৭০. পরীক্ষিতের জন্মোৎসব—নামকরণ

৭০তম অধ্যায়

পরীক্ষিতের জন্মোৎসব—নামকরণ

বৈশম্পায়ন বলিলেন, এইরূপে ভগবান্ কৃষ্ণ ব্রহ্মাস্ত্রের প্রতিসংহারপূর্ব্বক অভিমন্যুতনয়ের জীবনদান করিলে, ব্রহ্মাস্ত্র প্রজ্বলিত হইয়া ব্রহ্মার নিকট গমন করিল এবং সেই বালকের তেজঃপ্রভাবে সূতিকাগৃহ প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল। তখন তত্রত্য রাক্ষসগণ অচিরাৎ সেই গৃহ পরিত্যাগপূৰ্ব্বক পলায়ন করিল1 এবং অন্তরীক্ষ হইতে বাসুদেবের প্রতি বারংবার সাধুবাদ হইতে লাগিল। ঐ সময়ে উত্তরাগৰ্ভসম্ভূত বালককে হস্তপদসঞ্চালনাদি কাৰ্য্য করিতে দেখিয়া কুরুকামিনীগণের আহ্লাদের আর পরিসীমা রহিল না। তখন তাঁহারা বাসুদেবের আদেশানুসারে ব্রাহ্মণগণদ্বারা স্বস্তি বাচন করাইলেন। জলনিমগ্ন ব্যক্তি নৌকাপ্রাপ্ত হইয়া যেরূপ আহ্লাদিত হয়, তদ্রূপ কুন্তী, দ্রৌপদী, সুভদ্রা, উত্তরা এবং কৌরবপত্নীগণ মহা আনন্দিত হইয়া বারংবার কেশবের প্রশংসা করিতে লাগিলেন। মল্ল, নট, দৈবজ্ঞ এবং সূত ও মাগধ প্রভৃতি স্তুতিপাঠকগণ কুরুবংশসমুচিত স্তুতিবাদদ্বারা জনার্দ্দনকে স্তব করিতে আরম্ভ করিল।

অনন্তর উত্তরা যথাকালে উত্থিত হইয়া পুত্রের সহিত মহা আহ্লাদে বাসুদেরকে অভিবাদন করিলেন। তখন মহাত্মা কৃষ্ণ ও অন্যান্য বৃষ্ণিবংশীয়গণ প্রফুল্লচিত্তে সেই সুকুমার নবকুমারকে বিবিধ মহামূল্যরত্ন প্রদানপূৰ্ব্বক কহিলেন, “যখন কুল পরীক্ষীণ [যুদ্ধে মরিয়া মরিয়া বংশক্ষয়] হইবার সময় এই পুত্র জন্মগ্রহণ করিয়াছে, তখন ইহার নাম পরীক্ষিৎ হউক।” অনন্তর সেই বালক শুক্লপক্ষীয় শশধরের ন্যায় দিন দিন পরিবর্দ্ধিত হইতে লাগিল। তদ্দর্শনে হস্তিনানগরস্থ সমুদয় লোকের মন আহ্লাদে পরিপূর্ণ হইল।

সুবর্ণাদি ধনসহ পাণ্ডবগণের পুরপ্রবেশ

হে মহারাজ! এইরূপে আপনার পিতা জন্মগ্রহণ করিলে তাহার, একমাস পরে পাণ্ডবগণ সেই অর্থরাশি সমভিব্যাহারে হিমালয় হইতে প্রত্যাগমন করিলেন। তখন বৃষ্ণিবংশীয় মহাত্মারা পাণ্ডবগণ নগরের নিকটবর্ত্তী হইয়াছেন শ্রবণ করিয়া তাঁহাদিগের প্রত্যুদগমনার্থ নগর হইতে বহির্গত হইলেন। বিবিধ মাল্য, বিচিত্র পতাকা ও নানাপ্রকার ধ্বজদ্বারা হস্তিনানগর সমলঙ্কৃত হইল এবং ধনাঢ্য পুরবাসীরা স্ব স্ব গৃহসমুদয় বিবিধ গৃহসজ্জায় সুসজ্জিত করিলেন। ঐ সময় মহাত্মা বিদুর পাণ্ডবদিগের হিতসাধনার্থ দেবালয়ে পূজা প্রদান করিতে আদেশ করিলেন। রাজমার্গ সমুদয় বিবিধ বিচিত্র পুষ্পদ্বারা সমলঙ্কৃত হইল। নগরের চতুর্দ্দিকে সমুদ্রনির্ঘোষের ন্যায় ঘোরতর কোলাহল হইতে লাগিল। বন্দিগণ স্ত্রীদিগের সহিত মিলিত হইয়া স্তবপাঠ করিতে আরম্ভ করিল। চতুর্দ্দিকে গায়কগণ সঙ্গীত ও নৰ্ত্তকগণ নৃত্য করাতে ঐ নগর অলকাপুরীর ন্যায় শোভমান হইল এবং ইতস্ততঃ পতাকাসমুদয় পবনবেগে পরিচালিত হইয়া যেন কৌরবগণকে দিগদর্শন করাইতে লাগিল। ঐ সময় রাজপুরুষগণ রাজ্যমধ্যে এই ঘোষণা করিয়া দিলেন যে, আজ সমুদয় রাজ্য রত্নাভরণে বিভূষিত হইবে।