৫৯. শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকাপুরী প্রবেশ

৫৯ম অধ্যায়

শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকাপুরী প্রবেশ

জনমেজয় কহিলেন, ভগবন্! মহাত্মা বাসুদেব উতঙ্ককে বর প্রদান করিবার পর কি কহিয়াছিলেন, অতঃপর তাহা কীৰ্ত্তন করুন।

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ভগবান্ বাসুদেব মহর্ষি উতঙ্ককে বর প্রদান করিয়া সাত্যকির সহিত বায়ুবেগগামী তুরঙ্গমযুক্ত রথে আরোহণ করিয়া ক্রমে ক্রমে নদ, নদী, বন ও পর্ব্বতসমুদয় অতিক্রমপূৰ্ব্বক দ্বারকানগরীর উপকণ্ঠে সমুপস্থিত হইলেন। ঐ সময় রৈবতকপৰ্ব্বতে মহোৎসব আরম্ভ হইয়াছিল। বাসুদেব সাত্যকির সহিত ঐ পৰ্ব্বতে সমুপস্থিত হইয়া দেখিলেন, উহা বিবিধ বিচিত্র রত্নময় কোষ, অতিমনোহর বহুমূল্য রত্নমাল্য, উৎকৃষ্ট বস্ত্র ও কল্পবৃক্ষসমূহে বিভূষিত হইয়া পরমরমণীয় শোভা ধারণ করিয়াছে। গুহা ও নির্ঝরপ্রদেশসমুদয়ে অসংখ্য দীপবৃক্ষ [আলোকস্তম্ভ—প্রদীপযুক্ত স্তম্ভ] নিহিত থাকাতে দিবসের ন্যায় শোভা হইয়াছে। চতুর্দ্দিকে সুবর্ণময় ঘণ্টাযুক্ত বিচিত্র পতাকাসমুদয় উড্ডীন হইয়াছে। স্ত্রীপুরুষগণ আহ্লাদে উন্মত্ত হইয়া উচ্চৈঃস্বরে সঙ্গীত করিতেছে। ক্রীড়ানিরত, মদমত্ত ও আহ্লাদিতচিত্ত ব্যক্তিদিগের বাহ্বাস্ফোট, পরস্পর আকর্ষণ এবং কিলকিলা শব্দে চারিদিক প্রতিধ্বনিত হইতেছে। অতি উৎকৃষ্ট পবিত্র গৃহ, বিপণি [বাজার], আপণ [দোকান], আহারবিহারসামগ্রী, বস্ত্র, মাল্য, বীণা, বেণু, মৃদঙ্গ এবং সুরা ও মৌরেয় [পানীয়—সরবৎ] মিশ্রিত ভক্ষদ্রব্য সর্ব্বত্ৰ পৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে রহিয়াছে এবং পুণ্যাত্মা ব্যক্তিগণ প্রতিনিয়ত দীন, অন্ধ ও দরিদ্রদিগকে অভিলষিত বস্ত্র প্রদান করিতেছেন। ঐ সময় বৃষ্ণিবংশীয় মহাত্মারা সকলেই ঐ পৰ্ব্বতে বিহার করিতেছিলেন। ভগবান্ বাসুদেব ঐ পৰ্ব্বতে উপস্থিত হওয়াতে উহা ইন্দ্রালয়সদৃশ হইয়া উঠিল।

মহাত্মা বাসুদেব কিয়ৎক্ষণ সেই পৰ্ব্বতের শোভা নিরীক্ষণ করিয়া মহাদে সাত্যকির সহিত স্বীয় ভবনাভিমুখে যাত্রা করিলেন। তখন দেবগণ যেরূপ ইন্দ্রের অনুগমন করিয়াছিলেন, তদ্রূপ ভোজ, বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয়গণ তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে মহাত্মা মধুসূদন স্বীয় ভবনে প্রবেশপূৰ্ব্বক তাঁহাদিগের সকলকে অভ্যর্থনা ও কুশলবার্ত্তা জিজ্ঞাসা করিয়া বিষন্নবদনে পিতামাতার চরণবন্দনা করিলেন। তাঁহারাও উঁহাকে আলিঙ্গনপূর্ব্বক মিষ্টবাক্যে তাঁহার সন্তোষসাধন করিতে লাগিলেন। অনন্তর তিনি পাদপ্রক্ষালনপূৰ্ব্বক আসনে উপবিষ্ট হইলে, বৃষ্ণিবংশীয় মহাত্মারা তাঁহার চতুর্দ্দিকে উপবেশন করিলেন।