০৬৭. রন্তিদেবের জীবনান্তবার্তা

৬৭তম অধ্যায়

রন্তিদেবের জীবনান্তবার্তা

নারদ কহিলেন, হে সৃঞ্জয়! সঙ্কৃতি-তনয় মহাত্মা রন্তিদেবকেও শমন সদনে গমন করিতে হইয়াছে। ঐ মহাত্মার ভবনে দুই লক্ষ পাচক সমাগত অতিথি ব্রাহ্মণগণকে দিবারাত্র পক্ক ও অপক্ক খাদ্যদ্রব্য পরিবেশন করিত। মহাত্মা রন্তিদেব ন্যায়োপার্জিত অপৰ্যাপ্ত ধন ব্রাহ্মণগণকে প্রদান করিয়াছিলেন। তিনি বেদাধ্যয়ন করিয়া ধর্ম্মানুসারে শত্রুগণকে বশীভূত করেন। ঐ মহাত্মার যজ্ঞ সময়ে পশুগণ স্বর্গলাভেচ্ছায় স্বয়ং যজ্ঞস্থলে আগমন করিত। তাঁহার অগ্নিহোত্র যজ্ঞে এত পশু বিনষ্ট হইয়াছিল যে, তাঁহাদের চৰ্ম্মরস মহানস হইতে বিনির্গত হইয়া এক মহানদী প্রস্তুত হইল। ঐ নদী চর্ম্মণ্বতী নামে অদ্যাপি বিখ্যাত রহিয়াছে। মহাত্মা রন্তিদেব, ‘তোমার নিষ্ক প্রদান করিতেছি তোমায় নিষ্ক প্রদান করিতেছি’ বলিয়া সহস্র সহস্র ব্রাহ্মণকে অনবরত নিষ্ক প্রদান করিতেন। তিনি এক দিনে এক কোটি নিষ্ক দান করিয়াও, ‘অদ্য অতি অল্প দান করা হইল’ বলিয়া পুনরায় নিষ্ক-প্রদানে প্রবৃত্ত হইতেন। ফলত তাঁহার ন্যায় দাতা আর কাহাকেও দৃষ্টিগোচর হয় না। মহাত্মা সঙ্কৃতিনন্দন এই বলিয়া ব্রাহ্মণগণকে ধন দান করিতেন যে, যদি আমি ব্রাহ্মণের হস্তে ধন প্রদান না করি, তাহা হইলে নিশ্চয়ই আমাকে চিরস্থায়ী মহাদুঃখে নিপতিত হইতে হইবে। তিনি শত বৎসর পঞ্চদশ দিন প্রত্যহ সহস্র সহস্র ব্রাহ্মণগণের প্রত্যেককে গোশত-সমবেত সুবর্ণ বৃষভ ও অষ্ট শত সুবর্ণ নিষ্ক প্রদান করিতেন। ঐ মহাত্মা সমুদায় অগ্নিহোয়ত্রাপকরণ, যজ্ঞোপকরণ, করক, কুম্ভ, স্থালী, পিঠর, শয়ন, আসন, যান, প্রাসাদ, গৃহ, বিবিধ বৃক্ষ ও বিবিধ অন্ন ঋষিদিগকে প্রদান করিয়াছিলেন। মহাত্মা রন্তিদেবের সমুদয় দ্রব্যই সুবর্ণময় ছিল।

পুরাণবিং ব্যক্তিগণ রন্তিদেবের অলৌকিক সমৃদ্ধিসন্দর্শনে বিস্মিত হইয়া এই কথা কহিয়া গিয়াছেন যে, মহাত্মা রন্তিদেবের যেরূপ সম্পত্তি, এরূপ সম্পত্তি, অন্য কোন মনুষ্যের কথা দূরে থাকুক, কুবেরের ভবনেও দৃষ্ট হয় না; অতএব নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে যে, রন্তিদেবের ভবন অমরাবতী। মহাত্মা সঙ্কৃতিনন্দনের ভবনে প্রত্যহ এত অধিক অতিথি সমাগত হইত যে, মণিকুণ্ডলধারী সূদগণ এক বিংশতি সহস্র বলীবৰ্দের মাংস পাক করিয়াও অতিথিগণকে কহিত, অদ্য তোমরা অধিক পরিমাণে সূপ ভক্ষণ কর, আজি অন্য দিনের ন্যায় অপৰ্যাপ্ত মাংস নাই। পরিশেষে যে কিছু সুবর্ণ অবশিষ্ট ছিল, মহানুভব রন্তিদেব তৎসমুদায় যজ্ঞে ব্রাহ্মণগণকে প্রদান করিলেন। ঐ মহাত্মার প্রত্যক্ষেই দেবগণ হব্য ও পিতৃগণ কব্য এবং ব্রাহ্মণগণ যথাকালে সমুদায় অভিলষিত দ্রব্য ভোগ করিতেন। হে সৃঞ্জয়! তোমা অপেক্ষা সমধিক তপ, সত্য, দয়া ও দানশালী এবং তোমার পুত্র অপেক্ষা অধিক পুণ্যবান সেই মহাত্মা রন্তিদেবকেও কালগ্রাসে পতিত হইতে হইয়াছে; অতএব তুমি অযাজ্ঞিক অধ্যয়নাদি রহিত স্বীয় পুত্রের নিমিত্ত আর অনুতাপ করিও না।”