১৭. কীচককর্ত্তৃক অপমানিত দ্ৰৌপদীর ভীমসমীপে গমন

১৭তম অধ্যায়

কীচককর্ত্তৃক অপমানিত দ্ৰৌপদীর ভীমসমীপে গমন

কীচকের মৃত্যুকামনা করিয়া স্বীয় আবাসে গমনপূর্ব্বক গাত্র ও বস্ত্রদ্বয় প্রক্ষালন করিলেন এবং আপনার শোকাবহ ঘটনা স্মরণ করিয়া, ‘কি করি, কোথায় যাই’ এই বলিয়া রোদন করিতে লাগিলেন। পরিশেষে মনে করিলেন, “ভীমসেনের শরণাপন্ন হই, তিনি ব্যতীত অন্য কে আমার প্রিয়কাৰ্য্য সম্পাদনা করিবে?”

পতিপরায়ণা দ্রৌপদী এইপ্ৰকার সঙ্কল্প করিয়া রজনীযোগে শয্যাতল পরিত্যাগপূর্ব্বক বিষণ্ন চিত্তে ভীমসেনের ভবনসমীপে সমুপস্থিত হইয়া কহিলেন, “হে বৃকোদর! আমার শত্ৰু সেই পাপাত্মা তাদৃশ কর্ম্ম করিয়াও এখনও জীবিত রহিয়াছে, তুমি কি করিয়া সুখে নিদ্রা যাইতেছ?” দ্রুপদনন্দিনী এই কথা বলিয়া ভীমসেনের গৃহাভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হইলেন। দেখিলেন, মহাবীর বৃকোদর মূগরাজের ন্যায় শয়ান রহিয়াছেন। তখন সেই গৃহ দ্রৌপদীর অলোকসামান্য রূপে ও ভীমসেনের অসাধারণ তেজে প্রজ্জ্বলিত প্ৰায় হইতে লাগিল।

যেমন লতা প্ৰকাণ্ড শালবৃক্ষকে, মৃগরাজবধু প্রসুপ্ত মৃগরাজকে ও হস্তিনী মহাগজকে আলিঙ্গন করে, সেইরূপ দ্রুপদনন্দিনী ভীমসেনকে বাহুপাশে বন্ধন করিয়া জাগরিত করিলেন এবং বীণাবিনিন্দিত গান্ধার স্বরের ন্যায় মধুরবাক্যে তাঁহাকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিলেন, “নাথ! গাত্ৰোত্থান কর। কি আশ্চৰ্য্য! এখনও নিদ্রা যাইতেছ? বোধ হয়, তুমি জীবন পরিত্যাগপূর্ব্বক শয়ন করিয়াছ, নতুবা পাপাত্মা কীচক কি জীবিত ব্যক্তির ভাৰ্য্যাকে অবমানিত করিয়া এখনও জীবিত থাকিতে পারে?”

ভামসেন দ্রৌপদীর বাক্যে জাগরিত হইয়া পর্ম্যঙ্কে উপবেশনপূর্ব্বক মেঘগভীরস্বরে তাঁহাকে কহিতে লাগিলেন, “দ্ৰৌপদি! তুমি কি নিমিত্ত এত ত্বরান্বিত হইয়া আমার নিকট আগমন করিয়াছ? তোমার স্বাভাবিক বর্ণ নাই; তোমাকে কৃশা ও পাণ্ডুবৰ্ণ দেখিতেছি কেন? অতএব সমুদয় বিশেষ করিয়া বল। সুখ বা দুঃখ, প্রিয় বা অপ্রিয়, সমুদয় শ্রবণ করিয়া ইতিকর্ত্তব্যতা অবধারণ করিব। আমি সমুদয় কাৰ্য্যেই তোমার বিশ্বাসভাজন; আপৎকালে পুনঃ পুনঃ তোমাকে উদ্ধার করিয়াছি। অতএব শীঘ্র বিবক্ষিত [ঈঙ্গিসত—যাহা বলিতে ইচ্ছক হইয়া আসিয়াছ, তাহা] বিষয় প্রকাশ করিয়া, অন্য লোক জাগরিত হইবার পূর্ব্বেই শয়নের নিমিত্ত গমন কর।”