১৭৮. শান্তিপ্রদ উপদেশ—জনক-বোধ্যসংবাদ

১৭৮তম অধ্যায়

শান্তিপ্রদ উপদেশ—জনক-বোধ্যসংবাদ

ভীষ্ম কহিলেন, “হে যুধিষ্ঠির! পূৰ্ব্বকালে শান্তগুণাবলম্বী বিদেহাধিপতি জনক এই উপলক্ষে কহিয়াছিলেন যে, আমার ঐশ্বর্য্যের পরিসীমা নাই, কিন্তু আমি যারপরনাই অকিঞ্চন, এই মিথিলানগরীসমুদয় ভস্মাবশেষ [অগ্নিদাহে ভস্মমাত্র অবশিষ্ট] হইলেও আমার কিছুমাত্র দগ্ধ হয় না। এক্ষণে এই বিষয়ে মহাত্মা বোধ্যের যে এক উপদেশবাক্য কীৰ্ত্তিত আছে, তাহা কহিতেছি, শ্রবণ কর। একদা নরপতি যযাতি শান্তগুণান্বিত শাস্ত্রজ্ঞানসম্পন্ন মহর্ষি বোধ্যকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মহর্ষে! আপনি কোন্ বুদ্ধি অনুসারে শান্তিগুণ অবলম্বনপূর্ব্বক পরমসুখে কালযাপন করিতেছেন, তাহা আমার নিকট কীৰ্ত্তন করুন।

“বোধ্য কহিলেন, মহারাজ! আমি স্বয়ং অন্যান্যের উপদেশানুসারে চলিতেছি; কিন্তু কাহাকেও উপদেশ প্রদান করি না যাহা হউক, আমি যাহার যাহার উপদেশ গ্রহণ করিয়া থাকি, তাহাদের নাম কীৰ্ত্তন করিতেছি, আপনি উহা শ্রবণ করিয়া স্বয়ং বিবেচনা করুন। পিঙ্গলা, একটি ক্রৌঞ্চ, সর্প, ভ্রমর, একজন শরনির্ম্মাতা ও এক কুমারী এই ছয়জন আমার উপদেষ্টা।

“হে বৎস যুধিষ্ঠির! আশা সৰ্ব্বাপেক্ষা বলবতী। আশাকে বিনাশ করিতে পারিলেই পরমসুখ লাভ হয়। পিঙ্গলা আশাকে পরাস্ত করিয়াই পরমসুখে শয়ন করিয়াছিল। নিরামিষভোজী ব্যক্তিরা ক্রৌঞ্চকে আমিষ গ্রহণ করিতে অবলোকন করিলেই তৎক্ষণাৎ বিনাশ করে দেখিয়া একটি ক্রৌঞ্চ আমিষ পরিত্যাগপূৰ্ব্বক পরমসুখলাভে সমর্থ হইয়াছিল। স্বয়ং গৃহ নির্ম্মাণ করা কখনই সুখের হেতু নহে। দেখ, সর্প পরনিৰ্ম্মিত গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া পরমসুখে অবস্থান করে। তপোধনগণ ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করিয়া ভূঙ্গের ন্যায় পর্য্যটনপূর্ব্বক নিরুপদ্রবে পরমসুখে জীবিকানির্ব্বাহ করিতে পারেন। এক শরনির্ম্মাতা শরনির্ম্মাণে এরূপ একাগ্রচিত্ত হইয়াছিল যে, রাজা তাহার সম্মুখে আগমন করিলেও সে কিছুমাত্র অবগত হইতে সমর্থ হয় নাই। একদা এক কুমারী প্রচ্ছন্নভাবে কতকগুলি অতিথিকে ভোজন করাইবার বাসনায় উদূখলমুষলদ্বারা তণ্ডুল প্রস্তুত করিতে আরম্ভ করিলে তাহার প্রকোষ্ঠস্থিত শঙ্খসমুদয় বারংবার শায়মান হইতে লাগিল। তখন সে অনেকে একত্র অবস্থান করিলেই মহা কলহ উপস্থিত হয়, এই বিবেচনায় ক্রমে ক্রমে শঙ্খ চুর্ণ করিয়া একমাত্র অবশিষ্ট রাখিল। অতএব একাকী বিচরণ করিলে কাহারও সহিত বিবাদ হইবার সম্ভাবনা নাই।”