১৮৬. দেহ-জীবাত্মার সম্বন্ধবিষয়ক প্রশ্ন

১৮৬তম অধ্যায়

দেহ-জীবাত্মার সম্বন্ধবিষয়ক প্রশ্ন

“ভরদ্বাজ কহিলেন, মহাত্মন! যদি প্রাণীগণ বায়ুদ্বারা জীবিত থাকিয়া অঙ্গসঞ্চালন, নিশ্বাস পরিত্যাগ ও শব্দ উচ্চারণ করিতে পারে এবং যদি জঠরানলই লোকের উষ্মভাব [উষ্ণভাব—তাপ] প্রকটন ও ভুক্ত অন্ন পরিপাক করে, তাহা হইলে ত’ প্রাণীগণের জীব নিতান্ত নিষ্ফল। প্রাণীগণ যেসময় মৃত্যুগ্রাসে পতিত হয়, তখন ত’ তাহাদিগের শরীর হইতে জীব নির্গত হইতে দেখা যায় না। ঐ সময় তাহাদিগকে কেবল বায়ু ও উষ্মভাববিহীন হইতেই দেখা যায়। যদি জীব বায়ুময় বা বায়ুর সহিত সংশ্লিষ্ট হইত, তাহা হইলে উহা বায়ুচক্রের ন্যায় বোধগম্য করা যাইত। বিশেষতঃ যদি বায়ুর সহিত জীবের সংশ্লেষ [সম্পর্ক মিলিতাবস্থা] থাকিত, তাহা হইলে যৎকালে লোকের দেহ হইতে বায়ু নিঃসৃত হইয়া যায়, তখন জীব নিশ্চয়ই পৃথগ্‌ভূত ও জ্ঞেয় হইত। আর যখন কূপমধ্যে প্রদত্ত জল ও হুতাশনে প্রদত্ত প্রদীপ-শিখার ন্যায় উহার স্বরূপ ধ্বংস হইয়া যায়, তখন উহাকে ব্ৰহ্মাংশ বলিয়াও স্বীকার করা যায় না। যদি, এই পাঞ্চভৌতিক কলেবরে একমাত্র ভূতের অভাব উপস্থিত হয়, তাহা হইলে নিশ্চয়ই অন্যান্য ভূতচতুষ্টয় পরস্পর পৃথগ্‌ভূত হইয়া যায়। অনাহারে সলিল ও অগ্নি, শ্বাসনিগ্রহে[শ্বাস সংযমে—শাস-নিরোধে] বায়ু, কোষ্ঠ নিরোধে আকাশ এবং ব্যাধি ও ব্রণাদিদ্বারা মেদিনী বিনষ্ট হইয়া থাকে। এইরূপে পৃথিব্যাদি একমাত্র পদার্থের ধ্বংসনিবন্ধন অন্যান্য পদার্থচতুষ্টয় পৃথগ্‌ভূত ও দেহ পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হইলে জীব কাহার অনুগমন, কি শ্রবণ কিরূপে বাক্যপ্রয়োগ করে? আমি পরলোকযাত্রা করিলে এই গাভী আমাকে উদ্ধার করিবে, এই মনে করিয়া যে ব্যক্তি গোদান করে, সেই গাভী কিরূপে তাহাকে উদ্ধার করিতে সমর্থ হয়? যখন গাভী, গৃহীতা ও দাতা এই তিনজনকে ইহলোকে লয়প্রাপ্ত হইতে হইবে, তখন তাহাদিগের পুনরায় সমাগমের সম্ভাবনা কোথায়? বিহঙ্গমকর্ত্তৃক ভক্ষিত, শৈলাগ্র. হইতে নিপতিত ও অগ্নিতে দগ্ধ মানবগণ কি চৈতন্যলাভ করিয়া পুণ্যের ফলভোগ করিতে পারে? বৃক্ষের মূলচ্ছেদন করিলে যখন উহা পুনরায় প্ররোহিত হয় না তখন মৃত ব্যক্তি কিরূপে পুনরায় জন্মগ্রহণ করিবে? যাহা হউক, আমার বোধ হইতেছে যে, পূৰ্ব্বে একমাত্র বীজ সৃষ্ট হইয়াছিল, সেই হইতে ক্রমে ক্রমে অসংখ্য বীজের সৃষ্টি হইয়াছে ও হইতেছে। জন্তুগণ যে সন্তানসন্ততি উৎপাদন করিয়া পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হয়, সেই সন্তানসন্ততি হইতেই আবার অন্যান্য সন্ততির সৃষ্টি হয়। কিন্তু যাহারা একবার পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হয়, তাহারা আর কখনই জন্মগ্রহণ করে না।”