১২৪. সচ্চরিত্রের প্রশংসা—দুৰ্য্যোধন-ধৃতরাষ্ট্র-সংবাদ

১২৪তম অধ্যায়

সচ্চরিত্রের প্রশংসা—দুৰ্য্যোধন-ধৃতরাষ্ট্র-সংবাদ

যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! এই জীবলোকে সকলেই ধৰ্ম্মশীলতার সবিশেষ প্রশংসা করিয়া থাকে। অতএব কিরূপে উহা লাভ করা যায় এবং উহার স্বরূপই বা কি? ইহা যদি আমাদিগের জ্ঞাতব্য হয়, তাহা হইলে কীৰ্ত্তন করুন। ঐ বিষয় শ্রবণ করিতে আমার নিতান্ত অভিলাষ হইয়াছে।”

ভীষ্ম কহিলেন, “মহারাজ! পূৰ্ব্বে রাজা দুৰ্য্যোধন ইন্দ্রপ্রস্থে তোমার ও তোমার ভ্রাতৃগণের ঐশ্বৰ্য্যসন্দর্শনে নিতান্ত সন্তপ্ত ও সভামধ্যে উপহসিত হইয়া গৃহে প্রত্যাগমনপূৰ্ব্বক পিতা ধৃতরাষ্ট্রের নিকট আদ্যোপান্ত সমুদয় নিবেদন করিল। রাজা ধৃতরাষ্ট্র দুর্য্যোধনের মুখে সমুদয় বৃত্তান্ত আনুপূর্ব্বিক শ্রবণ করিয়া কর্ণের সমক্ষে তাহাকে কহিলেন, বৎস! তোমার সন্তাপের ত’ বিশেষ কারণ দেখিতে পাই না। তুমি বিলক্ষণ ঐশ্বৰ্য্যলাভ করিয়াছ। তোমার ভ্রাতৃগণ ও অন্যান্য বন্ধুবান্ধবেরা কিঙ্করের ন্যায় সতত তোমার আজ্ঞানুবর্তী রহিয়াছে। তুমি অত্যুৎকৃষ্ট বস্ত্র পরিধান ও উপাদেয় পলান্ন [উত্তম সমাংস অন্ন] ভোজন করিয়া থাক এবং সুদৃশ্য অশ্বসমুদয় তোমাকে বহন করে। তবে তুমি কি নিমিত্ত পাণ্ডুবর্ণ ও কৃশ হইয়া গিয়াছ?

“দুৰ্য্যোধন কহিলেন, ‘মহারাজ! পাণ্ডবদিগের আলয়ে প্রতিদিন দশসহস্র স্নাতক ব্রাহ্মণ সুবর্ণপাত্রে আহার করে। আর তাহাদিগের ফলপুষ্পশোভিত দিব্যসভা, তিত্তিরি ও কল্মষদেশীয় অশ্ব এবং বিবিধ বিচিত্র বস্ত্র বিদ্যমান আছে। পাণ্ডুতনয়েরা আমার পরম শত্রু। আমি তাহাদের কুবেরসদৃশ তাদৃশ সমৃদ্ধি সন্দর্শন করিয়াই যারপরনাই সন্তপ্ত হইয়াছি।

“তখন ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, ‘বৎস! যদি তুমি রাজা যুধিষ্ঠির তুল্য বা তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট শ্রীলাভের অভিলাষ কর, তাহা হইলে সচ্চরিত্র হও। সচ্চরিত্ৰদ্বারা ত্রিলোক আয়ত্ত করা যাইতে পারে, সন্দেহ নাই। ত্রিলোকমধ্যে সচ্চরিত্র সাধুব্যক্তির অসাধ্য কিছুই নাই। দেখ, মান্ধাতা এক রাত্ৰিমধ্যে, জনমেজয় তিনদিবসে এবং নাভাগ সাতরাত্রিতে পৃথিবী অধিকার করিয়াছিলেন। ঐ সমস্ত ভূপালেরা সচ্চরিত্র ও অতিশয় দয়ালু ছিলেন বলিয়াই বসুন্ধরা উহাদিগের গুণে বদ্ধ হইয়া স্বয়ং উহাদের আয়ত্ত হইয়াছিল।

“দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “মহারাজ! যাহার প্রভাবে ঐ সমস্ত পূর্ব্বতন মহীপাল অতি অল্পকালমধ্যে বসুন্ধরা অধিকার করিয়াছিলেন, সেই সচ্চরিত্রতা কিরূপে প্রাপ্ত হওয়া যাইতে পারে?’

নারদ-কথিত সচ্চরিত্রতা—ইন্দ্র-প্রহ্লাদ-বৃত্তান্ত

“ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “বৎস! পূৰ্ব্বে মহর্ষি নারদ এই সচ্চরিত্রতাবিষয়ে এক পুরাতন ইতিহাস কীৰ্ত্তন করিয়াছিলেন, শ্রবণ কর। পূৰ্ব্বকালে একবার দানবরাজ প্রহ্লাদ স্বীয় চরিত্রবলে দেবরাজ ইন্দ্রের রাজ্য অপহরণ ও ত্রৈলোক্য আপনার বশে আনয়ন করিয়াছিলেন। সুররাজ পুরন্দর রাজ্য অপহৃত দেখিয়া বৃহস্পতির সন্নিধানে গমনপূৰ্ব্বক কৃতাঞ্জলিপুটে কহিলেন, “ভগবন্! কি করিলে শ্ৰেয়োলাভ হইতে পারে? ইহা অবগত হইতে আমার অতিশয় অভিলাষ জন্মিয়াছে। তখন বৃহস্পতি কহিলেন, ‘দেবরাজ! মোক্ষপোযোগী জ্ঞানই শ্রেয়োলাভের নিদান।’ ইন্দ্র কহিলেন, “ভগবন্! মোক্ষোপযোগী জ্ঞান অপেক্ষা শ্ৰেয়োলাভের উপায় আর কিছু আছে কি না?’ বৃহস্পতি কহিলেন, ‘দেবরাজ! মহাত্মা শুক্র শ্ৰেয়োবিষয়ের উপদেশপ্রদানে আমা অপেক্ষা সমধিক সমর্থ হইবেন; অতএব তুমি তাঁহার নিকট গমনপূর্ব্বক এই বিষয় পুনরায় জিজ্ঞাসা কর, তাহা হইলেই তোমার মঙ্গল হইবে।’ তখন সুররাজ মহাত্মা শুক্রের নিকট গমনপূৰ্ব্বক পরমপ্রীতিসহকারে আপনার শ্রেয়ঃসাধন জ্ঞানলাভ করিলেন এবং পরিশেষে তাঁহার নিকট হইতে বিদায়ের অনুমতি লইয়া পুনরায় তাঁহাকে কহিলেন, ‘ভগবন্! আপনি যেরূপ উপদেশ দিলেন, ইহা অপেক্ষা শ্ৰেয়োলাভের উৎকৃষ্ট উপায় আছে কি না?’ তখন সৰ্ব্বজ্ঞ শুক্রাচার্য্য কহিলেন, ‘দেবরাজ! মহাত্মা প্রহ্লাদ এ বিষয়ে তোমাকে সবিশেষ জ্ঞানোপদেশ প্রদান করিতে পারিবেন; অতএব তুমি তাহার নিকট গমন কর।’

ব্রাহ্মণবেশী ইন্দ্রের প্রহ্লাদসমীপে চরিত্রশিক্ষা

“দেবরাজ ইন্দ্র শুক্রের মুখে এই কথা শ্রবণ করিয়া যারপরনাই সন্তুষ্ট হইলেন এবং অচিরাৎ ব্রাহ্মণের রূপ ধারণপূৰ্ব্বক প্রহ্লাদের নিকট গমন করিয়া কহিলেন, ‘দানবরাজ! আমি তোমার নিকট শ্রেয়ঃসাধনের উপায় জ্ঞাত হইতে অভিলাষ করি।’ প্রহ্লাদ কহিলেন, ‘ব্রহ্মন্! আমি ত্রৈলোক্যরাজ্য শাসনে নিতান্ত আসক্ত হইয়াছি, এক্ষণে আমার কিছুমাত্র অবসর নাই; অতএব আমি আপনার এই বিষয়ে উপদেশ দিতে পারিলাম না।’

ব্রাহ্মণ [ব্রাহ্মণবেশধারী ইন্দ্র] কহিলেন, ‘দৈত্যরাজ! যে সময় তোমার অবসর হইবে, তুমি সেই সময় আমাকে এই বিষয়ে উপদেশ প্রদান করিও।’ ব্রাহ্মণ এই কথা বলিলে প্রহ্লাদ পরম প্রীত হইয়া তাঁহার বাক্যে অঙ্গীকারপূৰ্ব্বক অবসরক্রমে তাঁহাকে উপদেশ প্রদান করিতে লাগিলেন; ব্রাহ্মণও শিষ্যের ন্যায় নম্রভাবে প্রহ্লাদকে সৎকার ও তাঁহার অভিলাষানুসারে সমস্ত কাৰ্য্য অনুষ্ঠান করিতে আরম্ভ করিলেন।

“একদা ব্রাহ্মণ দানবরাজকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, ‘দৈত্যরাজ! তুমি কিরূপে এই ত্রৈলোক্যরাজ্য অধিকার করিলে, তাহা কীৰ্ত্তন কর।’ তখন প্রহ্লাদ কহিলেন, ‘ব্রহ্মন্! আমি রাজা হইয়াছি বলিয়া কদাচ ব্রাহ্মণগণের প্রতি অসূয়া প্রদর্শন করি না। প্রত্যুত তাঁহারা শুক্ৰপ্রণীত নীতিবিষয়ক উপদেশ প্রদান করিলে পরমসমাদরে তাহা গ্রহণ ও তদনুসারে কার্য্যানুষ্ঠান করিয়া থাকি। তাঁহারা বিশ্বস্তচিত্তে আমার নিকট নীতি কীৰ্ত্তন করিয়া থাকেন এবং আমাকে নীতিপথাবলম্বী, শুশ্রূষানিরত, অসূয়াশূন্য, ধর্ম্মপরায়ণ, জিতক্রোধ ও জিতেন্দ্রিয় বোধ করিয়া, মক্ষিকা[মৌমাছি]সকল যেমন মধুক্রমে মধুবর্ষণ করে, তদ্রূপ আমার মনোমধ্যে শাস্ত্রীয় উপদেশস্বরূপ আলোক প্রদান করেন। এক্ষণে আমি সেই ব্রাহ্মণের উপদেশ গ্রহণ করিয়াই নক্ষত্রগণের শশাঙ্কের ন্যায় স্বজাতীয়দিগের রাজা হইয়াছি। ব্রাহ্মণের নীতিবাক্য অমৃততুল্য। ব্রাহ্মণমুখে নীতি শ্রবণ ও তদনুসারে কাৰ্য্যানুষ্ঠান করা অপেক্ষা শ্রেয়স্কর আর কিছুই নাই।

প্রহ্লাদবরে ইন্দ্রের চরিত্রাদি শক্তিলাভ

“দানবরাজ প্রহ্লাদ ব্রাহ্মণরূপী ইন্দ্রকে এইরূপে শ্রেয়োলাভের উপদেশ প্রদানপূর্ব্বক তাঁহার শুশ্রূষায় প্রীত হইয়া কহিলেন, ব্রহ্মন্! আমি আপনার ভক্তিদর্শনে আপনার প্রতি অতিশয় প্রসন্ন হইয়াছি। এক্ষণে আপনি বর প্রার্থনা করুন। আমি নিশ্চয় কহিতেছি, আপনাকে অভিলষিত বর প্রদান করিব।’ তখন ব্রাহ্মণ কহিলেন, ‘দানবরাজ! যদি তুমি প্রসন্ন হইয়া আমার প্রিয়কাৰ্য্য অনুষ্ঠানে অভিলাষ করিয়া থাক, তবে এই বর প্রদান কর যে, আমি যেন তোমার সচ্চরিত্রতা লাভ করিতে পারি।’ ব্রাহ্মণ এইরূপ প্রার্থনা করিলে প্রহ্লাদ যুগপৎ পরম প্রীত ও নিতান্ত ভীত হইলেন এবং সত্যপ্রতিপালন করা পরম ধর্ম্ম বিবেচনা করিয়া বিস্ময়াবিষ্টচিত্তে তৎক্ষণাৎ তাঁহাকে তাঁহার অভিলষিত বর প্রদান করিলেন। বর প্রদান করিবামাত্র দানবরাজের অন্তঃকরণ দুঃখে একান্ত কাতর হইয়া উঠিল। অনন্তর বিপ্ররূপী দেবরাজ প্রহ্লাদের নিকট বিদায় গ্রহণ করিয়া পুলকিত মনে স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন। ব্রাহ্মণ প্রস্থান করিলে পর প্রহ্লাদ গাঢ়তর চিন্তায় একান্ত নিমগ্ন হইলেন এবং তৎকালে কি করিবেন, কিছুই অবধারণ করিতে পারিলেন না।

“ইত্যবসরে তাঁহার কলেবর হইতে সহসা ছায়ার ন্যায় এক তেজঃ নির্গত হইল। দানবরাজ প্রহ্লাদ তদ্দর্শনে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘তুমি কে?’ তেজঃ কহিল, ‘আমি চরিত্র। এক্ষণে তোমা কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া প্রস্থান করিতেছি। যে ব্রাহ্মণ শিষ্যত্ব স্বীকারপূর্ব্বক প্রতিনিয়ত তোমার শুশ্রূষা করিয়াছিলেন, আমি অতঃপর তাঁহারই দেহে অবস্থান করিব।’ চরিত্র প্রহ্লাদকে এই কথা বলিয়া তথা হইতে অন্তর্হিত হইয়া ইন্দ্রের দেহে প্রবিষ্ট হইল।।

“অনন্তর দানবরাজের দেহ হইতে আর একটি তেজঃ নির্গত হইল। তখন প্রহ্লাদ উহাকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিলেন, ‘ভদ্র! তুমি কে?’ তেজঃ কহিল, ‘দৈত্যরাজ! আমি ধৰ্ম্ম, যে স্থানে চরিত্র, আমি তথায়ই অবস্থান করিয়া থাকি। এক্ষণে চরিত্র সেই ব্রাহ্মণসন্নিধানে গমন করিয়াছে; সুতরাং আমাকেও তথায় গমন করিতে হইল।’

‘ধৰ্ম্ম এই কথা বলিয়া প্রস্থান করিলে পর আর একটি তেজঃ মহাত্মা প্রহ্লাদের দেহ হইতে সহসা নিষ্ক্রান্ত হইল। প্রহ্লাদ তাহাকে অবলোকন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘তুমি কে?’ তেজঃ কহিল, ‘দানবরাজ! আমি সত্য, এক্ষণে তোমাকে পরিত্যাগপূৰ্ব্বক ধর্ম্মের সঙ্গে চলিলাম।’ সত্য এই বলিয়া প্রস্থান করিলে পর প্রহ্লাদের দেহ হইতে একটি মহাবলপরাক্রান্ত পুরুষ নির্গত হইল। প্রহ্লাদ তাহাকে অবলোকন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘মহাপুরুষ! তুমি কে?’ পুরুষ কহিল, মহারাজ! আমি সৎকাৰ্য্য; যেখানে সত্য, আমি সেইখানেই অবস্থান করিয়া থাকি।’

“অনন্তর প্রহ্লাদের দেহ হইতে গভীর শব্দ করিতে করিতে আর একটি তেজঃ নির্গত হইল। প্রহ্লাদ তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলে সে কহিল, ‘দানবরাজ! আমি বল; সকাৰ্য্য যে স্থানে অবস্থান করে, আমিও তথায় অবস্থান করিয়া থাকি।’ বল এই বলিয়া প্রস্থান করিলে প্রহ্লাদের দেহ হইতে এক প্রভাময়ী দেবী নির্গত হইলেন। প্রহ্লাদ তাঁহাকে অবলোকন করিয়া কহিলেন, ‘দেবি! তুমি কে?’ দেবী কহিলেন, ‘দানবরাজ! আমি লক্ষ্মী, আমি এতদিন তোমার দেহে অবস্থান করিয়াছিলাম, এক্ষণে তোমা কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া বলের অনুগমন করিতেছি।’ লক্ষ্মী এই কথা কহিলে প্রহ্লাদের অন্তঃকরণে পূৰ্ব্বাপেক্ষা অধিকতর ভয়ের সঞ্চার হইল। তখন তিনি লক্ষ্মীকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক পুনরায় কহিলেন, ‘দেবি! তুমি এক্ষণে কোথায় গমন করিবে? তুমি ত্রিলোকের ঈশ্বরী ও সত্যব্রতপরায়ণা। এক্ষণে সেই ব্রাহ্মণ কে, তাহা তোমাকে কীৰ্ত্তন করিতে হইবে। সেই ব্রাহ্মণের তত্ত্ব জ্ঞাত হইতে আমার একান্ত অভিলাষ জন্মিয়াছে।’ তখন লক্ষ্মী কহিলেন, ‘দানবরাজ! যে ব্রাহ্মণ তোমার নিকট শিষ্যরূপে নীতিশিক্ষা করিয়াছিলেন, তিনি সুররাজ ইন্দ্র। ত্রিলোকমধ্যে তোমার যে ঐশ্বৰ্য্য আছে, তিনি তাহা অপহরণ করিয়াছেন। তুমি সচ্চরিত্রতাদ্বারা তিন লোক ও ধৰ্ম্ম অধিকার করিয়াছিলে। দেবরাজ তাহা অবগত হইয়া তোমার সেই সচ্চরিত্রতা অপহরণ করিয়াছেন। ধৰ্ম্ম, সত্য, সকার্য্য, বল ও আমি, আমরা সকলেই সচ্চরিত্রতার অধীন।’ লক্ষ্মী এই বলিয়া তথা হইতে গমন করিলেন।

ধৃতরাষ্ট্রকর্ত্তৃক সচ্চরিত্রতা কীৰ্ত্তন

“অনন্তর রাজা দুৰ্য্যোধন পুনরায় ধৃতরাষ্ট্রকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তাত! সচ্চরিত্রতা কি এবং উহা কিরূপেই বা লাভ করা যাইতে পারে, তাহা কীৰ্ত্তন করুন। ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, ‘বৎস! মহাত্মা প্রহ্লাদ সচ্চরিত্রতা ও তৎপ্রাপ্তির উপায় পূর্বেই নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন। এক্ষণে আমি সংক্ষেপে উহার প্রাপ্তিবিষয়ে কিছু উপদেশ প্রদান করিতেছি, শ্রবণ কর। কায়মনোবাক্যে কাহারও অনিষ্ট চিন্তা না করা এবং উপযুক্ত পাত্রে দান ও সকলের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করাই সচ্চরিত্রতা বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। যে পুরুষকারদ্বারা কাহারও হিতসাধন না হয় এবং যাহাদ্বারা জনসমাজে লজ্জাপ্রাপ্ত হইতে হয়, সেরূপ পুরুষকার কদাচ প্রকাশ করিবে না। যে কাৰ্য্যদ্বারা জনসমাজে শ্লাঘনীয় হওয়া যায়, ঐরূপ কাৰ্য্যেরই অনুষ্ঠান করা কর্ত্তব্য। এই আমি সংক্ষেপে সচ্চরিত্রতালাভের উপায় নির্দেশ করিলাম। যদি কোন রাজা অসচ্চরিত্রতাদ্বারা কোনক্রমে সমৃদ্ধি লাভ করেন, তাহা তাঁহার চিরকাল ভোগ হয় না, প্রত্যুত তাঁহাকে অবিলম্বেই সমূলে বিনষ্ট হইতে হয়। অতএব যদি তুমি যুধিষ্ঠির অপেক্ষা উৎকৃষ্ট সমৃদ্ধিলাভের অভিলাষ কর, তাহা হইলে আমার এই কথা বিলক্ষণরূপে হৃদয়ঙ্গম করিয়া সচ্চরিত্র হও।’

“হে ধৰ্ম্মরাজ! রাজা ধৃতরাষ্ট্র আপনার পুত্র দুৰ্য্যোধনকে পূৰ্ব্বে এইরূপ উপদেশ প্রদান করিয়াছিলেন। এক্ষণে তুমি ঐ উপদেশের অনুবর্তী হও, তাহা হইলে নিশ্চয়ই উৎকৃষ্ট ফললাভে সমর্থ হইবে।”