৬৭. পরীক্ষিতের প্রাণদানে সুভদ্রার কৃষ্ণ-প্রার্থনা

৬৭তম অধ্যায়

পরীক্ষিতের প্রাণদানে সুভদ্রার কৃষ্ণ-প্রার্থনা

বৈশম্পায়ন বলিলেন, অনন্তর বসুদেবনন্দিনী সুভদ্রা একান্ত দুঃখিত হইয়া ভ্রাতার প্রতি দৃষ্টিপাতপূৰ্ব্বক কহিলেন, “মধুসূদন! এই দেখ, আজ অর্জ্জুনের পৌত্রও অন্যান্য কৌরবগণের ন্যায় পরলোক প্রাপ্ত হইয়াছে। পূর্ব্বে আচাৰ্য্যতনয় অশ্বত্থামা ভীমসেনের নিমিত্ত যে ইষীকাস্ত্র উদ্যত করিয়াছিলেন, আজ সেই ইষীকা উত্তরার, অর্জ্জুনের ও আমার উপর নিপতিত হইল। হায়! আজ আমি অভিমন্যুর পুত্রকেও নিহত দেখিলাম। ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেব সকলেই অভিমন্যুকে যারপরনাই স্নেহ করিতেন। এক্ষণে তাঁহারাই সেই অভিমন্যুর মৃতপুত্র ভূমিষ্ঠ হইয়াছে শুনিয়া কি বলিবেন? আর অভিমন্যুর পুত্রকে মৃত নিরীক্ষণ করা তোমারও অল্প কষ্টের বিষয় নহে। হায়! আজ দ্রোণপুত্রের প্রভাবে পাণ্ডবগণকে নিতান্ত অবসন্ন হইতে হইল। হে ভ্রাতঃ! এক্ষণে আমি, দ্রৌপদী ও আৰ্য্যা কুন্তী আমরা সকলে অবনত মস্তকে তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, তুমি একবার আমাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি নিক্ষেপ কর।

পূৰ্ব্বে অশ্বত্থামা ইষীকাস্ত্রদ্বারা পাণ্ডবকুলকামিনীগণের গর্ভস্থ সন্তানদিগকে বিনষ্ট করিতে উদ্যত হইলে, তুমি রোষাবিষ্ট হইয়া তাঁহাকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক বলিয়াছিলে যে, হে নরাধম ব্রাহ্মণাপসদ[ব্রাহ্মণাধম]! তোমার অভিলাষ কখনই পূর্ণ হইবে না। আমি উত্তরার গর্ভস্থ অভিমন্যুর পুত্রকে নিশ্চয়ই সঞ্জীবিত করিব। হে মাধব! আমি তোমার পরাক্রম বিলক্ষণ অবগত আছি। এক্ষণে তোমার নিকট বিনীতভাবে প্রার্থনা করিতেছি, তুমি পূৰ্ব্বপ্রতিজ্ঞা স্মরণ করিয়া অভিমন্যুতনয়কে জীবিত কর। যদি তুমি আজ সেই পূৰ্ব্বকৃত প্রতিজ্ঞা প্রতিপালনে পরাঙ্মুখ হও, তাহা হইলে আমি নিশ্চয় প্রাণত্যাগ করিব। যদি তুমি জীবিত থাকিতে উত্তরার তনয় পুনরুজ্জীবিত না হয়, তাহা হইলে তোমা হইতে আমার আর কি উপকার হইবে? অতএব জলধর যেরূপ বারিবর্ষণ করিয়া শস্যের জীবনদান করে, তদ্রূপ তুমি আজ কৃপা বিতরণপূৰ্ব্বক অভিমন্যুর মৃতপুত্রকে জীবন প্রদান কর। তুমি ধৰ্ম্মাত্মা, সত্যবাদী ও সত্যপরাক্রম, অতএব সত্য প্রতিপালন করা তোমার সৰ্ব্বতোভাবে কৰ্ত্তব্য। তুমি মনে করিলে ত্রিলোকের জীবন প্রদান করিতে পার; অতএব মৃত ভাগিনেয়পুত্রের জীবন প্রদান করিবে, তাহার আর বিচিত্র কি? আমি তোমার মাহাত্ম উত্তমরূপে অবগত আছি, এই নিমিত্ত তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি যে, তুমি পাণ্ডবদিগের প্রতি অনুগ্রহ কর ও এই পুত্রহীনা ভগিনীর প্রতি দয়া। প্রকাশপূৰ্ব্বক আমাদের কুলরক্ষা কর।”