২৫. অর্জ্জুন-দিগ্বিজয়

অর্জ্জুন-দিগ্বিজয়

জনমেজয় কহিলেন, হে ব্ৰহ্মন! এক্ষণে পাণ্ডবদিগের দিগ্বিজয়-বৃত্তান্ত সবিস্তরে কীর্তন করুন। আমি পূর্ব্বপুরুষদিগের অত্যাশ্চৰ্য্য বিচিত্র চরিত্র শ্রবণ করিয়া কিছুতেই পরিতৃপ্ত হইতেছি না। বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! পাণ্ডবেরা এককালে পৃথিবী জয় করেন, অতএব প্রথমতঃ অর্জ্জুনের দিগ্বিজয়-বৃত্তান্ত বর্ণন করিতেছি, শ্রবণ করুন।

প্রাগ্‌জ্যোতিষপুর জয়

মহারাজ!! ধনঞ্জয় প্রথমতঃ অনতিভয়ঙ্কর কর্ম্ম দ্বারা কুলিন্দবিষয়স্থিত মহীপালগণকে স্ববশে স্থাপন করিলেন। অনন্তর কুলিন্দ, কালকট ও আনৰ্ত্তদেশ বশীভূত করিয়া তিনি সসৈন্যে মহীপাল সুমণ্ডলকে পরাজয় করেন; তৎপরে সুমণ্ডলসমভিব্যাহারে শাকলদ্বীপ ও বিন্ধ্য-ভূধরসন্নিহিত পার্থিবদিগকে জয় করিলেন। সপ্তদ্বীপমধ্যে শাকলদ্বীপে যে-সকল ভূপাল বাস করিতেন, অর্জ্জুনসৈন্যের সহিত তাহাদিগের তুমুল সংগ্ৰাম হইল। অনন্তর অর্জ্জুন ঐ সমস্ত রাজগণকে পরাজিত করিয়া তাহাদিগেরই সমভিব্যাহারে প্রাগজ্যোতিষ-দেশে উপস্থিত হইলেন। তথায় ভগদত্ত নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁহার সহিত অর্জ্জুনের ঘোরতর যুদ্ধ হইতে লাগিল। প্ৰাগজ্যোতিষেশ্বর ভগদত্ত কিরাত, চীন ও সাগরের উপকূলবাসী অন্যান্য বহুবিধ যোদ্ধবর্গের সহিত পরিবৃত ছিলেন। তিনি আট দিন যুদ্ধ করিয়া সংগ্রাম বিষয়ে বিগতক্ৰম অর্জ্জুনকে সহাস্যবদনে কহিলেন, “হে মহাবাহো! তুমি দেবরাজ ইন্দ্রের আত্মজ, তোমার এইরূপ বলবীৰ্য্য হইবে, ইহা নিতান্ত অসঙ্গত নহে। আমি ইন্দ্রের প্রিয়সখা, আমিও রণক্ষেত্রে বলবিক্রমপ্রকাশে কোন অংশে তদপেক্ষা ন্যূন নহি, তথাচ তোমার সহিত যুদ্ধ করিতে নিতান্ত অসমর্থ হইতেছি; অতএব এক্ষণে তোমার কি অভিলাষ হয়, বল, আমি তাহার অনুষ্ঠান করিব। নিশ্চয়ই কহিতেছি, তুমি যে কথা কহিবে, তাহার অন্যথা হইবে না।” অর্জ্জুন কহিলেন, “আমি কুরুকুলতিলক ধর্ম্মানন্দন ধর্ম্মপরায়ণ রাজা যুধিষ্ঠিরের পার্থিবত্ব সংস্থাপনের অভিসন্ধি করিয়াছি। আপনি তাঁহাকে কর প্রদান করুন। আপনি মদীয় পিতা ইন্দ্রদেবের সখা, আর আমার সহিতও আপনার বিলক্ষণ সদ্ভাব জন্মিল; সুতরাং এক্ষণে আর আপনাকে আদেশ করিতে পারি না; অতএব প্রীতিপূর্ব্বক কর প্রদান করুন।” তখন ভগদত্ত কহিলেন, “হে কুন্তীনন্দন অর্জ্জুন! যাদৃশ তুমি আমার প্রণয়ভাজন, রাজা যুধিষ্ঠিরও তদ্রুপ। অতএব আমি অবশ্যই এই সমস্ত অনুষ্ঠান করিব, বরং আর কি করিতে হইবে, বল।”