১৮৩তম অধ্যায়
ব্রহ্মার সৃষ্টি—সৃষ্টির ক্রমবিকাশ
“ভরদ্বাজ কহিলেন, ‘ভগবন্! ব্রহ্মা সুমেরুতে অবস্থান করিয়া, কিরূপে এই বিবিধ প্রজাবর্গের সৃষ্টি করিলেন, তাহা কীৰ্ত্তন করুন।
“ভৃগু কহিলেন, ‘মহাত্মন্! ভগবান কমলযোনি মানসিক কল্পনাপ্রভাবে বিবিধ প্রজাবর্গের সৃষ্টি করিয়াছিলেন। তিনি উহাদিগের রক্ষণার্থ প্রথমতঃ সলিলের সৃষ্টি করেন। সলিল প্রজাগণের জীবনস্বরূপ। উহার প্রভাবেই জীবগণ পরিবর্দ্ধিত হয় এবং উহার অভাবেই বিনষ্ট হইয়া থাকে। উহাদ্বারা এই বিশ্বসংসার সমাকীর্ণ রহিয়াছে। ফলতঃ পৃথিবী, পৰ্ব্বত ও মেঘ প্রভৃতি যেসকল মূর্ত্তিমান পদার্থ আমাদের নয়নগোচর হয়, তৎসমুদয়ই সলিল হইতে সম্ভূত।
“ভরদ্বাজ কহিলেন, ‘ভগবন! স্থূল অবয়বসম্পন্ন জল, অগ্নি, বায়ু ও পৃথিবী কিরূপে সৃষ্টি হইল, তদ্বিষয়ে আমার অতিশয় সন্দেহ উপস্থিত হইয়াছে।’
‘ভৃগু কহিলেন, ‘দ্বিজবর! পূৰ্বে ব্রহ্মকল্পে [ব্রহ্মার সৃষ্টিকালে—ব্রহ্মার দীর্ঘকালব্যাপী সৃষ্টিসময়ে] ব্ৰহ্মর্ষিদিগেরও এইরূপ লোকসম্ভব বিষয়ে মহা সন্দেহ সমুপস্থিত হইয়াছিল। ঐ সন্দেহ হওয়াতেই তাঁহারা আহার পরিত্যাগপূৰ্ব্বক বায়ু ভক্ষণ করিয়া মৌনভাবে ধ্যান করিতে আরম্ভ করিলেন। ক্রমে দৈব শত বৎসর অতিক্রান্ত হইলে তাঁহাদিগের কর্ণকুহরে এই আকাশবাণী প্রবিষ্ট হইল যে, ব্রাহ্মণগণ! পূর্বে কেবল এই অনন্ত আকাশই বিদ্যমান ছিল। চন্দ্র, সূৰ্য্য, বায়ু প্রভৃতি আর কোন পদার্থই ছিল না। অনন্তর এই আকাশ হইতে অপর আকাশের ন্যায় সলিল ও সলিল হইতে বায়ু সমুৎপন্ন হইল। যেমন ছিদ্রশূন্য পাত্র জলপূর্ণ করিলে সেই জল ভেদ করিয়া শব্দ সহকারে বায়ু নির্গত হইতে থাকে, তদ্রূপ আকাশ সলিলযুক্ত হওয়াতে সহসা বায়ু সেই জলরাশি ভেদ করিয়া ভীষণ শব্দ করিতে করিতে সমুত্থিত হইয়াছিল। সেই সমুদ্রসমুন্থিত বায়ু অদ্যাপি আকাশমার্গে অবিশ্রান্ত সঞ্চরণ করিতেছে। অনন্তর জল ও বায়ুর সংঘর্ষণে মহাবলপরাক্রান্ত ঊর্দ্ধশিখ হুতাশন নভোমণ্ডল উদ্ভাসিত করিয়া প্রাদুর্ভুত হইল এবং সমীরণসংযোগে জল ও আকাশকে একত্রিত করিয়া ঘনীভূত হইয়া উঠিল। ঐ ঘনীভূত পদার্থ আকাশে উত্থিত হইবার সময় উহা হইতে যে স্নেহ নিঃসৃত হইয়াছিল, সেই স্নেহ আবার ঘনীভূত হইয়া পৃথিবীরূপে পরিণত হইয়াছে। এই পৃথিবী নানাবিধ রস, গন্ধ, স্নেহ ও প্রাণীগণের উৎপত্তিস্থান। ইহাতে সমুদয় পদার্থই উৎপন্ন হইয়া থাকে।”