০৩৯. কিরাতরূপী হরের অর্জ্জুনতপোবনে আগমন

৩৯তম অধ্যায়

কিরাতরূপী হরের অর্জ্জুনতপোবনে আগমন

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহাত্মা মহর্ষিগণ স্ব স্ব স্থানে প্রস্থান করিলে সর্ব্বপাপান্তক ভগবান পশুপতি কিরাতবেশ ধারণপূর্ব্বক কাঞ্চনদ্রুমের ন্যায় ও দ্বিতীয় সুমেরুপর্ব্বতের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিলেন। তিনি পিনাক, শরাসন ও আশীবিষদৃশ শরসমুদয় গ্রহণপূর্ব্বক স্বসমবেশধারিণী উমাদেবী-সমভিব্যাহারে সহস্ৰ সহস্ৰ অঙ্গনাগানে পরিবৃত হইয়া দেহবান দহনের ন্যায় মহাবেগে অর্জ্জুনের তপোবনে গমন করিলেন। ভূতগণ নানা বেশ ধারণপূর্ব্বক তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিতে লাগিল। কিরাতবেশধারী ভগবান ভূতপতির সমাগমে সেই প্রদেশ অপূর্ব্ব শোভা ধারণ করিল। ক্ষণকালমধ্যেই সমুদয় বন নিস্তব্ধ হইল; প্রস্রবণের শব্দ ও বিহঙ্গমগণের নিনাদ একেবারে বিলুপ্ত হইয়া গেল।

কিরাতরূপী ভগবান ভবানীপতি ক্ৰমে ক্রমে পার্থের সমীপবর্ত্তী হইয়া দেখিলেন, অদ্ভুতদৰ্শন মূকনামে এক দানব বরাহরূপ ধারণ করিয়া অর্জ্জুনকে সংহার-করণার্থ লক্ষ্য করিতেছে। অর্জ্জুন তদর্শনে গাণ্ডীব ধনু ও আশীবিষসদৃশ শরসমুদয় গ্ৰহণ করিয়া শরাসনে জ্যা আরোপণ ও টঙ্কার প্রদানপূর্ব্বক সেই কপট বরাহকে কহিলেন, “আরে দুরাত্মন! আমি তোর কোন অপকার করি নাই, তথাপি তুই আমাকে সংহার করিতে বাসনা করিতেছিস; অতএব ‘আমি অগ্ৰেই তোকে যমালয়ে প্রেরণ করিব।”

বরাহরূপী মুক দানবের প্রতি অর্জ্জুন-কিরাতের যুগপৎ অস্ত্রনিক্ষেপ

তখন কিরাতবেশধারী শঙ্কর দৃঢ়ধন্বা অর্জ্জুনকে বরাহের উপর শরনিক্ষেপ করিতে সমুদ্যত দেখিয়া তাঁহাকে নিবারণপূর্ব্বক কহিলেন, “হে তাপস! আমি অগ্ৰে এই ইন্দ্ৰকীল-পর্ব্বতসদৃশ প্রভাসসম্পন্ন বরাহকে লক্ষ্য করিয়াছি” অর্জ্জুন তাঁহার বাক্যে অনাদর করিয়া বরাহের উপর শরনিক্ষেপ করিলেন; কিরাতও সেই বরাহের উপর তৎক্ষণাৎ বজ্রের ন্যায় ও অগ্নিশিখাতুল্য এক বাণ নিক্ষেপ করিলেন। সেই উভয়নিক্ষিপ্ত শরদ্বয় শৈলসদৃশ সুদৃঢ় ও সুবিস্তৃত মুক দানবের গাত্রে এককালে নিপতিত হইল। পর্ব্বতে বজ্রনিপাত হইলে যেরূপ নির্ঘোষ হয়, মুকের গাত্রে সেই শরদ্বয় পতিত হওয়াতে তদ্রূপ ঘোরতর শব্দ হইয়া উঠিল। পরে সেই বরাহরূপী দানব অন্যান্য বহুবিধ পনগসদৃশ দীপ্তাস্য শরনিকরে বিদ্ধ হইয়া ভয়ঙ্কর রাক্ষসরূপ ধারণপূর্ব্বক প্ৰাণ পরিত্যাগ করিল।

অনন্তর অরতিনিপাতন অর্জ্জুন স্ত্রীগণপরিবৃত কিরাতবেশধারী মহাদেবকে দেখিতে পাইয়া প্রীতমনে ঈষৎ হাস্য করিয়া কহিলেন, “হে কনকপ্রভ পুরুষ! তুমি কে, এই ঘোরতর নির্জ্জন কাননে স্ত্রীগণ-সমভিব্যাহারে ভ্রমণ করিতেছ? তোমার কি কিছুমাত্র ভয় হইতেছে না? তুমি কি নিমিত্ত আমার লক্ষিতপূর্ব্ব মৃগের উপর শরনিক্ষেপ করিলে? ঐ বরাহরূপী রাক্ষস যদৃচ্ছাক্রমেই হউক আর আমাকে পরাভব করিবার মানসেই হউক, এখানে আসিতেছিল, এই অবকাশে আমি উহাকে লক্ষ্য করিয়াছিলাম; তাহাতে তুমি আজ আমার সহিত মৃগয়া-ধর্ম্মের বিরুদ্ধ আচরণ করিয়াছ, অতএব আমি তোমার প্রাণসংহার করিব।”

কিরাত সব্যসাচী ধনঞ্জয়ের এই বাক্য শ্রবণানন্তর হাসিতে হাসিতে মিষ্টবাক্যে কহিলেন, “হে বীর! আমার নিমিত্ত তোমাকে ভীত হইতে হইবে না। এই বনসমীপস্থ ভূমি আমাদের অবস্থানস্থান; আমরা সতত এই বহুসত্ত্বযুক্ত বনে বাস করিয়া থাকি। তুমি অগ্নিতুল্য তেজস্বী, সুকুমার ও সুখোচিত হইয়া কি নিমিত্ত দুষ্কর অরণ্যবাস স্বীকারপূর্ব্বক এই জনশূন্য বনে একাকী বিচরণ করিতেছ?”

কিরাত-অর্জ্জুনের দ্বন্দ্বযুদ্ধ

অর্জ্জুন কহিলেন, “আমি গাণ্ডীব ধনু ও অগ্নিতুল্য অস্ত্ৰ-সমুদয় অবলম্বন করিয়া দ্বিতীয় কার্ত্তিকেয়ের ন্যায় এই মহারণ্যে বাস করিতেছি; এই মহাজন্তু রাক্ষস মৃগরােপ ধারণপূর্ব্বক আমাকে সংহার করিবার নিমিত্ত এখানে আসিয়াছিল, এক্ষণে আমি উহার প্ৰাণসংহার করিলাম।” কিরাত কহিলেন, “হে তাপস। আমি অগ্রে শরাসনানিমুক্ত শরসমূহদ্বারা উহাকে শমনসদনে প্রেরণ করিয়াছি। ঐ মৃগকে আমিই পূর্ব্বে লক্ষ্য করিয়াছিলাম, ও আমারই শরাঘাতে প্ৰাণ পরিত্যাগ করিয়াছে। হে মন্দাত্মন! আপনার বলে অবলিপ্ত [গবির্ত্ত] হইয়া স্বীয় দোষ অন্যের উপর আরোপ করা কোন মতেই উচিত নহে; তুমি নিতান্ত গর্ব্বিত; অতএব আমি তোমাকে অদ্যই যমভবনে প্রেরণ করিব। স্থির হও, আমি তোমার উপর বাণনিক্ষেপ করিতেছি; তুমিও স্বসাধ্যানুসারে আমার প্রতি শরসন্ধান করিতে ত্রুটি করিও না।”

অর্জ্জুন কিরাতের এই বাক্য শ্রবণ করিয়া রোষাভরে তাঁহার উপর শরনিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। কিরাত প্ৰসন্নমনে অনায়াসেই সেই শর-সমুদয় সহ্য করিয়া কহিলেন, “ওরে মন্দমতে! আরও বাণ নিক্ষেপ কর, আরও বাণ নিক্ষেপ কর; তোর নিকট নারাচ্য প্রভৃতি যে-সমুদয় মর্ম্মবিদারক অস্ত্ৰ-শস্ত্ৰ আছে, সমুদয়ই আমার উপর নিক্ষেপ কর।” মহাবীর অর্জ্জুন কিরাতের এই বাক্য-শ্রবণে সহসা বাণবৃষ্টি করিতে লাগিলেন। তখন রোষপরবশ সেই বীরপুরুষদ্বয় আশীবিষসদৃশ শরসমূহদ্বারা পরস্পরকে বিদ্ধ করিতে লাগিলেন, কিরাতরূপী শঙ্কর অনায়াসেই তৎসমুদয় সহ্য করিলেন। ভগবান পিনাকপাণি অনায়াসেই অর্জ্জুনের শরনিকর সহ্য করত পর্ব্বতের ন্যায় স্থির হইয়া অক্ষতকলেবরে দণ্ডায়মান রহিলেন। অর্জ্জুন আপনার বাণবর্ষণ ব্যর্থ হইল দেখিয়া সাতিশয় বিস্ময়াবিষ্টচিত্তে সাধু সাধু বলিয়া তাহাকে ধন্যবাদ প্ৰদান করিতে লাগিলেন এবং ভাবিলেন, ‘ইনি কে? কি দেবাদিদেব রুদ্র বা অন্য কোন দেবতা, কি যক্ষ অথবা কোন অসুর হইবেন? শুনিয়াছি, গিরি শ্রেষ্ঠ হিমালয়ে দেবগণের সমাগম আছে। ভূতনাথ পিনাকপাণি ব্যতীত আমার সহস্র শরনিকরা সহ্য করিতে আর কাহারও ক্ষমতা নাই। যদি ইনি মহাদেব ব্যতীত অন্য কোন দেবতা কিংবা যক্ষ হয়েন, আমি অবশ্য ইহাকে তীক্ষ্ণ শরপ্ৰহারে শমনসদনে প্রেরণ করিব।” মহাবীর অর্জ্জুন এই স্থির করিয়া পরম-হৃষ্টমনে সূৰ্য্যকিরণের ন্যায় মর্ম্মভেদী শত শত নারাচ্য নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। পর্ব্বত যেমনশিলাবর্ষণ সহ্য করে, তদ্রূপ ভগবান শূলপাণি অনায়াসে সেই অর্জ্জুন-নির্মুক্ত নারাচনিকর সহ্য করিতে লাগিলেন। ক্ষণকালমধ্যেই অর্জ্জুনের সমুদয়-বাণ নিঃশেষ হইয়া গেল। তখন অর্জ্জুন শরীক্ষয়-সন্দর্শনে সাতিশয় ভীত হইলেন এবং যিনি খাণ্ডবদাহ সময়ে উঁহাকে অক্ষয় তূণীরদ্বয় প্রদান করিয়াছিলেন, সেই হুতাশনকে স্মরণ করিতে লাগিলেন। তিনি মনে মনে চিন্তা করিলেন, “আমার সমুদয় বাণ ক্ষয় হইয়া গিয়াছে; এখন কি নিক্ষেপ করিব? আর এই পুরুষই বা কে? আমার সমুদয় বাণ গ্ৰাস করিল! যেমন শূলাগ্রদ্বারা কুঞ্জরকে সংহার করে, তদ্রূপ শরাসনকোটিদ্বারা ইহাকে যমালয়ে প্রেরণ করি।” অর্জ্জুন ইহা স্থির করিয়া কিরাতকে শরাসনকোটিদ্বারা গ্রহণ ও জ্যাপাশদ্বারা আকর্ষণপূর্ব্বক তাহার উপর বাজ্রপাতসদৃশ মুষ্ট্যাঘাত করিতে লাগিলেন। কিরাতরূপী মহাদেব তৎক্ষণাৎ অর্জ্জুনের সেই শরাসন বলপূর্ব্বক গ্রহণ করিলেন; কাৰ্ম্মুক পরহস্তগত হইল দেখিয়া ধনঞ্জয় খড়গধারণপূর্ব্বক মহাদেবের সহিত যুদ্ধ করিতে সমুদ্যত হইলেন এবং তীক্ষ্নধার খড়গ গ্রহণ করিয়া বলপূর্ব্বক কিরাতের মস্তকে নিক্ষেপ করিলেন। অসিবর মহাদেবের মস্তকস্পর্শমাত্ৰ ভগ্ন হইয়া ভূতলে পতিত হইল। তখন মহাবীর ধনঞ্জয় বৃক্ষ ও শিলাসকল লইয়া যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। কিরাতরূপী ভগবান ভূতনাথ অনায়াসেই সেই অর্জ্জুননিক্ষিপ্ত বৃক্ষ ও শিলাসকল সহ্য করিলেন। তখন মহাবলপরাক্রান্ত পার্থ সেই দুৰ্দ্ধর্ষ কিরাতের গাত্রে বজ্রসদৃশ মুষ্টিপ্রহার করিলে, কিরাতরূপী শঙ্করও পার্থের উপর দারুণ মুষ্ট্যাঘাত করিতে লাগিলেন।

যুধ্যমান মহাবীর পার্থ ও কিরাতের পরস্পর মুষ্টিপ্ৰহারে রণক্ষেত্রে ঘোরতর চট্‌চটা শব্দ সমুত্থিত হইল। পূর্ব্বে বৃত্ৰাসুর ও বাসবের যেরূপ যুদ্ধ হইয়াছিল, কিরাত ও অর্জ্জুনের সেইরূপ লোমহর্ষণ যুদ্ধ হইল। প্রভূতপরাক্রমশালী অর্জ্জুন কিরাতের বক্ষঃস্থলে প্রহার করিলে কিরাতও তাঁহার উরঃস্থলে দৃঢ়তর আঘাত করিলেন। তখন সেই মহাবলপরাক্রান্ত বীরপুরুষদ্বয়ের পরস্পর ভুজনিষ্পেষ ও বক্ষঃসংঘর্ষণে উভয়েরই গাত্ৰ হইতে সধূম অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিনির্গত হইতে লাগিল। তখন মহাদেব বলপূর্ব্বক অর্জ্জুনের গাত্র নিষ্পীড়ন করাতে তাঁহার চিত্ত বিমোহিত হইল। মহাদেবের নিদারুণ নিপীড়নে গাত্রসংরোধ হওয়াতে অর্জ্জুন নিরুচ্ছাস হইয়া পিণ্ডীকৃত ও গত-সত্ত্বের ন্যায়। ভূতলে নিপতিত হইলেন।

যুদ্ধনির্জ্জিত অর্জ্জুনের পূজাব্যপদেশে শিবসাক্ষাৎকার

অর্জ্জুন ক্ষণকাল পরে চৈতন্যপ্রাপ্ত হইয়া গাত্ৰোত্থানপূর্ব্বক রুধিরাক্ত-কলেবরে দুঃখিতচিত্তে মৃন্ময় স্থণ্ডিল নির্ম্মাণ করিয়া মাল্যদ্বারা শরণ্য ভগবান পিনাকীকে অৰ্চনা করিলেন। পূজাবসানে স্বদত্ত মাল্য কিরাতের শিরোভাগে শোভমান হইতেছে দেখিয়া তাহার স্বভাবসিদ্ধ জ্ঞানের উদয় হইল। তখন তিনি সেই কিরাতরূপী ভগবান মহাদেবের চরণতলে নিপতিত হইলেন।

দেবাদিদেব মহাদেব প্রসন্ন হইয়া সেই তপঃক্ষীণাঙ্গ অর্জ্জুনকে বিস্ময়ান্বিত অবলোকনপূর্ব্বক মেঘগর্জ্জনের ন্যায় গভীর-স্বরে কহিতে লাগিলেন, “হে ফাল্লুন! আমি তোমার এই আলোকসামান্য কর্ম্মসন্দর্শনে পরম-পরিতুষ্ট হইয়াছি। তোমার ন্যায় শৌৰ্য্যশালী ও ধৃতিমান ক্ষত্ৰিয় আর কেহই নাই। অদ্য তোমার ও আমার তেজ এবং বীৰ্য্য সমান বোধ হইল। আমি তোমার প্রতি প্ৰসন্ন হইয়াছি। হে বিশালাক্ষী! আমি তোমাকে দিব্যচক্ষু প্ৰদান করিতেছি, তুমি আমাকে অবলোকন কর। তুমি পুরাতন ঋষি। দেবগণ তোমার শক্ৰ হইলেও তুমি অনায়াসে তাঁহাদিগকে সংগ্রামে পরাজয় করিতে পরিবে। আমি প্রীতিপ্ৰফুল্লচিত্তে তোমাকে অনিবারিত অস্ত্ৰ প্ৰদান করিলাম; কেবল তুমিই সেই অস্ত্ৰধারণে সমর্থ হইবে।”

অর্জ্জুনের শিবস্তব

তখন পরপুরঞ্জয় পার্থ উমাদেবী-সমভিব্যাহারী শূলপাণি মহাদেবকে প্রত্যক্ষ করিয়া জানুদ্বারা ভূতল স্পর্শ পুরঃসর প্ৰণামপূর্ব্বক তাহাকে প্রসন্ন করিবার অভিলাষে স্তব করিতে লাগিলেন, “হে কপর্দ্দিন! হে সর্ব্বদেবেশ! হে ভগনেত্রনিপাতন! হে দেবদেব! হে মহাদেব! হে নীলকণ্ঠ! হে জটাধর! হে ত্ৰ্যম্বক! আপনি সমুদয় কারণের শ্রেষ্ঠ; আপনি দেবগণের গতি; সমুদয় জগৎ আপনা হইতে সমুৎপন্ন হইয়াছে; এই ত্ৰিলোকীমধ্যে কি দেব, কি অসুর, কি মানব আপনার জেতা কেহই নাই। হে বিষ্ণুরূপ শিব! হে শিবরূপ বিষ্ণো! হে দক্ষযজ্ঞ-বিনাশন! হে হরিরুদ্র! আপনাকে নমস্কার। হে ললাটাক্ষ! হে সর্ব্ব! হে বর্ষক! হে শূলপাণে! হে পিনাকধারিন! হে সূৰ্য্য! হে মার্জ্জলায়! হে বেধঃ! হে ভগবান! হে সর্ব্বভুতমহেশ্বর! আমি আপনাকে প্রসন্ন করিতেছি। হে হর! আপনি গণেশ, জগতের শম্ভু, লোককারণের কারণ, প্রধান পুরুষের শ্রেষ্ঠ, পরামশ্রেষ্ঠ ও সূক্ষ্মতর। হে শঙ্কর! আপনি আমার অপরাধ মার্জ্জন করুন। হে দেবেশ! আমি আপনার দর্শনাকাঙ্ক্ষী হইয়াই দায়িত তাপসদিগের উত্তম আলয় এই মহাপর্ব্বতে আগমন করিয়াছি, হে ভগবন! আপনি সর্ব্বদেবনমস্কৃত, আমি আপনাকে প্রসন্ন করিতেছি; হে মহাদেব! আমি অসমসাহসিক কর্ম্ম করিয়া আপনার নিকট অপরাধী হইয়াছি; আমাকে ক্ষমা করুন। হে উমাবল্লভ! আমি অজ্ঞানতাপ্রযুক্ত আপনার সহিত যুদ্ধ করিয়াছি, এক্ষণে আপনার শরণাপন্ন আমার সেই অপরাধ মার্জ্জন করুন।”

তখন মহাতেজাঃ ভগবান ভূতভাবন ভবানীপতি হাস্যবদনে অর্জ্জুনের বাহু ধারণপূর্ব্বক ‘ক্ষমা করিলাম’ বলিয়া তাহাকে আলিঙ্গন করিলেন এবং প্রীতিপ্ৰসন্নমনে সান্ত্বনা করিয়া পুনরায় কহিতে লাগিলেন।