১৯০. যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নে মার্কণ্ডেয়কর্ত্তৃক যুগধর্ম্ম-বর্ণন

১৯০তম অধ্যায়

যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নে মার্কণ্ডেয়কর্ত্তৃক যুগধর্ম্ম-বর্ণন

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন্! রাজা যুধিষ্ঠির জগতের ভাবী অবস্থা অবগত হইবার নিমিত্ত মার্কণ্ডেয়কে কহিলেন, “ভগবন! আমরা আপনার নিকট যুগোৎপত্তিকালীন সৃষ্টি ও সংহারবিষয়ক আশ্চর্য্য বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়া এক্ষণে কলিকালের বিষয়-শ্রবণে একান্ত কৌতূহলাক্রান্ত হইয়াছি; অতএব আপনি তাহার বৃত্তান্ত-সকল বিবৃত করিয়া বৰ্ণন করুন। তৎকালে ধর্ম্মসঙ্কুল উপস্থিত হইলে পরিণামে কি ফল উৎপন্ন হইবে? মানবগণের বল-বীৰ্য্য আচার ব্যবহার, পরিচ্ছদ ও আয়ুর পরিমাণই বা কি প্রকার হইবে এবং কতকাল পরেই বা পুনরায় সত্যযুগ আরম্ভ হইবে?”

মার্কণ্ডেয় যুধিষ্ঠিরের বাক্য শ্রবণ করিয়া কৃষ্ণ ও পাণ্ডবগণের মনোরঞ্জন করিবার নিমিত্ত কহিতে লাগিলেন, “হে রাজন! যাহা পূর্ব্বে দর্শন করিয়াছিলাম, তাহা শ্রবণ করিয়াছ। এক্ষণে দেব দেবপ্রসাদে কলিকাল-সম্বন্ধীয় যে-সকল ভবিষ্যলোকবৃত্তান্ত অনুভূত হইতেছে, তাহাও কহিতেছি, শ্রবণ কর। সত্যযুগে ধর্ম্ম, ছল ও লোভাদিসম্পৰ্কশূন্য এবং বৃষবৎ চতুষ্পদ ছিল। ত্রেতাযুগে তাহার এক পাদ ও দ্বাপরযুগে দুই পাদ অধর্ম্মময় হইয়াছে, তামসযুগে ধর্ম্ম কেবল পাদমাত্র, কিন্তু অধর্ম্ম তিন-পাদদ্বারা মনুষ্যকে আক্রমণ করিবে।

“আয়ু, বীরত্ব, বুদ্ধি, বল ও তেজ যুগে যুগে হ্রাসপ্রাপ্ত হইতেছে; সুতরাং কলিকালে আরও হ্রাস হইবে। রাজা, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য ও শূদ্রগণ কপটতাপূর্ব্বক ধর্ম্মানুষ্ঠান করিবে। তখন সেই ধর্ম্মই প্রতারণার উপায় হইবে। কলিযুগে সত্যের হানি হইবে। সত্যের হানিতে আয়ুর অল্পতা; আয়ুর অল্পতাবশতঃ সকলেই বিদ্যোপার্জ্জনে অসমর্থ হইবে। বিদ্যার অল্পতা হইতে অজ্ঞান, অজ্ঞান হইতে লোভ, লোভ হইতে ক্রোধ, ক্রোধ হইতে মোহ উৎপন্ন হইবে। তখন সমুদয় মনুষ্য লোভ, ক্রোধ, মোহ ও কামপরায়ণ এবং পরস্পর জিঘাংসাপর হইয়া বৈরভাব উদ্ভাবন করিবে।

“ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য পরস্পর সঙ্কীর্ণ হইয়া শূদ্রতুল্য, তপঃশুন্য ও সত্যবর্জ্জিত হইবে। অন্ত্যজ-জাতি চণ্ডালাদি মধ্যমজাতি ক্ষত্রিয়ের ন্যায় ব্যবহার করিবে? মধ্যমজাতি অন্ত্যজ জাতির অনুকরণ করিবে। শণনির্ম্মিত বস্ত্র ও কোরদূষক [কেদো ধান] ধান্য প্রধানরূপে গণ্য হইবে। পুরুষগণ নিতান্ত স্ত্রৈণ হইবে এবং মৎস্য, মাংস ও অজামেষীদুগ্ধে জীবিকা নির্ব্বাহ করিবে। যাহারা গো সকল বিনষ্ট হইলে নিত্য নিয়মে ব্রত ধারণ করিত, তাহারাও লোভপরায়ণ হইবে। মানবগণ পরস্পর মোষণ [চৌর্য্য-চুরি] করিবে এবং জপবর্জ্জিত, নাস্তিক ও চৌরস্বভাব হইবে।

“নদী-তীরে কুদ্দালদ্বারা ওষধি বপন করিবে। সেই ওষধিসকল অত্যল্প ফলশালী হইবে। যাঁহারা শ্রাদ্ধে ও দৈবকর্ম্মে ধৃতব্রত, তাঁহারাও লোভপরায়ণ হইয়া পরস্পর পরস্পরের ধন ভোগ করিবেন। পিতা পুত্রের ধন ও পুত্র পিতার ধন ভোগ করিবে। খাদ্যাখাদ্যের বিচার থাকিবে না। ব্রাহ্মণগণ ব্ৰতাচরণে পরাঙ্মুখ হইবে, বেদনিন্দা করিবে এবং নিরর্থক হেতু বিমোহিত হইয়া হোমযাগ পরিত্যাগ, নীচকর্ম্মের অনুষ্ঠান, নিম্নদেশে কৃষিকাৰ্য্য ও বর্ষান্তপ্রসবিনী প্রভৃতি ধেনুগণকে ভারবহনে নিয়োজন করিবে। পুত্র পিতৃহত্যা ও পিতা পুত্রহত্যা করিয়াও উদ্বিগ্ন হইবে না, প্রত্যুত ব্রহ্মবাদী[বেদব্যাখ্যাতা—পাপী লোক বেদ-ব্যাখ্যাকর্ত্তা]ও অনিন্দিত হইবে।

“সমস্ত জগৎ ম্লেচ্ছ; ক্রিয়া ও যজ্ঞবর্জ্জিত, নিরানন্দ ও নিরুৎসব হইয়া উঠিবে। লোক-সকল প্রায় কৃপণ, বন্ধুমান্‌ ও বিধবাগণের ধন অপহরণ করিবে, স্বল্পবল, উৎসাহবিহীন ও লোভমোহপরায়ণ হইবে, সন্তুষ্টচিত্তে দুষ্টলোকের পরামর্শ গ্রহণ করিবে এবং কপটাচারপরায়ণ হইয়া প্রতিগ্ৰহ করিবে। পণ্ডিতম্মন্য ক্ষত্রিয়গণ মূর্খতাদোষে পরস্পরকে আহ্বানপূর্ব্বক পরস্পরের প্রাণসংহারে উদ্যত ও সমুদয় লোকের কণ্টকস্বরূপ হইবে। তাহারা নোকরক্ষাকাৰ্য্যে উপেক্ষাপূর্ব্বক লোভ ও অহঙ্কারের বশীভূত হইয়া কেবল দণ্ডবিধানেই সমুৎসুক হইবে এবং নির্দ্দয়হৃদয়ে সাধুগণের ধনসম্পত্তি ও স্ত্রীর আক্রমণপূর্ব্বক ভোগ করিবে।

“কোন ব্যক্তিই বিবাহার্থী হইয়া কন্যাপ্রার্থনা করিবে না এবং কেহ কন্যাদানও করিবে না, কন্যারা স্বয়ংগ্ৰহা হইবে। রাজারা মূঢ়চেতাঃ ও অসন্তুষ্ট হইয়া সর্ব্বপ্রকার উপায় অবলম্বনপূর্ব্বক পরধন অপহরণ করিবে। সমুদয় জগৎ ম্লেচ্ছ হইয়া উঠিবে, সহোদর সহোদরকে প্রতারণা করিবে, পণ্ডিতন্মন্য মানবগণ সত্যকে সংক্ষিপ্ত করিবে, স্থবিরগণ বালকবৎ ও বালকগণ স্থবিরবৎ ব্যবহার করিবে। ভীরুগণ বীরাভিমানী ও বীরগণ ভয়শীল হইবে, পরস্পর কেহ কাহাকেও বিশ্বাস করিবে না। সকলেরই একরূপ আহার ও সকলেই লোভমোহপরায়ণ হইবে, অধর্ম্মই বৰ্দ্ধিত ও ধর্ম্মের হ্রাস হইবে।

“ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগণ কাহাকেও অনুশাসন করিবে না। সমুদয় লোক একবর্ণ হইবে। পিতা পুত্রকে ক্ষমা করিবে না, পুত্রও পিতাকে ক্ষমা করিবে না। পত্নী পতিশুশ্রুষা পরিত্যাগ করিবে। সমস্ত লোক যবগোধূমশালী জনপদে বাস করিবে। পুরুষ ও যোষাগণ স্বেচ্ছাচারপরায়ণ হইয়া পরস্পরের প্রতি ঈর্ষাপরবশ হইবে। মানবগণ শ্রাদ্ধদ্বারা দেবগণের তৃপ্তিসম্পাদন করিবে না। কেহ কাহারও কথা শ্রবণ করিবে না, কেহ কাহারও গুরু হইবে না। সকলেই অজ্ঞানান্ধকারে আচ্ছন্ন হইবে। পরমায়ুর পরিমাণ ষোড়শবর্ষ হইবে, তৎপরেই মানবগণ মৃত্যুমুখে পতিত হইবে। কন্যাগণ পঞ্চম বা ষষ্ঠবর্ষে সন্তানপ্রসব করিবে, পুরুষগণ সপ্তম বা অষ্টমবর্ষে অপত্যোৎপাদন করিবে। ভর্ত্তা ভার্য্যার প্রতি ও ভাৰ্য্যা ভর্ত্তার প্রতি পরিতুষ্ট থাকিবে না। সম্পত্তি অল্প হইবে, সম্পত্তিবিহীন ব্যক্তিও বৃথা সম্পদের চিহ্ন ধারণ করিবে। হিংসা বলবতী হইয়া উঠিবে। জনপদস্থ মানব-সকল নিরন্তর ক্ষুধাদিগ্রস্ত হইবে, চতুষ্পথ-সমুদয় বারনারী ও লম্পটগণে পরিপূর্ণ হইবে, কামিনীগণ লজ্জা পরিত্যাগ করিয়া নিজ স্বামীকে দ্বেষ করিবে। মানবগণ ম্লেচ্ছাচারী, সর্ব্বভক্ষ ও সমুদয় কার্য্যে নিদারুণ হইবে, বিত্তলোভে ক্রয়-বিক্রয়কালে সকলেই বঞ্চনা করিবে। তাহারা জ্ঞানোপার্জ্জন না করিয়া ক্রিয়াকলাপে ব্যাপৃত ও স্বভাবতঃ ক্রূরকর্ম্মা হইবে, পরস্পর দোষ প্রকাশ করিবে, আত্মচ্ছন্দানুসারে ব্যবহার এবং নির্দ্দয় হইয়া উপবন ও তরুগণ ছেদন করিবে। দেহিগণের জীবনসংশয় হইবে; সকলেই লোভাভিভূত হইবে। শূদ্রগণ ব্রহ্মহত্যা ও ব্রহ্মস্ব অপহরণ করিবে। দ্বিজগণ শূদ্ৰকর্ত্তৃক পীড়িত হইয়া ভয়ব্যাকুলতায় হাহাকারপূর্ব্বক অশরণ হইয়া ধরাতল পর্য্যটন করিবে। মানবগণ প্রাণবিনাশ ও উগ্ৰস্বভাব হইবে। দ্বিজগণ দস্যুভয়ে কাতর হইয়া পলায়নপূর্ব্বক নদী, পর্ব্বত পলায়নপূর্ব্বক নদী, পর্ব্বত ও বিষম স্থান-সকল আশ্রয় করিবে এবং অন্যায়কারী রাজার করভারে নির্ভর নিপীড়িত হইয়া ধৈর্য্য পরিত্যাগ করিবে ও শূদ্রগণের পিরচর্য্যায় নিযুক্ত হইয়া অকর্ত্তব্য কৰ্ম্মসকল সম্পাদন করিবে। শূদ্রগণ ধৰ্ম্মোপদেশ প্রদান করিবে, ব্রাহ্মণগণ শিষ্য হইয়া প্রামাণ্যবুদ্ধিসহকারে তাহার শ্রোতা হইবে। নীচ উচ্চ ও উচ্চ নীচ হইবে, এইরূপে সকলই বিপরীত হইবে। সকলে দেবতা পরিত্যাগ করিয়া এড়ুকের উপাসনা করিবে এবং শূদ্রগণ দ্বিজগণের পরিচারণা করিবে না।

মষিগণের আশ্রম, ব্রাহ্মণগণের বাসস্থান, দেবালয়, চৈত্য ও নাগালয়ে এড়ুককচিহ্ন থাকিবে, পৃথিবী আর দেবগৃহে অলঙ্কৃত হইবে না। মানবগণ ভীষণ প্রকৃতি, অধার্ম্মিক, মাংসাশী ও মদ্যপায়ী হইবে। যুগক্ষয়ে পুষ্পোপরি পুষ্প ও ফলোপরি ফল সমুৎপন্ন হইবে। বারিদসকল অকালে বারিবর্ষণ করিবে। ক্রিয়াকলাপের ক্রমবিপর্য্যয় হইয়া উঠিবে। ব্রাহ্মণের সহিত শূদ্রের বিরোধ ও পৃথিবী ম্লেচ্ছগণে পরিপূর্ণ হইবে। সমুদয় জনপদ একাচাপরায়ণ হইবে এবং জনপদবাসী লোকেরা বৃষ্টিদ্বারা নিপীড়িত হইয়া ফলমূলোপর্জীবিগণের আশ্রমে বাস করিবে। লোক সকল এইরূপ পর্য্যাকুল হইলে মর্য্যাদার লেশও থাকিবে না। শিষ্যগণ গুরূপদেশে অবহেলা করিয়া তাহাদিগের বিপ্রিয়কারী হইবে। আচার্য্যগণ নিধন হইয়া শিষ্যগণকে ভৎসনা করিবে। আত্মীয়বন্ধু-বান্ধবের সম্বন্ধ কেবল অর্থের উপর নির্ভর করিবে।

যুগান্তকালে সমস্ত চরাচর ধ্বংস হইবে, সমুদয় দিক প্রজ্বলিত হইবে, নক্ষত্র-সকল প্রভাশুন্য হইবে, জ্যোতি-সমুদয় প্রতিকুল হইবে এবং বায়ুপ্রবাহ পর্য্যাকুল হইয়া উঠিবে। মহাভয়সূচক ভূরি ভূরি উল্কাপাত হইবে, সপ্তম ও বিষম নির্হ্রাদসকল সমুদিত ইয়া সমস্ত দিক্ দাহ করিবে। ভাস্কর উদয় ও অস্তমন সময়ে কবন্ধাচ্ছন্ন হইবেন; ভগবান্‌ সহস্রলোচন অনুচিতকালে বারিবর্ষণ করিবেন। শস্যরোপন একবারে রহিত হইয়া যাইবে। রমণীগণ পরুষবাদিনী, ক্রূরস্বভাবা ও রোদনপ্রিয়া হইয়া কদাচ স্বামীর বশীভূত হইবে না। পুত্র পিতা-মাতার প্রাণ সংহার করিবে। স্ত্রীলোক স্বতন্ত্র হইয়া পতি ও পুত্রগণকে বিনষ্ট করিয়া সুর্য্য অমাবস্যা ভিন্ন অন্য তিথিতেও রাহুগ্রস্ত হইবে হুতাশন সৰ্ব্বত্র প্রজ্বলিত হইবে। পান্থগণ প্রার্থনা করিয়াও পান-ভোজন ও আশ্রয় প্রাপ্ত হইবে না; পরে নিরাশ হইয়া পথিমধ্যে শয়ন করিবে। নির্ঘাত, বাসয়, সর্প, পক্ষী ও মৃগগণ অতি কঠোর শব্দ করিবে। মনুস্যগণ আত্মীয়, বান্ধব ও পরিজনকে পরিত্যাগ করিবে।

মনুষ্য-সকল দেশ, দিক্‌, নগর পত্তন আশ্রয় করিবে এবং কেবল “হা তাত! হা পুত্র!”ইত্যাদি নিদারুণ বাক্যে পরস্পর শোক করত পৃথিবীতলে পর্য্যটন করিবে।

অনন্তর এবম্প্রকার তুমুল সংঘাত সমুপস্থিত হইলে পুনরায় দ্বিজাতি প্রভৃতি সমুদয় ক্রমানুসারে সমুৎপন্ন হইবে। কালান্তরে দৈব লোকবৃদ্ধির নিমিত্ত পুনরায় যদৃচ্ছাক্রমে অনুকূল হইবেন। যখন সুৰ্য্য, চন্দ্র, পুষ্যা ও বৃহস্পতি এক রাশিতে আরোহণ করিবেন, তখন পুনরায় সত্যযুগ সমারব্ধ হইবে। তখন পর্জ্জন্য সযুচিত সময়ে বারিবর্ষণ করিবে, নক্ষত্রসকল কল্যাণকারী হইবে, গ্রহ-সকল অনুকুল হইয়া যথাক্রমে গতায়াত করিবে এবং লোকসকল ক্ষেমভাজন, সুভিক্ষ ও 
নিরাময় হ
ইবে।

কালক্রমে সম্ভল গ্রামে বিষ্ণুযশা নামে এক ব্রাহ্মণ উৎপন্ন হইবেন। মহাবীর্য্য মহানুভব কল্কি সেই ব্রাহ্মণ গৃহে জন্ম পরিগ্রহ করিবেন। তার মননমাত্রেই সমুদয় বাহন, কবচ, বিবিধ আয়ুধ ও ভূরি ভূরি যোদ্ধা উপস্থিত হইবে। তিনি ধর্ম্মবিজয়ী ও সম্রাট হইয়া পর্য্যাকুল লোকসকলের প্রতি প্রসন্ন হইবেন। ক্ষয়কারী ও যুগপরিবর্ত্তক সেই দীপ্ত পুরুষ উত্থিত ব্রাহ্মণগণ-পরিবৃত হইয়া সৰ্ব্বত্রগত ম্লেচ্ছগণকে উৎসাদিত করিবেন।