৮৬. অৰ্জ্জুনাগমনে কৃষ্ণের যজ্ঞ-বিষয়ক আশ্বাসবাণী

৮৬তম অধ্যায়

অৰ্জ্জুনাগমনে কৃষ্ণের যজ্ঞ-বিষয়ক আশ্বাসবাণী

বৈশম্পায়ন বলিলেন, হে মহারাজ! অনন্তর ধর্ম্মপরায়ণ ধর্ম্মাত্মা যুধিষ্ঠির ভূপালগণকে সমাগত দেখিয়া, ভীমসেনকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “ভ্রাতঃ! এই দেখ, পূজা পার্থিবগণ আমার যজ্ঞস্থলে সমুপস্থিত হইয়াছেন; অতএব তুমি তাঁহাদের যথাবিধি সৎকার কর।” ধৰ্ম্মরাজ এইরূপ অনুজ্ঞা করিবামাত্র মহাত্মা ভীমসেন নকুল ও সহদেবসমভিব্যাহারে অভ্যাগত ভূপতিদিগের যথাযযাগ্য সম্মান করিতে লাগিলেন। ঐ সময় ভগবান্ বাসুদেব বলদেবকে অগ্রসর করিয়া যুযুধান, প্রদ্যুম্ন, গদ, নিশঠ, কৃতবর্ম্মা ও শাম্ব প্রভৃতি বৃষ্ণিগণের সহিত সেই যজ্ঞস্থলে সমুপস্থিত হইলেন। মহারথ ভীমসেন তাঁহাদিগকে দর্শন করিয়া প্রীতচিত্তে তাঁহাদের প্রত্যেককে যথাযোগ্য সৎকার করিলেন। তাঁহারও যথোচিত সৎকৃত হইয়া রত্নবিভূষিত গৃহসমুদয়ে প্রবেশ করিতে লাগিলেন।

অনন্তর মহাত্মা মধুসূদন ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে সম্ভাষণ করিয়া তাঁহাকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিলেন, “মহারাজ! অৰ্জ্জুন নানা স্থানে ঘোরতর সংগ্রাম করিয়া নিতান্ত পরিশ্রান্ত হইয়া অশ্বের সহিত প্রত্যাগমন করিতেছে।” ধৰ্ম্মরাজ বাসুদেবের এই বাক্য শ্রবণ করিয়া বারংবার তাঁহার নিকট অর্জ্জুনের সংবাদ জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। তখন মহাত্মা বাসুদেব তাঁহাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “মহারাজ! একজন দ্বারকাবাসী পুরুষের সহিত অৰ্জ্জুনের সাক্ষাৎকার হইয়াছিল। সে আমার নিকট আগমনপূৰ্ব্বক উহার বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিয়াছে। অতএব আপনি চিন্তা পরিত্যাগপূৰ্ব্বক যাহাতে অশ্বমেধ সম্পন্ন হয়, তদ্বিষয়ে যত্নবান হউন।”

বাসুদেব এই কথা কহিলে ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির তাঁহাকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিলেন, “ভ্রাতঃ! অৰ্জ্জুন যে কুশলে প্রত্যাগমন করিতেছে, ইহা পরমসৌভাগ্যের বিষয়। এক্ষণে সে যদি আমাদিগকে কোন কাৰ্য্য করিতে অনুরোধ করিয়া থাকে, তবে তাহা ব্যক্ত কর।”

তখন বাসুদেব কহিলেন, “মহারাজ! সেই দ্বারকাবাসী দূত আমার নিকট সমাগত হইয়া অৰ্জ্জুনের অন্যান্য বৃত্তান্ত নিবেদনপূৰ্ব্বক পুনরায় আমাকে সম্বোধন করিয়া কহিল, “ভগবন্! মহাত্মা ধনঞ্জয় কহিয়াছেন যে, সময়ক্রমে মহারাজ যুধিষ্ঠিরকেও উপদেশ প্রদান করা দোষাবহ নহে; অতএব আমি তাঁহাকে কহিতেছি যে, যেসমুদয় নিমন্ত্রিত ভূপতি অশ্বমেধযজ্ঞে সমুপস্থিত হইবেন, তিনি যেন তাঁহাদিগের যথোচিত সৎকার করেন। পূৰ্ব্বে রাজসূয়যজ্ঞে অর্ঘ্যপ্রদানকালে যেরূপ অনর্থ উপস্থিত হইয়াছিল, এক্ষণে যেন সেইরূপ দুর্ঘটনায় প্রজাগণের ক্ষয় না হয়। মহাত্মা মধুসূদন যেন স্বয়ং এই বিষয়ে সম্মত হইয়া ধৰ্ম্মরাজকে সাবধান করিয়া দেন। আর আমার পুত্র মণিপুরাধিপতি বভ্রুবাহন যখন আমাদিগের যজ্ঞে সমুপস্থিত হইবে, তখন ধৰ্ম্মরাজ যেন আমার অনুরোধে তাহাকে সমধিক সমাদর করেন। সে সৰ্ব্বদা আমার প্রতি অনুরক্ত হইয়া আমাকে যারপরনাই ভক্তি করিয়া থাকে।”