক্ৰোধপরায়ণ শিখণ্ডীকে বিকম্পিত করিলেন; মহাবলপরাক্রান্ত শিখণ্ডীও নিশিত সায়ক নিক্ষেপপূর্ব্বক অশ্বথামাকে তাড়ন করিতে লাগিলেন। এইরূপে তাঁহারা দুইজনে পরস্পরের প্রতি বিবিধ শরপ্রহার করিতে আরম্ভ করিলেন।

“বাহিনীপতি বিরাট ভগদত্তের প্রতি ধাবমান হইলেন, তাঁহাদের পরস্পর তুমুল সংগ্রাম হইতে লাগিল; মেঘ যেমন পর্ব্বতোপরি বারিবর্ষণ করে, মহাবীর বিরাট ক্রুদ্ধ হইয়া ভগদত্তের উপর তদুপ বাণবৰ্ষণ করিতে লাগিলেন। ঘনঘটা[মেঘসমূহ—মেঘাড়ম্বর] যেরূপ সূৰ্য্যকে আচ্ছাদিত করে, মহারাজ ভগবত্ত তদুপ। শরনিকর নিক্ষেপপূর্ব্বক বিরাটকে আচ্ছাদিত করিলেন ; শরদ্বানের পুত্র কৃপাচার্য্য কৈকেয়াধিপতি বৃহৎক্ষত্রের সমীপে গমনপূর্ব্বক শরবর্ষণদ্বারা তাঁহাকে আচ্ছাদিত করিলেন; বৃহৎক্ষত্ৰও কৃপের উপর বাণবৃষ্টি করিতে লাগিলেন। পরে উভয়ের অশ্ব সংহার, ধনু ছেদন ও রথ ভগ্ন করিয়া অসিযুদ্ধে প্রবৃত্ত হইলেন। সেই বীরপুরুষদ্বয়ের অসিযুদ্ধ ক্ৰমে অতি ভয়ঙ্কর হইয়া উঠিল।

“অরাতিতাপন মহারাজ দ্রুপদ ক্রুদ্ধ হইয়া সিন্ধুরাজ জয়দ্রথের প্রতি ধাবমান হইলেন। মহারাজ জয়দ্ৰথ তিনবাণদ্বারা দ্রুপদকে বিদ্ধ করাতে তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া সিন্ধুরাজের উপর বাণবর্ষণ করিতে লাগিলেন। শুক্র[জ্যোতিষ মতে সমতুল্য বলশালী] ও মঙ্গলীসদৃশ[জ্যোতিষ মতে সমতুল্য বলশালী] সেই দুই বীরপুরুষের ঘোরতর যুদ্ধ দর্শন করিয়া দর্শকগণ পরমগ্ৰীত হইলেন। আপনার পুত্ৰ মহাবীর বিকর্ণ মহাবলপরাক্রান্ত শ্রুতসোমের প্রতি ধাবমান হইলেন; তাহাদের উভয়ের ঘোরতর সংগ্ৰাম হইতে লাগিল। তাহারা পরস্পর বাণপ্ৰহার করিয়া কেহই কাহাকেও কম্পিত করিতে পারিলেন না দেখিয়া সকলেই আশ্চৰ্য্যান্বিত হইলেন।

‘মহারথ চেকিতান পাণ্ডবগণের হিতার্থী হইয়া ক্রোধান্ধচিত্তে সুশর্ম্মার প্রতি ধাবমান হইলেন। সুশর্ম্মা বহুবিধ সায়কবর্ষণ করিয়া চেকিতানকে নিবারণ করিতে লাগিলেন; মহাবীর চেকিতানও ক্ৰোধান্বিত হইয়া পর্ব্বতোপরি মহামেঘের বারিবর্ষণের ন্যায় সুশর্ম্মার উপর বাণবৃষ্টি করিতে লাগিলেন। সিংহ যেমন মত্তমাতঙ্গকে লক্ষ্য করিয়া গমন করে, তদ্রূপ গান্ধাররাজ শকুনি মহাবলপরাক্রান্ত যুধিষ্ঠিরাত্মজ প্রতিবিন্ধ্যের প্রতি ধাবমান হইলেন। ইন্দ্র যেমন দানবকে বিদারিত করিয়াছিলেন, তদুপ যুধিষ্ঠিরতনয় ক্রোধান্বিত হইয়া বাণবর্ষণদ্বারা শকুনির কলেবর বিদারণ করিতে লাগিলেন; শকুনিও শরনিকর বর্ষণপূর্ব্বক প্ৰতিবিন্ধ্যের দেহ বিদ্ধ করিতে আরম্ভ করিলেন।

“মহাবীর সহদেবতনয় শ্রুতকর্ম্মা কাম্বোজদেশীয় মহারথ সুদক্ষিণের প্রতি ধাবমান হইলেন। সুদক্ষিণ বিবিধ বাণিনিক্ষেপ করিয়াও মৈনাকচলসন্নিভ মহারথ শ্রুতকর্ম্মকে বিচলিত করিতে পারিলেন না। শ্রুতকর্মী শরনিকরপ্রহারদ্বারা সুদক্ষিণের কলেবর ক্ষতবিক্ষত করিলেন। অরতিনিপাতন মহাবীর অর্জ্জুনতনয় ইরাবান ক্রুদ্ধ হইয়া অমর্ষপরায়ণ শতায়ার প্রতি ধাবমান হইলেন এবং তাঁহার অশ্বসমুদয় বিনষ্ট করিয়া সিংহনাদ করিয়া তাঁহার সৈন্যগণকে বিকম্পিত করিতে লাগিলেন। তখন শতায় ক্রুদ্ধ হইয়া গদাগ্রদ্বারা অর্জ্জুননন্দনের অশ্বসমুদয় বিনষ্ট করিলেন। এইরূপে তাঁহাদের পরস্পর ঘোরতর সংগ্ৰাম হইতে লাগিল।

“অবন্তিদেশীয় বিন্দ ও অনুবিন্দ সসৈন্য সপুত্র কুন্তিভোজের সহিত সংগ্ৰাম করিতে লাগিলেন। ঐ যুদ্ধে আমরা বিন্দ ও অনুবিন্দের ঘোর পরাক্রম দেখিলেন। তাঁহারা স্থিরচিত্তে সেই মহতী সেনার সহিত সংগ্ৰাম করিতে লাগিলেন। অনুবিন্দ গদাদ্বারা কুন্তিভোজকে তাঢ়না করিতে লাগিলেন, কুন্তিভোজও তাঁহার উপর বাণবৰ্ষণে প্রবৃত্ত হইলেন। তখন কুন্তিভোজতনয় বিন্দের প্রতি শরপ্রহার করিতে আরম্ভ করিলেন; বিন্দও কুন্তিভোজনন্দনকে বাণাঘাত করিতে লাগিলেন। তদর্শনে সকলেই চমৎকৃত হইয়া উঠিলেন। কৈকেয়দেশীয় পঞ্চভ্রাতা স্বকীয় সৈন্যগণসমভিব্যাহারে সসৈন্য পাঁচজন গান্ধারের সহিত সংগ্রাম করিতে লাগিলেন।

“আপনার পুত্র বীরবাহু রথিশ্রেষ্ঠ বিরাটতনয় উত্তরের সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়া নয়বাণদ্বারা তাহার কলেবর বিদ্ধ করিলেন, মহাবীর উত্তরও তাহার গাত্ৰে নিশিতশর প্রোথিত করিতে লাগিলেন। মহাবীর চেদিরাজ উলূকের প্রতি ধাবমান হইয়া তাঁহার উপর শরবর্ষণ করিতে লাগিলেন, উলুকও তাঁহার প্রতি সলোম [পক্ষযুক্ত] নিশিত শরনিকর নিক্ষেপ করিতে আরম্ভ করিলেন। এইরূপে সেই বীরযুগল পরস্পরের দেহ ক্ষতবিক্ষত করিয়া যুদ্ধ করিতে লাগিলেন, কেহ কহাকে পরাজিত করিতে পারিলেন না।

“হে মহারাজ! এইরূপে আপনার ও পাণ্ডবগণের সহস্ৰ সহস্ৰ রথী, গজারোহী, অশ্বারোহী ও পদাতিগণ ঘোরতর দ্বন্দ্বযুদ্ধ করিতে লাগিল। ঐ যুদ্ধ মুহুর্ত্তমাত্ৰ মধুরদর্শন হইয়াছিল; পরে নিতান্ত সঙ্কুল [ঘোরতর] হইয়া উঠিল, তখন আর কিছুই নয়নগোচর হইল না। ঐ সময় গজ গজের সহিত, রথী রথীর সহিত, অশ্ব অশ্বের সহিত ও পদাতি পদাতির সহিত তুমুল যুদ্ধ করিতে লাগিল। অনন্তর শূরগণ পরস্পরের প্রতি ধাবমান হইয়া তুমুল সংগ্রাম আরম্ভ করিলেন। দেবর্ষি সিদ্ধ ও চারণগণ তথায় সমুপস্থিত হইয়া সেই দেবাসুরসংগ্রামসদৃশ ভয়ঙ্কর সমর সন্দর্শন করিতে লাগিলেন। তখন সহস্র রথ, সহস্ৰ হস্তী, অশ্ব ও পুরুষগণ বিপরীত দিকে গমন করিতে লাগিল। ঐ সময়ে ইতস্ততঃ বহু সহস্র রথী: গজ ও আরোহিগণকে পরস্পর মুহুর্ম্মুহুঃ সংগ্ৰাম করিতে দৃষ্ট হইল।”