১৫৪. প্রবল শত্রুর প্রতিক্রিয়া-শাল্মলীপবন-সংবাদ

১৫৪তম অধ্যায়

প্রবল শত্রুর প্রতিক্রিয়া-শাল্মলীপবন-সংবাদ

যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! অসার দুর্ব্বল ব্যক্তি চিরসন্নিহিত উপকারাপকারসমর্থ উদযোগশালী মহাবলপরাক্রান্ত শত্রুকে বাক্যদ্বারা অবমানিত করিলে সে যদি ক্রোধভরে তাহার উন্মূলন করিবার নিমিত্ত আগমন করে, তাহা হইলে ঐ দুর্ব্বল ব্যক্তি কিরূপে আত্মরক্ষা করিবে?”

ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! এই স্থলে শাল্মলীপবন-সংবাদ নামে এক ইতিহাস আছে, শ্রবণ কর। হিমালয়পৰ্ব্বতে এক বিশালস্কন্ধসম্পন্ন বহুশাখাসমন্বিত ফলকুসুমপল্লবোপশোভিত [ফল, পুষ্প ও পত্ৰদ্বারা শোভিত] চতুঃশত হস্ত [চারিশত হাত] বিস্তীর্ণ অতি প্রাচীন শাল্মলী[শিমূল]বৃক্ষ ছিল। শুকসারিকা সতত উহাতে বাস এবং মত্তমাতঙ্গগণ ও অন্যান্য মৃগসমুদয় গ্রীষ্মের প্রাদুর্ভাবে নিতান্ত নিপীড়িত ও একান্ত ক্লান্ত হইলে উহার মূলে বিশ্রাম করিত। বণিক্‌সম্প্রদায় ও বনবাসী তপস্বিগণ গমনকালে পরিশ্রান্ত হইলে উহার সুশীতল নিবিড় ছায়ায় অবস্থান করিতেন। একদা দেবর্ষি নারদ ঐ রমণীয় বৃক্ষের বিস্তীর্ণ শাখা ও স্কন্ধ নিরীক্ষণপূর্ব্বক উহার সন্নিহিত হইয়া কহিলেন, ‘তরুবর! তুমি অতি প্রিয়দর্শন; তোমার মূলে উপবেশন করিয়া আমরা সকলেই প্রীতিলাভ করিয়া থাকি। পক্ষী, মৃগ ও মাতঙ্গগণ হৃষ্টান্তঃকরণে নিরন্তর তোমার ছায়ায় অবস্থান করে। তোমার স্কন্ধ ও শাখাসমুদয় অতি বিশাল; কিন্তু ঐ সমুদয় কদাচ বায়ুবেগপ্রভাবে ভগ্ন হয় না। ভগবান্ পবন যে তোমাকে রক্ষা করেন, ইহার তাৎপর্য্য কি? তিনি কি তোমার আত্মীয়বন্ধু অথবা অন্য কোন কারণবশতঃ তাঁহার সহিত তোমার প্রণয় জন্মিয়াছে? দেখ, মহাপ্রভাবসম্পন্ন সমীরণ বৃক্ষসকল নিপাতিত, পর্ব্বতশিখর বিচলিত এবং পাতালতল, সরিৎ, সাগর ও সরোবরসমুদয়কে শুষ্ক করিতেছেন। কিন্তু কখনই তোমার কোন অপকার করেন নাই। অতএব নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে যে, তিনি সখ্যতানিবন্ধন তোমার রক্ষাবিধান করিয়া থাকেন এবং তুমি সেই নিমিত্তই শাখাপল্লব ও ফলপুষ্পে পরিশোভিত হইয়াছ। এই সমুদয় বিহঙ্গম প্রফুল্লমনে তোমার শাখাপ্রশাখায় উপবেশনপূর্ব্বক বিহার করিয়া তোমার রমণীয়তা সম্পাদন করিতেছে। যখন তোমার কুসুমসকল বিকশিত হয়, তখন এই পক্ষিগণের কি মধুর স্বরই শ্রুতিগোচর হইয়া থাকে! এই সমস্ত মাতঙ্গ ও মৃগগণ দুরন্ত গ্রীষ্মপ্রভাবে অতিশয় সন্তপ্ত ও দলবদ্ধ হইয়া তোমার সুশীতল ছায়ায় অবস্থানপূর্ব্বক সুখলাভ করিয়া থাকে। ব্রাহ্মণ, তপস্বী ও যতিগণ সততই তোমার আশ্রয়গ্রহণ করিতেছেন; অতএব তোমার এই আয়তন [সংস্থান] স্বর্গ ও সুমেরুর ন্যায়, সন্দেহ নাই।”