১৩০. সরস্বতী প্রভৃতি তীৰ্থ নদীসমূহের বিবরণ

১৩০তম অধ্যায়

সরস্বতী প্রভৃতি তীৰ্থ নদীসমূহের বিবরণ

লোমশ কহিলেন, হে রাজন! এই তীর্থে তনুত্যাগ করিলে স্বৰ্গলোক প্রাপ্ত হয়; এই নিমিত্ত সহস্ৰ সহস্র মানব মৰ্ত্তকাম [মরণাভিলাষী] হইয়া এই স্থানে আগমন করে। পূর্ব্বে দক্ষ আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন, যেসকল মনুষ্য এই স্থানে প্ৰাণত্যাগ করিবে, তাহারা স্বৰ্গলোকপ্ৰাপ্ত হইবে।

“হে মহারাজ! এই প্রবাহবন্তী সরস্বতী দৃষ্ট হইতেছে, ইহার অনতিদূরে নিষাদরাজ্যের দ্বারস্বরূপ বিনশন প্রদেশ। সরস্বতী নদী নিষাদগণের দোষে সাতিশয় বিরক্ত হইয়া এই স্থানে মহীতলে প্রবেশ করিয়াছিলেন। যে স্থানে সরস্বতী দৃষ্টিগোচর হইতেছে, ঐ স্থান চমসোড়োদনামে বিখ্যাত। সমুদয় পবিত্র কল্লোলিনী ঐ স্থানে আগমন করিয়া সরস্বতীর সহিত সম্মিলিত হইয়াছে।

“যে স্থানে লোপামুদ্রা অগস্ত্যকে পতিত্বে বরণ করিয়াছিলেন, এই সেই মহান সিন্ধু-তীর্থ। এই ইন্দ্রের প্রিয়তম পবিত্ৰ প্ৰভাসতীর্থ বিরাজমান রহিয়াছে। এই বিষ্ণুপদনামে অনুত্তম তীর্থ দৃষ্টিগোচর হইতেছে। ঐ পরম-পাবনী সুরম্যা বিপাশা নদী, ভগবান বশিষ্ঠঋষি পুত্ৰশোকে স্বয়ং পাশবদ্ধ হইয়া ঐ নদীতে নিমগ্ন হয়েন, পশ্চাৎ বিপাশ হইয়া উত্থান করিয়াছিলেন, এই নিমিত্ত ইহার নাম বিপাশা হইয়াছে। সকল পুণ্যের আয়তন মহর্ষিগণসেবিত এই কাশ্মীরমণ্ডল অবলোকন কর, এই স্থানে উদীচ্য-ঋষিগণ ও যযাতি এবং অগ্নি ও কাশ্যপসংবাদ সংঘটিত হইয়াছিল। এই স্থান দিয়া মানস-সরোবরে গমন করিতে হয়।

“সত্যপরাক্রম শ্ৰীরাম এই গিরির অভ্যন্তরে বসতিস্থান নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, বিদেহ-নগরের উত্তরে উহার দ্বার। ঐ স্থান এরূপ দুৰ্গম যে, সমীরণও উহার দ্বার অতিক্রম করিতে সমর্থ হয় না। অধিকতর আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, যুগাবসানসময়ে এই স্থানে হরপার্ব্বতী ও তাঁহাদিগের পরিষদগণের সাক্ষাৎকার লাভ হয়। যাজকগণ পরিবারের কল্যাণ-কামনায় চৈত্রমাসে এই সরোবরে নানাবিধ যজ্ঞদ্বারা পিনাকপাণির পূজা করিয়া থাকেন। যে ব্যক্তি জিতেন্দ্ৰিয় হইয়া এই সরোবরে শ্রদ্ধাসহকারে অবগাহন করে, সে বিধূতপাপ হইয়া শুভলোকপ্রাপ্ত হয়, তাহার সন্দেহ নাই।

“এই স্থান উজ্জানক বলিয়া প্ৰসিদ্ধ। কার্ত্তিকেয় ও অরুন্ধতীসহায় ভগবান বশিষ্ঠ এই স্থানে শান্তিলাভ করিয়াছিলেন। এই কুশবাননামে হ্রদ, যাহাতে প্রচুর কুশেশয় সমুৎপন্ন হইয়া থাকে। এই রুক্মিণীর আশ্রয়, জিতকোপনা রুক্সিণী এই আশ্রমে শান্তিলাভ করিয়াছিলেন। হে কৌন্তেয়! যে পর্ব্বত অবলোকন করিলে সমাধিজনিত সকল ফললাভ হয়, আপনি তাহার বৃত্তান্ত শ্ৰবণ করিয়াছেন, এক্ষণে সেই ভৃগুতুঙ্গ-নামক মহাগিরি দর্শন করুন।

“হে রাজেন্দ্ৰ! এই কলুষ নাশিনী বিতস্তা নদী অবলোকন করুন, ঐ যমুনার উভয় পার্শ্বে জলা ও উপজলানাম্নী অতি সুশীতল ও নির্ম্মল; মুনিগণ এই দুইটি তটিনীর তটে অধিবাস করিয়া থাকেন। ঐ স্থানে উশীনর যজ্ঞানুষ্ঠানপ্রভাবে বাসবকে অতিক্রম করিয়াছিলেন। বাসব ও বহ্নি মহাত্মা উশানারনরপতিকে পরীক্ষা করিবার নিমিত্ত রাজসভায় আগমন করিলেন। অনন্তর যৎকালে রাজা উশানর যজ্ঞানুষ্ঠানে ব্যাপৃত হইলেন, তখন দেবরাজ ইন্দ্ৰ শ্যেনমূর্ত্তি ও হুতাশন কপোতরূপ ধারণ করিয়া যজ্ঞভূমিতে উপনীত হইলেন। কপোতরূপী হুতাশন শ্যেনভয়ে ভীত ও শরণার্থী হইয়া উশানর-নৃপতির উরুদেশমধ্যে লুক্কায়িত হইলেন।”