১৮৮. সৃষ্টির জাতিগত সত্ত্বাদি গুণসন্নিবেশ

১৮৮তম অধ্যায়

সৃষ্টির জাতিগত সত্ত্বাদি গুণসন্নিবেশ

“ভৃগু কহিলেন, ‘হে ভরদ্বাজ! ভগবান্ ব্রহ্মা প্রথমে আপনার তেজ হইতে ভাস্কর ও অনলের ন্যায় প্রভাসম্পন্ন ব্রহ্মনিষ্ঠ মরীচি প্রভৃতি প্রজাপতিদিগের সৃষ্টি করিয়া স্বর্গলাভের উপায়স্বরূপ সত্য, ধৰ্ম্ম, তপস্যা, শাশ্বত, বেদ, আচার ও শৌচের সৃষ্টি করিলেন। অনন্তর দেব, দানব, গন্ধৰ্ব্ব, দৈত্য, অসুর, যজ্ঞ, রাক্ষস, নাগ, পিশাচ এবং ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এই চতুর্ব্বিধ মনুষ্যজাতির সৃষ্টি হইল। তখন ব্রাহ্মণেরা সত্ত্বগুণ, ক্ষত্রিয়েরা রজোগুণ, বৈশ্যেরা রজ ও তমোগুণ এবং শূদ্রেরা নিরবচ্ছিন্ন তমোগুণ প্রাপ্ত হইলেন।

“ভরদ্বাজ কহিলেন, ‘ব্রহ্ম! সকল মনুষ্যেই ত’ সর্ব্বপ্রকার গুণ বর্ত্তমান রহিয়াছে; অতএব কেবল গুণদ্বারা কখনই মনুষ্যগণের বর্ণভেদ করা যাইতে পারে না। দেখুন, সমুদয় লোককেই কাম, ক্রোধ, ভয়, লোভ, শোক, চিন্তা, ক্ষুধা ও পরিশ্রমভাবে ব্যাকুল হইতে হয় এবং সকলের দেহ হইতেই স্বেদ, মূত্র, পুরীষ, শ্লেষ্ম, পিত্ত ও শোণিত নিঃসৃত হইয়া থাকে; অতএব গুণদ্বারা কিরূপে বর্ণবিভাগ করা যাইতে পারে?

“ভৃগু কহিলেন, ‘তপোধন! ইহলোকে বস্তুতঃ বর্ণের ইতরবিশেষ নাই। সমুদয় জগই ব্রহ্মময়। মনুষ্যগণ পূৰ্ব্বে ব্রহ্মা হইতে সৃষ্ট হইয়া ক্রমে ক্রমে কাৰ্য্যদ্বারা ভিন্ন ভিন্ন বর্ণে পরিগণিত হইয়াছে। যে ব্রাহ্মণগণ রজোগুণপ্রভাবে কামভোগপ্রিয়, ক্রোধপরতন্ত্র, সাহসী ও তীক্ষ্ণ হইয়া স্বধর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়াছেন, তাঁহারা ক্ষত্রিয়, যাঁহারা রজ ও তমোগুণপ্রভাবে পশুপালন ও কৃষিকাৰ্য্য অবলম্বন করিয়াছেন, তাঁহারা বৈশ্যত্ব এবং যাহারা তমোগুণপ্রভাবে হিংসাপরতন্ত্র, লুব্ধ, সৰ্ব্বকর্ম্মোপজীবী, মিথ্যাবাদী শৌচষ্ট হইয়া উঠিয়াছেন, তাঁহারাই শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন। ব্রাহ্মণগণ এইরূপ কাৰ্য্যদ্বারাই পৃথক পৃথক্ বর্ণলাভ করিয়াছেন; অতএব সকল বর্ণেরই নিত্যধৰ্ম্ম ও নিত্যযজ্ঞে অধিকার আছে। পূৰ্ব্বে ভগবান ব্রহ্মা যাঁহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়া বেদময় বাক্যে অধিকার প্রদান করিয়াছেন, তাঁহারাই লোভবশতঃ শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন; ব্রাহ্মণগণ সতত বেদাধ্যয়ন এবং ব্রত ও নিয়মানুষ্ঠানে অনুরক্ত থাকেন, এই নিমিত্তই তপস্যা বিনষ্ট হয় না। ব্রাহ্মণগণের মধ্যে যাঁহারা পরমার্থ ব্ৰহ্মপদার্থ অবগত হইতে না পারেন তাঁহারা অতি নিকৃষ্ট বলিয়া পরিগণিত এবং জ্ঞানবিজ্ঞানবিহীন স্বেচ্ছাচারপরায়ণ পিশাচ, রাক্ষস ও প্রেত প্রভৃতি বিবিধ জাতি প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। পূৰ্ব্বে আদিদেব মনে মনে প্রজাসৃষ্টির কল্পনা করিয়াছিলেন। তৎপরে প্রাচীন মহর্ষিগণ তপঃপ্রভাবে ক্রমে ক্রমে বেদোক্ত স্বকার্য্যনিশ্চয়জ্ঞ প্রজাগণের সৃষ্টি করিয়াছেন। ফলতঃ আদিদেবের মানসী সৃষ্টির পর ক্রমে ক্রমে প্রাচীন লোক হইতে নূতন লোকের সৃষ্টি হইয়াছে ও হইতেছে।’ ”