১২১. তীৰ্থ কথাপ্রসঙ্গে গয় রাজের পুণ্যাখ্যান

১২১তম অধ্যায়

তীৰ্থ কথাপ্রসঙ্গে গয় রাজের পুণ্যাখ্যান

লোমশ কহিলেন, “মহারাজ! এইরূপ জনশ্রুতি আছে যে, রাজা নৃগ এই স্থানে যজ্ঞানুষ্ঠানদ্বারা দেবরাজকে পরিতৃপ্ত করিলে, তিনি তাঁহার প্রতি সমধিক প্রীত হইয়াছিলেন। প্রজাপতি ও ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতারা এই স্থানে বহুবিধ ভূরিদক্ষিণ সুমহৎ যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়াছিলেন। রাজা অমূর্ত্তরয়ের পুত্ৰ গয় এই স্থানে সাতটি অশ্বমেধযজ্ঞ করিয়া সোমরসদ্বারা ইন্দ্রকে তৃপ্ত করেন; সেই সপ্তযজ্ঞে হিরন্ময় বানাস্পত্য ও ভৌম প্রভৃতি মহার্হ দ্রব্যসকল হিরন্ময় ছিল। সেই সকল যজ্ঞে চাষাল, যূপ, চামস, স্থলী, পাত্রী, স্রুক ও স্রব এই সাতটি দ্রব্য পরমোৎকৃষ্ট ও সুবিখ্যাত হইয়াছিল। তাঁহার যজ্ঞের যূপ-সকল হিরন্ময়; তাহাদের প্রত্যেকের মস্তকে এক একটি চাষাল ছিল, ইন্দ্রপ্রমুখ দেবতারা স্বয়ং সেই সকল যূপ উত্থাপিত করেন। ঐ যজ্ঞে দেবরাজ সোমরসপানে প্ৰমত্ত এবং ব্রাহ্মণেরা দক্ষিণাস্বরূপ অসংখ্য অর্থলাভ করিয়া প্রফুল্লচিত্ত হইয়াছিলেন।

“হে মহারাজ! যেমন লোকে পৃথিবীস্থ বালুকার সংখ্যা করিতে পারে না, যেমন নভোমণ্ডলস্থিত তারকার গণনা হয় না। ও যেমন নিপতিত বৃষ্টিধারার পরিমাণ করিতে লোকে অসমর্থ হয়, তদ্রূপ গয়নৃপতি সেই সকল যজ্ঞে সদস্যদিগকে যে অপরিমিত ধনদান করিয়াছিলেন, তাহার সংখ্যা করা নিতান্ত সুকঠিন। যদ্যপি পূর্বোক্ত বালুকাদিরও সংখ্যা হইতে পারে, তথাপি গয় প্রদত্ত দক্ষিণার সংখ্যা করা কোনক্রমেই সম্ভবপর নহে। তিনি দিগদিগন্ত হইতে সমাগত ব্ৰাহ্মণদিগকে বিশ্বকর্ম্মবিনির্ম্মিত হিরন্ময়ী গো-সমূহ প্ৰদানপূর্ব্বক পরম পরিতুষ্ট করিয়াছিলেন। মহাত্মা গয়রাজ বিভিন্ন স্থানে এত অধিক যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়াছিলেন যে, প্রায় সমস্ত পৃথিবীই তাঁহার চৈত্যে আচিত হইয়াছিল, তিনি যজ্ঞানুষ্ঠানজনিত পুণ্যবলে ইন্দ্ৰলোকে গমন করিয়াছেন। যে ব্যক্তি পয়োষ্ণী-সলিলে স্নান করে, সে তাহাঁর সালোক্যপ্রাপ্ত হয়। অতএব, হে রাজন! আপনি ভ্ৰাতৃগণের সহিত এই পয়োষ্ণীসলিলে অবগাহন করিয়া নিম্পাপ হইবেন।”

পাণ্ডবগণের নর্ম্মদাদর্শন—স্নান

রাজা যুধিষ্ঠির ভ্রাতৃগণের সহিত পয়োষ্ণীতে স্নান করিয়া বৈদূৰ্য্য-পর্ব্বত, নর্ম্মদা ও মহানদীতে গমন করিলেন। পরে প্রীতিপূর্ব্বক রমণীয় তীর্থ ও পুণ্যাশ্রমসকল সন্দর্শন করিবার নিমিত্ত ভ্ৰাতৃগণ সমভিব্যাহারে যাত্ৰা করিলেন এবং তত্তৎপ্রদেশে ব্ৰাহ্মণগণকে সহস্ৰ সহস্র ধনদান করিতে লাগিলেন।

ভগবান লোমশ কহিলেন, “হে কৌন্তেয়! বৈদূৰ্য্য-পর্ব্বত দর্শন ও নর্ম্মদায় অবগাহন করিলে দেবলোক ও রাজলোকপ্ৰাপ্ত হয়। এই ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের সন্ধিস্থান; এস্থানে আগমন করিলে পাপরাশি হইতে বিনিমুক্ত হয়। হে রাজন! রাজা শৰ্য্যাতির এই যজ্ঞস্থান শোভা পাইতেছে; যে স্থানে সাক্ষাৎ ইন্দ্র অশ্বিনীকুমারের সহিত সোমরস পান করিয়াছিলেন, যে স্থানে মহাতপাঃ চ্যবন ইন্দ্রের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে সংস্তম্ভিত এবং রাজপুত্রী সুকন্যাকে ভাৰ্য্যালাভ করিয়াছিলেন।” যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে ব্ৰহ্মন! মহাতপঃ ভৃগুনন্দন কি নিমিত্ত ক্রুদ্ধ হইয়া ভগবান পাকশাসনকে সংস্তম্ভিত ও কি নিমিত্তই বা অশ্বিনীকুমারকে সোমপীথী করিলেন, আপনি তৎসমুদয় অবিকল কীর্ত্তন করুন।”