১০৫. অগস্ত্যকর্ত্তৃক সমুদ্ৰশোষণ

১০৫তম অধ্যায়

অগস্ত্যকর্ত্তৃক সমুদ্ৰশোষণ

“ভগবান অগস্ত্য তখন সমাগত দেবগণ ও ঋষিগণকে কহিলেন, ‘আমি লোকহিতার্থ সাগরবারি পান করি, তোমরা সত্বর আপনাদিগের কর্ত্তব্য কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান কর।’ মহর্ষি এই কথা বলিয়া ক্ৰোধাভরে সর্ব্বসমক্ষে পয়োনিধির সমস্ত সলিল নিঃশেষিত করিলেন। তদর্শনে ইন্দ্ৰপ্ৰমুখ অমরগণ যুগপৎ হৰ্ষবিস্ময়ে সাতিশয় অভিভূত হইয়া অগস্ত্যের স্তব করিতে লাগিলেন, “হে লোকহিতৈষিন! আপনি আমাদিগের ত্ৰাতা, বিধাতা ও সকল লোকের কর্ত্তা, আপনার প্রসাদে অদ্য দেবলোক ও নরলোক এই আসন্ন বিনাশ হইতে রক্ষা পাইল।”

“তখন দেবগণ মহার্ণব নিঃসলিল নিরীক্ষণ করিয়া পরম প্ৰহৃষ্ট হইলেন; গন্ধর্ব্বরা তুৰ্য্যধ্বনি আরম্ভ করিল এবং অন্তরীক্ষ হইতে অগস্ত্যমস্তকে পুষ্পবৃষ্টি নিপতিত হইতে লাগিল। অনন্তর তাঁহারা দিব্য-অস্ত্র গ্রহণপূর্ব্বক দুর্বৃত্ত দানবদলের সহিত সমরসাগরে অবতীর্ণ হইলেন। দানবেরা মহাবলপরাক্রান্ত দেবগণের শাস্ত্ৰপ্ৰহারে জর্জ্জরিত কলেবর ও নিতান্ত অসহমান হইয়াও মুহূর্ত্তকাল গভীরগর্জ্জনপূর্ব্বক ঘোরতর সংগ্রাম করিয়াছিল; কিন্তু তাহারা তেজঃপুঞ্জ ঋষিগণের তপঃপ্রভাবে পূর্ব্বেই দগ্ধ হইয়াছিল, সুতরাং অধুনা বহুবিধ যত্ন করিয়াও আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হইল না। সেই সকল দেবনিহত, নিষ্কাভরণ-বিভূষিত, কুণ্ডলাঙ্গদধারী দানবেরা কুসুমিত কিংশুকের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিল। অনন্তর হতাবিশিষ্ট কালকেয়গণ বসুধা বিদীর্ণ করিয়া পাতালতলে প্রবিষ্ট হইল।

সমুদ্রের জলাভাবে দেবগণের বিষাদ

“দেবতারা দানবদিগকে নিহত নিরীক্ষণ করিয়া সকৃতজ্ঞচিত্তে পুনরায় অগস্ত্যের স্তব করিতে লাগিলেন, “হে মহাবাহো! আপনার প্রসাদে লোকে সাতিশয় সুখলাভ করিল এবং আপনার প্রভাবেই ক্রুরবিক্রম দানবকুল নির্ম্মল হইল। এক্ষণে অনুগ্রহ করিয়া পীত সলিল-সকল সমুদ্রে প্রত্যপণপূর্ব্বক পয়োনিধিকে পরিপূর্ণ করুন।” ঋষি কহিলেন, “হে ত্ৰিদশগণ! আমি যে সাগরসলিল পান করিয়াছিলাম, সে সকল জীর্ণ হইয়াছে; অতএব সমুদ্রের পূরণার্থ আপনারা প্ৰযত্নাতিশয়সহকারে উপায়ান্তর চিন্তা করুন।” দেবতারা মহৰ্ষির বাক্য শ্রবণ করিয়া যুগপৎ বিস্ময় ও বিষাদসাগরে নিমগ্ন হইলেন। সমাগত জনগণ পরস্পর বিদায় গ্রহণপূর্ব্বক মহৰ্ষিকে প্ৰণাম করিয়া স্ব স্ব অভীষ্ট প্রদেশে প্রস্থান করিল। দেবতারা বিষ্ণুর সহিত ব্ৰহ্মলোকে উপনীত হইয়া সমুদ্রের পরিপূরণার্থ পুনঃ পুনঃ মন্ত্রণাপূর্ব্বক কৃতাঞ্জলিপুটে ভগবান কমলযোনিকে নিবেদন করিলেন।”