১৩৯. কৈলাসপর্ব্বতে পাণ্ডবগণের যাত্ৰা

১৩৯তম অধ্যায়

কৈলাসপর্ব্বতে পাণ্ডবগণের যাত্ৰা

লোমশ কহিলেন, “হে রাজন! উশীরবীজ, মৈনাক, শ্বেত ও কালশৈল পর্ব্বত অতিক্ৰম করিয়াছি। এই গঙ্গা সপ্তধা বিভক্ত হইয়া শোভা পাইতেছেন। এ স্থান অতিপবিত্ৰ; ইহাতে হুতাশন প্রতিনিয়তই প্রজ্বলিত হইতেছে। অদ্যপি কোন মনুষ্য এই অদ্ভুত স্থান নিরীক্ষণ করিতে সমর্থ হয় নাই; অতএব ধীরতাসহকারে সমাধিবিধানে ব্যাপৃত হউন, তাহা হইলেই অতিক্রান্ত তীৰ্থসকল দর্শন করিতে পরিবেন। এই কালশৈলনামে দেবগণের চরণাঙ্কিত ক্রীড়াপর্ব্বত অতিক্রম করিয়াছেন; এক্ষণে আমরা শ্বেত ও মন্দরগিরিতে প্রবেশ করিব। মাণিবরনামে যক্ষ ও যক্ষরাজ কুবের তথায় বাস করেন। অষ্টশীতিসহস্র দ্রুতগামী গন্ধর্ব্ব, কিম্পুপুরুষ এবং ইহার চতুর্গুণ যক্ষেরা নানাবিধ আয়ুধ গ্রহণপূর্ব্বক এই পর্ব্বতে যক্ষরাজ মণিভদ্রের উপাসনা করিয়া থাকেন। তাহারা এরূপ সমৃদ্ধিসম্পন্ন ও তেজস্বী যে, দেবরাজ ইন্দ্ৰকেও পদচ্যুত করিতে পারেন। পর্ব্বত-সকল একে দুৰ্গম, তাহাতে আবার বলবান পুরুষ ও রাক্ষসগণকর্ত্তৃক রক্ষিত, অতএব সম্যকরূপে সমাধি সাধন করুন। আমরা শৌৰ্য্যপ্রভাবে যক্ষরাজের মন্ত্রি এবং রৌদ্র ও মৈত্র রাক্ষসগণের সমীপে গমন করিব।

“হে রাজন! এই ষড়যোজন উন্নত কৈলাস পর্ব্বত; এ স্থানে অনেকানেক অমরকুল এবং অসংখ্য যক্ষ, রাক্ষস, কিন্নর, ভূজঙ্গ, বিহগ ও গন্ধর্ব্বগণ আগমন করিয়া থাকেন। হে কৌন্তেয়! অদ্য আমার তপস্যা, দমগুণ এবং ভীমসেনের বলে সুরক্ষিত হইয়া সেই সকল দেবাদির সমীপে গমন করুন। আজি বরুণ, যম, গঙ্গা, যমুনা, পর্ব্বত, মরুৎ, অশ্বিনীকুমার, সরিৎ, সরোবর, দেব, অসুর ও বসুগণ অবশ্যই আপনার কল্যাণ করিবেন।

“হে দেবি গঙ্গে! ইন্দ্রের জাম্বুনদ পর্ব্বত হইতে তোমার কুলুকুলু-ধ্বনি শ্রবণগোচর হইতেছে; হে সুভগে! তুমি আজমীঢ়বংশাবতংস রাজেন্দ্রকে সকল পর্ব্বত হইতে রক্ষা কর। হে শৈলদুহিতে! ইনি শৈলসঙ্কটে প্রবেশ করিতে অভিলাষী হইয়াছেন, অতএব ইঁহার সর্ব্বতোভাবে শ্রেয়োবিধান কর।” মহামুনি লোমশ গঙ্গাকে এইরূপ কহিয়া যুধিষ্ঠিরকে কৃতযত্ন হইতে আদেশ করিলেন।

যুধিষ্ঠির কহিলেন, “মহর্ষি লোমশ যেরূপ অপূর্ব্ব স্বীয় সম্ভ্রম প্রকাশ করিতেছেন, ইহাতে বোধ হয়, এই প্রদেশ অতীব দুৰ্গম, অতএব সকলে কৃষ্ণাকে সাবধানে রক্ষা কর এবং শৌচাচারপরায়ণ হও।”

অনন্তর রাজা যুধিষ্ঠির ভীমপরাক্রম ভীমসেনকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “হে ভীমসেন! অর্জ্জুন সন্নিহিত থাকিলেও দ্রৌপদী ভীত হইয়া তোমারই শরণাপন্ন হইয়া থাকেন; অতএব তুমি তাহাকে যত্নপূর্ব্বক রক্ষা কর।” পরে মহাত্মা কৌন্তেয় নকুল ও সহদেবের নিকট গমন করিয়া তাঁহাদিগের গাত্রে হস্তপ্রদানপূর্ব্বক গদ্‌গদম্বরে কহিলেন, “নকুল! সহদেব! তোমরা ভীত হইও না, সাবধানে আগমন কর।”