২৯. ভীমের বঙ্গবিজয়

ভীমের বঙ্গবিজয়

বৈশম্পায়ন কহিলেন, অনন্তর ভীম কুমাররাজ্যে শ্রেণীমান্‌ ও কোশলাধিপতি বৃহদ্বলকে পরাজয় করিলেন। তৎপরে অযোধ্যায় উপস্থিত হইয়া অনতিতীব্র কর্ম্ম দ্বারা ধর্ম্মজ্ঞ মহাবল দীর্ঘযজ্ঞকে জয় করিলেন। তদনন্তর গোপালকক্ষ, উত্তর-কোশল-প্রদেশ ও মল্লাধিপতিকে স্ববশে আনিলেন। তৎপরে হিমালয়ের পার্শ্বদেশে বলপ্রকাশপূর্ব্বক অল্পকালমধ্যে সমুদয় জলোদ্ভবদেশ [পুলিন দেশ—চড়া ভূমি] অধিকার করিলেন। হে মহারাজ! এইরূপে অনেকানেক দেশ ভীমসেনের অধিকৃত হইল।

তৎপরে ভীমসেন ভল্লাট ও শুক্তিমান পর্ব্বত পরাজয় এবং নিজ বাহুবলে কাশীরাজ-সহিত সুবাহুকে বশীভূত করিলেন। অনন্তর সুপার্শ্ব, যুধ্যমান ও রাজপতি ক্ৰথকে বলপূর্ব্বক পরাজয় করিলেন। তৎপরে মৎস্য ও মহাবল মলদদিগকে এবং পশুভূমিসকল জয় করিতে লাগিলেন। তৎপরে তথা হইতে প্ৰতিগমনপূর্ব্বক মদধার, মহীধর ও সোমধেয়াদিগকে জয় করিয়া উত্তরাভিমুখে প্রস্থান করিলেন। উত্তরদেশে উপস্থিত হইয়া মহাবল ভীম বলপ্রকাশপূর্ব্বক বৎসভূমি অধিকার করিলেন। তৎপরে ভর্গের অধীশ্বর, নিষাদাধিপতি ও মণিমান প্রভৃতি মহীপালদিগকে পরাজয় করিতে লাগিলেন। অনন্তর অনতিতীব্র কর্ম্ম দ্বারা দক্ষিণমল্ল ও ভোগবান পর্ব্বতকে পরাজয় করিলেন। তৎপরে সান্ত্ববাদ প্রয়োগপূর্ব্বক শৰ্ম্মক ও বৰ্ম্মকদিগকে জয় করিতে লাগিলেন। পরে মহারাজ বৈদেহক ও জগতপতি জনককে পরাজয় করিলেন এবং ছল প্রকাশপূর্ব্বক শক ও বর্ব্বরদিগকে আত্মবশে আনিলেন। তৎপরে ইন্দ্ৰপর্ব্বত-সন্নিধানে বিদেহদেশে বাস করিয়াই তিনি সপ্তপ্রকার কিরাতাধিপতিদিগকে পরাজয় করিলেন। অনন্তর স্বপক্ষ হইলেও সুহ্ম ও প্রসুহ্মদিগকে যুদ্ধে জয় করিয়া মগধদিগের প্রতি ধাবমান হইলেন। তথায় দণ্ড, দণ্ডধার ও অন্যান্য মহীপালদিগকে জয় করিয়া তাহাদিগেরই সমভিব্যাহারে গিরিব্ৰজে যাত্ৰা করিলেন। গিরিব্রজে উপস্থিত হইয়া জরাসন্ধতনয়কে সাত্ত্বনা ও হস্তগত করিয়া তাহাদের সহিত কর্ণের প্রতি ধাবমান হইলেন। পরে চতুরঙ্গবলসমভিব্যাহারে মেদিনীমণ্ডল চালিত করিয়া কর্ণের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। পরিশেষে কর্ণকে যুদ্ধে পরাজিত ও আপনার বশীভূত করিয়া পর্ব্বতবাসী রাজগণকে জয় করিলেন।

অনন্তর মোদাগিরিতে উপস্থিত হইয়া নিজ বাহুবলে সেই স্থলের রাজাকে সংগ্রামে সংহার করিলেন। তৎপরে মহাবল মহাবীর পুণ্ডাধিপতি বাসুদেব ও কৌশিকীকচ্ছবাসী মহৌজা [অত্যন্ত তেজস্বী] রাজা, এই দুই মহাবল-পরাক্রান্ত মহাবীরকে পরাজয় করিয়া বঙ্গ রাজের প্রতি ধাবমান হইলেন। তৎপরে সমুদ্রসেন, চন্দ্ৰসেন, তাম্রলিপ্ত, কর্কটাধিপতি প্রভৃতি বঙ্গদেশাধীশ্বরদিগকে ও সুহ্মদিগের অধীশ্বর এবং মহাসাগরকুলবাসী স্লেচ্ছগণকে জয় করিলেন।

এইরূপে মহাবীর ভীম অনেকানেক দেশ অধিকার ও তথা হইতে কর সংগ্ৰহ করিয়া মহারাজ লৌহিত্যের নিকট উপনীত হইলেন। সাগরকুলবাসী স্লেচ্ছরাজগণ ভীমকে বিবিধ রত্ন, চন্দন, অগুরু, বস্ত্ৰ, মণি, মৌক্তিক, কম্বল, কাঞ্চন, রজত, বিদ্রুম প্রভৃতি মহামূল্য দ্রব্যজাত প্রদান করিয়াছিল। ভীম এই সমস্ত সামগ্ৰী গ্রহণপূর্ব্বক ইন্দ্রপ্রস্থে উপস্থিত হইয়া ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে প্রদান করিলেন।