১১৯. জাতি-গুণের অনুরূপ কার্য্যে নিয়োগ

১১৯তম অধ্যায়

জাতি-গুণের অনুরূপ কার্য্যে নিয়োগ

ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! যে মহীপাল কুক্কুরের ন্যায় নীচ ভৃত্যগণকে নীচকার্য্যে নিয়োজিত করেন, তিনি সুখে রাজ্যভোগ করিতে সমর্থ হয়েন। কুক্কুরকে উচ্চপদ প্রদান করিলে সে প্রতিনিয়তই প্রমত্ত হইয়া থাকে; অতএব উত্তম জাতি ও উৎকৃষ্ট সাধননিরত ব্যক্তিগণকেই অমাত্যপদে নিযুক্ত করা কর্ত্তব্য। অযোগ্যপাত্রে উচ্চপদ প্রদান করা কোনরূপেই যুক্তিযুক্ত বলিয়া বিবেচিত হয় না। যে রাজা ভৃত্যগণকে অনুরূপ কার্য্যে নিয়োজিত করেন, তিনি স্বচ্ছন্দে সতত সুখসম্ভোগ করিতে পারেন। শরভকে শরভের পদে, সিংহকে সিংহের পদে, ব্যাঘ্রকে ব্যাঘ্রের পদে এবং দ্বীপীকে দ্বীপীর পদে নিয়োজিত করাই কৰ্ত্তব্য। বুদ্ধিমান্ নরপতি ভৃত্যগণকে স্ব স্ব অনুরূপ কার্য্যে নিয়োগ করিবেন। যে রাজা আপনার কর্ম্মের উৎকৃষ্ট ফলভোগ ও প্রজারঞ্জন করিতে অভিলাষ করেন, তিনি কদাচ অনুপযুক্ত ভৃত্যকে উৎকৃষ্ট কার্য্যে নিযুক্ত করিবেন না। মূর্খ, অপ্রাজ্ঞ, ক্ষুদ্রাশয়, অজিতেন্দ্রিয় ও দুষ্কুলসম্ভূত মনুষ্যকে রাজ্যসম্পর্কীয় কাৰ্য্যে নিয়োগ করা গুণগ্রাহী ভূপতির কদাপি বিধেয় নহে। সাধু, সৎকুলসম্ভূত, মহাবলপরাক্রান্ত, জ্ঞানবান, অসূয়াশূন্য, উন্নতাশয়, বিশুদ্ধপ্রকৃতি ও কার্য্যদক্ষ মনুষ্যকেই পার্শ্বচর[দেহরক্ষক সঙ্গী]করা বিজ্ঞ রাজার কর্ত্তব্য। যেসকল লোক কাৰ্য্যতৎপর, শান্তস্বভাব, অনুগত ও বিবিধ নৈসর্গিক গুণগ্রামে সমলঙ্কৃত এবং যাহারা আপনার কাৰ্য্যসাধনে পরাঙ্মুখ না হয়, নরপতি তাহাদিগকেই আপনার প্রাণসদৃশ বিবেচনা করিবেন। সিংহকে পার্শ্বচর করা সিংহের কর্ত্তব্য। আর যে সিংহ নয়, সে যদি সতত সিংহের সহবাস করে, তাহা হইলে তাহার সিংহেরই ন্যায় ফললাভ হয়। কিন্তু সিংহ যদি কুক্কুরদিগের সহিত সহবাস করিয়া সিংহের কার্য্যে নিরত হয়, তাহা হইলে সে কদাচ সিংহের ন্যায় ফলভোগ করিতে পারে না। ঐরূপ যে রাজা প্রতিনিয়ত বহুদর্শী, শূর ও সৎকুলসম্ভূত ব্যক্তিদিগের সহিত সহবাস করিয়া থাকেন, তিনিই সমস্ত পৃথিবী অধিকার করিতে সমর্থ হয়েন। যাহারা মূর্খ, কুটিলস্বভাব ও দরিদ্র, তাহাদিগকে স্বীয় পার্শ্বে স্থান দান করা রাজার কর্ত্তব্য নহে। স্বামীর হিতপরায়ণ ব্যক্তিরা শরের ন্যায় অপরাঙ্মুখ হইয়া তাঁহার কাৰ্য্য সংসাধন করিয়া থাকে। অতএব যেসমস্ত ভৃত্য হিতকারী, রাজা সতত তাহাদিগের প্রতি সান্ত্ববাদ প্রয়োগ করিবেন। মহীপালগণের নিরন্তর যত্নসহকারে কোষ রক্ষা করাই অবশ্য কর্ত্তব্য। কোষই তাঁহাদিগের সমুদয় উন্নতির মূল; 

অতএব যাহাতে কোষ পরিবর্দ্ধিত হয়, তাঁহারা সাধ্যানুসারে তাহার চেষ্টা করিবেন। হে ধৰ্ম্মরাজ! তোমার কোষাগার নিরন্তর প্রভূত ধান্যে পরিপূর্ণ ও সজ্জনগণকর্ত্তৃক রক্ষিত হউক। তুমি ধনধান্যশালী হইয়া সুখে কালযাপন কর। তোমার ভৃত্যগণ প্রতিনিয়ত অধ্যবসায়সম্পন্ন, সমরদক্ষ ও অশ্বারোহণে পটু হউক, আর তুমি মিত্রমণ্ডলে পরিবৃত হইয়া সতত জ্ঞাতি ও বন্ধুবর্গের তত্ত্বাবধারণ এবং পুরবাসিগণের হিতানুসন্ধানে তৎপর হও। আমি তোমার নিকট কুকুরের দৃষ্টান্ত প্রদর্শনপূর্ব্বক প্রজাগণের প্রতি ব্যবহারের বিষয় কীৰ্ত্তন করিলাম; এক্ষণে তোমার আর কি শ্রবণ করিতে অভিলাষ আছে?”