০৯২. অর্জ্জুন ও কৃতবর্ম্মার যুদ্ধ

৯২তম অধ্যায়

অর্জ্জুন ও কৃতবর্ম্মার যুদ্ধ

হে মহারাজ! এই রূপে কৌরব সৈন্যগণ অর্জ্জুনকে প্রতিরোধ ও মহাবীর দ্রোণাচাৰ্য্য দ্রুতবেগে তাঁহার অনুসরণ করিতে আরম্ভ করিলে রথীশ্রেষ্ঠ মহাবল পরাক্রান্তপার্থ ব্যাধিগণ যেমন দেহ সন্তাপিত করে, তদ্রূপ সূর্য্যরশ্মিসন্নিভ নিশিত শরনিকর দ্বারা শত্রু সৈন্যগণকে নিতান্ত তাপিত করিতে লাগিলেন। প্রতাপশালী পাণ্ডু তনয়ের বিষম বিশিখ প্রভাবে কৌরবপক্ষীয় অশ্ব সকল গাঢ়বিদ্ধ, রথ সমুদায় ছিন্ন ভিন্ন, আরোহিসমবেত কুঞ্জরগণ ধরাতলে নিপতিত, ছত্রসকল নিকৃত্ত ও রথ-সকল চক্র বিহীন হইল। সৈন্যগণ অর্জ্জুনের শরে নিতান্ত নিপীড়িত হইয়া চতুর্দ্দিকে পলায়ন করিতে লাগিল।

হে মহারাজ! এই রূপে মহাবীর ধনঞ্জয় তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ করিলে তাঁহার শরজাল প্রভাবে সংগ্রামস্থলে আর কিছুই লক্ষিত হইল না। তখন তিনি আপন প্রতিজ্ঞা সত্য করিবার মানসে অজিহ্মগামী বাণ দ্বারা সেই কৌরব বাহিনী কম্পিত করিয়া মহারথ দ্রোণের অভিমুখে ধাবমান হইলেন। মহাবীর দ্রোণ স্বশিষ্য অর্জ্জুনের উপর মর্ম্মভেদী অজিহ্মগামী পঞ্চবিংশতি বাণ নিক্ষেপ করিলেন। অস্ত্রবিদগ্রগণ্য ধনঞ্জয় শর নিক্ষেপ পূর্ব্বক দ্রোণের শরবেগ নিবারণ করত ধাবমান হইলেন এবং সন্নতপর্ব্ব ভল্লদ্বারা আচার্য্যের ভল্লাস্ত্র ছেদন পূর্ব্বক ব্ৰহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করিলেন। হে মহারাজ! তৎকালে রণস্থলে দ্রোণাচার্য্যের এই এক আশ্চর্য্য নিপুণতা দেখিলাম যে, যুবা অর্জ্জুন যুদ্ধে সাধ্যানুসারে যত্ন করিয়াও কোন ক্রমে তাঁহাকে বিদ্ধ করিতে পারিলেন না। মহামেঘ যেমন পর্ব্বতোপরি অনবরত বারি বর্ষণ করে, তদ্রূপ মহাবীর দ্রোণ পার্থের উপর শরবর্ষণ করিতে লাগিলেন। মহাতেজা অর্জ্জুনও ব্রহ্মাস্ত্র দ্বারা আচার্য্যের সায়ক সমুদায় ছেদন করিয়া ফেলিলেন। তখন দ্রোণাচার্য্য অর্জ্জুনকে পঞ্চবিংশতি বাণে বিদ্ধ করিয়া বাসুদেবের বক্ষঃস্থলে ও ভুক্তদ্বয়ে সপ্ততি বাণ নিক্ষেপ করিলেন। মতিমান ধনঞ্জয় তদ্দর্শনে হাস্য করিয়া শাণিতসায়কবর্ষী আচাৰ্য্যকে নিবারণ করিতে লাগিলেন।

অনন্তর মহারথ বাসুদেব ও অর্জ্জুন কল্পান্তকালীন অগ্নিসদৃশ দ্রোণের শর প্রহারে নিতান্ত ব্যথিত হইয়া তাঁহাকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক ভোজরাজের সৈন্যাভিমুখে ধাবমান হইলেন। মহাবীর ধনঞ্জয় এইরূপে দ্রোণের শরনিকর হইতে মুক্ত হইয়া ভোজসৈন্যের উপর বাণ নিক্ষেপ করত কৃতবর্ম্মা ও কাম্বোজরাজ সুদক্ষিণের মধ্যস্থলে অবস্থান করিতে লাগিলেন। তখন নরশ্রেষ্ঠ কৃতবর্ম্মা অনাকুলিত চিত্তে কঙ্কপত্রভূষিত দশ শর দ্বারা দুর্দ্ধর্ষ অর্জ্জুনকে বিদ্ধ করিলে অর্জ্জুনও শরপীড়িত হইয়া প্রথমে শত ও তৎপরে তিন বাণ নিক্ষেপ পূর্ব্বক কৃতবর্ম্মাকে বিদ্ধ করিলেন। তখন মহাবীর কৃতবর্ম্মা, কৃষ্ণ ও অর্জ্জুনের প্রত্যেকের উপর পঞ্চবিংশতি শর প্রয়োগ করিয়া হাস্য করিতে লাগিলেন। মহাবীর অর্জ্জুন তদ্দর্শনে রোষাবিষ্ট হইয়া সত্বরে কৃতবর্ম্মার কামুক ছেদন পূর্ব্বক ক্রুদ্ধ আশীবিষ সদৃশ অগ্নি শিখাকার এক বিংশতি শর দ্বারা তাঁহাকে বিদ্ধ করিলেন। মহারথ কৃতবর্ম্মা অবিলম্বে অন্য এক শরাসন গ্রহণ পূর্ব্বক পাঁচ বাণে অর্জ্জুনের বক্ষস্থল ভেদ ও পুনরায় তাঁহার উপর শাণিত পাঁচ বাণ নিক্ষেপ করিয়া বীরনাদ করিতে লাগিলেন। মহাবীর অর্জ্জুনও কৃতবর্ম্মার বক্ষস্থলে নয়বাণ নিক্ষেপ করিলেন।

মহামতি কেশব অর্জ্জুনকে কৃতবর্ম্মার সহিত বহুক্ষণ সংগ্রাম করিতে দেখিয়া মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিলেন যে, আমাদিগের আর কাল বিলম্ব করা কর্ত্তব্য নয়। তখন তিনি অর্জ্জুনকে কহিলেন, ‘হে পার্থ! কৃতবর্ম্মার প্রতি দয়া করিবার প্রয়োজন নাই, সম্বন্ধের অনুরোধ পরিত্যাগপূর্ব্বক সত্বরে উহারে সংহার কর।’ মহাবীর অর্জ্জুন কেশব বাক্যে অবিলম্বে শর নিক্ষেপ পূর্ব্বক কৃতবর্ম্মাকে মূর্চ্ছিত করিয়া মহাবেগে কাম্বোজ সৈন্য মধ্যে প্রবেশ করিলেন। মহাবীর কৃতবর্ম্মা ধনঞ্জয়কে সৈন্য মধ্যে প্রবিষ্ট দেখিয়া সশর শরাসন কম্পিত করত তাঁহার চক্ররক্ষক পাঞ্চাল দেশীয় যুধামন্যু ও উত্তমৌজাকে নিবারণ করিতে লাগিলেন। তিনি যুধামন্যুর উপর তিন ও উত্তমৌজার উপর চারিবাণ নিক্ষেপ করিলেন। তখন তাঁহারা উভয়ে কৃতবর্ম্মাকে দশ দশ শরে বিদ্ধ করিয়া পুনরায় তিন তিন শর নিক্ষেপ পূর্ব্বক তাঁহার রথের ধ্বজ ও কাৰ্ম্মুক ছেদন করিয়া ফেলিলেন। মহাবীর কৃতবর্ম্মা তদ্দর্শনে ক্রোধে অধীর হইয়া সত্বরে অন্য শরাসন গ্রহণ পূর্ব্বক সেই বীরদ্বয়ের ধনু ছেদন করিয়া তাঁহাদের উপর অসংখ্য বাণবর্ষণ করিলেন। তখন তাঁহারাও অন্য কার্ম্মুকে জ্যা রোপণ পূর্ব্বক তাঁহাকে প্রহার করিতে লাগিলেন।

শ্রুতায়ুধ বধ

ইত্যবসরে মহাবীর অর্জ্জুন অরাতিসৈন্যমধ্যে প্রবেশ করিলেন। মহাবীর যুধামন্যু ও উত্তমৌজা কৌরব সৈন্য মধ্যে প্রবিষ্ট হইতে যার পর নাই চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কৃতবর্ম্মার শরে নিবারিত হইয়া কৃতকাৰ্য্য হইতে পারিলেন না। অরিনিসূদন ধনঞ্জয় কৌরব সৈন্যগণ মধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া সত্বরে তাহাদিগকে সংহার করিতে আরম্ভ করিলেন; কৃতবৰ্ম্মাকে সম্মুখে প্রাপ্ত হইয়াও বিনাশ করিলেন না। মহাবীর রাজা শ্রুতায়ুধ পার্থকে কৌরব সৈন্য মধ্যে গমন করিতে দেখিয়া ক্রোধভরে শরাসন কম্পিত করিয়া সত্বরে তাঁহার সমীপে সমুপস্থিত হইয়া তাঁহার উপর তিন ও জনার্দ্দনের উপর সপ্ততি সায়ক নিক্ষেপ পূর্ব্বক সুতীক্ষ্ণ ক্ষুরপ্র দ্বারা অর্জ্জুনের ধ্বজ ছেদন করিয়া ফেলিলেন। মহাবীর ধনঞ্জয় তদ্দর্শনে ক্রুদ্ধ হইয়া যেমন মহাহস্তীর উপর অঙ্কুশাঘাত করে, তদ্রূপ শ্রুতায়ুধের উপর নতপৰ্ব্ব নবতি সায়ক নিক্ষেপ করিলেন। মহাবীর শ্রুতায়ুধ অর্জ্জুনের পরাক্রম দর্শনে নিতান্ত ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহার উপর সপ্তসপ্ততি নারাচ নিক্ষেপ করিলেন। তখন মহাবল পরাক্রান্ত পাণ্ডুতনয় ক্রোধাবিষ্ট হইয়া শ্রুতায়ুধের ধনুঃ ও তূণীর ছেদন করিয়া ফেলিলেন এবং সাত বাণে তাঁহার বক্ষস্থল বিদ্ধ করিয়া ক্রোধভরে গর্জ্জন করিতে লাগিলেন। মহাবীর শ্রুতায়ুধ পাণ্ডবের পরাক্রম দর্শনে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া সত্বরে অন্য কাৰ্ম্মুক গ্রহণপূর্ব্বক নয় বাণে অর্জ্জুনের বাহু ও বক্ষস্থল বিদ্ধ করিলেন। তখন অরাতিনিসূদন মহাবল পরাক্রান্ত মহারথ ধনঞ্জয় শ্রুতায়ুধের উপর সপ্ততি নারাচ ও সহস্র সহস্র শর নিক্ষেপ পূর্ব্বক সত্বরে তাঁহার সারথি ও অশ্বগণকে বিনাশ করিয়া হাস্য করিতে লাগিলেন। বলবীৰ্য্য সম্পন্ন মহারাজ শ্রুতায়ুধ এই রূপে পার্থের শরে অশ্বহীন ও সারথি বিহীন হইয়া ক্রোধভরে রথ পরিত্যাগ পূর্ব্বক গদা হস্তে পার্থের অভিমুখে ধাবমান হইলেন।

হে মহারাজ! ঐ শ্রুতায়ুধ মহীপতি বরুণের পুত্র। শীততোয়া মহানদী পর্ণাশা উহার জননী। মহানদী পর্ণাশা ‘এই পুত্র অরাতিগণের অবধ্য হউক’ বলিয়া বরুণের নিকট বর প্রার্থনা করিলে তিনি প্রীত হইয়া কহিলেন, ‘সরিদ্বরে! আমি এই দিব্যাস্ত্র প্রদান করিতেছি; ইহার প্রভাবেই তোমার পুত্র অবধ্যতা লাভ করিবে। হে ভদ্রে! মনুষ্য কদাচ অমর হইতে পারে না। এই ভূমণ্ডলে যে জন্ম পরিগ্রহ করিয়াছে, তাঁহাকে অবশ্যই কালকবলে পতিত হইতে হইবে। যাহা হউক, আমি বলিতেছি, তোমার এই পুত্র এই অস্ত্রের প্রভাবে রণস্থলে শত্ৰুদিগের অজেয় হইবে; তুমি মনোদুঃখ পরিত্যাগ কর!’ বরুণ দেব এই বলিয়া শ্রুতায়ুধকে মন্ত্রের সহিত গদা প্রদান করিলেন। শ্রুতায়ুধ গদা গ্রহণ করিলে ভগবান জলাধিপতি কহিলেন, বৎস শ্রুতায়ুধ! যে ব্যক্তি যুদ্ধে প্রবৃত্ত না হইবে তাহার উপর এই গদা কদাচ প্রয়োগ করিও না; যদি কর তাহা হইলে ইহা প্রতীপগামিনী হইয়া তোমাকেই বিনাশ করিবে।

হে মহারাজ! মহাবীর শ্রুতায়ুধ সেই বরুণদত্ত গদাপ্রভাবেই ত্রিলোক মধ্যে দুর্জ্জয় হইয়া উঠেন। তিনি সেই গদা সমুদ্যত করিয়া অর্জ্জুনের রথাভিমুখে ধাবমান হইলেন। কিন্তু দৈব দুর্বিপাক বশত জলাধিপতির বাক্য রক্ষা না করিয়া তদ্বারা জনার্দ্দনকে প্রহার করিলেন। মহাবীর বাসুদেব অনায়াসে স্বীয় পীন স্কন্ধদেশে সেই গদাঘাত সহ্য করিলেন। প্রবল বায়ু যেমন বিন্ধ্য গিরিকে কম্পিত করিতে অসমর্থ হয়, তদ্রূপ সেই গদা মধুসূদনকে কম্পিত করিতে পারিল না; প্রত্যুত বরুণের বাক্যানুসারে উহা প্রত্যাগমন পূর্ব্বক অমর্ষণ মহাবীর শ্রুতায়ুধকে শমন সদনে প্রেরণ করিয়া ধরাতলে নিপতিত হইল। গদা প্রতিনিবৃত্ত ও অরাতিনিপাতন শ্রুতায়ুধকে নিহত দেখিয়া কৌরব সৈন্য মধ্যে হাহাকার শব্দ সমুত্থিত হইল। হে মহারাজ! মহাবীর শ্রুতায়ুধ সমর পরাঙ্মুখ কেশবকে গদা প্রহার করিয়াছিলেন বলিয়াই জলধিরাজের বাক্যানুসারে স্বীয় গদাঘাতেই প্রাণ পরিত্যাগ পূর্ব্বক সমুদায় ধনুর্দ্ধরগণ সমক্ষে বায়ুবেগ ভগ্ন বনস্পতির ন্যায় ভূতলে নিপতিত হইলেন। কৌরব পক্ষীয় সমস্ত সৈন্য ও সেনাপতিগণ শত্রুতাপন শ্রুতায়ুধকে নিহত দেখিয়া চতুর্দ্দিকে পলায়ন করিতে আরম্ভ করিলেন।

সুদক্ষিণ বধ

তখন কাম্বোজ রাজের পুত্র মহাবীর সুদক্ষিণ মহাবেগশালী অশ্ব সংযোজিত রথে আরোহণ করিয়া অরিনিসূদন অর্জ্জুনের প্রতি ধাবমান হইলেন। মহাবীর পার্থ সুদক্ষিণকে সমাগত দেখিয়া তাঁহার উপর সাত বাণ নিক্ষেপ করিলে শরসকল বর্ম্মভেদ করিয়া ধরাতলে প্রবেশ করিল। মহাবীর সুদক্ষিণ গাণ্ডীব প্রেরিত তীক্ষ্ণ শরে গাঢ় বিদ্ধ হইয়া ক্রোধভরে প্রথমতঃ অর্জ্জুনকে দশ ও বাসুদেবকে তিন শরে বিদ্ধ করিয়া তৎপরে পুনরায় অর্জ্জুনের উপর পাঁচ বাণ নিক্ষেপ করিলেন। তখন মহাবীর ধনঞ্জয় সুদক্ষিণের ধনু ও রথধ্বজ ছেদন পূর্ব্বক তাঁহাকে দুই সুতীক্ষ্ন ভল্ল দ্বারা বিদ্ধ করিলেন। মহাবীর সুদক্ষিণ অর্জ্জুনের ভল্লাঘাতে ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে তিন বাণে বিদ্ধ করিয়া তাঁহার উপর এক অতি ভয়ানক ঘণ্টাযুক্ত লৌহময় শক্তি নিক্ষেপ পূর্ব্বক সিংহনাদ করিতে লাগিলেন। সুদক্ষিণ নিক্ষিপ্ত মহাশক্তি প্রজ্বলিত মহোল্কার ন্যায় মহারথ অর্জ্জুনের উপর নিপতিত হইয়া কলেবর বিদারণপূর্ব্বক ভূপৃষ্ঠে পতিত হইল। মহাতেজা অর্জ্জুন শক্তির আঘাতে মূর্চ্ছিত প্রায় হইলেন এবং ক্ষণকাল মধ্যে প্রকৃতিস্থ হইয়া দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ পূর্ব্বক সৃক্কণী লেহন করত কঙ্কপত্রালঙ্কৃত চতুর্দ্দশ নারাচ দ্বারা সুদক্ষিণকে এবং তাঁহার অশ্ব, ধ্বজ, ধনু ও সারথিকে বিদ্ধ করিলেন। তৎপরে ভূরি ভূরি অস্ত্র নিক্ষেপপূর্ব্বক তাঁহার রথ খণ্ড খণ্ড করিয়া সুতীক্ষ্ণ সায়ক দ্বারা তাঁহার হৃদয় বিদীর্ণ করিয়া ফেলিলেন। ধনঞ্জয়ের বিষম শর প্রভাবে কাম্বোজরাজ তনয় সুদক্ষিণের বর্ম্ম ছিন্ন, গাত্র শিথিল এবং মুকুট ও অঙ্গদ পরিভ্রষ্ট হইল। তিনি যন্ত্রমুক্ত ধ্বজের ন্যায় ধরাশয্যা গ্রহণ করিলেন। বসন্তাগমে পর্ব্বত শিখরজাত শাখাবৃত কণিকার যেমন বায়ুবেগে ভগ্ন হইয়া নিপতিত হয়, সেইরূপ কাম্বোজরাজ তনয় সমরাঙ্গনে নিপতিত হইলেন। সেই মহার্হাভরণভূষিত তপ্তকাঞ্চন মালালঙ্কৃত প্রিয় দর্শন, তাম্রলোচন, মহাবীর অর্জ্জুনের শরে প্রাণত্যাগ করিয়া ধরাশয্যা গ্রহণ করিলে বোধ হইতে লাগিল, সানুমান পর্ব্বত রণস্থলে সমবস্থিত রহিয়াছে। হে মহারাজ! এইরূপে মহাবীর শ্রুতায়ুধ ও কাম্বোজ রাজতনয় সুদক্ষিণ নিহত হইলে দুৰ্য্যোধনের সমুদায় সৈন্যগণ মহাবেগে ধাবমান হইল।