৬৫. ধনপ্রাপ্তির জন্য যুধিষ্ঠিরের শিবপূজা

৬৫তম অধ্যায়

ধনপ্রাপ্তির জন্য যুধিষ্ঠিরের শিবপূজা

বিভাবরী প্রভাত হইবামাত্র ব্রাহ্মণগণ ধৰ্ম্মরাজকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “মহারাজ! এক্ষণে ভগবান ভূতনাথকে পূজোপকরণ প্রদানপূৰ্ব্বক স্বার্থসাধনবিষয়ে যত্নবান হওয়া কৰ্ত্তব্য।” ব্রাহ্মণগণ এই কথা কহিলে, মহাত্মা যুধিষ্ঠির মহাদেবের অর্চ্চনাৰ্থ উপকরণসামগ্ৰীসমুদয় আহরণ করিলেন। তখন বেদপারদর্শী পুরোহিত ধৌম্য যথাবিধি হুতাশনে আহুতি প্রদানপূর্ব্বক চরু প্রস্তুত করিয়া সেই মন্ত্রপূত চরু এবং বিবিধ বিচিত্র পুষ্প, মোদক, পায়স ও মাংসদ্বারা প্রথমতঃ মহেশ্বরের অর্চ্চনা করিলেন। তৎপরে ভূতগণ, যক্ষেন্দ্র কুবের, মণিভদ্র এবং অন্যান্য ভূতপতি ও যক্ষপতিদিগকে কৃশর [খিচুড়ি], মাংস, তিল ও বহুকলসপরিপূর্ণ ওদন [ভাত] প্রদত্ত হইল। পরিশেষে রাজা যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণগণকে সহস্র সহস্র গাভী প্রদান করিয়া নিশাচরদিগকে বলি প্রদান করিতে আদেশ করিলেন। ঐ সময় ভগবান্ ভূতনাথের সেই আবাসস্থান ধূপ ও নানাজাতীয় পুষ্পের গন্ধে পরিপূরিত হইয়া অতি মনোহর শোভা ধারণ করিল।

এইরূপে ভগবান্ রুদ্রদেব ও অন্যান্য গণপতিদিগের পূজা সমাপন হইলে ধৰ্ম্মরাজ গন্ধাদি পূজাপকরণ লইয়া, যে স্থানে স্বীয় অভিলষিত অর্থরাশি নিহিত ছিল, অবিলম্বে তথায় গমন করিলেন। ঐ স্থানে উপস্থিত হইয়া তিনি সর্ব্বাগ্রে বিচিত্র পুষ্প, অপূপ [পিষ্টক] ও কৃশর প্রদানপুরঃসর ধনাধ্যক্ষ কুবের এবং শঙ্খদি নিধি ও নিধিপালদিগের পূজা সমাধানপূর্ব্বক ব্রাহ্মণগণকে অর্চ্চনা করিয়া তাঁহাদিগের দ্বারা স্বস্তিবাচন করাইলেন। তখন দ্বিজাতিগণ পরমপরিতুষ্ট হইয়া তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিতে লাগিলেন।

যুধিষ্ঠিরের সংগৃহীত সুবর্ণ হস্তিনায় আনয়ন অনন্তর ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণগণের অনুজ্ঞা গ্রহণপূৰ্ব্বক হৃষ্টচিত্তে ভৃত্যগণকে সেই প্রদেশ খনন করিতে অনুমতি করিলেন। ভৃত্যগণ তাঁহার আজ্ঞাপ্রাপ্তিমাত্ৰ খনন করিতে আরম্ভ করিল। উহারা কিয়ৎক্ষণমাত্র ঐ প্রদেশ খনন করিলেই উহা হইতে সুবর্ণময় বহুবিধ বৃহৎ ভাণ্ড, ক্ষুদ্র ভাণ্ড, ভৃঙ্গার [গাড়ু], কটাহ [কড়া], কলস, শরাব [সরা] ও অন্যান্য অসংখ্য বিচিত্র পাত্র সমুদ্ধৃত হইল। রাজা যুধিষ্ঠির হস্তিনা হইতে আগমন করিবার সময় ধনরক্ষণোপযোগী সিন্দুক প্রভৃতি বিবিধ পাত্র এবং অর্থবহনের নিমিত্ত ষষ্টি লক্ষ উষ্ট্র, এক শত বিংশতি লক্ষ ঘোটক, এক লক্ষ হস্তী, এক লক্ষ রথ, এক লক্ষ শকট, এক লক্ষ হস্তিনী, অসংখ্য মনুষ্য ও বহুসংখ্যক গর্দ্দভ আনয়ন করিয়াছিলেন। এক্ষণে তিনি সেই সমুদয় পাত্রে সেই সুবৰ্ণরাশি সংস্থাপন করিয়া বাহনগণের উপর সন্নিবেশিত করিতে আদেশ করিলেন। তখন প্রত্যেক উষ্ট্রে অষ্টসহস্র, প্রত্যেক শকটে যোড়শ সহস্র ও প্রত্যেক গজে চতুর্ব্বিংশতি সহস্র সুবর্ণ পরিমিত ভার [উটে ২ মণ ২০ সের, গাড়ীতে ৫ মণ এবং গজে ৭মণ ২০ সের পরিমাণ ভার।] এবং ঘোটক, গর্দ্দভ ও মনুষ্যগণের উপর যথাযোগ্য ভার সন্নিবেশিত হইল। মহাত্মা ধৰ্ম্মনন্দন এইরূপে সেই বিপুল সম্পত্তি গ্রহণপূৰ্ব্বক পুনরায় মহাদেবের অর্চ্চনা করিয়া মহর্ষি বেদব্যাসের আদেশানুসারে পুরোহিতকে অগ্রে লইয়া হস্তিনাভিমুখে প্রস্থান করিলেন। গমনকালে বাহনগণ গুরুভারে আক্রান্ত হওয়াতে তিনি, প্রতি দিন দুই ক্রোশের অধিক পথ অতিক্রম করিতে পারেন নাই।