১৩৬. পরদার-পরিগ্রহে যবক্রীতের জীবননাশ

১৩৬তম অধ্যায়

পরদার-পরিগ্রহে যবক্রীতের জীবননাশ

লোমশ কহিলেন, “হে রাজন! অনন্তর নির্ভীক যবক্ৰীত যদৃচ্ছাক্রমে পৰ্যটনপূর্ব্বক একদা বৈশাখমাসে মহর্ষি রৈভ্যের পরমরমণীয় আশ্রম-পদে উপনীত হইযা দেখিলেন, কিন্নরীর ন্যায় রূপবতী তদীয় পুত্ৰবধু কুসুমিত-তরুশোভিত আশ্রমপদবীতে বিচরণ করিতেছে। তদর্শনে কামমোহিত যবক্রীত নির্লজ্জ হইয়া সেই লজ্জানম্রমুখী কামিনীকে কহিলেন, ‘ভদ্রে! আমাকে ভজনা কর।’ পরাবসুভাৰ্য্যা আগন্তুকের স্বভাব বুঝিতে পারিয়া শাপভয়ে ভীত ও রৈভ্যের তেজস্বিতা স্মরণে ত্ৰস্ত হইয়া ‘যে আজ্ঞা’ বলিয়া প্রস্থান করিলেন। ইত্যবসরে যবক্রীত তাঁহাকে নিভৃত-প্রদেশে আনয়নপূর্ব্বক স্বীয় নিকৃষ্ট-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করিলেন। অনন্তর মহর্ষি রৈভ্য নিজ আশ্রমে প্রত্যাগমনপূর্ব্বক পুত্রবধূকে অশ্রুমুখী নিরীক্ষণ করিয়া মধুরবাক্যে সান্ত্বনা করিয়া রোদন—কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি সম্যক পৰ্য্যালোচনা করিয়া বুদ্ধিপূর্ব্বক যবক্ৰীতের উক্তি ও তৎকর্ত্তৃক স্বীয় সতীত্ব-ভঙ্গাবৃত্তান্ত নিবেদন করিলেন। যবক্ৰীতের দুষ্ট-চেষ্টিত শ্রবণ করিবামাত্ৰ রৈভ্যু-ঋষির ক্রোধানল একেবারে প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল।

“অনন্তর তিনি একটি জটা সমুৎপাটনপূর্ব্বক প্ৰদীপ্ত হুতাশনে আহুতি-প্ৰদান করিবামাত্র অবিকল তাঁহার পুত্রবধূর ন্যায় এক রমণী প্রাদুর্ভুত হইল। পরে অপর একটি জটা আহুতি প্রদান করিলে ভীমদৰ্শন উগ্ৰনয়ন এক রাক্ষস সমুদ্ভূত হইল। তাহারা ঋষিকে জিজ্ঞাসা করিল, “হে প্ৰভো! কি আজ্ঞা হয়?” রৈভ্য কহিলেন, “শীঘ্ৰ যবক্রীতের প্রাণসংহার কর।” তাহারা “যে আজ্ঞা” বলিয়া যবক্রীতের জীবন বিনাশার্থ গমন করিল। পরে তথায় উপস্থিত হইয়া যবক্ৰীতকে বিমোহিত করিয়া তাহার কমণ্ডলু অপহরণ করিয়া লইল ।

“অনন্তর রাক্ষস শূল উদ্যত করিয়া যবক্রীতের প্রতি ধাবমান হইলে তিনি সেই শূলধারী রাক্ষসকে বেগে আগমন করিতে অবলোকন করিয়া সহসা এক সরোবরের অভিমুখে ধাবমান হইলেন; কিন্তু সেই সরোবর জলশূন্য ছিল, তদর্শনে তিনি পুনর্ব্বার দ্রুতপদসঞ্চারে নদীতে গমন করিতে লাগিলেন। ফলতঃ তৎকালে সকল নদীই শুষ্ক হইয়াছিল। তিনি তখন ঘোররূপী শূলধারী রাক্ষসকর্ত্তৃক আক্রান্ত ও নিতান্ত ভীত হইয়া পিতার অগ্নিশরণে [যন্ত্ৰীয় অগ্নিগৃহ] গমন করিলেন; কিন্তু তাহার রক্ষক এক অন্ধ শূদ্ৰ তাহাকে তথায় প্রবেশ করিতে নিষেধ করিল। তিনি তখন নিরুপায় হইয়া দ্বারদেশে দণ্ডায়মান রহিলেন। এই সুযোগে রাক্ষস শূলপ্ৰহারে তাহার হৃদয় বিদীর্ণ করিলে, তিনি তৎক্ষণাৎ ভূতলে নিপতিত ও গতজীবিত হইলেন। এইরূপে মহাবল রাক্ষস যবক্ৰীতকে বিনাশ করিয়া রৈভ্যের নিকট আগমনপূর্ব্বক তদীয় আদেশানুসারে সেই রমণীর সহিত বাস করিতে লাগিল।”