১০৫. মিত্ৰতাদিদ্বারা পররাজ্য-জয়ের কৌশল

১০৫তম অধ্যায়

মিত্ৰতাদিদ্বারা পররাজ্য-জয়ের কৌশল

“কালকবৃক্ষীয় বলিলেন, “হে মহারাজ! আর যদি তুমি পৌরুষপ্রকাশে সমর্থ হও, তাহা হইলে রাজ্যলাভের নিমিত্ত আমি তোমাকে যে নীতি-উপদেশ প্রদান করিতেছি, সেই নীতি অনুসারে কার্য্যানুষ্ঠান করিলে নিশ্চয়ই প্রচুর অর্থ ও রাজ্যলাভে সমর্থ হইবে। যদি উহাতে তোমার অভিরুচি হয়, তাহা হইলে সেই নীতি কহিতেছি, শ্রবণ কর।

“ক্ষেমদর্শী কহিলেন, “ভগবন! আমি অবহিত হইয়া শ্রবণ করিতেছি, আপনি সেই নীতিবিষয়ক উপদেশ প্রদান করুন। অদ্য আপনার সহিত আমার সমাগম যেন ব্যর্থ না হয়।’

“মহর্ষি কহিলেন, ‘মহারাজ! এক্ষণে কাম, ক্রোধ, হর্ষ, ভয় ও অহঙ্কার পরিত্যাগপূৰ্ব্বক কৃতাঞ্জলিপুটে শত্রুগণকেও নমস্কার করা তোমার কর্ত্তব্য। তুমি পবিত্র কাৰ্য্যদ্বারা সত্যবাদী বিদেহরাজের পরিচর্য্যা করিলে তিনি নিশ্চয়ই তোমাকে ধনপ্রদান করিবেন। তুমি কিয়ৎকাল জনকের নিকট অবস্থান করিলে ক্রমে তাঁহার বাহুস্বরূপ ও সকল লোকের বিশ্বাসভাজন হইয়া উঠিবে এবং অনায়াসে উৎসাহসম্পন্ন ব্যসনহীন সহায়বল লাভ করিতে পারিবে। সংযতাত্মা, জিতেন্দ্রিয়, নীতিশাস্ত্রজ্ঞ বিদেহরাজ প্রতিনিয়ত প্রজাগণকে প্রসন্ন করিয়া আত্মাকে কৃতার্থ করেন। তুমি তাঁহার নিকট মান্য এবং তাঁহার প্রজাগণের বিশ্বাসভাজন ও আদরণীয় হইয়া সুহৃদ্বল [বন্ধুসাহায্য] লাভ করিলে অনায়াসেই সুমন্ত্রীদিগের সহিত মন্ত্রণা করিয়া শত্রুদ্বারা শত্রুগণের মধ্যে ভেদোৎপাদন বা এক শত্রুর সহিত মন্ত্রণা করিয়া অন্য শত্রুর বলক্ষয় করিতে পারিবে। ঐ সময় তুমি শত্রুগণকে উত্তম শ্ৰী, আচ্ছাদন, শয্যা, আসন, যান, গৃহ, পক্ষী, মৃগ, গন্ধ, রস ও ফলে সবিশেষ আসক্ত করিবে, তাহা হইলে উহারা স্বয়ংই বিনষ্ট হইবে। নীতিজ্ঞ ব্যক্তিরা শত্রুকে নিপীড়িত বা উপেক্ষা করিতে বাসনা করিয়া কদাচ উহা তাহার নিকট প্রকাশ করেন না। তুমি কুক্কুর, মৃগ ও কাকের স্বভাব অবলম্বনপূৰ্ব্বক মিত্রের ন্যায় অমিত্রগণের নিকট অবস্থান করিয়া তাহাদিগকে দুস্তর কাৰ্য্যে ও বলবাদিগের সহিত বিরোধে, প্রবর্ত্তিত করিবে। মহামূল্য উদ্যান, শয্যা, আসন ও সুখভোগ্য অন্যান্য বিবিধ দ্রব্যে তাহাদিগকে প্রলোভিত করিয়া কোষ নিঃশেষিত করিবে। ঐ অরাতিদিগকে যজ্ঞদানাদি কার্য্যে ব্যাপৃত করিয়া ধনদ্বারা ব্রাহ্মণগণকে পরিতুষ্ট করা তোমার অবশ্য কর্ত্তব্য; তাহা হইলে ব্রাহ্মণগণ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া স্বস্ত্যয়নাদিদ্বারা তোমার প্রত্যুপকার ও বৃকগণের ন্যায় তোমার শত্ৰুদিগকে গ্রাস করিবেন। পুণ্যবান্ ব্যক্তি নিঃসন্দেহই উৎকৃষ্ট গতিলাভ করিয়া স্বর্গীয় পবিত্রস্থানে গমন করিতে পারেন। ধর্ম্ম বা অধৰ্ম্ম যাহাদ্বারা হউক না কেন, কোষক্ষয় হইলেই শত্রুগণ বশীভূত হয়। কোষই অর্থসিদ্ধির মূল কারণ; সুতরাং কোষক্ষয় হইলে শত্রুগণকে অবশ্যই বিষণ্ন হইতে হইবে। কেবল দৈবপরায়ণ ব্যক্তিকে অচিরাৎ বিনষ্ট হইতে হয়, সন্দেহ নাই; অতএব শত্রুগণকে পুরুষকারের পরিবর্ত্তে দৈববিষয়ক উপদেশপ্রদান ও তাহাদিগকে বিশ্বজিৎযজ্ঞে প্রবর্ত্তিত করিয়া তাহাদিগের সৰ্ব্বস্বান্ত করা তোমার অবশ্য কর্ত্তব্য। শত্রুগণ ঐরূপে ধনহীন হইলে পর তাহারা যাহাতে সাধুগণকে নিপীড়িত করে, তাহার চেষ্টা এবং তাহাদিগকে ঐ পাপক্ষয়ের নিমিত্ত যোগধর্ম্মের উপদেশ প্রদান করিবে, তাহা হইলে তাহারা রাজ্যপরিত্যাগপূৰ্ব্বক মোক্ষলাভার্থী হইয়া বনে প্রবিষ্ট হইবে। ঐ সময় সৰ্ব্বশত্রুবিনাশী ঔষধাদিদ্বারা শত্রুগণের হস্তী, অশ্ব ও সৈন্যগণকে সংহার করা তোমার কর্ত্তব্য। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা এইরূপে শত্রুগণকে পরাভব করিয়া কৃতকার্য্য হইয়া থাকেন।