৬৩. মরু-পরিত্যক্তধনাহরণার্থ পাণ্ডবযাত্রা

৬৩তম অধ্যায়

মরু-পরিত্যক্তধনাহরণার্থ পাণ্ডবযাত্রা

জনমেজয় কহিলেন, ব্রহ্মন্! ধৰ্ম্মাত্মা যুধিষ্ঠির বেদব্যাসের বাক্য শ্রবণ করিয়া অশ্বমেধযজ্ঞের নিমিত্ত কিরূপ কার্য্যের অনুষ্ঠান করিলেন? মরুত্তরাজা ভূগর্ভে যে অর্থরাশি নিহিত করিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহাই বা কিরূপে উঁহার হস্তগত হইল, তাহা কীৰ্ত্তন করুন।

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ব্যাসদেব প্রস্থান করিলে পর ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির স্বীয় ভ্রাতা ভীমসেন, অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেবকে আহ্বান করিয়া কহিলেন, ‘ভ্রাতৃগণ! আমাদিগের পরমহিতৈষী অসাধারণ ধীশক্তিসম্পন্ন মহাত্মা বাসুদেব, আমাদিগের পরমগুরু ধৰ্ম্মাত্মা বেদব্যাস ও পিতামহ ভীষ্ম যাহা কহিয়াছেন, তাহা তোমরা সকলেই শ্রবণ করিয়াছ। এক্ষণে তাঁহাদের বাক্যানুসারে কার্য্যানুষ্ঠান করিতে আমার একান্ত বাসনা হইয়াছে। উহা করিলে উত্তরকালে আমাদিগের সকলেরই মঙ্গল লাভ হইবে। ব্রহ্মবেত্তা বেদব্যাস যাহা কহিয়াছেন, তাহাতে মঙ্গললাভ হইবার বিলক্ষণ সম্ভাবনা। তিনি এই পৃথিবী ক্ষীণরত্না দেখিয়া আমাদিগকে মরুক্তরাজার সঞ্চিত ধন আহরণ করিতে আদেশ করিয়াছেন। যদি তোমরা সেই ধন আহরণ করিতে সমর্থ ও সম্মত হও, তাহা হইলেই কার্য্যসিদ্ধি হইতে পারে। এক্ষণে ভীমের এ বিষয়ে মত কি, উনি তাহা ব্যক্ত করুন।”

ধর্ম্মাত্মা যুধিষ্ঠির এই কথা কহিলে মহাবীর বৃকোদর কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁহাকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “মহারাজ! আপনি যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলেন, উহা আমার অভিমত। যদি আমরা সেই মরুরাজার নিহিত ধনলাভে সমর্থ হই, তাহা হইলে নিশ্চয়ই কৃতকার্য্য হইব। আমরা কায়মনোবাক্যে ভগবান্ ভূতভাবন ও তাঁহার অনুচরগণকে প্রসন্ন করিয়া সেই ধন আনয়ন করিব। যেসকল ভীষণমূৰ্ত্তি কিন্নর ঐ ধন রক্ষা করিতেছে, ভগবান্ বৃষধ্বজ পরিতুষ্ট হইলে তাহারা অবশ্যই আমাদের আয়ত্ত হইবে।”

মহাবীর ভীমসেন এইরূপে মরু-নিহিত অর্থ আনয়নে সম্মতি প্রকাশ করিলে, ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির তাঁহার বাক্যশ্রবণে যারপরনাই প্রীত হইলেন। অর্জ্জুন প্রভৃতি ভ্রাতৃগণও ভীমসেনের সেই বাক্যে অনুমোদন করিলেন। তখন পাণ্ডবগণ সকলে রত্নাহরণবিষয়ে কৃতনিশ্চয় হইয়া শুভদিনে শুভনক্ষত্রে সৈন্যদিগকে সুসজ্জিত হইতে আদেশ করিলেন। সৈন্যগণও আদেশপ্রাপ্তিমাত্র অবিলম্বে সুসজ্জিত হইতে লাগিল। অনন্তর পাণ্ডুতনয়গণ ধৃতরাষ্ট্রতনয় যুযুৎসুকে রাজ্যরক্ষাৰ্থ নিযুক্ত করিয়া ব্রাহ্মণগণদ্বারা স্বস্তিবাচন, মোদক, পায়স ও মাংসনির্ম্মিত পিষ্টকদ্বারা দেবাদিদেব মহাদেবের পূজা সমাধান, সাগ্নিক ব্রাহ্মণগণকে প্রণাম ও প্রদক্ষিণ এবং শোকসন্তপ্ত ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী ও পৃথার অনুমতি গ্রহণপূর্ব্বক অর্থ আনয়নার্থ নগর হইতে বহির্গত হইলেন। তখন ব্রাহ্মণগণ ও নাগরিক লোকসমুদয় পরম আহ্লাদে উহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিতে লাগিলেন।