১৮৯. ব্রাহ্মণাদি চারিবর্ণের লক্ষণ

১৮৯তম অধ্যায়

ব্রাহ্মণাদি চারিবর্ণের লক্ষণ

“ভরদ্বাজ কহিলেন, ‘তপোধন! ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারিবর্ণের লক্ষণ কি, তাহা আমার নিকট কীৰ্ত্তন করুন।’

“ভৃগু কহিলেন, ‘ভরদ্বাজ! যাঁহারা জাতকৰ্ম্মাদি সংস্কারে সংস্কৃত, পরম পবিত্র ও বেদাধ্যয়নে অনুরক্ত হইয়া প্রতিদিন সন্ধ্যাবন্দন, স্নান, জপ, হোম, দেবপূজা ও অতিথিসৎকার এই ষট্‌কার্য্যের অনুষ্ঠান করেন, যাঁহারা শৌচাচারপরায়ণ, নিত্যব্রতনিষ্ঠ, গুরুপ্রিয় ও সত্যনিরত হইয়া ব্রাহ্মণের ভুক্তাবশিষ্ট অন্ন ভোজন করেন; আর যাঁহাদিগকে দান, অদ্রোহ [প্রিয়াচরণ], অনৃশংসতা, ক্ষমা, ঘৃণা ও তপস্যায় একান্ত আসক্ত দেখিতে পাওয়া যায়, তাঁহারা ব্রাহ্মণ। যাঁহারা বেদাধ্যয়ন, যুদ্ধকার্য্যের অনুষ্ঠান, ব্রাহ্মণগণকে ধনদান ও প্রজাদিগের নিকট কর গ্রহণ করেন, তাঁহারা ক্ষত্রিয় এবং যাঁহারা পবিত্র হইয়া বেদাধ্যয়ন ও কৃষি বাণিজ্যাদি কার্য্য সম্পাদন করেন, তাহারা বৈশ্য বলিয়া পরিগণিত হয়েন। আর যাহারা বেদবিহীন ও আচারভ্রষ্ট হইয়া সতত সকল কার্য্যের অনুষ্ঠান ও সর্ব্ববস্তু ভক্ষণ করে, তাহাদিগকে শুদ্র বলিয়া গণনা করা যায়। যদি কোন ব্যক্তি ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করিয়া শূদ্রের ন্যায় ব্যবহার করে, তাহা হইলে তাহাকে শূদ্র ও যদি কোন ব্যক্তি শূদ্রবংশে সদ্ভূত হইয়া ব্রাহ্মণের ন্যায় নিয়মনিষ্ঠ হয়েন, তাহা হইলে তাঁহাকে ব্রাহ্মণ বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। অতএব উপায়দ্বারা ক্রোধ-লোভের শাসন ও আত্মসংযম করা কৰ্ত্তব্য। ক্রোধ ও লোভ অমঙ্গলের নিদান। অতএব যথোচিত যত্নসহকারে উহাদিগকে নিবারণ করিতে চেষ্টা করা উচিত। বুদ্ধিমান ব্যক্তি সর্ব্বদা ক্রোধ হইতে শ্রী, মাৎসর্য্য হইতে তপস্যা, মানাপমান হইতে বিদ্যা এবং প্রমাদ হইতে আত্মাকে রক্ষা করিবে। যে ব্যক্তি ফললাভের কামনা পরিত্যাগ করিয়া যজ্ঞাদি কার্য্যের অনুষ্ঠান এবং বিধিপূৰ্ব্বক দান ও হোম করেন, তাঁহাকেই বুদ্ধিমান ও কর্ম্মসন্ন্যাসী বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। জ্ঞানবান ব্যক্তি সমুদয় লোকের সহিত মিত্ৰতাসংস্থাপন এবং হিংসা অধিকৃত বিভবাদি পরিত্যাগপূৰ্ব্বক বুদ্ধিবলে ইন্দ্রিয় জয় করিতে সমর্থ হয়েন। সকলেরই ইহলোক ও পরলোকে ভয়হীন হইবার নিমিত্ত আত্মধ্যানে মনোনিবেশ করা কর্ত্তব্য। তপোনিরত সংযতাত্মা পরলোক-জয়াভিলাষী মুনিদিগের পুত্ৰদারাদি পরিবারবর্গে লিপ্ত থাকা বিধেয় নহে। স্থূলপদার্থসমুদয় ইন্দ্রিয়দ্বারাই বোধগম্য হইয়া থাকে। সূক্ষ্মশরীর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নহে, যোগীরা যোগপ্রভাবেই উহা দর্শন করিতে সমর্থ হয়েন। অতএব সূক্ষ্মশরীরদর্শনাভিলাষী ব্যক্তিরা অবিশ্বাস পরিত্যাগপূৰ্ব্বক মনকে জীবাত্মার সহিত সংলগ্ন ও জীবাত্মাকে ব্রহ্মপদার্থে লীন করিবেন। বৈরাগ্যই নিৰ্ব্বাণপদলাভের নিদান। ব্রাহ্মণগণ বৈরাগ্যপ্রভাবেই পরম সুখের আস্পদ ব্ৰহ্ম লাভ করিতে পারেন। প্রাণীগণের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন এবং শুদ্ধাচার ও সদ্ব্যবহার আশ্রয় করাই ব্রাহ্মণজাতির প্রধান লক্ষণ।”