১৬১. দ্রোণযুদ্ধে পাণ্ডবপরাজয়–ভীমার্জ্জুন অভিযান

১৬১তম অধ্যায়

দ্রোণযুদ্ধে পাণ্ডবপরাজয়–ভীমার্জ্জুন অভিযান

সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! অনন্তর ধর্ম্মনন্দন রাজা যুধিষ্ঠির ও ভীম অশ্বত্থামাকে পরিবেষ্টন করিলেন। তদ্দর্শনে দুর্য্যোধন দ্রোণাচার্য্যের সহিত পাণ্ডবগণের প্রতি ধাবমান হইলেন। তখন উভয়পক্ষে ভীরুজনের ভয়বর্দ্ধন ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। রাজা যুধিষ্ঠির ক্রুদ্ধ হইয়া অম্বষ্ঠ, মালব, বঙ্গ, শিবি ও ত্রিগর্ত্তদিগকে শমনসদনে প্রেরণ করিলেন। মহাবীর ভীম যুদ্ধদুর্ম্মদ অভীষাহ ও শূরসেনদিগকে শরনিকরে ছেদন করিয়া রুধিরধারায় রণক্ষেত্র কর্ম্মময় করিতে লাগিলেন। মহাবলপরাক্রান্ত ধনঞ্জয় যৌধেয়, অদ্রিজ, মদ্রক ও মালবদিগকে যমালয়ে প্রেরণ করিলেন। দ্বিরদগণ বেগগামী নারাচনিকরে সমাহত হইয়া দ্বিশৃঙ্গপর্ব্বতের ন্যায় ভূতলে নিপতিত হইল। করিশুণ্ডসকল খণ্ড খণ্ড ও ইতস্ততঃ বিলুণ্ঠমান হওয়াতে সমরভূমি জঙ্গমভুজঙ্গসমুদয়ে পরিবৃত বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। কনকচিত্রিত ছত্রসকল চারিদিকে বিক্ষিপ্ত হওয়াতে সমরভূমি চন্দ্র, সূৰ্য্য প্রভৃতি গ্রহগণসমাকীর্ণ নভোমণ্ডলের ন্যায় শোভাপ্রাপ্ত হইল।

“ঐ সময় দ্রোণের রথাভিমুখে ‘নির্ভয়ে সংহার কর, প্রহার কর, বিদ্ধ কর ও ছেদন কর’ ইত্যাকার ভয়ঙ্কর শব্দ হইতে লাগিল। তখন মহাবীর দ্রোণ ক্রোধাবিষ্ট হইয়া সমীরণ যেমন মেঘমণ্ডল অপসারিত করিয়া থাকে, তদ্রূপ বায়ব্যাস্ত্রদ্বারা পাঞ্চালগণকে বিদ্রাবিত করিতে আরম্ভ করিলেন। পাঞ্চালগণ দ্রোণের অস্ত্রপ্রভাবে সমাহত হইয়া ভীম ও অর্জ্জুনের সমক্ষেই ভয়ে পলায়ন করিতে লাগিল। মহাবীর ভীম ও অর্জ্জুন তদ্দর্শনে অসংখ্য রথারোহী সৈন্যসমভিব্যাহারে অবিলম্বে তথায় সমুপস্থিত হইলেন এবং অর্জ্জুন আচার্য্যের দক্ষিণপার্শ্ব ও ভীমসেন বামপার্শ্ব অবলম্বনপূর্ব্বক তাঁহার প্রতি অনবরত শরনিকর বর্ষণ করিতে লাগিলেন। তখন পাঞ্চাল, সৃঞ্জয়, মৎস্য ও সোমকগণ ভীম ও অর্জ্জুনের অনুগমন করিলেন। তদ্দর্শনে দুর্য্যোধনপক্ষীয় মহারথগণ সৈন্যগণসহ দ্রোণের সাহায্যার্থ তাঁহার সন্নিধানে সমুপস্থিত হইলেন। তৎকালে দিঙ্মণ্ডল গাঢ়তর অন্ধকারে আবৃত এবং সৈন্যগণও নিদ্রায় একান্ত অভিভূত হইয়াছিল। মহাবীর অর্জ্জুন এই সুযোগে সেই কৌরবসৈন্যদিগকে পুনরায় বিদীর্ণ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। সৈন্যগণ ধনঞ্জয়ের শরনিকরে নিতান্ত নিপীড়িত হইয়া চতুর্দ্দিকে পলায়ন করিতে লাগিল এবং কোন কোন মহীপালও স্ব স্ব বাহন পরিত্যাগপূর্ব্বক অর্জ্জুনভয়ে ভীত হইয়া ইতস্ততঃ ধাবমান হইলেন। তখন মহাবীর দ্রোণ, রাজা দুর্য্যোধন ও অন্যান্য যোধগণ কোনক্রমেও তাঁহাদিগকে নিবারণ করিতে সমর্থ হইলেন না।”