১৩৬. ধনসঞ্চয়ের ধর্ম্মসম্মত উপায়

১৩৬তম অধ্যায়

ধনসঞ্চয়ের ধর্ম্মসম্মত উপায়

ভীষ্ম কহিলেন, “হে ধৰ্ম্মরাজ। মহীপাল যে পথ অবলম্বনপূৰ্ব্বক কোষসঞ্চয় করিবেন, পুরাবিৎ পণ্ডিতেরা ব্রহ্মবাক্যানুসারে তাহা কীৰ্ত্তন করিয়া থাকেন, শ্রবণ কর। ব্রহ্ম ও যজ্ঞশীল ব্যক্তিদিগের ধন গ্রহণ করা রাজার কর্ত্তব্য নহে। তিনি কর্ম্মকাণ্ডহীন দস্যুদিগের ধনই হরণ করিবেন। পৃথিবীস্থ সমুদয় প্রজা ও রাজ্য ক্ষত্রিয়েরই অধিকৃত। ক্ষত্রিয়ই সমুদয় ধন ভোগ করিবেন; উহাতে অন্যের কিছুমাত্র অধিকার নাই। ধনদ্বারা বল, বুদ্ধি ও যজ্ঞানুষ্ঠান করাই রাজার কর্ত্তব্য। লোকে যেমন অভোজ্য [শাকপাতা প্রভৃতি তুচ্ছ গাছপালা] ওষধি ছেদন করিয়া তদ্বারা ভোজ্যদ্রব্য পাক করিয়া থাকে, তদ্রূপ রাজারা দুষ্টগণের হিংসা করিয়া শিষ্টদিগকে প্রতিপালন করিবেন। যাহারা হবিদ্বারা দেবতা, পিতৃগণ ও মনুষ্যগণের তৃপ্তিসাধন না করে, তাহাদিগের ধন নিতান্ত নিরর্থক। ধর্ম্মপরায়ণ রাজা বলপূৰ্ব্বক ঐরূপ ব্যক্তিদিগের ধন অপহরণ করিবেন। সেই ধনদ্বারা অনেক সাধুব্যক্তির তৃপ্তিসাধন হইতে পারে; অতএব সেই অপহরণ জন্য রাজাকে কিছুমাত্র দোষ স্পর্শ করিতে পারে না। যিনি অসাধুব্যক্তি হইতে ধন গ্রহণপূৰ্ব্বক সাধুগণকে প্রদান করেন, তিনি পরমধার্ম্মিক। বজ্ৰীনামক শুক্লজীব [‘বজ্ৰী’ নামক লতানো গাছ—যেমন লাউ, কুমড়া প্রভৃতির লতা।] ও পিপীলিকাদি যেমন অল্পে অল্পে বহুদূর গমন করিয়া থাকে, তদ্রূপ রাজা আপনার শক্তি অনুসারে ক্রমে ক্রমে পরলোক জয় করিবার চেষ্টা করিবেন। গবাদির গাত্র হইতে যেমন দংশমশকাদি [ডাঁশ—মাছি প্রভৃতি] দূরীভূত করা যায়, তদ্রূপ অযাজ্ঞিক ব্যক্তিকে রাজ্য হইতে নির্ব্বাসিত করা কর্ত্তব্য। শিলার উপর ধূলি রাখিয়া শিলাদ্বারা পেষণ করিলে উহা যেমন ক্রমে ক্ৰমে অতি সূক্ষ্ম হয়, তদ্রূপ ধৰ্ম্মের যত সমালোচনা করা যায়, উহা ততই সূক্ষ্ম হইয়া উঠে।” ।