৭৫. প্ৰাগজ্যোতিষপুরাধীশ বজ্রদত্তসহ যুদ্ধ

৭৫তম অধ্যায়

প্ৰাগজ্যোতিষপুরাধীশ বজ্রদত্তসহ যুদ্ধ

বৈশম্পায়ন বলিলেন, অনম্ভর সেই যজ্ঞীয় অশ্ব প্ৰাগজ্যোতিষদেশে সমুপস্থিত হইয়া ইতস্ততঃ বিচরণ করিতে লাগিলেন। তখন ভগদত্তপুত্র মহাবীর বজ্রদত্ত সেই অশ্বকে স্বীয় অধিকারমধ্যে বিচরণ করিতে দেখিয়া, নগর হইতে বহির্গত হইয়া উহাকে গ্রহণপূৰ্ব্বক নগরাভিমুখে গমন করিতে লাগিলেন। মহাবীর অর্জ্জুন সেই ব্যাপার দর্শনে অচিরাৎ গাণ্ডীব আস্ফালনপূর্ব্বক শরনিকর বর্ষণ করিয়া তাঁহাকে বিমোহিত করিলেন। তখন মহারাজ বজ্রদত্ত সেই যজ্ঞীয় অশ্ব পরিত্যাগ করিয়া পদব্রজে অর্জ্জুনের প্রতি ধাবমান হইলেন, কিন্তু ঐরূপে ধনঞ্জয়ের সহিত যুদ্ধ করিতে তাঁহার সাহস হইল না। তখন তিনি পুনৰ্ব্বার নগরমধ্যে প্রবেশপূৰ্ব্বক বৰ্ম্মধারণ ও এক মত্তমাতঙ্গপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া যুদ্ধার্থ বহির্গত হইলেন। তাঁহার অনুচরগণ তাঁহার মস্তকে শ্বেতচ্ছত্র ধারণ ও তাঁহার চতুর্দ্দিকে শ্বেত-চামর বীজন করিতে করিতে তাঁহার সমভিব্যাহারে আগমন করিতে লাগিল।

মহাবীর বজ্রদত্ত এইরূঙ্গে মহারথ অর্জ্জুনের নিকট সমুপস্থিত হইয়া অজ্ঞানবশতঃ তাঁহাকে যুদ্ধার্থ আহ্বানপূৰ্ব্বক ক্রোধাবিষ্টচিত্তে সেই পৰ্ব্বতাকার যুদ্ধদুৰ্ম্মদ মত্তমাতঙ্গকে তাঁহার অভিমুখে সঞ্চালিত করিলেন। গজরাজ বজ্রদত্তের অঙ্কুশাঘাতে নিপীড়িত হইয়া দ্রুতবেগে অৰ্জ্জুনের সমীপে ধাবমান হইল। মহাবীর ধনঞ্জয় সেই নাগেন্দ্রকে আগমন করিতে দেখিয়া কোপাবিষ্টচিত্তে ভূতলে। অবস্থানপূর্ব্বক বজ্রদত্তের সহিত ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। তখন মহারাজ বজ্রদত্ত নিতান্ত ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহার প্রতি অনলতুল্য অসংখ্য তোমর [স্থূলাকার শর] পরিত্যাগ করিলেন। ঐ তোমরসমুদয় শলভ [পতঙ্গ-ফড়িং] সমূহের ন্যায় মহাবেগে অর্জ্জুনাভিমুখে ধাবমান হইল। তখন মহাবীর ধনঞ্জয় গাণ্ডীবনির্ম্মুক্ত শরনিকরদ্বারা অর্ধপথেই সেই সমুদয় অস্ত্র খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলিলেন। তোমর সমুদয় ছিন্ন হইলে মহাবীর বজ্রদত্ত অর্জ্জুনের প্রতি অনবরত শরজাল বর্ষণ করিতে লাগিলেন। তখন মহাবীর ধনঞ্জয় নিতান্ত কোপাবিষ্ট হইয়া তাঁহাকে লক্ষ্য করিয়া অসংখ্য সুবর্ণপুঙ্খ শর পরিত্যাগ করিলেন।

মহাতেজাঃ বজ্রদত্ত সেই শরনিকরে বিদ্ধ, ও নিতান্ত কাতর হইয়া তৎক্ষণাৎ হস্তিপৃষ্ঠ হইতে ভূমিতলে নিপতিত হইলেন; কিন্তু ঐ সময় তাঁহার চৈতন্য বিলুপ্ত হইল না। তখন তিনি পুনরায় সেই মত্তমাতঙ্গে আরূঢ় হইয়া বিজয়লাভের বাসনায় তাঁহাকে অর্জ্জুনাভিমুখে সঞ্চালন করিতে লাগিলেন। অর্জ্জুন মাতঙ্গের প্রতি আশীবিষসদৃশ ভীষণ শরনিকর পরিত্যাগ করিলেন। গজবর সেই সব্যসাচীনিক্ষিপ্ত শরজালে বিদ্ধ হইয়া শোণিতক্ষরণপূৰ্ব্বক গৈরিকধাতুধারাবর্ষী ভূধরের ন্যায় শোভা ধারণ করিল।