১০৯. ভগীরথ তপস্যাতুষ্ট শিবের গঙ্গাবেগধারণ

১০৯তম অধ্যায়

ভগীরথ তপস্যাতুষ্ট শিবের গঙ্গাবেগধারণ

লোমশ কহিলেন, “মহারাজ! ভগবান ভূতভাবন ভবানীপতি ভগীরথের বাক্য-শ্রবণানন্তর দেবগণের প্রিয়ানুষ্ঠানের নিমিত্ত তাহাতে সম্মত হইয়া কহিলেন, “হে মহাভাগ! আমি তোমার প্রার্থনানুসারে গগনপ্রচ্যুত পরমপবিত্র দেবনদী গঙ্গাকে ধারণ করিব।’ ভগবান ভূতপতি ভগীরথকে এই কথা বলিয়া বিবিধ অস্ত্রশস্ত্ৰধারী পরিষদে পরিবৃত হইয়া হিমাচলে গমন করিলেন। অনন্তর ভূতনাথ ভগীরথকে কহিলেন, “হে মহাবাহো! তুমি সরিদ্বারা গঙ্গাকে স্বৰ্গ হইতে নিপতিত হইতে বল, আমি তাহাকে ধারণ করিব।”

“মহারাজ ভগীরথ দেবাদিদেব মহাদেবের বাক্যানুসারে প্ৰণতিপূর্ব্বক প্ৰযত্ন-চিত্তে গঙ্গাকে ধ্যান করিতে লাগিলেন। তখন পবিত্ৰতোয়া পরামরমণীয়া ভাগীরথী, ভগীরথ ধ্যান করিতেছেন ও ঈশানও সমুপস্থিত আছেন। অবলোকন করিয়া সহসা গগন হইতে বিচ্যুত হইলেন। দেব, মহর্ষি, গন্ধর্ব্ব, উরাগ ও যক্ষগণ, গঙ্গা গগনপ্রচ্যুত হইতেছেন জানিয়া সাতিশয় কৌতুহলাক্রান্ত চিত্তে দর্শন করিতে আগমন করিলেন। তখন মহাবর্ত্তযুক্ত মীনগ্রাহ প্রভৃতি জলজন্তু-সমূহে সঙ্কুলা গঙ্গা গগন হইতে নিপতিত হইতে লাগিলেন। শূলপাণি স্বৰ্গ হইতে নিপতিতা গগনমেখলা গঙ্গাকে মুক্তাময়ী মালার ন্যায় ললাটদেশে ধারণ করিলে তিনি ত্ৰিধারা হইয়া গমন করিতে লাগিলেন। তদীয় নির্ম্মল নীরে ফেনপুঞ্জ ব্যাপ্ত হওয়াতে বোধ হইল, যেন মরালকুল কেলি করিতেছে। ফেনপটলসংবৃতাঙ্গী সুরনদী কোন স্থানে কুটিলগতি, কোন স্থানে বা স্বলিত হইয়া প্ৰমত্তা প্রমদার ন্যায় গমন করিতে লাগিলেন এবং কোন স্থানে বা তোয়শব্দদ্বারা মধুর-ধ্বনি করিতে লাগিলেন।

ভগীরথ-নির্দ্দিষ্ট পথে গঙ্গার সাগরযাত্ৰা

“সুরতরঙ্গিণী এইরূপে স্বৰ্গ হইতে অবনীতলে অবতীর্ণ হইয়া ভগীরথকে কহিলেন, “হে মহারাজ! আমি তোমার নিমিত্তই ভূতলে আগমন করিয়াছি; এক্ষণে কোন পথ দিয়া গমন করিব, নির্দেশ কর।” ভগীরথ গঙ্গার বচন শ্রবণান্তে পবিত্র জলদ্বারা সগরসন্তানগণের ভস্মীভূত কলেবর সকল প্লাবিত করিবার নিমিত্ত সেই দিকে গমন করিতে লাগিলেন। এদিকে সর্ব্বলোকনমস্কৃত শঙ্কর গঙ্গা-ধারণ করিয়া দেবগণ-সমভিব্যাহারে শৈলশ্রেষ্ঠ কৈলাসে গমন করিলেন। মহীপতি ভগীরথ ভাগীরথীর সহিত সমুদ্রে গমনপূর্ব্বক উহা গঙ্গাজলে পরিপূরিত করিয়া পূৰ্ণমনোরথ হইয়া ঐ পবিত্র সলিলে পিতৃলোকের তর্পণ ও গঙ্গাকে দুহিতৃত্বে কল্পনা করিলেন।

“হে ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির! ত্ৰিপথগা গঙ্গা যেরূপে সমুদ্র-পূরণার্থ পৃথিবীতলে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন এবং মহাত্মা অগস্ত্য যে কারণে সমুদ্রপান ও ব্ৰহ্মহা [ব্ৰহ্মাঘাতী] বাতাপির প্রাণসংহার করিয়াছিলেন, তৎসমুদয় কীর্ত্তন করিলাম।”