১৫২. ভীমের সৌগন্ধিক পদ্মসরোবরতীরে গমন

১৫২তম অধ্যায়

ভীমের সৌগন্ধিক পদ্মসরোবরতীরে গমন

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহাবলপরাক্রান্ত হনূমান অন্তর্হিত হইলে ভীমসেন তন্নির্দ্দিষ্ট পথ অবলম্বনপূর্ব্বক বিত্তীর্ণ গন্ধমাদনগিরি। পৰ্য্যটন করিতে লাগিলেন; কিন্তু তাঁহার অন্তঃকরণে কপিবর-কলেবর ও অলৌকিক শ্ৰী এবং দাশরথিমহাত্ম্য ও মহানুভবতা নিরন্তর জাগরকে রহিল। অনন্তর তিনি সৌগন্ধিকবনের অন্বেষণে প্রবৃত্ত হইয়া কোন স্থানে বিকশিত তরুরাজিবিরাজিত নদ-নদী, কোন স্থানে সজলজলদতুল্য পঙ্কদিগ্ধাঙ্গ প্ৰমত্ত মাতঙ্গ সমূহ, কোন স্থানে বরাহ, মহিষ ও শার্দ্দুল প্রভৃতি শ্বাপদসকল এবং কোন স্থানে বা যুথবদ্ধ চপলাপাঙ্গ কুরঙ্গ ও কবলিত-শষ্প কুরঙ্গবধূকে নয়নগোচর করিলেন। সমীরণসঞ্চালিত আরণ্য পাদপগণ যেন কুসুমসুরভিত কোমল কিশলয়রূপ কর-প্রসারণপূর্ব্বক তাঁহাকে আহ্বান করিতেছে। সুরম্যসলিল সরোবর যেন পদ্মরূপ অঞ্জলিবন্ধনপূর্ব্বক মত্ত মধুকরের স্বরচ্ছলে তাঁহার স্তুতিপাঠ করিতেছে। ভীমসেন কুসুমিত পর্ব্বতসানুতে মন ও নয়ন নিমগ্ন করিয়া দ্রৌপদীর বাক্যমাত্র পাথেয়-সহকারে ত্বরিতপদে গমন করিতে লাগিলেন।

পরদিন প্ৰভাতে মহাসত্ত্ব ভীমসেন সেই হরিণ-সেবিত কাননে ভ্ৰমণ করিতে করিতে দেখিলেন, একটি মনোহর তরঙ্গিণী গন্ধমাদনপর্ব্বতের মালাস্বরূপ হইয়া শোভা পাইতেছে। তথায় হংস, কারণ্ডব, চক্ৰবাক প্রভৃতি জলচর পক্ষিগণ আনন্দে ক্রীড়া করিতেছে এবং সেই স্রোতস্বতীর সলিলে তরুণভানুসন্নিভ প্রীতিজনক সৌগন্ধিকবন শোভমান রহিয়াছে। তিনি তদ্দর্শনে পূৰ্ণমনোরথ হইয়া সর্ব্বদাই কেবল বনবাসক্লেশিতা প্রিয়তমাকে স্মরণ করিতে লাগিলেন।