১৬৫. ব্রাহ্মণপ্রতিপালনের পারিপাট্য

১৬৫তম অধ্যায়

ব্রাহ্মণপ্রতিপালনের পারিপাট্য

ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! বেদান্তপারগ যাগযজ্ঞশীল ধর্ম্মপরায়ণ সাধু ব্রাহ্মণগণ নিঃস্ব হইলে আচাৰ্য্যকার্য্য, পিতৃকাৰ্য্য ও অধ্যয়নের নিমিত্ত তাঁহাদিগকে ধন দান করা অবশ্য কর্ত্তব্য। যে ব্রাহ্মণেরা নিঃস্বভাবাপন্ন নহেন, তাঁহাদিগকে কেবল দক্ষিণা দান করাই উচিত। আর যাঁহারা অব্রাহ্মণ, তাঁহাদিগকে বেদির বহির্ভাগে অপক্কান্ন দান করাই শাস্ত্রসম্মত। ব্রাহ্মণগণ বেদ ও বহুদক্ষিণ যজ্ঞস্বরূপ। তাঁহারা পরস্পরের প্রতি স্পর্দ্ধা প্রদর্শনপূৰ্ব্বক নিরন্তর যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠান করিয়া থাকেন; অতএব মহীপাল, তাঁহাদিগকে সাধ্যানুসারে ধনরত্ন প্রদান করিবেন। যে ব্রাহ্মণের তিন বৎসর বা অধিককাল পোষ্যবর্গ ভরণপোষণ করিবার উপযুক্ত ধান্যাদি পর্য্যাপ্ত থাকে, তিনিই সোমপান করিতে সমর্থ হয়েন। যাজ্ঞিক বিশেষতঃ ব্রাহ্মণের একাংশ ধনের অভাবে যদি যজ্ঞ অনুষ্ঠিত না হয়, তাহা হইলে ধার্ম্মিক নৃপতি অসংখ্য পশুসম্পন্ন অযাজ্ঞিক অসোমপায়ী বৈশ্যের ধন বলপূৰ্ব্বক গ্রহণ করিয়া তাঁহাকে প্রদান করিবেন। শূদ্রের যাগযজ্ঞে কিছুমাত্র অধিকার নাই; অতএব ব্রাহ্মণের যজ্ঞসাধনের নিমিত্ত শূদ্রের আবাস হইতেও স্বেচ্ছানুসারে ধন আহরণ করা তাঁহার অকৰ্ত্তব্য নহে। যাহারা শত গোধনসম্পন্ন হইয়াও যজ্ঞানুষ্ঠান না করে, রাজা এইরূপ ব্যক্তিদিগের নিকট হইতে ব্রাহ্মণের যজ্ঞানুষ্ঠানার্থ অবিচারিতচিত্তে অর্থ আহরণ করিবেন। যে ব্যক্তি দানশীল নহে, তাহার নিকট হইতে ধন আহরণ করা রাজার অবশ্য কর্ত্তব্য। এইরূপ আচরণ করিলে রাজার পরম ধৰ্ম্মর্লাভ হইয়া থাকে।

“যে ব্রাহ্মণ তিন দিবস অন্নাভাবে উপবাস করিয়াছেন, তিনি নীচকার্য্যে নিরত ব্যক্তির আবাস উদ্যান বা যে-কোন স্থান হইতে হউক, একদিনের আহারোপযোগী ধান্য হরণপূৰ্ব্বক রাজা জিজ্ঞাসা করুন বা না করুন, তাঁহার কর্ণগোচর করিবেন। রাজা ব্রাহ্মণের সেই অপরাধ অবগত হইয়া ধৰ্ম্মানুসারে তাঁহার দণ্ডবিধান করিবেন না। ভূপতির অনবধানতাদোষেই ব্রাহ্মণকে অন্নাভাবে ক্লেশ স্বীকার করিতে হয়; অতএব রাজা তাঁহার জ্ঞান ও চরিত্রের বিষয় সবিশেষ অবগত হইয়া তাঁহার জীবিকাবিধান করিয়া দিবেন এবং পিতা যেমন পুত্রকে রক্ষা করে, তদ্রূপ তাঁহার রক্ষণাবেক্ষণ করিবেন। বৎসরান্তে বৈশ্বানরযজ্ঞ অনুষ্ঠান করা কর্ত্তব্য। ধার্ম্মিকেরা অনুকল্পকে [অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত ব্যবস্থাকে যাহা অশক্তপক্ষে গ্রাহ্য] উৎকৃষ্ঠ ধর্ম বলিয়া কীর্ত্তন করিয়া থাকেন। দেবতা, বিশ্বদেব, সাধ্য, ব্রাহ্মণ ও মহর্ষিগণ আপৎকালে মৃত্যুভয়ে ভীত হইয়া অনুকল্প অবলম্বনপূর্ব্বক জীবিকানির্ব্বাহ করিয়া থাকেন। কি যে ব্যক্তি মুখাকল্প পরিপালনে সমর্থ হইয়াও অনুকল্প অবলম্বন করে, সে কখনই পরলোকে উৎকৃষ্ট ফললাভে সমর্থ হয় না।

“রাজার নিকট আপনার ব্ৰহ্মণ্যের বিষয় নিবেদন করা বেদবিৎ ব্রাহ্মণের কর্ত্তব্য নহে। ক্ষত্রিয়বল অপেক্ষা ব্রহ্মবল নিতান্ত দুঃসহ; অতএব রাজা ব্রাহ্মণতেজ কিছুতেই সহ্য করিতে সমর্থ হয়েন না। ব্রাহ্মণ কৰ্ত্তা, শাস্তা [শাস্তিদাতা—শাসনকর্ত্তা], বিধাতা ও দেবতা বলিয়া নির্দ্দিষ্ট হইয়া থাকেন; অতএব তাঁহার প্রতি কুবাক্য প্রয়োগ করা নিতান্ত অকৰ্ত্তব্য। ক্ষত্রিয় স্বীয় ভুজবীর্য্যপ্রভাবে, বৈশ্য ও শূদ্র অর্থবলে এবং ব্রাহ্মণ মন্ত্র ও হোমদ্বারা আপদ হইতে মুক্ত হইবেন। কন্যা, যুবতী এবং মন্ত্রজ্ঞানশূন্য মূর্খ ও সংস্কারহীন ব্যক্তি হুতাশনে আহুতি প্রদান করিতে অধিকারী নহে। উহারা যে ব্যক্তির যজ্ঞে আহুতিপ্রদানে প্রবৃত্ত হয়, তাহার সহিত আপনাকে নরকস্থ করে, সুতরাং যাগযজ্ঞকুশল বেদবেদান্তপারগ ব্রাহ্মণেরই হোতা হওয়া উচিত। যিনি অগ্নিহোত্রের প্রাজাপত্য অন্ন দক্ষিণা প্রদান না করেন, ধার্ম্মিকেরা তাঁহাকে আহিতাগ্নি বলিয়া নির্দেশ করেন না; অতএব দক্ষিণা প্রদান না করিয়া যজ্ঞানুষ্ঠান করা কর্ত্তব্য নহে। যজ্ঞ দক্ষিণাশূন্য হইলে যজমানের প্রজা, পশু, পুণ্যফলোপার্জ্জিত স্বর্গ, যশঃ, কীৰ্ত্তি ও আয়ুঃ বিনষ্ট করিয়া থাকে।

হীন ব্রাহ্মণাদির লক্ষণপ্রসঙ্গে বিবিধ নীতি

“যে ব্রাহ্মণ ঋতুমতী ভার্য্যার সহবাস করেন, যিনি সাগ্নিক নহেন এবং যাহার কুলে শ্রোত্রিয় নাই, তিনি শূদ্র বলিয়া পরিগণিত হয়েন। যে গ্রামে কূপ ব্যতিরেকে জলাশয় নাই, ব্রাহ্মণ তথায় শূদ্ৰাপতি হইয়া দ্বাদশ বৎসর বাস করিলে তাহার শূদ্রত্বলাভ হয়। যদি কোন ব্রাহ্মণ পরস্ত্রীর সহিত বিহার এবং বৃদ্ধ শূদ্রকে মান্য বোধ করিয়া আপনার শয্যায় স্থানপ্রদান করেন, তাহা হইলে তিনি ক্ষত্রিয় বা বৈশ্যকে আপন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করিয়া উহাদের পৃষ্ঠভাগে তৃণশয্যায় উপবেশন করিলে শুদ্ধিলাভে সমর্থ হয়েন। ব্রতপরায়ণ ব্রাহ্মণ নিকৃষ্ট বর্ণের সহিত একরাত্রি শয়ন ও উপবেশনাদিদ্বারা যে পাপসঞ্চয় করেন, তিন বৎসর ক্ষত্রিয় বা বৈশ্যের পশ্চাদ্ভাগে তৃণশয্যায় উপবেশন করিলে তাহার সেই পাপ অপনীত হয়। ক্রীড়া, বিবাহ, গুরুর কাৰ্য্যসাধন ও আত্মপ্রাণ রক্ষার্থে যে মিথ্যাবাক্যপ্রয়োগ করা যায়, তাহা পাপ বলিয়া পরিগণিত হয় না। স্ত্রীর নিকট মিথ্যাবাক্যপ্রয়োগ করাও পাপাবহ নহে। পরমশ্রদ্ধাসহকারে নীচ ব্যক্তির নিকট হইতেও উৎকৃষ্ট বিদ্যাশিক্ষা করিবে, অপবিত্র স্থান হইতেও অবিচারিতমনে সূবর্ণগ্রহণ করা কর্ত্তব্য, নীচকুল হইতেও স্ত্রীর গ্রহণ এবং বিষ হইতেও অমৃতপান অবিধেয় নহে। স্ত্রী, রত্ন ও সলিল ধৰ্ম্মানুসারে পবিত্র বলিয়া কীৰ্ত্তিত হইয়া থাকে। বর্ণসঙ্করনিবারণ, গো ব্রাহ্মণের হিতসাধন ও আত্মরক্ষার নিমিত্ত বৈশ্যও শস্ত্রগ্রহণ করিতে পারে।

“সুরাপান, ব্রহ্মহত্যা, গুরুতল্পগমন, ব্রহ্মস্বাপহরণ ও সুবর্ণাপহরণ এই পাঁচটি মহাপাতক। প্রাণত্যাগই ঐ পাতকসমুদয়ের প্রায়শ্চিত্ত। লোকে মদ্যপান, অগম্যাগমন ও পতিত ব্যক্তির সহিত সহযোগ করিলে অবিলম্বেই পতিত হইয়া থাকে। পতিত ব্যক্তির সহিত যাজন, অধ্যয়ন ও বিবাহাদি সম্পর্ক রাখিলেই সংবৎসরমধ্যে পতিত হইতে হয়, কিন্তু উহার সহিত গমন, শয়ন ও ভোজনাদিদ্বারা পাতিত্য জন্মিবার সম্ভাবনা নাই। পূর্ব্বোক্ত পাঁচটি মহাপাপ ব্যতিরেকে আর সকল পাপেই প্রায়শ্চিত্ত আছে। একবার সেই সমস্ত পাপের অনুষ্ঠানপূর্ব্বক প্রায়শ্চিত্তবিধান করিয়া কালসহকারে পুনরায় তৎসমুদয়ে প্রবৃত্ত হওয়া নিতান্ত অনুচিত। সুরাপায়ী, ব্রাহ্মণঘাতক ও গুরুতল্পগামীর দেহান্তে প্রেতকাৰ্য্যাদি [দাহাদি] অনুষ্ঠিত না হইলেও অবিচারিতচিত্তে আহারাদি কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করা যাইতে পারে। গুরু ও অমাত্যগণ পতিত হইলে ধর্ম্মপরায়ণ ব্যক্তি তাঁহাদিগকে পরিত্যাগ করিবেন এবং তাঁহারা প্রায়শ্চিত্তের অনুপযুক্ত বলিয়া তাঁহাদিগের সহিত বাক্যালাপও করিবেন না। অধৰ্ম্মাচরণ করিলে তপঃপ্রভাবে তাহা হইতে বিমুক্ত হওয়া যায়। যে ব্যক্তি তস্কর, তাহাকে তস্কর বলিলে তাহার সমান পাপগ্রস্ত হইতে হয়; আর যে ব্যক্তি প্রকৃত তস্কর নহে, তাহাকে তস্কর বলিলে তস্কর অপেক্ষা দ্বিগুণ পাপে লিপ্ত হইতে হয়। যে কন্যা আপনার কৌমারাবস্থা দূষিত করে, সে ব্রহ্মহত্যাপাপের চারি-অংশের তিন-অংশ আর যে পুরুষের সংসর্গে উহা দূষিত হয়, সে একাংশমাত্র প্রাপ্ত হইয়া থাকে। ব্রাহ্মণগণকে তিরস্কার বা প্রহার করিলে লোকে শত বৎসর প্রেতত্ব হইতে মুক্ত হইতে পারে না এবং তাঁহাদিগকে বধ করিলে সহস্র বৎসর নরকে নিপতিত হইয়া থাকে; অতএব তাঁহাদিগকে তিরস্কার, প্রহার বা বধ করা অতিশয় অকৰ্ত্তব্য। ব্রাহ্মণের দেহে শস্ত্রাঘাত করিলে তাঁহার সেই ক্ষতস্থান হইতে শোণিত নির্গত হইয়া যাবৎসংখ্যক ধূলি আর্দ্র করে, প্রহর্ত্তাকে [প্রহারকারীকে] তত বৎসর নরকযন্ত্রণা ভোগ করিতে হয়। ব্রাহ্মণঘাতক গো-ব্রাহ্মণরক্ষার্থ সংগ্রামে শস্ত্রদ্বারা নিহত হইলে বা প্রদীপ্ত হুতাশনমধ্যে আত্মনিক্ষেপ করিলে পাপ হইতে বিমুক্ত হইতে পারে। সুরাপায়ী ব্যক্তি উত্তপ্ত মদ্য পানপূৰ্ব্বক শরীর দগ্ধ বা মৃত্যুমুখে দেহ সমর্পণ করিয়া পাপ হইতে বিমুক্ত হইয়া থাকে। দুরাশয় পাপপরায়ণ ব্যক্তি গুরুপত্নী হরণ করিলে একটি স্ত্রীলোকের প্রতিকৃতি উত্তপ্ত করিয়া তাহা আলিঙ্গনপূর্ব্বক দেহ পরিত্যাগ বা পুংস্ত [পুংচিহ্ন] বৃষণচ্ছেদনপূৰ্ব্বক অঞ্জলি দ্বারা গ্রহণ করিয়া নৈর্ধতকোণে প্রস্থান অথবা ব্রাহ্মণার্থে প্রাণত্যাগ কিংবা অশ্বমেধ, গোমেধ ও অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের অনুষ্ঠানপূর্ব্বক কলেবর পরিত্যাগ করিলে পাপ হইতে বিমুক্ত হইয়া সম্মানলাভে সমর্থ হয়। যে ব্যক্তি ব্রহ্মহত্যা করে, সে দ্বাদশ বৎসর সেই মৃতব্রাহ্মণের কপাল ধারণ ও ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বনপূৰ্ব্বক আপনার কুকার্য্য প্ৰখ্যাপিত [কীৰ্ত্তন-প্রকাশ] করিয়া তপানুষ্ঠান করিবে; আর যে ব্যক্তি গর্ভিণীকে নিপাতিত করে, তাহাকে উহার প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে। যে ব্যক্তি সুরাপায়ী, সে ব্রহ্মচারী ও পরিমিতাহারী হইয়া ক্ষিতিতলে শয়ন এবং তিন বৎসরেরও অধিক অগ্নিষ্টুতাপর যজ্ঞের অনুষ্ঠান বা ব্রাহ্মণগণকে সহস্র বৃষ ও সহস্ৰ ধেনু প্রদান করিলে পাপ হইতে বিমুক্ত হইতে পারে। বৈশ্যকে বিনষ্ট করিলে দুই বৎসর একশত ধেনু এবং শূদ্রকে বিনষ্ট করিলে এক বৎসর এক বৃষ ও একশত ধেনু প্রদান করিবে। কুক্কুর, বরাহ ও উষ্ট্রকে বিনষ্ট করিলে শূদ্ৰবিনাশজনিত পাপনিবারণোপযুক্ত ব্রতের অনুষ্ঠান করিবে। মার্জ্জার, চাস, মণ্ডূক, কাক, সর্প ও মূষিককে নিহত করিলে পশুতুল্য ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিতে হয়।

“এক্ষণে অন্যান্য পাপের প্রায়শ্চিত্তের বিষয় কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। পাপ অল্প হইলে অনুশোচনা বা এক বৎসরকাল ব্রতানুষ্ঠান করিলে তাহা ধ্বংস হইয়া যায়। শ্রোত্রিয়পত্নীতে গমন করিলে তিন বৎসর ও অন্য স্ত্রীসংসর্গে দুই বৎসর ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বনপূৰ্ব্বক দিবসের চতুর্থভাগে আহার করিবে অথবা তিন দিবস. সলিলমাত্র পান করিয়া উপবেশন ও হুতাশনে আহুতি প্রদান করিলে পাপ নিরাকৃত হইয়া যায়। যে ব্যক্তি অকারণে পিতা ও গুরুকে পরিত্যাগ করে, সে ধৰ্ম্মানুসারে পতিত হয়। ভাৰ্য্যা ব্যভিচারিণী বা কারাগারে নিরুদ্ধা হইলে তাহাকে গ্রাসাচ্ছাদনমাত্র প্রদান করিবে। ব্যভিচারী পুরুষের যে ব্রত, ব্যভিচারিণী স্ত্রীকেও সেই ব্রত অবলম্বন করিতে হইবে। যে নারী আপনার পতিকে পরিত্যাগপূৰ্ব্বক নিকৃষ্ট জাতির সহিত সংসর্গ করিবে, মহীপাল তাহাকে প্রশস্ত প্রকাশ্য স্থানে কুক্কুরদ্বারা ভক্ষণ করাইবেন। ব্যভিচারিণী স্ত্রী ও ব্যভিচারী পুরুষকে বহ্নিতপ্ত লৌহময় শয্যায় শয়ন করাইয়া কাষ্ঠদ্বারা দগ্ধ করা রাজার কর্ত্তব্য। যে ব্যক্তি পাপাচরণ করিয়া সংবৎসরকাল প্রায়শ্চিত্ত না করে, তাহাকে দ্বিগুণ প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে। দুই বৎসর পতিত ব্যক্তির সংসর্গে থাকিলে তিন বৎসর এবং চারি বৎসর তাহার সংসর্গে থাকিলে পাঁচ বৎসর পৃথিবী পর্য্যটন ও মৌনব্রত ধারণপূৰ্ব্বক ভিক্ষাচরণ করিবে। কনিষ্ঠভ্রাতা জ্যেষ্ঠভ্রাতার অনুঢ়াবস্থায় স্বয়ং বিবাহ করিলে তাহাকে, তাহার স্ত্রীকে এবং তাহার জ্যেষ্ঠকে পতিত হইতে হয়। ঐরূপ স্থলে উহাদের তিনজনকেই নষ্টাগ্নি [নিরগ্নি] ব্রাহ্মণের ন্যায় প্রায়শ্চিত্তবিধান ও এক মাস চান্দ্রায়ণব্রত বা কৃচ্ছ্রব্রতানুষ্ঠান করিতে হইবে। কনিষ্ঠভ্রাতা জ্যেষ্ঠকে ‘এই আপনার ভাৰ্য্যা গ্রহণ করুন’ এই বলিয়া আপনার স্ত্রী প্রদান করিয়া পরিশেষে জ্যেষ্ঠের অনুমতিক্রমে সেই ভাৰ্য্যাকে পুনরায় গ্রহণ করিবে। যাহারা অধৰ্ম্মানুসারে পাণিগ্রহণ করে, তাহাদিগকে নিশ্চয়ই পতিত হইতে হয়। গো ব্যতিরেকে অন্য পশুর হিংসা করিলে সমধিক দূষিত হইতে হয় না। পশুজাতির উপর মনুষ্যদিগের আধিপত্য আছে। পশুহিংসা করিলে চমরীপুচ্ছ [চমরী মৃগের পুচ্ছ—চামর] পরিধান ও মৃন্ময়পাত্র গ্রহণপূৰ্ব্বক আপনার দুষ্কৰ্ম্ম প্রখ্যাপিত করিয়া প্রতিদিন সাত গৃহে ভিক্ষার্থ পর্য্যটন করিবে এবং সেই ভিক্ষায় যাহা কিছু লাভ হইবে, তদ্বারাই জীবিকানির্ব্বাহ করিবে। ঐরূপ ব্রত আচরণ করিলে দ্বাদশ দিবসের মধ্যে তাহার সেই পাপ ধ্বংস হইয়া যাইবে। আর যে ব্যক্তি চমরীপুচ্ছ ধারণ করিবে, তাহার সংবৎসর ঐরূপে ভিক্ষাব্রত অনুষ্ঠান করা কৰ্ত্তব্য। যাঁহারা দান করিতে সমর্থ, তাঁহাদিগের ঐ পাপের প্রায়শ্চিত্তবিধানের নিমিত্ত দান করা কর্ত্তব্য; আর যাঁহারা নিতান্ত ধৰ্ম্মপরায়ণ, তাঁহারা একটিমাত্র গো প্রদান করিলে ঐ পাপ হইতে বিমুক্ত হইতে পারেন। যে ব্যক্তি কুক্কুর, বরাহ, মনুষ্য, কুক্কুট বা উষ্ট্রের মাংস, মূত্র ও পুরী ভক্ষণ করিবে, তাহার পুনঃসংস্কার বিধান করা কর্ত্তব্য। সোমপায়ী ব্রাহ্মণ সুরাপায়ীর মুখের গন্ধ আঘ্রাণ করিলে তিন দিবস উষ্ণুজল পান, তিন দিবস উষ্ণুদগ্ধ পান ও তিন দিবস বায়ু ভক্ষণ করিবেন। মনুষ্যগণ, বিশেষতঃ ব্রাহ্মণগণ পাপানুষ্ঠান করিলে তাঁহাদের এইরূপ প্রায়শ্চিত্ত বিহিত হইয়া থাকে।”