০৫১. দুৰ্য্যোধনের প্রতিব্যূহরচনা

৫১তম অধ্যায়

দুৰ্য্যোধনের প্রতিব্যূহরচনা

সঞ্জয় কহিলেন, “হে রাজন! আপনার তনয় দুৰ্য্যোধন সেই পাণ্ডবপক্ষীয় অভেদ্য ক্ৰৌঞ্চারুণব্যূহ। অবলোকন করিয়া দ্রোণাচাৰ্য্য, কৃপ, শল্য, সৌমদত্তি, বিকর্ণ, অশ্বত্থামা, দুঃশাসনপ্রভৃতি ভ্রাতৃগণ ও যুদ্ধার্থ সমুপস্থিত অন্যান্য বহুসংখ্যক শূরগণকে সমবেত করিয়া কহিতে লাগিলেন, “হে বীরগণ! তোমরা নানাস্ত্রবেত্তা ও শাস্ত্রার্থজ্ঞ; তোমাদের একত্ৰ হইবার কথা দূরে থাকুক, তোমরা এক-একজন সৈন্য লইয়া পাণ্ডবগণকে বিনাশ করিতে পার। আমাদের ভীষ্মাভিরক্ষিত সৈন্য অপর্য্যাপ্ত; পাণ্ডবগণের ভীমসেনাভিরক্ষিত সেনা পর্য্যাপ্ত। অতএব এক্ষণে সংস্থান, শূরসেন, বেত্রিক, কুক্কুর, বেচক, ত্রিগর্ত্ত, মদ্রক ও যবনগণ—ইহারা শত্রুঞ্জয়, দুঃশাসন, বিকৰ্ণ, সুবীর, নন্দোপনন্দনগণ, মণিভদ্রকগণ ও চিত্ৰসেনসমভিব্যাহারে ভীষ্মকেই রক্ষা করুক।”

“এইরূপ যুক্তি স্থির হইলে ভীষ্ম, দ্রোণ ও আপনার পুত্ৰগণ পাণ্ডবগণের সহিত সংগ্রাম করিবার অভিলাষে ব্যূহরচনা করিতে আরম্ভ করিলেন। মহাবীর ভীষ্ম অসংখ্য সৈন্যগণে পরিবৃত হইয়া সুররাজ ইন্দ্রের ন্যায় গমন করিতে লাগিলেন। প্রতাপশালী দ্রোণাচাৰ্য্য, গান্ধার, সিন্ধুসৌবীর, শিবি, বসতি, কুন্তল, দশার্ণ, মাগধ, বিদৰ্ভ, মেলক ও কর্ণপ্ৰাবরগণসমভিব্যাহারে বহুসংখ্যক সৈন্য লইয়া তাঁহার অনুগমনে প্রবৃত্ত হইলেন। শকুনি সৈন্যসমুদয়সমভিব্যাহারে দ্রোণকে রক্ষা করিতে লাগিলেন।

উভয়পক্ষে সিংহনাদ রণবাদ্য

“তখন মহারাজ দুৰ্য্যোধন সমুদয় সহোদর, অশ্বতক, বিকৰ্ণ, অমষ্ঠকোশল, দরদ, বৃক ও ক্ষুদ্রকমালবগণসমভিব্যাহারে হষ্টচিত্তে শকুনির সৈন্যগণকে রক্ষা করিতে লাগিলেন। ভূরিশ্রবা, শল্য, ভগদত্ত এবং অবন্তিদেশীয় বিন্দ ও অনুবিন্দ সৈন্যগণের বামপার্শ্ব রক্ষা করিতে লাগিলেন। সৌমদত্তি, সুশর্ম্মা, কাম্বোজরাজ সুদক্ষিণ, শতায়ু, শ্রুতায়ু দক্ষিণপক্ষে [দক্ষিণদিকে] অবস্থান করিলেন। অশ্বত্থামা, কৃপ, কৃতবর্ম্ম ও সাত্বত মহতী সেনাসমভিব্যাহারে সেনাপৃষ্ঠে [সৈন্যের পিঠের দিকে] রহিলেন। কেতুমান, বসুদান ও কাশিরাজের পুত্র বিভুপ্রভৃতি নানা জনপদেশ্বরগণ সৈন্যসমূহের পৃষ্ঠগোপ্তা [পৃষ্ঠরক্ষক] হইলেন। তখন আপনার পক্ষীয় সেনাগণ যুদ্ধ করিবার নিমিত্ত হৃষ্টচিত্ত হইয়া শঙ্খধ্বনি ও সিংহনাদ করিতে লাগিল। কুরুবৃদ্ধ ভীষ্ম সৈন্যগণের হর্ষজ্ঞাপক শব্দ শ্রবণ করিয়া সিংহনাদ ও শঙ্খধ্বনি করিতে আরম্ভ করিলেন। “অনন্তর পাণ্ডবপক্ষীয় সৈন্যগণ শঙ্খ, ভেরী, পেশী ও আনক ধ্বনিত করাতে তুমুল শব্দ সমুত্থিত হইল। মহাপ্রভাবসম্পন্ন কৃষ্ণ ও ধনঞ্জয় শ্বেত হয়যোজিত মহারথে আরোহণ করিলেন। অনন্তর বাসুদেব পাঞ্চজন্য, অর্জ্জুন দেবদত্ত, ভীমকর্ম্মা ভীমসেন পৌণ্ড্র মহারাজ যুধিষ্ঠির অনন্তবিজয়, নকুল সুঘোষ ও সহদেব মণিপুষ্পকনামক মহাশঙ্খ নিনাদ করিলেন। পরে কাশিরাজ, শৈব্য, মহারথ শিখণ্ডী, ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট, মহারথ সাত্যকি, মহাধনুৰ্দ্ধর দ্রুপদ ও দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্ৰ সিংহনাদ ও শঙ্খধ্বনি করিতে লাগিলেন। ঐ সমুদয় বীরগণের সেই তুমুল নিনাদে পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল প্ৰতিধ্বনিত হইয়া উঠিল। হে মহারাজ! এইরূপে কৌরব ও পাণ্ডবগণ হৃষ্টচিত্ত হইয়া পুনরায় পরস্পরকে সন্তাপিত করিয়া সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইলেন।”