১৫৩. কুবেরানুচরের ভীম-পরিচয়জিজ্ঞাসা

১৫৩তম অধ্যায়

কুবেরানুচরের ভীম-পরিচয়জিজ্ঞাসা

বৈশম্পায়ন কহিলেন, ভীমসেন প্রীতি প্ৰফুল্লচিত্তে কুবেরসরসীর [কুবেরের] সমীপবর্ত্তী হইলেন। ঐ সরসী কৈলাসশিখর, কুবেরভবন ও গিরিনির্ঝরের অনতিদূরে সানুপ্রদেশে সমুৎপন্ন বলিয়া যারপরনাই মনোহারিণী হইয়াছে। তীরসম্ভূত তরু ও লতারাজি বিপুল ছায়া বিস্তারপূর্ব্বক উহার সমধিক সৌন্দৰ্য্যসম্পাদন করিতেছে; উহাতে বিবিধ সরোজরাজি প্রস্ফুটিত হইয়াছে, নানাবিধ জলচর পক্ষিগণ সুখে সঞ্চরণ করিতেছে। উহার সলিল নির্ম্মল, শীতল, লঘু ও অমৃতের ন্যায় সুস্বাদু; তীৰ্থসকল সুনির্ম্মিত ও সুশোভিত, উহাতে কর্দ্দমের লেশমাত্ৰ নাই ও অবগাহনেরও ক্লেশ নাই।

ভীমসেন ইচ্ছামত উহার জলপান করিয়া তত্রস্থ সৌগন্ধিকবনের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন। উহার কুসুম অতি মনোহর, পত্ৰসকল কাঞ্চনময়, গন্ধ অতি রমণীয়, নীল বৈদূৰ্য্যমণিতে নির্ম্মিত, হংস ও কারণ্ডবগণের সঞ্চালনে বিমল পরাগসকল সমুত্থিত হইতেছে। ঐ সরোবর মহাত্মা রাজরাজের ক্রীড়াস্থান; দেব, গন্ধর্ব্ব, অন্সর, ঋষি, যক্ষ ও কিন্নরগণের পূজনীয়, ক্রোধবশনামক শতসহস্র রাক্ষস উহার সংরক্ষক। ভীমসেন অজিনাদি মুনিবেশ ও খড়গাদি বীর-পরিচ্ছদ ধারণপূর্ব্বক নিৰ্ভয়ে গমন করাতে রক্ষাধিকারে নিযুক্ত রাক্ষসগণ তাঁহার বিরুদ্ধবেশ অবলোকন করিয়া পরস্পর কহিতে লাগিল, “এই পুরুষবর অজিন পরিধান। অথচ আয়ুধ গ্রহণ করিয়া এ স্থানে কি নিমিত্ত আগমন করিয়াছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।” অনন্তর তাহারা ভীমসেনের সমীপে গমন করিয়া দর্পপূর্ব্বক জিজ্ঞাসা করিল, “হে পুরুষ! তুমি কে? তোমার মুনিবেশ এবং যোদ্ধৃবেশ দুই দেখিতেছি, অতএব কি নিমিত্ত এ স্থানে আগমন করিয়াছ, বল।”