১৪৯. পাণ্ডবগণের গঙ্গাপার
ঊনপঞ্চাশদধিকশততম অধ্যায়।
বৈশম্পায়ন কহিলেন,–হে ভরতকুল-প্রদীপ! পাণ্ডবগণ বারণাবত নগর হইতে বনে পলায়ন করিলে, মহাত্মা বিহুর একজন বিশ্বস্ত পুরুষকে তাঁহাদের নিকটে পাঠাইয়া দিলেন। যে ব্যক্তি তাহাদের অনুসরণ করিতে করিতে দেখিল যে, মাতৃসমবেত পাণ্ডবগণ নদীকূলে দণ্ডায়মান হইয়া উহার জল পরিমাণ করিতেছেন। অলৌকিক ধীশক্তিসম্পন্ন মহাত্মা বিদুর অর্থেই দুরাত্মা দুর্যোধনের দুষ্টচেষ্টিত বুঝিতে পারেন, পরে তাহার চরও তাহা বুঝিতে পারে, একারণ সে প্রিয় হয়; কিন্তু বিদুর তাহাকেই পাণ্ডবদিগের নিকটে পাঠাইয়া দিলেন। সে ব্যক্তি পরিত্র ভাগীরথীকূলে মনোমারুত গামিনী চন্দ্রপতাকাশালিনী বাতসহ নৌকা লইয়া পাণ্ডবদিগের নিকটে উপস্থিত করিল এবং তাঁহাদের বারণাবতে আসিবার সময়ে বিদুর যাহা বলিয়া গিয়াছিলেন, সেই সাঙ্কেতিক বাক্যে প্রতীতি জন্মাইয়া কহিল, হে মহানুভব! সৰ্বাৰ্থবেত্তা মহাত্মা বিদুর আপনাদিগকে কহিয়া দিয়াছেন যে, তোমর কর্ণ, ভ্রাতৃগণসমবেত দুৰ্য্যোধন ও শকুনিকে সংগ্রামে পরাজয় করিবে। হে মহাত্মন্! এক্ষণে এই তরঙ্গসহ সুগামিনী তরণা উপস্থিত, ইহার দ্বারা আপনারা নিঃসন্দেহ এই সমস্ত দেশ অতিক্রম করিতে পারিবেন।
অনন্তর নাবিক মাতৃসমবেত পাণ্ডুনন্দনগণকে সাতিশয় ব্যখিত দেখিয়া তাহাদিগকে নৌকায় আরোহণ করাইয়া নৌকা বাহিয়া চলিল। গমনকালে নাবিক কহিল, মহাত্মা বিদুর উদ্দেশে আপনাদিগকে আলিঙ্গন ও মন্তকাম্রাণ করিয়া কহিয়াছেন যে, গমনকালে পথে যে কোন বিপদ না ঘটে। বিহুরপ্রেষিত নাবিক এই কথা বলিয়া তাহাদিগকে নির্বিঘ্নে ভাগীরথীর অপর পারে উত্তীর্ণ করিয়া জয়াশীৰ্বাদ প্রয়োগ পুনঃসর বিদায় প্রার্থনা করিল। তখন পাণ্ডবগণ বিদুরকে অপিনাদিগের প্রণাম জানাইতে কহিয়া নাবিককে বিদায় দিলেন। নাবিক স্বস্থানে প্রস্থান করিল; পাণ্ডবগণও মাতৃসমভিব্যাহারে অতি সত্বরে তথা হইতে গমন করিতে লাগিলেন।