১৪৩. ছিন্নবাহু ভূরিশ্রবার অর্জ্জুনতিরস্কার

১৪৩তম অধ্যায়

ছিন্নবাহু ভূরিশ্রবার অর্জ্জুনতিরস্কার

সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! মহাবীর ভূরিশ্রবার সেই অঙ্গদমণ্ডিত সখড়্গ ভুজদণ্ড অদৃশ্য অর্জ্জুনের শরে নিকৃত্ত হইয়া জীবলোকের দুঃসহ দুঃখ উৎপাদনপূর্ব্বক পঞ্চাস্য উরগের ন্যায় মহাবেগে ভূতলে নিপতিত হইল। তখন ভূরিশ্রবা আপনাকে নিতান্ত অকর্ম্মণ্য স্থির করিয়া সাত্যকিকে পরিত্যাগপূর্ব্বক ক্রোধভরে অর্জ্জুনকে তিরস্কার করিয়া কহিলেন, “হে কৌন্তেয়! আমি অনন্যমনে কাৰ্য্যান্তরে ব্যাসক্ত ছিলাম, সেই অবস্থায় তুমি আমার বাহুচ্ছেদন করিয়া নিতান্ত গর্হিত কার্য্যের অনুষ্ঠান করিয়াছ। ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির আমার বধবৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করিলে তুমি কি তাঁহাকে কহিবে যে, আমি ভূরিশ্রবাকে সাত্যকিবধরূপ কুৎসিত কার্য্যে প্রবৃত্ত দেখিয়া তাঁহাকে সংহার করিয়াছি; হে ধনঞ্জয়! তুমি যে প্রকারে আমার উপর অস্ত্র নিক্ষেপ করিয়াছ, ঐরূপে অস্ত্রপ্রয়োগ করিতে কি দেবরাজ ইন্দ্র বা ভগবান্ রুদ্র কিংবা মহাবীর দ্রোণ অথবা মহাত্মা কৃপাচার্য্য তোমাকে উপদেশ প্রদান করিয়াছিলেন? তুমি অন্যান্য বীর অপেক্ষা অস্ত্রধর্ম্ম সমধিক অবগত আছ, তবে কি বুঝিয়া তোমার সহিত যুদ্ধে অপ্রবৃত্ত ব্যক্তিকে প্রহার করিলে? সাধুলোকেরা প্রমত্ত, ভীত, রথশূন্য, প্রার্থনাপরতন্ত্র ও বিপদাপন্ন ব্যক্তিকে কদাচ প্রহার করেন না; কিন্তু তুমি এই নীচাচরিত নিতান্ত দুষ্কর পাপকর্মে কিরূপে প্রবৃত্ত হইলে? আৰ্য্য ব্যক্তি অনায়াসেই সকাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করিতে পারেন; কিন্তু অসৎকাৰ্য্য তাঁহার পক্ষে নিতান্ত দুষ্কর হইয়া উঠে। হে মহাত্মন! মনুষ্য যেরূপ মনুষ্যের সহবাসে কালযাপন করে, অবিলম্বে তাহারই স্বভাব প্রাপ্ত হয়, ইহা তোমাতেই সম্যক্ লক্ষিত হইতেছে। দেখ, তুমি রাজবংশে, বিশেষতঃ কুরুকুলে জন্মপরিগ্রহ করিয়াছ; তুমি অতি সুশীল ও ব্রতপরায়ণ; কিন্তু এক্ষণে ক্ষত্রিয়ধর্মের বিরুদ্ধাচরণপূর্ব্বক সাত্যকির নিমিত্ত যে অন্যায় কার্য্যের অনুষ্ঠান করিলে, ইহা বোধ হইতেছে, কৃষ্ণেরই অভিপ্রেত; এরূপ অভিপ্রায় তোমাতে কখনই সম্ভাবিত হইতে পারে না। হে পার্থ! বাসুদেবের সহিত যাঁহার সখ্যভাব নাই, এমন কোন ব্যক্তিই অন্যের সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত প্রমত্ত ব্যক্তিকে এইরূপ বিপদাপন্ন করিতে প্রবৃত্ত হয়েন না। হে অর্জ্জুন! বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয়গণ ব্রাত্যক্ষত্রিয় এবং স্বভাবতঃই নিন্দনীয়; তাহারা ক্রোধান্ধ হইয়া কাৰ্যানুষ্ঠান করে। তুমি কিরূপে তাহাদিগের মতানুসারে কাৰ্যানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হও?’

“হে মহারাজ! মহাবীর অর্জ্জুন ভূরিশ্রবাকর্ত্তৃক এইরূপে অভিহিত হইয়া কহিতে লাগিলেন, হে প্রভো! নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, মনুষ্য জরাজীর্ণ হইলে তাহার বুদ্ধিও জীর্ণ হইয়া যায়। এক্ষণে আমাকে যেসকল কথা কহিলে, তৎসমুদয়ই নিরর্থক। তুমি কৃষ্ণকে ও আমাকে সম্যক্ জ্ঞাত হইয়াও আমাদিগের নিন্দাবাদে প্রবৃত্ত হইয়াছ। আমি সংগ্রামধর্ম্মজ্ঞ ও শাস্ত্রানুশাসনলঙ্ঘনে পরাঙ্মুখ হইয়া কি নিমিত্ত অধর্ম্মাচরণ করিব? তুমি ইহা অবগত হইয়াও বিমোহিত হইতেছ। ক্ষত্রিয়গণ পিতা, ভ্রাতা, পুত্র, সম্বন্ধী ও অন্যান্য বন্ধুবান্ধবগণে পরিবৃত হইয়া তাঁহাদেরই বাহুবল অবলম্বনপূর্ব্বক যুদ্ধ করিতেছেন। হে মহারাজ! রণস্থলে আত্মরক্ষা করা রাজার কর্ত্তব্য নহে। যাঁহাদিগকে কাৰ্য্যসাধনে নিযুক্ত করা হইয়াছে, অগ্রে তাঁহাদিগকে রক্ষা করা সর্ব্বতোভাবে বিধেয়। সেই সকল ব্যক্তি রক্ষিত হইলে রাজা সুরক্ষিত হইয়া থাকেন। মহাবীর সাত্যকি আমাদিগেরই নিমিত্ত নিতান্ত দুষ্কর প্রাণপরিত্যাগে কৃতসঙ্কল্প হইয়া ঘোরতর সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। তিনি আমার শিষ্য, সম্বন্ধী ও দক্ষিণবাহুস্বরূপ। যদি তাঁহাকে নিহন্যমান দেখিয়া উপেক্ষা করি, তাহা হইলে অবশ্যই আমাকে পাপভাগী হইতে হইবে। আমি এই কারণে সাত্যকিকে রক্ষা করিয়াছি; অতএব তুমি কি নিমিত্ত আমার উপর বৃথা রোষাবিষ্ট হইতেছ? হে রাজন! তুমি অন্যের সহিত যুদ্ধ করিতেছিলে, সেই অবস্থায় আমি তোমার করচ্ছেদন করিয়াছি, এই নিমিত্ত তুমি আমাকে নিন্দা করিতেছ। কিন্তু বিশেষ বিবেচনা করিয়া দেখ, আমি কদাচ নিন্দনীয় নহি। আমি হস্তী, অশ্ব, রথ ও পদাতিসমাকুল, সিংহনাদবহুল, অতি গভীর সৈন্যসাগরমধ্যে কখন কবচকম্পন, কখন রথারোহণ, কখন ধনুর্জা আকর্ষণ ও কখন বা শত্রুগণের সহিত ঘোরতর সংগ্রাম করিতেছিলাম। সেই ভীষণ সমরসাগরে একমাত্র সাত্যকির সহিত এক ব্যক্তির যুদ্ধ কিরূপে সম্ভবপর হইতে পারে? এই মনে করিয়া তৎকালে আমি বিস্ময়বিচলিত হইয়াছিলাম। হে মহাবীর! সমরপারদর্শী সাত্যকি একাকী অসংখ্য মহারথগণের সহিত সংগ্রাম করিয়া তাঁহাদিগকে পরাজয়পূর্ব্বক শ্রান্ত, শ্রান্তবাহন, শস্ত্রনিপীড়িত ও নিতান্ত বিমনায়মান হইয়া তোমার বশবর্তী হইয়াছিলেন। তুমি কিরূপে তাঁহাকে পরাজয় করিয়া আপনার শৌর্য্যাধিক্য প্রকাশ করিতে বাসনা করিলে? তুমি খড়্গদ্বারা সাত্যকির শিরচ্ছেদন করিতে সমুদ্যত হইয়াছিলে; সুতরাং আমায় তাঁহাকে রক্ষা করিতে হইল। কোন্ ব্যক্তি আত্মীয়কে তদ্রূপ বিপদগ্রস্ত দেখিয়া উপেক্ষা করিতে পারে? হে বীর! তুমি তোমার আশ্রিত ব্যক্তির সহিত কিরূপ ব্যবহার করিয়া থাক? যাহা হউক, তুমি আত্মরক্ষায় অমনোযোগী হইয়া পরপীড়নে সমুদ্যত হইয়াছিলে; অতএব এক্ষণে আপনার নিন্দা করাই তোমার কর্ত্তব্য।

বাহুচ্ছেদে নির্বিণ্ন ভূরিশ্রবার যোগাবলম্বন

“হে মহারাজ! মহাযশস্বী যূপকেতু [যূপদ্বারা চিহ্নিত রথ] ভূরিশ্রবা অর্জ্জুনকর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া মহাবীর সাত্যকিকে পরিত্যাগপূর্ব্বক প্রায়োপবেশনে কৃতসঙ্কল্প হইলেন। তিনি ব্রহ্মলোকগমনাভিলাষে সব্যহস্তে [বামকরে] শরশয্যা প্রস্তুত করিয়া ইন্দ্রিয়াধিষ্ঠাত্রী দেবতাতে ইন্দ্রিয়গ্রাম সমর্পণ, সূৰ্য্যে দৃষ্টিসন্নিবেশ ও চন্দ্রে মনঃসমাধানপূর্ব্বক মহোপনিষদ ধ্যান করিয়া যোগারূঢ় হইয়া মৌনব্রত অবলম্বন করিলেন। তখন সমুদয় সৈন্যগণই কৃষ্ণ ও ধনঞ্জয়কে নিন্দা এবং পুরুষভ ভূরিশ্রবাকে প্রশংসা করিতে লাগিল। কৃষ্ণ ও অর্জ্জুন নিন্দাবাদশ্রবণে কিছুমাত্র কটুক্তি প্রয়োগ করিলেন না; ভূরিশ্রবাও প্রশংসিত হইয়া অণুমাত্রও আহ্লাদিত হইলেন না। হে রাজ! ঐ সময়ে মহাবীর ধনঞ্জয় আপনার পুত্রগণের ও ভূরিশ্রবার বাক্য সহ্য করিতে না পারিয়া অক্রুদ্ধমনে গর্বিতবচনে ভূরিশ্রবাকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিতে লাগিলেন, হে যূপকেতো। আমাদের পক্ষীয় যে কেহ আমার সম্মুখে উপস্থিত থাকিবে, তাহাকে কেহই রিনাশ করিতে সমর্থ হইবে না। আমি প্রাণপণে তাহাকে রক্ষা করিব। আমার এই মহাব্রতের বিষয় সমুদয় ক্ষত্রিয়গণই অবগত আছেন। অতএব ইহা বিচার করিয়া আমাকে নিন্দা করা কর্ত্তব্য। যথার্থ ধর্ম্ম না জানিয়া অন্যকে নিন্দা করা কদাপি বিধেয় নহে; আমি যে তোমাকে প্রভূত অস্ত্রশস্ত্রসহকারে অস্ত্রহীন সাত্যকির প্রাণসংহারে প্রবৃত্ত দেখিয়া তোমার বাহু ছেদন করিয়াছি, তাহা অধর্ম্মসঙ্গত নহে; কিন্তু বল দেখি, রথ, বৰ্ম ও শস্ত্রবিহীন বালক অভিমন্যুকে নিহত করা কি ধাৰ্মিকজনের প্রশংসনীয় কাৰ্য্য হইয়াছে? হে মহারাজ! মহাবীর ভূরিশ্রবা অর্জ্জুনকর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া মস্তকদ্বারা ভূমিস্পর্শপূর্ব্বক ধনঞ্জয় ধর্ম্মপথ অবলম্বন করিয়াই তাঁহার বাহুচ্ছেদন করিয়াছে, ইহা জ্ঞাপন করিবার নিমিত্ত সব্যহস্ত দ্বারা স্বীয় দক্ষিণভূজ গ্রহণ ও তাঁহাকে প্রদান করিয়া অধোমুখে তূষ্ণীম্ভাব অবলম্বন করিয়া রহিলেন।

কৃষ্ণাদেশে ভূরিশ্রবার সদ্গতি

“তখন অর্জ্জুন ভূরিশ্রবাকে কহিলেন, “হে শল্যাগ্রজ! ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির, মহাবীর ভীমসেন, নকুল ও সহদেবে আমার যেরূপ প্রীতি, তোমাতেও সেইরূপ প্রীতি আছে। অতএব আমি মহাত্মা কেশবের আদেশানুসারে কহিতেছি যে উশীনরতনয় শিবিরাজ যে পবিত্র স্থানে গমন করিয়াছেন, তুমিও সেই স্থানে গমন কর। তখন বাসুদেব কহিলেন, হে ভূরিশ্রবা! তুমি অসংখ্য অগ্নিহোত্রযাগের অনুষ্ঠান করিয়াছ; অতএব বিরিঞ্চি প্রভৃতি সুরগণ আমার যেসকল স্থান প্রার্থনা করেন, তুমি অবিলম্বে তথায় গমনপূর্ব্বক আমার সমান হইয়া গরুড়কর্ত্তৃক মস্তকে বাহিত হও।”

সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! অনন্তর মহাবীর সাত্যকি ভূরিশ্রবার কবল হইতে বিমুক্ত ও উত্থিত হইয়া অর্জ্জুনশরে ছিন্নহস্ত, ছিন্নশুণ্ড গজের ন্যায় উপবিষ্ট, নিরপরাধ মহাত্মা ভূরিশ্রবার মস্তকচ্ছেদন করিবার বাসনায় খড়ঙ্গ গ্রহণ করিলেন। তখন সমস্ত সৈন্য উচ্চস্বরে তাঁহাকে নিন্দা করিতে লাগিলেন। মহাত্মা কৃষ্ণ, অর্জ্জুন, ভীমসেন, উত্তমৌজা, যুধামন্যু, অশ্বত্থামা, কৃপাচার্য্য, কর্ণ, বৃষসেন ও সিন্ধুরাজ বারংবার তাঁহাকে নিষেধ করিলেন, কিন্তু মহাবীর সাত্যকি কাহারও বাক্যে কর্ণপাত না করিয়া খড়্গাঘাতে সেই প্রায়োপবিষ্ট সংযমী ছিন্নবাহু ভূরিশ্রবার মস্তকচ্ছেদন করিয়া ফেলিলেন। তিনি অর্জ্জুনাহত ভূরিশ্রবাকে নিধন করিলেন বলিয়া কেহই তাঁহার প্রশংসা করিল না। তখন, দেবতা, সিদ্ধ, চারণ ও মানবগণ দেবরাজসদৃশ ভূরিশ্রবাকে যুদ্ধে প্রায়োপবেশনানন্তর নিহত নিরীক্ষণ করিয়া বিষ্ময়াবিষ্টচিত্তে তাঁহাকে ধন্যবাদ প্রদান করিলেন। সৈনিকপুরুষেরা কহিতে লাগিলেন, এ বিষয়ে সাত্যকির কোন অপরাধ নাই; ভাগ্যে যাহা ছিল, তাহাই ঘটিয়াছে; অতএব আমাদিগের রোষপরবশ হওয়া বিধেয় নহে। ক্রোধ মানবগণের দুঃখের প্রধান কারণ। ভগবান্ বিধাতা সাত্যকির হস্তেই ভূরিশ্রবার বিনাশ নির্দেশ করিয়াছেন; অতএব ভূরিশ্রবা যুযুধানেরই বধ্য, এ বিষয়ে আর বিচার করিবার প্রয়োজন নাই।’

“তখন মহাবীর সাত্যকি ক্রোধভরে কুরুবংশীয়দিগকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিতে লাগিলেন, ‘হে ধর্ম্মকঞ্চুকধারী অধার্মিক কৌরবগণ! তোমরা ইতিপূর্ব্বে আমাকে ভূরিশ্রবার বিনাশে বারংবার নিষেধ করিয়া ধার্মিকতা প্রকাশ করিতেছিলে; কিন্তু অতিবালক অস্ত্রহীন সুভদ্রাপুত্ৰ অভিমন্যুকে নিহত করিবার সময় তোমাদিগের ধর্ম্ম কোথায় ছিল; আমি পূর্ব্বে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম যে, যে ব্যক্তি কোন কারণে আমাকে ভূতলে নিপাতিত করিয়া ক্রোধভরে আমার বক্ষঃস্থলে পদাঘাত করিবে, সে মুনিব্রতাবলম্বী হইলেও আমি তাহাকে বিনাশ করিব। যাহা হউক, তোমরা আমাকে অচ্ছিন্নবাহু ও প্রতিঘাতে যত্নবান দেখিয়াও মৃতজ্ঞান করিয়া আপনাদের নিতান্ত নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ করিয়াছ। হে কৌরবপ্রধান যোদ্ধৃগণ! ভূরিশ্রবাকে প্রতিঘাত করা উপযুক্ত কাৰ্য্যই হইয়াছে। মহাবীর অর্জ্জুন আমার প্রতি স্নেহপ্রকাশপূর্ব্বক স্বীয় প্রতিজ্ঞা প্রতিপালনার্থ উহার খড়্গযুক্ত বাহুচ্ছেদন করিয়া কেবল আমাকে বঞ্চিত করিয়াছেন। যাহা হউক, ভাগ্যে যাহা থাকে, দৈবই তারা সংঘটন করিয়া দেন। এই সমরাঙ্গনে ভূরিশ্রবাকে নিধন করায় আমার কি অধর্ম্মাচরণ হইয়াছে? মহাকবি বাল্মীকি কহিয়াছেন যে, স্ত্রীলোককে বিনাশ করা বিধেয় নহে। সকল কালেই অসামান্য যত্নসহকারে অরাতিগণের ক্লেশকর কাৰ্য্যানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হওয়া অবশ্য কর্ত্তব্য।’

“হে কুরুরাজ! মহাবীর সাত্যকি এইরূপ কহিলে পর সমস্ত পাণ্ডব ও কৌরবগণ কিছুমাত্র প্রত্যুত্তর প্রদান করিলেন না; কেবল মনে মনে ভূরিশ্রবাকে অভিবাদন করিতে লাগিলেন। তৎকালে সেই অধ্বর [যজ্ঞাচরণে পবিত্র] মহাযয়স্বী, অরণ্যগত তপোধনসদৃশ, ভূরিসুবর্ণপ্রদ [বহু স্বর্ণদাতা] মহা ভূরিশ্রবার বধে কেহই আহ্লাদিত হইলেন না। মহাবীর ভূরিশ্রবার সুনীল কেশকলাপসমলঙ্কৃত কপোতনেত্রসদৃশ লোহিতনয়নযুক্ত ছিন্নমস্তক সমরাঙ্গনে নিপতিত হইয়া অশ্বমেধযজ্ঞভূমিস্থিত পবিত্র অশ্বের ছিন্নমস্তকের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিল। মহাবীর ভূরিশ্রবা এইরূপে সমরাঙ্গনে অস্ত্রাঘাতে নিহত হইয়া দেহপরিত্যাগ করিয়া উৰ্দ্ধলোকে গমন করিলেন।”