২৬. কাশ্মীর জয়

কাশ্মীর জয়

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ভগদত্ত কর্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া অর্জ্জুন প্রত্যুত্তর করিলেন, “মহাশয়! এই বিষয়ে অঙ্গীকৃত হইলে আমাদিগের সকলই অনুষ্ঠিত হয়।”

অনন্তর অর্জ্জুন ভগদত্তকে বশীভুত করিয়া উত্তরাভিমুখে প্রস্থান করিলেন। তথায় উপস্থিত হইয়া অন্তর্গিরি, বহির্গিরি ও উপগিরি এই সমস্ত স্থান আপন হস্তগত করিলেন। তৎপরে পর্ব্বত, বন ও তত্ৰত্য অনেকানেক ভূপালগণকে আয়ত্ত ও অনুরক্ত করিয়া তাঁহাদিগের নিকট ধন গ্রহণ করিলেন। অনন্তর মৃদঙ্গনাদ, রথচক্রের ঘর্ঘরশব্দ ও মাতঙ্গগণের বৃংহিতধ্বনি দ্বারা পর্ব্বতকাননসমাকীর্ণ বসুন্ধরা বিকম্পিত করিয়া ঐ সকল রাজলোকের সহিত উলুকবাসী বৃহস্তের নিকট উপস্থিত হইলেন। বৃহন্ত অবিলম্বে চতুরঙ্গিণী সেনা সমভিব্যাহারে রাজধানী হইতে নিৰ্গত হইয়া অর্জ্জুনের সহিত ঘোরতর সংগ্রাম আরম্ভ করিলেন। অর্জ্জুনের সহিত পর্ব্বতরাজ বৃহন্তের অতিমহৎ সংঘর্ষ হইতে লাগিল। কিন্তু বৃহন্ত তাঁহার বলবীৰ্য্য সহ্য করিতে পারিলেন না। পরিশেষে তিনি অর্জ্জুনকে নিতান্ত দুর্বিষহ স্থির করিয়া প্ৰভূত অর্থের সহিত তথায় সমুপস্থিত হইলেন।

অনন্তরীণ কুন্তীনন্দন বৃহত্তরাজ্য বৃহস্তকেই সমর্পণ করিয়া উলুকাসমভিব্যাহারে সেনাবিন্দুর নিকট উপস্থিত হইলেন এবং অনতিবিলম্বে তাঁহাকে রাজ্যচ্যুত করিলেন। তৎপরে তিনি মোদাপুর, বামদেব, সুদামন, সুসন্ধুল এবং উত্তর উলুকদেশস্থ অনেকানেক ভূপালগণকে সমানয়ন করিলেন। তিনি তথায় অবস্থান করিয়াই ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের অপ্রতিহত শাসন-প্রভাবে সেনাসমূহ দ্বারা পঞ্চগণ ও বহুবিধ দেশ জয় করিতে লাগিলেন। তৎপরে চতুরঙ্গিণী সেনা সমভিব্যাহারে সেনাবিন্দুর রাজধানী হইতে নিৰ্গত ও দেবপ্রস্থে, উপস্থিত হইয়া স্কন্ধাবার সংস্থাপন করিলেন। তথা হইতে সৈন্যগণ-পরিবৃত হইয়া পুরুষৰ্ষভ পৌরবরাজ বিশ্বগণের নিকট উপনীত হইলেন। তথায় অনেকানেক পার্ব্বতীয় মহাবীরদিগকে সমরাঙ্গনে পরাজয় করিয়া সৈন্যগণসহকারে পৌরবপুরী অধিকার করিয়াছিলেন। তৎপরেও পর্ব্বতনিবাসী দাস্যুদিগকে এবং সপ্তবিধ উৎসব-সঙ্কেতনামক স্লেচ্ছজাতিদিগকে পরাজয় করিলেন।

অনন্তর তিনি কাশ্মীরদেশসস্তুূত ক্ষত্ৰিয়বীরদিগকে ও দশ রাজমণ্ডলের সহিত ভূপাল লোহিতকে পরাজয় করিলেন। তখন ত্ৰিগর্ত, দারু ও কোকানদাদেশীয় ক্ষত্ৰিয়েরা অর্জ্জুনসন্নিধানে সমাগত হইতে লাগিলেন। তৎপরে মহাবীর অর্জ্জুন রমণীয় অভিসারী নগরী অধিকার করিলেন। তাহার বাহুবলে রণস্থলে উরগদেশবাসী মহারাজ রোচমান পরাজিত হইলেন। তদনন্তর রণস্থলে সৈন্যবিস্তারপূর্ব্বক বহুবিধ আয়ুধরক্ষিত রমণীয় সিংহপুরে অগ্নিসংযোগ করিয়া দিলেন। তৎপরে সৈন্যগণ-সমভিব্যাহারে সুহ্ম ও সুমোলানাম্নী নগরী মন্থন করিতে লাগিলেন। তৎপরে পরম বাহুবিক্রম প্রকাশ্যপূর্ব্বক তিনি নিতান্ত দুর্লভ বাহ্লীকদিগকে নিরতিশয় মর্দন করিয়া পরিশেষে স্ববশে স্থাপন করিলেন। অনন্তর মহাবল-পরাক্রান্ত সৈন্য সমভিব্যাহারে লইয়া দরদ ও কাম্বোজ জয় করেন। পূর্ব্ব ও উত্তরদেশে যে-সকল দস্যু বাস করিতেছিল আর যাহারা অরণ্যচারী, তাহারাও অর্জ্জুনের বশীভূত হইল। তৎপরে মহাবীর অর্জ্জুন লোহ, পরম, কাম্বোজ ও উত্তরঋষিক এই সকলকে এককালে পরাজয় করিলেন। ঋষিকদিগের সহিত অর্জ্জুনের ঘোরতর ভয়ঙ্কর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। অর্জ্জুন তাহাদিগকে সমরাঙ্গনে পরাজয় করিয়া শুকোদরশ্যাম আটটি অশ্ব আনয়ন করিলেন; আর রাজকরম্বরূপ ময়ূরসদৃশ উদীচ্য ও পাশ্চাত্য অতিবেগগামী তুরঙ্গ সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন। তৎপরে নিন্ধুট-পর্ব্বত ও হিমাচলকে পরাজয় করিয়া ধবল-গিরিপৃষ্ঠে সেনানিবেশ করিলেন।